তোমার সাথে আমার একটা দান্ধিক অপ্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিল। যা আমাকে প্রতি নিয়ত স্বপ্ন দেখাত, আমার মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা বোধ জন্মে, যার ফলে রঙ বা কালার সম্পর্কে আমার একটা অনিশ্চিত যোগাযোগ শুরু হল, আমি ঘন কালোর
মধ্যেও অন্য রকম রঙের আস্তরণ লক্ষ্য করতাম। পাথর স্থানীয় একজন হয়ে, প্রায়ই বুঝতে পারতাম একটা অতিকায় পাথরে ভাসছে আমার জীবন।বেশ কিছু অবান্তর অবদমনমুলক কামনা চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়ছে আমার জীবনে,তাই বলা যায় একটা যন্ত্রণাদায়ক অথচ নিরুপায় আমি সেই পাথরে ভাসছি। আমি জানি যে, ভালবাসা মানুষকে এক ধরনের নিশ্চুপ মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। যেহেতু মৃত্যু সম্পর্কে আমি প্রায়ই স্পর্শ কাতর, তাই আমার মধ্যেও বিদ্যুৎ সঞ্চালনের মত প্রেম বোধ আবির্ভুত হল।
কিছুটা সময় নিয়ে হলেও যখন আমাকে আমি বুঝতে পারি, তখন প্রকৃত আবেগি কিংবা নিরাবেগি কোনটাতেই নিজেকে দাঁড় করাতে পারিনা। হয়তো আমি যতটা আবেগি ঠিক ততটা বাস্তববাদী। যতটা আধুনিক ঠিক ততটা প্রাচীন পন্থি। সবমিলিয়ে নিজেকে প্রেমিক ভাবতে খারাপ লাগেনা।
প্রায় সময় তোমার সাথে একটা যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করতাম। যেহেতু আবহাওয়া অফিস আমার রেডিওতে তোমার কোন খবরই বলবে না। তাই সকল প্রকার ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কাছে কোন প্রকার আশা ব্যাতি রেখে,আমি তোমার সাথে আন্তঃ মন সম্পর্কের সেতু বন্ধন রচনার চেষ্টা করে যাচ্ছি নিরন্তর। আমার যে সত্ত্বাটি প্রাচীন অথচ প্রেমিক সে সত্ত্বা দিয়ে তোমার সাথে যোগাযোগের অপ্রচলিত নিয়মে এগিয়ে যাচ্ছি।
জীবনে কেউ কখনো আমাকে কোন প্রকার কথা দেয়নি। তাই কথা রাখার প্রশ্নই আসেনা। স্কুল ছুটির পর প্রায়ই এদিক ওদিক হাঁটা হাঁটি করতাম, মনে করার চেষ্টা করতাম কেঊ আমাকে কথা দিয়েছে কিনা, নিজের মধ্যে একধরনের চঞ্চলতা বোধ করতাম, ভয়ঙ্কর রকমের একাকীত্ব আমাকে গ্রাস করতো। একধরনের অবচেতন মনেই স্কুল ছুটির পর হাঁটা হাঁটি করতাম। আমি ভুলে যেতাম যে, কেউ আমকে কোন প্রকার কথা দেয়নি। পুনঃ পুনঃ আমি একই কাজ করতাম, অতঃপর মনে করার চেষ্টা করতাম কেউ আমাকে কথা দিয়েছে কিনা। নিরন্তর আমার এই চেষ্টায় কারও কিছু এসে যেত না। যাতনার রঙ যতই স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হতে শুরু করল, ততই আত্ম সংঘর্ষে প্রবিষ্ট হতে থাকে আমার মন।
আমার শৈশব আমার সামনেই হেঁটে যায়, সত্যি বলছি! কখনও ছুঁতে পারি নি। কাকের তাড়া খাওয়া মুরগির বাচ্চার মতো ক্রমাগত চিৎকার করতে থাকি। এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যায় আমার প্রতিটি স্বত্বা। ক্রমাগত কান্না করতে থাকি নিজের মনে। চোখে পানি ছিলনা বলে আমার যন্ত্রণারও শেষ ছিলনা। আমার নিরাবেগি চেহারায় কেউ দেখতে পেতনা আমার ক্ষরণ। এরূপ পরিস্থিতিতে সবাই আমার দিকে আপত্তিকর দৃষ্টিতে তাকাতে লাগল।
মুলি বাঁশে ফুল আসলে চাষিরা ইঁদুর বন্যা আশা করে। পৃথিবীতে এমন প্রাচীনতম মানুষ ও আছে যারা প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে ঝড়ের গতিবিধি সম্পর্কে বলে দিতে পারে। আমার এসব কথাবার্তা তোমার কাছে অসংলগ্ন এবং নিছক আত্ম কথন মনে হতে পারে। আসলে আমার নিয়তিই আমাকে টেনে চলেছে ধুসর অন্ধকারে, আর অস্থিরতার কাছাকাছি হয়ত ক্লান্তিই আমার পরম কামনা। ওখানে পৌঁছানোর কোন সিগনাল আশা না করেই আমি মৃত্যুর কাছাকাছি কোন একটি জায়গায় পৌঁছে যাব।
ডান হাতে বাম হাতে সাঁতার কাটি, আত্মাভিমানে হত্যা করি নিজের স্বপ্নকে, অপেক্ষার প্রহর গুনি, এদিক ওদিক ছুটো ছুটি করি অপ্রিয় কামনার যন্ত্রণায়। আমি প্রায়ই অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের চেষ্টা করতাম। এটাকে তোমার বাতুলতা মনে হতে পারে। ঘন সবুজ আমার কাছে পীড়াদায়ক বলে মনে হতো। আমি চারা গাছে পোকার আক্রমণ দেখে আনন্দিত হতাম। একবার এক মেয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছিল আমার প্রিয় রঙ কি, উত্তরে বলেছিলাম অন্ধকার। আবার প্রশ্ন করেছিল আমার প্রিয় ফুল কি, বলেছিলাম রক্তাক্ত কাল চোখ। প্রিয় ব্যক্তিত্ব-শয়তান, কামনা-ক্লান্তি, লক্ষ্য-পরাজয়, গন্তব্য-মৃত্যু। এসব প্রশ্ন আমার কাছে অসস্তিকর ছিল। আমার উত্তরে সে প্রায়ই হতাশ হত। পরবর্তীতে আমার সাথে আলাপ জমানোর চেষ্টা করত। এবং পুনরায় হতাশ হত।
আমার পাড়ার ছেলেদের আমি প্রায়ই গালিগালাজ সম্পর্কে একটা নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করতাম। শুরুতে তাদের আমাকে দিয়ে শুরু করতে বলতাম। তাদের গালিতে যেন ক্রোধ ফুটে উঠে সে জন্য আমি তাদের আমার দুর্বলতা সম্পর্কে বলে দিতাম। আমার সকল খারাপ দিক আমি তাদের কাছে তুলে ধরতাম। মিথ্যা বলার সবচেয়ে সহজ কৌশল তাদের শিখিয়ে দিতাম। কথা দিয়ে কথা না রাখার মৌলিকত্ব সম্পর্কে একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণও তাদের সামনে উপস্থিত করতাম।
হাঁটা হাঁটিতে এত অভ্যাস গড়ে উঠা সত্বেও আমি মানুষের ক্ষত চিহ্ন পড়তে পারতাম না। কার ক্ষত কত গভীর, কার আকাশ কত নীল, কার নদীতে কত জল এসব হিসাব আমাকে গোলমেলে করে ফেলত, যা আমাকে দিয়ে অপরাধের সংজ্ঞা নতুন করে লিখিয়ে নিত।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



