somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিঞ্চিত ভয়ের গল্প... B:-) B:-)

২২ শে জুলাই, ২০০৯ ভোর ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আচ্ছা আপনারা ভূত দেখেছেন কেউ? প্রশ্ন শুনে কি অবাক হলেন? এই ধরনের প্রশ্ন হয়ত মানায় ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে এমন কোন রাতে। কিন্তু ঢাকা শহরে ইট কাঠের খাচার ভিতর, ইলেকট্রিসিটি, যানবাহনের বিকট শব্দ সম্বলিত, ধোঁয়া, দূষনের নগরীতে ভূতের থাকার কি জো আছে? ভূতকে মানায় সম্ভবত নির্জন কোন গ্রামাঞ্চলে, গাছপালা, বাঁশবাগান, পুকুর বা ঘের আছে এমন কোন জায়গায়...

ক্লাস 10 এ থাকতে একবার ভয় পেয়েছিলাম বেশ। তখন পড়তাম সেন্ট পলস স্কুল, মোংলাতে। থাকতাম হোস্টেলে। একদম সুন্দরবন ঘেষা না হলেও আমাদের হোস্টেল আর স্কুলের ছাদে উঠলে সুন্দরবনের মোহনা দেখা যেত বেশ ভালই।প্রাকৃ্তিক সৌন্দর্য কি জিনিস তা বুঝতে হলে এ এলাকায় আসা উচিত...

অন্যান্য মিশনারি স্কুলের মত আমাদের Campus টাও ছিল অনেক বড়। আমাদের হোস্টেলের ছেলেদের স্কুল এবং হোস্টেল দুই জায়গাতেই কাজ করতে হত। পরিষ্কার-পরিছন্নতা বলুন আর সৌন্দর্য বর্ধন সবই আমাদের দেখতে হত। যখনকার কথা বলছি তখন আমার দায়িত্ব ছিল ‘ডাইনিং’ রুম এ। আমরা ৪ জন ছিলাম ঐ দায়িত্বে। কাজটা ছিল ভাত, তরকারী ছেলেদের মধ্যে সার্ভ করা। সবার খাওয়া শেষ হলে আমরা ৪ জন খেতাম। বলে রাখি আমাদের ডাইনিং রুমটা ছিল বিশাল, ১৫০ জন ছেলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করতে পারত সেখানে। আর এটি ছিল আমাদের বিশাল কম্পাউন্ডের একদম শেষ প্রান্তে, পিছনে ছিল জংগলে ঘেরা বিশাল এক ঘের, মাছ চাষ করা হত ওখানে। পারত পক্ষে খুব দরকার না হলে ও পথ আমরা মাড়াতাম না... সাপের উপদ্রবের কারনে।

নভেম্বরের শেষের দিকের কথা বলছি। রাতে সব ছেলেদের খাওয়া শেষ হলে ডাইনিং রুমের অন্যান্য প্রান্তের বাল্ব গুলো নিভিয়ে শুধু আমাদের মাথার উপরের বাল্বটি জ্বালিয়ে আমরা ৪ জন খেতে বসলাম। জানালার দিকে মুখ করে খাচ্ছিলাম আমি আর রিপন, আর আমাদের দিকে মুখ করে খাচ্ছিল আন্তন আর ওয়াসিংটন। খাবার মাঝামঝি পর্যায়ে এসে হঠাৎ আমি খেয়াল করলাম, যে জানালার দিকে মুখ করে খাচ্ছিলাম তার একটা মাত্র কবাট বেশ জোড়ে ঝাকুনি খেল... ২-৩ বার... আর কোথাও কোন নড়াচড়া নেই। শীতের সময় বাতাসও নেই বললেই চলে... আমার তো অবস্থা খারাপ এইটা দেখেই... কিছুই দেখা যায়না বাইরে, ঘুটঘুটে অন্ধকার। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রিপনের দিকে তাকালাম আমি... সেও ব্যপারটা খেয়াল করেছে। আর তখনি রিপন বলল, “মনে হইল একটা হাত জানালাটা ঠেলা দিল... কিন্তু মাঝখানের আংগুলটা সম্পূর্ণ নাই”। একথা শোনার পর আমারতো কান ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগল। আমাদের ভিতর সবচেয়ে সাহসী আন্তন লাফিয়ে উঠে বলল, “দাড়া কেডা আছিস পিছনে... পাইলে কি করি দেখিস...” বলেই সে ডাইনিং রুমের পিছনের দিকে চলে গেল, পিছনে পিছনে গেল ওয়াসিংটন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলাম একি জায়গায় ... ২মিনিট পর দুজনেই ফিরে এল। আন্তন, রিপনকে জিজ্ঞাসা করল, “কি দেখছিস ঠিক করে বলত... রিপন বলল, একটা হাত দেখলাম জানলাটাকে ঠেলা দিচ্ছে...” আন্তন বলল, “ওরে বাবা তুই দেখছিস শুধু হাত, আবার নাকি আংগুল নাই এরপর দেখবি পুরো হাত তারপর কাঁচের চুরি, শেষে দেখবি শাড়ী পরা কোন এক মহিলারে... আমি বাবা এইখানে আর নাই”। বলেই আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী আন্তন অনেকটা ভো দৌড় দিল বাস্কেট বল কোর্টের দিকে, যেখানে অন্যান্য ছেলেরা রাতের খাওয়া পরবর্তী ‘break’ এ ছিল। আমরা তিনজন কোনমতে দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে আন্তন যেদিকে গেছে সেদিকে পা বাড়ালাম। সারাক্ষন মনে হচ্ছিল এই বুঝি কেউ ‘ঘারটা’ ধরে ঝাকুনি না দেয়... বাস্কেট বল কোর্টে অনেক ছেলেদের দেখে সাহস কিছুটা বাড়ল, স্বাভাবিক বুদ্ধিবৃত্তিও অনেকখানি ফিরে পেলাম। রিপনকে বললাম, “আমাদের জ্যেতির্ময়ের কিন্তু বেশ সাহস আর ওর কিন্তু মাঝের একটা আংগুল নেই”... রিপন দেখলাম লাফিয়ে উঠল... বলল, “তাইতো শয়তানটাকে ধরি”। বেশ রাগ আর উৎসাহ নিয়ে ক্লাস সেভেন এ পড়া জ্যেতির্ময়কে পাকড়াও করলাম। বললাম, “তোরে যদি পাইতাম আজকে ডাইনিং রুমের পিছনে, গাইড়াই ফালাইতাম ফাজিল”। মুখ কাচুমাচু করে ও বলল, “দাদা ভুল হইছে এইরকম আর করব না”...

বলুন এরকম সরল স্বীকারোক্তির পর আর কিছু কি বলা যায়? X(
৪৬টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×