ভোর হবে হবে ভাব ,পাখিরা ঘুম ভেঙ্গে ডাকা ডাকি শুরু করে দিছে । মেঘ জেগে আছে । সারা রাত নিঘুম ,ঘুমার চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারে নি । পুলিশ তাকে খুজছে ।একটি মিথ্যে খুনের মামলা নিয়ে পালিয়ে আছে সে ।সে সব হারিয়েছে ,আর কিছু হারাতে চায় না। । আজ তাকে অনেক বড় কাজ করতে হবে । তার স্বপ্ন পুরনের জন্য করতে হবে , কিন্তু কিভাবে সে জানে না ।শুধু ভেবে যাচ্ছে ।
চেয়ারম্যান বাড়িতে মাইক বাজছে ,ভিতরে উৎসব মুখর পরিবেষ । করিম খুব চিল্লা চিল্লি করছে বাবুর্চি দের সাথে ,
ওই মিয়ারা ভালা কইরা রান্না কর , ঝাল নুন ঠিক মত দে ,কোন কিছু ভুল হইলে তোরে রান্না করুম কইলাম ।
দূরে চেয়ারম্যান সাহেব রহমত আলি চেয়ারে বসে পান চিবাচ্ছে ...
কিরে করিম আর কতো দূর লোকজন তো আওন শুরু করছে ,সব কিছু ঠিক ঠাক হইতাছে তো ? ঘুর ঘুর না কইরা সব কিছু ঠিক ঠাক মত দেখ ।
আজ চেয়ারম্যান সাহেবের মেয়ের বিয়ে । দূর দুরান্ত থেকে মানুষ জন আসতেছে । ধুম ধামে বিয়ের আয়োজন করেছেন চেয়ারম্যান । যাই হোক তার একটা মাত্র মেয়ে ।
বৃষ্টি বউ সেজে বসে আছে । আজ তার বিয়ে ।তার বান্ধুবিরা তাকে ঘিরে বসে আছে । মেহেদি দিয়ে হাত সাজানো হচ্ছে । তার মনে চাপা এক বেদনা নাড়া দিচ্ছে । তার চখের কোনে বিন্দু জল ।নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছে বিষ ভর্তি কাচের বোতল । আজ রাতেয় হয়তো সে সবাইকে ছেড়ে চলে যাবে ।
এইতো সেদিন বাবার হাত ধরে মেঘ এ গ্রামে আসে ,তার বাবা পেষায় স্কুল মাস্টার । দেখতে দেখতে অনেক সময় পারি দেয় । অঝস্র সৃতি ছরিয়ে ছিটে রয়েছে এ গ্রামের প্রতিটি কোনায় । আনন্দ বেদনাকে ঘিরে আর তিলে তিলে বড় হওয়া ।
মেঘ আর বৃষ্টি একয় ক্লাসে পড়ে ।এদের দুঝনের মাঝে দা কুড়াল সম্পর্ক তা প্রায় সকলের জানা ।বাড়িও পাশা পাশি ।একদিন ঝগড়ার মাঝে বৃষ্টি পাথর ছুরে মারে ,মেঘের মাথা ফেটে গিয়ে রক্ত পরেতে থাকে ।রক্ত দেখে থাকতে না পেরে সে নিজের রুমাল দেয়ে মেঘের কপালে চেপে ধরে থাকে । বৃষ্টির কান্না এবং তার কপালে রুমাল ধরে থাকা দেখে মেঘের সব রাগ পানি হয়ে যায় ।ধিরে ধিরে শত্রু থকে বন্ধু । এক পর্যায়ে বন্ধু থেকে ভালবাসা । যে মেয়েটির সাথে প্রায় ঝগড়া করতো একদিন মনের অজান্তে তাকেয় ভালবাসে ফেলে । তার প্রিয় তোতা পাখিটিও তাকে দিয়ে দেয় । যে পাখির আধো আধো কথা না শুনলে তার ঘুম আসতো না ।
সকলের চোখে ফাকি দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজা , নৌকায় ঘুরে বেড়ানো ,রাতের আধারে চুপি চুপি দেখা করা , বইয়ের ভাজে চিঠি দেওয়া আবার একজনের কষ্টে দুজনের মন খারাপ কর ।আর স্বপ্ন বুনা ।
বৃষ্টি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরে ।তাদের মাঝে দেখা সাক্ষাত প্রায় বন্ধ । এদিকে মেঘ বৃষ্টিকে না দেখে প্রায় পাগল । সে একটা চিঠি লিখল ,চিঠিটি পাঠাল বৃষ্টির বাসার কাজের লোকের মাধ্যমে, কিন্তু চিঠি বৃষ্টি না পেয়ে পেল তার বাবা । তার বাবা চিঠি পরে আগুন । এতদিন যে অন্যদের বিচার করতেন আর আজ তার মইয়ে অপরাধ করেছে।এটি তিনি মানতেয় পারছেন না ।তার মেয়ে তাদের মুখে চুন কালি মেখেছে । গ্রামে প্রেম করা অনেক নিচু মানের কাজ ।একবার এ রটনা রটলে রেহাই পাওয়া অনেক কঠিন । এ ঘটনা সবাই জেনে গেলে চেয়ারম্যানের মান সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে । এ ঘটনা সবার জানার আগেয় কিছু করতে হবে তাকে ।শুরু হলও বৃষ্টির জন্য পাত্র দেখা ।ভাগাতে হবে মেঘ কে । মেঘ কে এ গ্রাম থেকে চলে যেতে বলা হয় ।মেঘ গ্রাম থেকে যেতে অস্বীকার করে । সাজানো হলও মিথ্যে খুনের মামলা আশামি করা হলও মেঘ কে । এ খবর মেঘের বাবার মৃত্যুর কারন হয়ে দাড়ায় ।এ খবর তার বাবা মানতে পারে না ,অবশেষে হার্ট অ্যাটাক করে চলে যান অপারে ।মেঘ কে খুঁজছে পুলিশ ।
সন্ধ্যা । ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পরছে । বৃষ্টির জানালার পাশে মেঘ দারিয়ে ।একটু পর বিয়ে হবে বৃষ্টির । চারিদিকে সবাই ব্যস্ত । এটায় সুযোগ বৃষ্টিকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া অনেক দূরে ।
রাস্তা দিয়ে পালানো সম্ভব নয় সবাই চিনে তাকে ,খুব সহঝে ধরা পরবে ,ঝোপ ঝাড়ের মাঝ দিয়ে নদীতে নৌকা কোরে পালাতে হবে কিন্তু কেও দেখে ফেল্লে জীবন হারাতে হবে তাদের ।সন্ধ্যার পরে নদীর পারে লোকজন খুব কম থাকে । এটায় পালানোর পথ । এতগুলো লকের চোখকে ফাকি দিয়ে বের হতে হবে বৃষ্টি কে । তার হাত পা কাপছে । বৃষ্টি তার ছোট বোনকে খুলে বলে সব ।অনেক কষ্টে রাজি করায় ।তার বোন বোনের শুখের জন্য রাজি হয় । সে তার ছোট বোন কে বউ সাজায় এবং নিজে সাধারন পোশাক পরে নেয় তার উপর তার মায়ের বোরকা । তারা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে বিয়ের পোশাক পরিবর্তন করতে বলে যাতে তার বোনের উপর কোন দোষ না পরে ।
দ্রুত গতিতে তারা এগুচ্ছে । অনেক স্বপ্ন নিয়ে হেটে যাচ্ছে তারা ।মেঘের কপালে বিন্দু বিন্দু জল ।তার হাতে নির্ভর করছে দুটি জীবন ।একটু ভুল হলেয় মারা পরবে দুটি হৃদয় আর বেঁচে ফিরলে প্রাণ পাবে দুটি হৃদয় ।যেভাবেয় হোক তাকে বাঁচতে হবে।এই মেয়েটি সব কিছু ছেড়ে তার কাছে চলে এসেছে ।এখনো পৃথিবীকে বুঝলনা ,জানেনা অনেক কিছু,সুধু স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে ,সাজাতে শিখেনি ।মেয়েটি মেঘকে ছাড়া কিছুই ভাবতে শিখেনি ।তার সব চাওয়া পাওয়া মেঘ কে ঘিরে ।অন্ধকারে চারপাশ ছেয়ে আছে । একটি মাত্র নৌকা পরে আছে নদীর তীরে। ভাল কিনা জানে না ।পালানোর জন্য উঠে পরে । কিন্তু তারা দেরি করে ফেলেছে । দূরে এক ঝাক মানুশ মশাল জালিয়ে তাদের দিকে আসছে । নৌকা ধিরে ধিরে দূরে চলে যাচ্ছে । বৃষ্টি তার বাবাকে দেখতে পাচ্ছে ।তার হাতে একটা বন্দুক ,তাদের দিকে তাক করানো ।ঝুম বৃষ্টির মতো গুলি নিক্ষেপ হচ্ছে তাদের দিকে ,এ নিষ্ঠুর মানুশ গুলর কাছে দুটি হৃদয় যেন বেলুনের মতো ।আকাশে শ্রাবণের মেঘ ,গুরি গুরি বৃষ্টি হচ্ছে । মেঘ বৃষ্টিকে জরিয়ে ধরে আছে । ধিরে ধিরে ভেসে যাচ্ছে তারা ...!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




