এসবের প্রচলিত ধারণা স্বভাবতঃই পুঁজিবাদ নির্ভর, এসব যে কোন নৈতিকতা নির্ভর ধারণা বা আদর্শের বিপরীতে অবস্থান করে।
সরাসরি প্রথমে “ইসলামি আদর্শের বিপরীত, নীতিবিরোধী” বললে আমাদের মনে ভেসে উঠবে 'মৌলবাদী', 'কট্টরপন্থী', 'গোড়া' ইত্যাদি নেতিবাচক সব বিশেষণ। তাই অন্যভাবে বলতে হল।
কারণ আমাদের গোড়ায় গলদ ('বিসমিল্লায় গলদ' বলব না)।
গোড়ায় গলদ কিভাবে?
লাভ ক্ষতি আর পুজির ব্যাপারে উক্ত ধারণা মনে এসেছে যখন পঞ্চম শ্রেণীর Elementary Mathematics বইয়ে নজর বুলাচ্ছিলাম। কেউ দ্বিধা করবে না, পঞ্চম শ্রেণীকে আমাদের পাঠগ্রহণের গোড়া বলতে। সেই গোড়াতেই পুঁজিবাদী ধারণা আমাদের মন-মগজে ঢেলে দেয়া হচ্ছে। গলদ এখানেই। গলদ আমাদের শৈশব জীবনের পাঠপরিক্রমায়। [[[যেগুলো আমরা নিরেট সাদা তুলতুলে মন নিয়ে, ভক্তি সহকারে গ্রহণ করি। এ সময়ে নতশিরে সব মেনে নেওয়া বৈ কোন চিন্তা মনে জাগে না। এসময়ে কাদামাটিকে নির্দিষ্ট একটি ছাচে ফেলে দিতে হয়, না হয় পরবর্তীতে বিরাট ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়, তাছাড়া পরবর্তীতে কাদা শুকিয়ে কঠোর হয়ে যায় বিধায় আকৃতি পরিবর্তন সম্ভব হয় না।]]] আর গোড়ায় গলদ বলেই এসবের বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দ করলেও তাকে বিনাবিচারে পাগল, বেআকল বলে ফেলি। এভাবে আমরাও হয়ে যাই মৌলবাদী, কট্টরপন্থী ও গোড়া পুঁজিবাদী।
লাভ-ক্ষতি-পুঁজি ইত্যাদির প্রচলিত ধারণা কিভাবে নৈতিক আদর্শের বিরুদ্ধে যায়?
পুজিবাদ একেশ্বরবাদী! এ মহান ঈশ্বরের বিভিন্ন রূপ ও নাম আছে। সবার কাছে পরম পূজনীয়। যে নামেই ডাকা হোক, যে রূপেই থাকুক, তার বৈশিষ্ট্য এক এবং অতুলনীয়। তার কোন সমকক্ষ নেই। এ ঈশ্বর যার, দুনিয়া তার হয়ে যায়!
পুজিবাদ নামক ধর্মে একমাত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হল অর্থ! আমরা তাহাকে 'টাকা' নামেই চিনি।
আমরা কিন্তু এও পড়েছি “অর্থই সকল অনর্থের মূল।” কি এক ব্লাসফেমাস কথা!! ((এখন হয়ত এমন ধর্ম-অবমাননাকর ভাব সম্প্রসারণ করা নিষেধ।বইতে আর নেই।))
এক 'ঘন্টা'য় অর্থের বহুমুখী পুজা শিখিয়াছি, পরের 'ঘন্টা'য় অর্থের অবমাননা সম্প্রসারিত করিয়া শিখিয়াছি। এরচে' বড় গলদ আর হতে পারে না।
পুঁজিবাদের কোন এক দেবতা আমাকে বারবার বিপথে ঠেলে দিচ্ছেন, যেন তাদের অবমাননা করতে না পারি অথবা যেন তাদের বান্দাদিগকে পথভ্রষ্ট বা ধর্মান্তরিত করতে না পারি।
আবার বিপথে যাবার পূর্বে মূলকথা সেরে ফেলতে চাই।
আমরা লাভ-ক্ষতি ইত্যাদির বিচার করি অর্থ দিয়ে। টাকা বেশি পেলেই আমার লাভ। টাকা কম পেলে আমার ক্ষতি। অন্য কোন মাপকাঠি ব্যবহার করলে তা টাকার সাথে “শিরক” হয়ে যাবে।
আমরা কখনো তার বিপরীত পথে চলার একটু দুঃসাহস দেখাইনা। গোটা দুনিয়া চুলায় গেলেও আমার টাকা বেশি পাওয়া চাই।
পঞ্চম শ্রেণীর গণিত বইয়ে শিখানো হচ্ছে- তুমি একটা সেবা বা বস্তু ক্রয় বিক্রয়ে যদি বেশি পেয়ে থাক তবেই তুমি লাভবান আর কম পেয়ে থাকলে তুমি ক্ষতিবান! তুমি টাকা জমালে তার উপর সুদ পাবা আর বিনিয়োগ করলে বিপদে পরতে পার। অর্থাৎ অপরের ক্ষতি হলেও তোমাকে লাভ করতে হবে, টাকা জমিয়ে রাখতে হবে।
এতে এটা শিখানো হয় না যে, যদি তোমার দ্বারা কোন মানুষ উপকৃত হয়, লেনদেনে যদিও তুমি কম টাকা পাও তবুও তুমি লাভবান । আর তোমার লেনদেন দ্বারা যদি কেউ ক্ষতির শিকার হয় তাহলে তুমি টাকা বেশি পেলেও ক্ষতিবান হলে।
ইসলাম বা যে কোন নৈতিক আদর্শে ------
যেখানেই উপকারিতা ও উত্তমতা সেখানেই লাভ, হোক তা বস্তুবাদী দৃষ্টিতে ক্ষতিজনক। আর যেখানেই খারাপ জিনিস সেখানেই ক্ষতি, হোক তা বস্তুবাদী দৃষ্টিতে লাভজনক।
অর্থ জমা থাকলে তা পুজি বা মূলধন নয়, বরংতা অন্যায়, এবং অর্থের অপব্যবহার। অর্থ জমা রাখলে ইসলাম কোন 'সুদ'জাতীয় পুরষ্কার দেয় না, বরং করারোপ করে। অন্যদিকে, ইসলাম উপার্জনের উপর করারোপ করে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০৩