somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

পথ হতে পথে
আমার নাম - এম. জুবের রহমান। পেশায় একজন প্রকৌশলী। এ পর্যন্ত বাসা পরিবর্তন করেছি ২৪ বার , বাংলাদেশের পাড়া গাঁ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি পর্যন্ত । জেলা শহর, রাজধানী সব জায়গাতেই বসবাস করেছি ,বস্তিবাসী থেকে মিলিওনেয়ার সবার সাথেই মিশেছি।

বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের সাধারণ নির্বাচন

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সাধারণত টিমের সবাই একসাথে বসে লাঞ্চ করি। লাঞ্চ বিরতি এক ঘন্টা , তাই খাওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন বিষয়ে খাজুরে আলাপ হয়। সেদিন কথা উঠলো ভারতের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে। পাশে বসা চাইনিজ সহকর্মী ইন্ডিয়ান সহকর্মী কে জিজ্ঞাসা করলো ইন্ডিয়াতে তো ইলেকশন চলছে ? কে জিতবে ? বর্তমানে যিনি আছেন কি যেন নাম ? নরেন্দ্র মোদী - ও হ্যাঁ , মোদী উনি ই কি জিতবে আবার। ইন্ডিয়ান সহকর্মী দক্ষিণ ভারতের লোক , তামিল নাড়ুর মানুষ। সে বললো উনি জেতার সম্ভাবনাই বেশি তবে এবার গতবারের মতো উনার অতো জনপ্রিয়তা নেই।

- কেন ? কারণ টা জানতে পারি।
- মোদী আসলে গণতান্ত্রিক মন মানসিকতা ধারণ করেন না , অনেকটা নিজের সিদ্ধান্ত সবার উপর চাপিয়ে দিতে আগ্রহী। এটার ভালো দিক হলো যে কোনো বিষয়ে তড়িৎ সিদ্ধান্ত আসে কিন্তু খারাপ দিক হলো গঠনমূলক পরামর্শের পরোয়া নেই , জবাবদিহিতা নেই, একনায়কতান্ত্রিক কার্যকলাপ।
- তার মানে সে অনেকটা ট্রাম্প এর মতোই ?
- তার চেয়ে ও ভারতের অবস্থা ভয়ঙ্কর , এখানে তো সবাই ট্রাম্প এর কার্যকলাপ মনিটর করছে , বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এর প্রধানরা অনেক সময় ট্রাম্প এর সাথে দ্বিমত পোষণ করে, আবার কোর্ট এ ট্রাম্প এর অনেক সিদ্ধান্ত যেমন এক্সেকিউটিভ অর্ডার আটকে যায়। ভারতে তো মোদিকে আটকানোর মতো কেউ নেই। যা ইচ্ছা হয় করছে, অনেক টা লাগাম ছাড়া।
- তবে দুজনের রাজনীতির ভিত্তি কিন্তু সমান , ধর্মীয় বিদ্বেষ , ঘৃণা , সাম্প্রদায়িকতা , আর বর্ণবাদ কে পুঁজি করেই দুজন ক্ষমতায় এসেছে।

দক্ষিণ ভারতে কংগ্রেস বা বিজেপি কারোই বেইল নাই। এখানে স্থানীয় দলগুলিই ভোট পায় বেশি। আমি নিজে চেন্নাই ভ্রমণ করেছি। তখন তামিল নাড়ুতে ক্ষমতায় ছিলেন জয়ললিতা , ২০১৬ তে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখানকার মানুষ শিক্ষা দীক্ষায় অগ্রসর , আচার আচরণে ভদ্র , সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা নেই বললেই চলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইটি ইন্ডাস্ট্রি মূলত দক্ষিণ ভারতীয়দের দখলে (তাদের অবশ্য অত্যাধিক স্বজন প্রীতির কারণে বদনাম আছে )। বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মূল সূতিকাগার হলো পিছিয়ে পড়া উত্তর প্রদেশ , মহারাষ্ট্র , গুজরাট (গুজরাট অবশ্য গরিব নয়) এই রাজ্য গুলি। ইদানিং বিহার , আসাম এই রাজ্য গুলিতেও তারা ভালো নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির প্রধান স্লোগান ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়ন , কর্মসংস্থান সৃষ্টি , ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার আর দুর্নীতি দমন। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয় নি , ভারতে বর্তমানে বেকারত্বের হার সাম্প্রতিক সময়ের সর্বোচ্চ , কৃষক দের অবস্থা আরো করুন হয়েছে , কমে গেছে শ্রমের মূল্য , ঋণ এ জর্জরিত কৃষকদের মধ্যে বেড়ে গিয়েছে আত্মহত্যার হার , কৃষি ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অনেক কমে গেছে , দুর্নীতি কমেনি মোটেও , বেড়েছে ধর্ষণ , আর সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও হত্যা , গো মাংস ভক্ষণের অভিযোগে এই ০৫ বছরেই হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জন কে। সার্বিক অর্থনীতির অবস্থা ও ভালো নয় , জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নেমে গিয়েছে সর্ব নিম্নে।



অবস্থা বেগতিক দেখে এবার বিজেপি তাদের স্লোগান বদলে ফেলেছে , এবারের স্লোগান শক্তিশালী ভারত, মোদী ছাড়া নাকি ভারত দুর্বল হয়ে যাবে , পাকিস্তানের হম্বি তম্বি বেড়ে যাবে , তাদের আরেকটি তুরুপের তাস হলো এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ), বাংলাদেশী মুসলিম দিয়ে নাকি ভারত ভর্তি হয়ে যাচ্ছে , এনআরসি এর নাম করে আসাম দখলের পর এবার তাদের টার্গেট পশ্চিম বংগো , ত্রিপুরা তো আগেই কব্জা করেছে। তবে এসব স্লোগান কতটুকু কাজ দিবে বলা মুশকিল কারণ জনবহুল রাজস্থান ,মধ্য প্রদেশ , এগুলি এখন কংগ্রেস এর শাসনাধীন। রাহুল গান্ধী কে এতদিন পাপ্পু বলে পচানোর চেষ্টা চলানোর পর ও তিনি বেশ শক্তিশালী মুখ হিসাবে আবির্ভুত হয়েছেন। সাথে উত্তর প্রদেশ কব্জা করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তুরুপের তাস হার্ট থ্রব প্রিয়াঙ্কা কে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য আশাবাদী এবার এবার কংগ্রেস বা বিজেপি নয় ভারতের ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছে ৩য় শক্তি যার নেতৃত্ব দিবে তৃণমূল , প্রথম বাঙালি হিসাবে তিনি বসবেন প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে। তার এই আশাবাদ উড়িয়ে দেয়া যায়না। তিনি যোগ্য ও বটে , মোদী কিংবা রাহুল দুই জনের তুলনায় তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বেশি সমৃদ্ধ , ভারতের মতো বিশাল দেশে তার মতো বিশাল হৃদয়ের অধিকারী মানুষ ই দরকার। তবে ফলাফল যাই হউক ভারত কে সাধুবাদ জানাই কয়েকটি কারণে

১. ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তারা আজ ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছে।
২. কম বেশি অনিয়ম হওয়া সত্ত্বেও ভোটের ফলাফল মেনে নেয়ার মানসিকতা সব দলের ভেতরেই আছে।
৩. নির্বাচন কমিশন অনেক স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারে।

তাদের থেকে শেখার আছে অনেক কিছু।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:৪৬
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×