ঘন চিনি নিয়ে কিছু বলতে গেলেই, প্রথমে বলতে হবে এর উদ্ভাবনের সেই মজার কাহিনী।
বিজ্ঞানের আরোও অন্যান্য আবিস্কারের মতো এই ঘন চিনির আবিস্কারো অনেকটা দূর্ঘটনা বশত। ১৯৩৭ সালে ইউনিভার্সিটির অব ইলিয়ন-এর ছাত্র মাইকেল ভেদা (Michael Sveda), জ্বরের ঔষুধ নিয়ে গবেষনা করছিলেন। মাঝে মাঝে সিগারেট ফুকা ফুকি। একটা পর্যায়ে সে মুখে মিষ্টি স্বাদ অনুভব করে। আরে একি কান্ড সিগারেট মিষ্টি কেন? বেশ কিছুক্ষন খুজে বের করে, মিষ্টি স্বাদটি এসেছে তার টেবিল থেকে। সিগারেটটি এক পর্যায়ে টেবিলে রেখেছিল, আর টেবিলে লেগে থাকা রাসায়নিক বস্তুর কারনেই তার মুখে মিষ্টি স্বাদ অনুভুত হচ্ছে।
কিন্তু সবচেয়ে অবাক হবার ব্যাপার হচ্ছে এই রাসায়নিক বস্তুর মিষ্টির তীব্রতা চিনির চেয়ে প্রায় ৩০-৫০ গুন বেশি। পরিক্ষা-নিরীক্ষার পরে জানা গেল এই রাসায়নিক পদার্থটির নাম সাইক্লামেট। এত্ত মিষ্টি যুক্ত একটি পদার্থ যা চিনির চাহিদা সহজেই মেটাতে পারে, এটা নির্সন্দেহে বিশাল আবিস্কার। সাথে সাথেই এর পাটেন্ট কিনে নেয় আমেরিকার DuPont নামক একটি রাসায়নিক কোম্পানি। এবং টার বেশ কিছুদিন পরেই ১৯৫০ সালের দিকে Abbott Laboratories পাটেন্ট কিনে নেয়, তারা ঔষুধে এর শুরু ব্যবহার করার জন্য প্রয়জনীয় গবেষনা শুরু করে।
গবেষনা করে তার প্রমান করে যে এটা ঔষুধে ব্যবহার করা যাবে, মূলত বিভিন্ন তিক্ত স্বাদ যুক্ত ঔষুধ যেমন: আ্যান্টিবায়োটিক, ফেনোবারবিটাল, ডায়াবেটিক ইত্যাদি ঔষুধের তিক্ত স্বাধ দূর করতে। Abbott Laboratories এর গবেষনার সব ফলাফল দেখে ১৯৫৮ সালে আমেরিকা তাদের GRAS (Generally Recognized as Safe) সনদ দিয়ে দেয়। সেই থেকে তারা সাইক্লামেট টাবলেট বাজারজাত শুরু করে যা মুলত ডায়াবেটিক রোগীরা বিভিন্ন খাবারে চিনির বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করত। পাশাপাশি তারা সাইক্লামেট সিরাপ ও বাজারজাত শুরু করে Sucaryl নামে, যা এখন আমেরিকা ছাড়া বিশ্বের অনেক দেশেই হরহামেশা ব্যাবহার হচ্ছে। যার প্রধান উপাদানগুলো হচ্ছে Sodium Cyclamate 50mg (952), Saccharin Sodium 5mg (954),Acid regulators (334, 500). দুঃখের বিযয় হলো যে রাসায়নিক পদার্থটি ১৯৬৯ সালে আমেরিকার ফুড & ড্রাগ প্রসাশন নিষিদ্ধ করেছে তা এখন বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে তো বটেই এমনকি ইউরোপের দেশগুলোতেও বাজারজাত হচ্ছে। পাবলিক গিলছেও সমানে।
এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসবে আমেরিকা কেন এই পদার্থটিকে নিষিদ্ধ করলো আর কেনই বা অন্যেরা হরহামেসা ব্যবহার করছে? তা নিয়ে আসছি পরে...........
সাইক্লামেট=ঘন চিনি: সাইক্লামেটের ২ ধরনের যৌগ আছে, সোডিয়াম/পটাশিয়াম সাইক্লামিক এসিডের সাথে যুক্ত হয়ে সোডিয়াম সাইক্লামেট/পটাশিয়াম সাইক্লামেট যৌগ তৌরি করে। আর এই সোডিয়াম সাইক্লামেটকেই বাংলাদেশে বলা হচ্ছে ঘন চিনি, যা আমরা বিভিন্ন খাবার বানাতে ব্যাবহার করছি, দাদা-দাদি, নানা-নানি, মা-বাবা কিংবা পরিচিত জনদের ডায়াবেটিকস হলে চিনির বিকল্প হিসাবে খেতে দেখছি, বিভিন্ন ঔষুধ প্রস্তুত কারকরা টাবলেটের তিক্ত স্বাদ ঢেকে রাখতে এই ঘন চিনির প্রলেপ দিচ্ছে, সিরাপের সাথে মিসাচ্ছে, সব চেয়ে মজার ব্যাপার হল খোদ আমেরিকা সাইক্লামেট খাবারের সাথে ব্যাবহার নিষিদ্ধ করলেও আমেরিকান কোম্পানি গুলো সাইক্লামেট দিয়ে বানানো খাবার বানাচ্ছে আমাদের মত দেশগুলোর জন্য। কোকা-কোলার মত একটি বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশের কারখানয় সাইক্লামেট মিসাচ্ছে তাদের পন্যের সাথে কিন্তু তারা কেন পারছে না আমেরিকায় সেই প্রটোকল ফলো করতে? বাধা কোথাই?
কেন সোডিয়াম সাইক্লামেড খাদ্য এবং ঔষুধে ব্যবহার নিষিদ্ধ হল? আমেরিকা নিষিদ্ধ করলেও আমরা করছি না কেন? সোডিয়াম সাইক্লামেড খেলে কি কি হবে? এসব বিষয়ে বিশদ আলোচনা থাকবে পরের পর্বে, সে পর্যন্ত সাথেই থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



