২০১৩ সালকে বিদায় জানাতে এবং ২০১৪ সালকে স্বাগত জানাতে গিয়েছিলাম মুখোসের শহর Venice! এ। মুখোসের শহর বললাম এ জন্য যে শহরটি মুখোসের জন্য বিখ্যাত। শত শত মানুষের ভিড় ঠেলে গিয়ে দাঁড়ালাম শহরের সাগর কোল ঘেঁষে, যেখানে মনেহচ্ছিল সাগর পাড়েও বুঝি একটা সমুদ্র রয়েছে, মানুষের সমুদ্র। সবার চোখ সাগরের দিকে। কারণ সাগরের বুকে সাজিয়ে রাখা ছোট ছোট বোট থেকে আতশবাজি ফুটানোর মাধ্যমে স্বাগত জানানো হবে নতুন বছরকে।
আমাদের পেছনে অসাধারন সুন্দর একটি স্টেজ সাজানো হয়েছে। সেখানে ৩১ তারিখ সন্ধ্যা থেকেই কনসার্টে গাইতে আসা গায়করা গান গেয়ে মানুষের মনোরঞ্জন করছিলো। উৎসবে আসা প্রতিটা মানুষের চোখ আনন্দ আর উত্তেজনায় চকচক করছিলো। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখলাম প্রতিটি ছেলে বা মেয়ে তাদের পছন্দের মানুষটির সাথে অনুষ্ঠানে এসেছে।
রাত ১২ বাজার ১০ সেকেন্ড আগ থেকে স্টেজে থাকা মাইকের মাধ্যমে সেকেন্ডগুলো উল্টো দিকে গোনা শুরু হল। ১২ বাজার সাথে সাথে পুরো ভেনিস শহরের আকাশ আলোকিত হয়ে গিয়েছিলো অসাধারন সব আতশবাজির আলোয়। রাতের আকাশে চাঁদ, সূর্য, তারা, সব জেনো একসাথেই উঠেছিলো। একটানা অনেক্ষন বাজি ফোটানো হল আর সেই সময়ে ভেনিসে থাকা প্রতি জোড়া চোখ আকাশের দিকে তাকানো ছিল।
এরপর শুরু হল মানুষের পাগল করা উৎসব উদযাপন আর নৃত্য, স্টেজ থেকে বাজানো গান আর মিউজিকের তালে তালে। প্রতিটি কাপলদের দেখলাম একে অপরের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। বাবাদের দেখলাম তাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের কাধের উপরে নিয়ে নাচতেছে। আমাদের মত ছোট ছোট গ্রুপে আসা ছেলে মেয়েরা পাগলের মত নেচে যাচ্ছিলো। বয়স্ক কাঁপলরা একটু সাইডে দারিয়ে নিজেদের মত আনন্দ করছিলো।
অবাক বিষয় এইযে পাগলের মত নেচে যাচ্ছিলো মানুষগুলো, এতে একজনের সাথে আরেকজনের ধাক্কা লাগছিল, কেউ হয়তো পাশের জনের পায়ে পাড়া দিচ্ছিল, কেউ হয়তো নাচের তালে তালে নিজের পরিচিত মানুষ রেখে অন্য কার সাথে নাচতেছিল, কাপলদের মাঝে ছেলেটি হয়তো নাচতে নাচতে সামনে চলে আসা অন্য একটি মেয়ের সাথে নাচ্ছিলো, অন্যদিকে মেয়েটিও পাশের অপরিচিত ছেলেটির হাত ধরে নাচতেছিল। কিন্তু কারো কোনো অভিযোগ ছিল না। কেউ কিছু মনে করছিলো না। যে যেভাবে পারছিল, আনন্দ করছিলো। আমরাও উদযাপন করেছিলাম প্রতিটা মুহূর্ত। নিজেদের ঘিরে নাচতেছিলাম আবার মাঝে মাঝে দল ছুটে চলে আসা অন্য মানুষদের সাথেও।
অনেক রাতে আমাদের শক্তি যখন প্রায় নিঃশেষ তখন আমরা ধিরে ধিরে ভিড় থেকে বেড়িয়ে আসলাম আর আসার সাথে সাথেই অনুভব করলাম আমাদের প্রত্যেকের প্রচণ্ড ক্ষুধায় অস্থির অবস্থা। রাত প্রায় ৪ টার দিকে কোনো রেস্টুরেন্ট বা বার খোলা না পাওয়ার কথা তবুও হাটা শুরু করলাম যদি খোলা পাই এই আসায়। পুরো ভেনিস শহরটাই পায়ে হাটা পথের। এখানে কোনো গাড়ি নেই, এমনকি সাইকেলও চলে না। শুধু একটা বাহন চোখে পরে, তা হচ্ছে ভেনিসের ঐতিহ্যবাহী নৌকা (গোন্দোলা)। রাজকীয় গোন্দোলাগুলোতে চড়ে পুরো ভেনিস দেখা যায়। যাইহোক শেষে আমরা একটা বাঙ্গালী কাবাবের দোকান খোলা পেয়েছিলাম এবং রাতের মত কোনোমত খুধা মিটিয়ে বন্ধুর বাসার দিকে যাত্রা শুরু করেছিলাম।
স্মৃতি হয়ে থাকার মত একটা রাত...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


