"ঐ দিন কাজ করছিলাম। আমাদের কিচেনের দরজার কাছে ক্যাশ কাউন্টার। ডিনার শেষ করে একটা ইতালিয়ান পরিবার বিল দেওয়ার জন্য ক্যাশ কাউন্টারের সামনে আসলো। ৩ বছরের একটা বাচ্চা মায়ের হাত ধরে আছে। বাচ্চাটা কিচেনের দরজা দিয়ে ভেতরে কাজ করতে থাকা আমার দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখলাম। একটু পর বাচ্চাটা মায়ের হাত ছেড়ে দিয়ে ভেতরে আসতে চাইলো। তার মা তাকে না করলেন। বাচ্চাটা একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার ভেতরে আসতে শুরু করল। এরপর বাচ্চার মা এগিয়ে এসে বাচ্চাটার সামনে বসে বুঝানো শুরু করল যে কিচেনে যাওয়া কেনো ঠিক না। কি কি বিপদ হতে পারে বাচ্চারা কিচেনে গেলে। পরে বাচ্চাটা আর সামনে আসলো না, মায়ের হাত ধরে দূরে দাড়িয়ে দাড়িয়েই আমার কাজ দেখলো।
আর আমাদের দেশে মায়েরা, যখন কোলে থাকে তখন যদি বাচ্চা খেতে না চায় তখনি বাচ্চাকে অভিশাপ দেওয়া শুরু করে। ৩-৪ বছরের বাচ্চা যদি একটু দুষ্টামি করে, তাহলে বাচ্চাকে চুলে ধরে গালে থাপ্পর দেয়, ৮-১০ বছরের বাচ্চাকে না পড়তে বসলে হাতের সামনে যা পায় তাই দিয়ে মারা শুরু করে।
তো আমাদের দেশের সেই বাচ্চাগুলো বড় হয়ে কথা শুনবে কেনো? আর একারণেই বাচ্চাগুলো বড় হয়ে ককটেল ধরে, বাসে আগুন দেয়..."
উপরের লিখাটার উত্তরে বলা যেতে পারে, "কিন্তু শুধু এই কারণেই বাচ্চারা বড় হয়ে ককটেল ধরে কিংবা বাসে আগুন দেয়- এইটা একটা ভুল অনুসিদ্ধান্ত। আবার এইসব দেশে যে সব বাবা মারা সন্তানদের সব সময় শাসন করেন না- এইটাও ঠিক নয়। হ্যাঁ, হয়ত তারা গায়ে হাত তোলেন না কথায় কথায়। তবে শাসন বারণ অনেক দেখেছি। শাসনের মাত্রা কিন্তু ব্যাক্তিবিশেষে ভিন্ন হয়। এইটা শুধু দেশ কালের ওপর নির্ভরশীল নয়। যে সন্তান কোনদিনই বাবা-মার শাসনের মুখোমুখি হয়নি সে যে বড় হয়ে গঞ্জিকাসেবী কিংবা রেপিস্ট হবেনা তা কি আগাম বলে দেয়া যায়? আমাদের দেশে কিংবা সব দেশের বাচ্চাদের বড় হয়ে অপরাধী হবার পেছনে নানান আর্থ-সামাজিক কারণ রয়েছে। শুধু একটিকে কারণ হিসেবে বেছে নিলে এইসব সমস্যার সমাধান করা কঠিন হয়ে যাবে।"
আমার উত্তর হবে এমন, "আমি সাধারণ একটি দৃষ্টিভঙ্গিতে কথাগুলো বলেছি। আমি জানি, অপরাধী হবার পেছনে নানান আর্থ-সামাজিক কারণ রয়েছে। এই অনেকগুলো কারণের মাঝে এটিও একটি কারণ বা কারণের সহায়ক।
ককটেল ধরা বা বাসে আগুন দেওয়া কথাগুলো এখানে মানসিকতার অবনতি বোঝাতে বলেছি। যে কেউ স্বীকার করবে যে, গায়ে হাত তোলাটা অনেক বড় একটা ফ্যাক্ট। শাসন বারণ বা ভালো মন্দ আলাদা করে বুঝিয়ে দেবার অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। তাই বলে গায়ে হাত তুললে বাচ্চাটাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা হবে না?
আসলে আমি আমার লিখায় ককটেল ধরা, বাসে আগুন দেওয়া এই সমস্যা গুলো নয়, বাচ্চাদের মানসিক বিকাশে মায়ের তথা বড়দের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিৎ এটাই বোঝাতে চেয়েছি।"
কেউ যদি বলেন, "ওদের শিক্ষার সাথে আমাদের অনেক তফাৎ ।" তাহলে বলবো, "আসলে শিক্ষার সাথে তফাৎ টা বাচ্চার মানসিক বিকাশে ততটা প্রভাব ফেলে না, যতটা প্রভাব ফেলে তাদের সাথে বড়দের আচরণ..."

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


