পিলখানা: ষড়যন্ত্র, নাটক আর এক বানরের দোল —
পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে আমরা অনেকেই বছর ধরে রাজনৈতিক প্রোপাগাণ্ডা হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাপ্রবাহ এমন কিছু টুকরো ছুড়ে দিচ্ছে যে—এতে কেউ কেউ ভারতীয় গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের (র-এর) অংশগ্রহণের কথা বলছেন; আবার অন্যদিকে, সেখানে নাম জড়াচ্ছে দেশের বিখ্যাত স্টেরয়েড-চালিত শোম্যান সোহেল তাজেরও। যেভাবে সবকিছু মিলে না—তাতে একরকম কৌতুক-মিশ্রিত নাটক দেখা যাচ্ছে।
লেখচিত্র—র কি আছে, নাকি নেই?
পিলখানা হত্যাযজ্ঞের মর্মে আছেন প্রশ্ন আর সন্দেহ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কিছুকিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন—এমন জটিল অপারেশনে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপ যুক্তিযুক্ত মনে হতে পারে। তবে এটা ছাড়া অন্য কথাও কম হাস্যকর নয়—ধুরন্ধর সংস্থা কী করে এমন ঘটনা ঘটাতে দেশের মাঠের সবচেয়ে ‘ঠাণ্ডা মাথা’ বদমাশদের বোঝানো ছাড়াই একরকম পেশী-শোস্টারদের (হ্যাঁ, সোহেল তাজদেরই ইঙ্গিত) ওপর ভর করবে?
এখানে দ্বৈত যুক্তি কাজ করে: একদিকে ষড়যন্ত্রপন্থীরা আর্গুমেন্ট দেন—“র-এর মতো সংস্থা পারফেক্ট প্ল্যান করতে পারে।” অন্যদিকে হিউমারিস্টেরা কটাক্ষ করেন—“র-এর লোকেরা কি জিমের ওজন উত্তোলন ইভেন্ট হোস্ট করবে?” ফলাফলে মিশে যায় সন্দেহ, কৌতুক আর রাজনীতির রঙিন বর্ণ।
সোহেল তাজ—পুরষ্কৃত নাটকী না নকশা করা বলি?
সোহেল তাজ—একজন মানুষ যিনি নিজের শরীর আর স্টেজ-হিসাব দিয়ে মানুষের চোখ ধরেন। তিনি হয়তো ভাবতেন—নিজেকে ঘষলে পরিচিতি মেখে যাবে; কিন্তু ইতিহাস এবং রাজনৈতিক মশাল খুঁজে ফেরে না। তদন্ত দল তাঁর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা বসাতে সাহস দেখায়—এমনকি বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়া পর্যন্ত ঘটনা ঘটেছে। ভাবুন তো—পেশির জোরে নাম করা মানুষটিকে প্লেনে উঠতেই বাধা! এখানে কমেডির এবং ট্র্যাজিকোর মিশেল একসাথে দেখা যায়।
তাই তাঁর পরবর্তী কৌশল স্পষ্ট—ক্ষমতাসীনদের মন জয় করতে নাচাবাস, কসরত আর গালিগালাজ—সবই সাজানো হাস্যরস। তিনি হয়তো এখন নিজের নামের পাশে ‘নাট্যশিল্পী’ লেবেল জুড়তে মরিয়া। কিন্তু প্রশ্ন হলো—কতটা সফল হবে? যারা রাজনীতির আসলে খেলা জানেন, তারা জানেন: পুতুলকে যখন দরকার নেই, তখন পুতুলকে গুটিয়ে ফেলা হয়।
বদলে যাওয়া পরিপ্রেক্ষিত—কোথায় শেষ ফল?
পিলখানা হত্যার রক্তের দাগ সময়ের সঙ্গে মুছবে না। এমন অভিযাগ, সন্দেহ আর তালিকা—সবই শেষ পর্যন্ত কাউকে দায়ী করতেই চায়। সোহেল তাজ কি সেই দায়ী নাম হবে? কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না; তবে বাস্তবতা বলছে—যতই তিনি ছেলেখেলা করেন, ক্ষমতাসীন মহলের চোখ থেকে সরতে পারবেন না। তার পিতার শত্রুদের মনে রাখা, ইতিহাসের বদলা-চাহিদা—এসব মিলিয়ে তাঁর মুক্তি মোটেই সহজ হবে না।
এখানে এক ব্যঙ্গকরী প্রবাদ প্রাসঙ্গিক: ‘হনুমানের পাছা জন্ম থেকেই লাল।’ বানর তার নিজের পাছা যতই থাপড়ে লাল করুক—সে বানরই থাকবে। সোহেল তাজ যতই কসরত দেখাক, যতই নাটক সাজাক—তিনি কিছুতেই ‘দলের একজন’ হয়ে উঠবেন না; তিনি থাকবে এক বহিরাগত, এক সন্দেহভাজন চরিত্র।
রাজনীতি, নাটক ও নায়কের পরিণতি
পিলখানা কাহিনি—শুধু একটি হত্যাকাণ্ডের গল্প নয়; এটি রাজনীতির, ষড়যন্ত্রের ও ব্যক্তিগত নাটকের সমন্বয়। এখানে আছে আন্তর্জাতিক অনুমান, আছে ভেতরের খেলোয়াড়দের চাল, আছে একটি নাম—সোহেল তাজ—যিনি হয়তো একসময় নিজের অতীত ভুলে যেতে চেয়েছিলেন, আর এখন সেই অতীতই তাকে ঘিরে রেখেছে।
ব্যঙ্গাত্মক করে বললে—রাজনীতির মঞ্চে কখনো কখনো বানরের দোল দর্শককে বেশি আকর্ষণ করে; কিন্তু শেষ সংশ্লেষে, মঞ্চ থেকেই সেই বানরকে নামাতে কখনো দ্বিধা করে না নায়করা। পিলখানা মামলায় যদি ইতিহাসের জাল টুকরো হয়ে ওঠে—তবে সেই জালের এক কোণায় সোহেল তাজের নাম লেখা থাকতে পারে।


অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



