somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সজীব ওয়াজেদ জয়ের খোলামেলা স্বীকারোক্তি ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা

২৪ শে অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সজীব ওয়াজেদ জয়ের খোলামেলা স্বীকারোক্তি ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা




বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাম্প্রতিক বক্তব্য নতুন এক রাজনৈতিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জুলাই আন্দোলন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং চলমান অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে জয় এমনভাবে মুখ খুলেছেন, যা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি সমালোচনাও বটে, আবার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মহলে এক ভিন্ন বার্তাও পাঠাচ্ছে।

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয় অকপটে স্বীকার করেন, “জুলাই আন্দোলনে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণে ভুল ছিল।” তাঁর ভাষায়, “সব মৃত্যুই দুঃখজনক, প্রতিটি ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত হওয়া উচিত।”
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি বিরল এক উদাহরণ— যেখানে কোনো প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য অতীতের ভুল স্বীকার করে নৈতিক অবস্থান গ্রহণ করেছেন।

তবে এখানেই থেমে থাকেননি জয়। তিনি স্পষ্টভাবে বর্তমান ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারের মানবাধিকার রেকর্ড ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চর্চা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর অভিযোগ— “এখন যা হচ্ছে তা আসলে আমার মা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা। বিচারের আড়ালে চলছে রাজনৈতিক খেলা।”

জয় আরও বলেন, “কেবলমাত্র একটি সর্বসমন্বিত ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই বাংলাদেশকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পথে ফিরিয়ে আনতে পারে। আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে তুলে নিতে হবে।”
তাঁর মতে, নিষেধাজ্ঞার রাজনীতি গণতন্ত্রের চর্চাকে সীমিত করছে এবং নির্বাচনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে আন্তর্জাতিক মহল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জয়ের এই বক্তব্য কেবল তাঁর দলের পক্ষে নয়; বরং এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ আহ্বান।
তিনি যেখানে একদিকে অতীতের দায় স্বীকার করেছেন, অন্যদিকে বর্তমান সরকারের নীতি-অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছেন— সেই ভারসাম্যই তাঁকে আন্তর্জাতিক পরিসরে এক “বিশ্বাসযোগ্য কণ্ঠস্বর” হিসেবে তুলে ধরছে।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ১,৪০০ পর্যন্ত হতে পারে— যা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংস রাজনৈতিক অধ্যায়গুলোর একটি। এ প্রসঙ্গে জয় মন্তব্য করেন, “স্বাধীন তদন্ত ছাড়া কোনো জাতিই শান্তি পায় না।”
তাঁর এই মন্তব্যকে অনেক পর্যবেক্ষক আন্তর্জাতিক তদন্ত বা নিরপেক্ষ কমিশনের প্রতি এক নৈতিক সমর্থন হিসেবেই দেখছেন।

এদিকে, পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোও বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে ক্রমেই সমালোচনামুখর হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাম্প্রতিক বিবৃতিতেও একই উদ্বেগ প্রতিফলিত হয়েছে— গণগ্রেপ্তার, বিচারহীন আটক এবং রাজনৈতিক দমননীতি বাংলাদেশের বৈশ্বিক ভাবমূর্তিকে গভীর সংকটে ফেলেছে।

এই প্রেক্ষাপটে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য যেন বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের বিকল্প এক কণ্ঠস্বর। যিনি শুধু রাজনীতিক নন— তিনি প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের প্রতীক, “ডিজিটাল বাংলাদেশ” -এর স্থপতি। এখন তিনি সেই ভাবমূর্তিকে ব্যবহার করছেন গণতান্ত্রিক আদর্শ পুনর্গঠনের পক্ষে বক্তব্য রাখতে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জয়ের এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা বোঝার এক জানালা খুলে দিয়েছে।
তিনি দেখিয়েছেন, অতীতের ভুল স্বীকার করেও একজন রাজনীতিক কীভাবে ভবিষ্যতের জন্য দায়িত্বশীল বার্তা দিতে পারেন।

আজ যখন বিশ্ব একে একে বর্তমান সরকারের নীতিগত অবস্থান থেকে দূরে সরে যাচ্ছে— তখন সজীব ওয়াজেদ জয়ের স্পষ্ট, মানবিক ও আত্মসমালোচনামূলক বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিরল আশার সঞ্চার করছে।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অন্ধকারের মধ্যে তাঁর কণ্ঠ যেন এক আলোর রেখা— যা মনে করিয়ে দেয়, “সত্যকে বলা, সেটাই নেতৃত্বের প্রথম শর্ত।”[/su
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:০২
১৮টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×