সিনেমা দেখতে কার না ভাল লাগে? তবে সিনেমা হলে যাই আমরা কয়জন? ঠিক হিসাবটা বের করা সম্ভব হবে না মনে হয়... আমি নিজে একজন বিশাল সিনেমা প্রেমী, সমালোচক নই অবশ্যই... ভাল কে ভাল বলি, খারাপ লাগলেও তা বলে ফেলি... সিনেমা নিয়ে শেয়ারিং এই লেখাটা...
শৈশবের সিনেমাঃ 

ঠিক কবে প্রথম সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম মনে পড়ে না। তবে মা’র সাথে গিয়েছিলাম এটা বেশ মনে আছে, সাথে ছিলেন নানী, খালা, আপা এরা। সিনেমার নাম ‘বেহুলা লক্ষিন্দর’। সিনেমা নাকি মানুষ উপভোগ করে, আমি অনেক ছোট থাকায় সিনেমা যে তেমন কিছু বুঝিনি তা বলাই বাহুল্য তবে সাপের নর্তন কুর্দন দেখে ব্যপক ভয় পেয়েছিলাম

। আর সাপের ব্যপারে প্রশ্ন করতে করতে মা’কে বিরক্ত করে ফেলেছিলাম। “মা, এই সাপটার নাম সূতানলী কেন? নায়ককে কি এই পিচ্চি সাপটা গিলে খাবে?” ইত্যাদি ইত্যাদি...
ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই তারপরেও ‘ছুটির ঘন্টা’ দেখে কাঁদতে কাঁদতে শেষ আমি...



কেন ঐ পঁচা স্কুলে পড়তে গিয়েছিল ছোকড়াটা, বাথরুমে যাবার আর টাইম পেল না আর?
এই সিনেমা দেখার পর অনেক দিন আর হলে গিয়ে সিনেমা দেখা হয়নি। বহুদিন পরে হাই স্কুলে উঠে সুযোগ পেলাম হুমায়ূন আহমেদ’র ‘আগুনের পরশমণি’ দেখবার। ও বয়সে এ ছবির মাহাত্ম বুঝতে পেরেছিলাম তা মনে হয়না। এ ছবির মধ্যে ভাল লাগা বলতে, শীলা’র ডিমের খোসার উপর ছবি আঁকার কথাই মনে পড়ে।


ধুমধারাক্কা/ বাণিজ্যিক সিনেমাঃ

আমাদের এখানকার সব সিনেমাই মনে হয় সামাজিক-একশান

(এর মানে খুব সহয, পারাবারিক আবহ, গরীব কিন্তু নীতিবান নায়ক, নায়িকার বাবা ভিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি... ও হ্যা মাঝে মাঝে ‘ঢিসুম ঢিসুম’ মাস্ট), অন্তত ছবির বিজ্ঞাপনে তাই বলা হয়ে থাকে। সিনেমার কাহিনী প্রায় একই হয়ে থাকে, ঘুরায় ফিরায় একই জিনিস


(এইটা একটা ভাল দিক, মনের উপর বারতি প্রেশার পড়েনা। এরপর কি, এরপর কি এ নিয়ে টেনশন থাকে না বললেই চলে। ফলে উচ্চরক্তচাপ বাড়ার সম্ভবনা নাই)। যে কেউ ৫ মিনিট দেখে সিনেমার ভবিষ্যত বলে দিতে পারবে নিশ্চিত ভাবে।

মান্না’র এক ছবি দেখতে যেয়ে মনে প্রশ্ন জেগেছিল, পরিচালকের মাথায় কত্তখানি গোবর থাকলে এমন অখাদ্য বানাতে পারে?


সিনেমার গান গুলো ছিল সবচেয়ে চুম্বক অংশ। সাথে থাকা একজন বলল, “যাক অন্তত গান গুলা দিয়ে পয়সা উসুল হবে মনে হইতেছে।” একেকটা গান যায় এর ওই ফাজিল বলা শুরু করল, “এই যে আমার টিকিটের ১০ টাকা উঠল।” চারটা গান হবার পর আমি বললাম, “ল দোস্ত চইলা যাই, তোর টাকা তো উসুল হইয়া গেছে নাকি?”


ADAULT CINEMA দর্শন (18+ আরকি)

এত্ত এত্ত সিনেমা দেখলাম জীবনে কিন্তু ‘এক টিকিটে দুই সিনেমা’

দেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনি তখনও... ইন্টারমিডিয়েট শেষ হয়ে গেছে, এই জিনিস তখনও দেখা হয়নাই


! বন্ধুরা এইসব নিয়ে কথা বললে কেমন জানি বোকা বোকা লাগত,


কিছুই বলতে পারতাম না। আবার সাহসও হত না যে সিনেমা হলে যেয়ে এরকম সিনেমা দেখব। যাই হোক শেষ মেষ যা থাকে কপালে চিন্তা করে কম্পিত বক্ষে একদিন ওরকম সিনেমা দেখায় সেরকম একটা সিনেমা হলের সামনে গিয়ে দাড়ালাম। একা যাবার সাহস ছিলনা, সাথে আরেক বন্ধু ছিল। টিকিট কাটার সময় মনে হল সবাই বুঝি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জায় কান লাল হয়ে যাচ্ছিল... ঢুকলাম নির্দিষ্ট সময়ে হলের ভিতরে... ঘুটঘুটে অন্ধকার আর কাকে বলে? এরকম সিনেমা যেখানে দেখায় সেখানে কি এমনই অন্ধকার থাকে নাকি? সিনেমার কাহিনী ছিল আচ্ছা গাঁজাখুড়ি, স্বল্পবসনা মেয়েদের আসা যাওয়া ছিল বিস্তর এই হচ্ছে ‘এডাল্ট’ ছবি


! ইংরেজি সিনেমার যে এত্ত বাজে মেকিং আর কাহিনী হতে পারে তা এ ছবি না দেখলে আমি বিশ্বাসই করতাম না! মাঝে মাঝে ছাড়পোকার কামড় ছিল ফ্রি... সিনেমার বিরতীর সময়ে ঘটল সবচেয়ে বড় বিপত্তি... টয়লেটে যেয়েই পড়লাম একই হোস্টেলে থাকি এক বড় ভাইয়ের সামনে


। আমি আর কি পালাবো উনি দেখলাম আবোল তাবোল কি সব বলে পই পই করে দৌড়ে পালালেন... এর পরে ওখানে আর থাকার কোনই কারণ দেখলাম না। সিনেমা দেখা বাদ দিয়েই চলে আসলাম...বড় ভাই এই ঘটনা নিয়ে পরে উচ্চ বাচ্য করেননি পরে আর।
আর্ট ফিল্মঃ 

আর্ট ফিল্ম এর সজ্ঞা আমি জানি না। তবে আমার স্থূল বুদ্ধিতে বুঝি, যে ছবি দর্শক পায় না, ব্যবসায়িক ভাবে সফল হয়না তাকেই সম্ভবত আর্ট ফিল্ম বলে। মনে পড়ে ‘বিনাকা’ সিনেমা হলে ‘শঙ্খনাদ’ সিনেমাটি শুধু আমি আর আমার এক বন্ধু নিচের তলায় দুজন মিলে দেখেছিলাম। অথচ এই সিনেমা নাকি অনেক গুলো আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিল, পুরষ্কারও পেয়েছিল।
একজনের সিনেমা না দেখার ব্যর্থতাঃ 

ডিপজল’র মত গভীর ভিলেনের সিনেমা দেখতে না পারাটা আমার সিনেমা দেখার ক্যারিয়ারের একটা কালো অধ্যায়। ইশশ, কি যে মিস করছি... কানতে মন চায়, মাথা কুটতে ইচ্ছ করে তার সিনেমা দেখি নাই বলে। ভাই/ বোনেরা দোয়া কইরেন তার একখান সিনেমা দেখার শখ যেন আমার পূরণ হয়...
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ৭:৩০