somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিস্পানিক হেরিটেজ মাস

২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অক্টোবর মাস জুড়ে লস এঞ্জেলস কমুনিটি কলেজে হিস্পানিক হেরিটেজ মাস পালনের উৎসব চলছে। ষাটের দশকে আমেরিকায় সিভিল রাইট মুভমেন্ট বেগবান হয়। সে সময় ১৯৬৮ সালে এই হিস্পানিক হেরিটেজ মাস পালন শুরু হয়। তৎকালীন ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেস ম্যান জর্জ ই ব্রাউন এখানকার হিস্পানিক জনগুষ্ঠির অবদানের স্বীকৃতি দেয়ার উপায় খুঁজছিলেন এবং সেই ধারাবাহিকতায় এই অনুষ্ঠানের প্রচলন হয়।
এই উৎসব শতাব্দী পুরাতন হিস্পানিক জনগণের প্রতিদিনের জীবনধারা, তাদের সংস্কৃতি, তাদের চ্যালেঞ্জ, তাদের বিজয়গাঁথা এবং তাদের প্রভাব এই দেশের মানুষের কি পরিবর্তন এনেছে এবং এর ইতিহাসে অবদান রেখেছে তা নিয়ে আবর্তিত। এই জনগুষ্ঠি এই অঞ্চলে ইউরোপীয়দের আসার বহু শতাব্দী আগে থেকে বসবাস করে আসছিল। এরপর তাদের উপর স্প্যানিশদের ও আর ও পরে আসা আফ্রিকানদের প্রভাব পড়ে। এসব নিয়েই তাদের সংগ্রাম ও বেঁচে থাকার গল্পগুলো সৃষ্টি হয়েছে।
প্রথমে এটা সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে এক সপ্তাহ ব্যাপী থাকলেও ১৯৮৮ সালে এই উৎসব ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ অক্টোবর এই এক মাস পালন করা শুরু হয়। এই দিনগুলোতে ল্যাটিন আমেরিকান দেশ মাক্সিকো, চিলি ও কোষ্টারিকার স্বাধীনতা দিবস উৎসব পালন করা হয়। এটা মনে করিয়ে দেয় যে হিস্পানিক সংস্কৃতি দেশের সীমানার বাহিরে ও ছড়িয়ে থেকে সবাইকে একই বন্ধনে আটকে রেখেছে।
এই মাস হিস্পানিক মানুষের জীবনকথা, মূল্যবোধ তাদের সংস্কৃতি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলা কোন খাবারের রেসিপি, তাদের মানুষের পরিশ্রম ও প্রাপ্তি নিয়ে এগিয়ে চলছে। এখন নাগরিক অধিকার, নেতাদের কাজের স্বীকৃতি ও সম্মান দেয়া হচ্ছে এই মাসে। প্রতি বছর নতুন নতুন কিছু এর সাথে যোগ হয়ে এই মাসকে আরও অর্থবহ করে তুলছে। প্রতি প্রজন্মের মানুষ নতুন করে আমেরিকায় তাদের জীবন গাথা রচনা করে যাচ্ছে। এই সময় অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীকেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সবাই মিলে এই মাসকে অর্থবহ করে তোলে। ক্যালিফোর্নিয়াতে প্রচুর হিস্পানিক জনগুষ্টির মানুষ রয়েছে। তারা নিজেদেরকে এখানকার মানুষ মনে করে। পথে চলতে গেলে বিভিন্ন ল্যাটিন আমেরিকার দেশের সাইনবোর্ড চোখে পড়ে। অনেক স্প্যানিশ লিখা এখন কিছুটা বুঝতে পারি।
বিকেল বেলায় হাঁটাহাঁটির সময় একদিন হঠাৎ হুয়ানের সাথে পরিচয়। ঠিক চেনা জানা না, দেখতে দেখতে একদিন ওলা বা হ্যালো বলে সম্বোধন করলাম। সেও হাসিমুখে এগিয়ে এলো। একটু স্প্যানিশ ভাষা শিখছি তবে কথা বলার মত এখনও অবস্থা আসেনি। সেও এটা বুঝে ইংরেজিতে কথা শুরু করল। সে ভাল আছে, জানাল সে একজন মোটর মেকানিক, তার নিজের গ্যারাজ আছে, নিজের কেনা জায়গা। অনেক কাস্টমার আছে তার। অনেক গাড়ি তার গ্যারাজে রিপেয়ারের জন্য রেখে গেছে গাড়ির মালিকরা।
তার সম্পর্কে অনেক কথা জানলাম চেনাজানা মানুষের কাছে। ছোট বেলায় বাবা মার সাথে মাক্সিকোর কোন এক গ্রাম থেকে তারা আমেরিকায় ভাগ্যের অন্বেষণে আসে। ক্যালিফোর্নিয়াকে মাক্সিকানরা নিজেদের দেশ মনে করে। তবে আমেরিকার সরকার মনে হয় তা মনে করে কিনা জানি না, তবে বিশ পঁচিশ বছর আগে পরিস্থিতি হয়ত অন্য রকম ছিল। পড়াশোনা তার তেমন একটা না হলে ও সে ছিল উচ্চভিলাষী। তার টার্গেট ছিল তাকে এই আমেরিকার মাটিতে ভালভাবে বেঁচে থাকতে হবে। ফেলে আসা মেক্সিকতে সে ফিরে যেতে চায়না।
লস এঞ্জেলস শহরে সে মোটর মেকানিকের কাজ শিখে। এরপর সে একটা জায়গা দেখতে থাকে গ্যারেজের জন্য। তার ভাগ্য ভাল রাস্তার পাশেই সে জায়গা পেয়ে যায়, এবং লিজ নিয়ে ছোট পরিসরে গ্যারাজের কাজ শুরু করে। মেক্সিকান ও অন্যান্য গাড়ির মালিক তাদের গাড়ি রিপেয়ারের জন্য আসতে থাকে, আস্তে আস্তে তার গ্যারেজ এলাকায় পরিচিত হয়ে উঠে। সে পরিশ্রম করে টাকা জমাতে থাকে এবং সুযোগ পেয়ে জায়গাটা কিনে ফেলে।
সে এখন তার নিজের কেনা জমির উপর বানানো গ্যারেজের গর্বিত মালিক। এ ছাড়াও এই শহরে তার একটা বাড়ি আছে এবং তার কাছে আরও একটা বাড়ি কেনার টাকা রয়েছে, এখন তাই সে নতুন জায়গা বা বাড়ি দেখছে। তার গ্যারেজের পাশেই সে রকম একটা জায়গা আছে তবে সে জায়গা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে দেখা গেছে যে এর মাটির নীচে কিছু একটা আছে। এই শহরের মাটির নীচে মেট্রো, সুয়ারেজ ও বড় বড় নালা রয়েছে পানি নিষ্কাশনের জন্য। সব জায়গা সব কাজের জন্য উপযুক্ত না। হুয়ান একটা ভাল জায়গা বা বাড়ি কিনতে চায়, সেখানে সে এপার্টমেন্ট বানাবে এ ধরনের পরিকল্পনা তার রয়েছে। আমেরিকা তাকে অনেক দিয়েছে, সে এখন প্রতিষ্ঠিত। বিয়ে করে সংসারি হয়েছে বেশ আগে। তার দুটো সন্তান। তার স্ত্রী ও মেক্সিকান আমেরিকান, সে বাচ্চাদের লালন পালন ও সংসার করার পাশাপাশি বাকী সময় গ্যারাজে কাজ করে।
প্রতিদিন সকালে রাস্তার পাশে তার গ্যারাজের পার্ক করা গাড়ি গুলো সময় মত সরিয়ে নেয় তার স্ত্রী। এখানে বিভিন্ন রাস্তার পাশে ফ্রি পার্ক করার নিদিষ্ট সময় থাকে, এর আগে পরে গাড়ি না সরালে বেশ বড় ধরনের জরিমানা গুনতে হয়। অনেক প্রাইভেট কোম্পানি আছে তারা গাড়ি টো করে নিয়ে যায়, পরে জরিমানা দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হয়। হুয়ানের বউ এসব সুন্দর ভাবে ম্যানেজ করে। বিকেল সে আবার বাচ্চাদের স্কুল থেকে নিয়ে আসে। তার চকচকে গাড়ি ও বিলাসবহুল জীবন তার সফলতার কথাই জানায়। এদেশে ভাগ্য ও পরিশ্রম মিলে মানুষ অনেক এগিয়ে যায়। হুয়ানের জীবন একটা সফল জীবন এবং সে আর ও উন্নত জীবনের খোঁজে পরিশ্রম করে চলছে। হিস্পানিক হেরিটেজ মাসে একজন হিস্পানিক নাগরিকের জীবনকথা জেনে ভালই লাগল।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৩৪
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×