somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রাম্প বনাম পুতিন: কে জিতবে এই ভূ-রাজনৈতিক দাবাখেলা?

২৬ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ট্রাম্প বনাম পুতিন: কে জিতবে এই ভূ-রাজনৈতিক দাবাখেলা?



বিশ্ব রাজনীতির দাবার বোর্ডে আবারও উত্তেজনা বেড়েছে। একপাশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, অন্যপাশে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ইউক্রেন যুদ্ধের চার বছর পার হয়ে পঞ্চম বছরে প্রবেশের প্রাক্কালে, ট্রাম্পের নতুন নিষেধাজ্ঞা ও নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো যেন এই প্রশ্নকে আরও তীব্র করেছে—
-> কে শেষ পর্যন্ত জিতবে?
-> ট্রাম্প কি যুদ্ধ থামাতে পারবেন, নাকি পুতিন আবারও কৌশলে বিশ্বকে নিজের দিকে টেনে নেবেন?

নতুন নিষেধাজ্ঞা, পুরোনো সংকট
গত বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতিও দিয়েছে—যার ফলে কিয়েভ এখন চাইলে রাশিয়ার অভ্যন্তরেও হামলা চালাতে পারবে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে আছে ট্রাম্পের হতাশা। ভ্লাদিমির পুতিন ও ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথোপকথনের পর তিনি বুঝেছেন—দুই পক্ষই অনড়, এবং কোনো পক্ষই আপসের পথে যেতে রাজি নয়।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই নিষেধাজ্ঞা বা অস্ত্র অনুমোদন—এগুলো কি যুদ্ধের গতিপথ সত্যিই বদলাতে পারবে?

রাশিয়ার সহনশীলতা ও পশ্চিমের সীমাবদ্ধতা
২০২২ সালে ইউক্রেন আগ্রাসনের পর থেকেই রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এটি এখন ১৯তম দফার নিষেধাজ্ঞা, কিন্তু কার্যকারিতা আগের মতো নেই।
চীনের ছায়া-সমর্থন ও বিকল্প বাজারের কারণে রাশিয়া এখন অনেকটা ‘নিষেধাজ্ঞা-সহনশীল’ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

ইউক্রেনের হাতে উন্নত ট্যাংক, ড্রোন, এমনকি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানও গেছে, কিন্তু যুদ্ধের চিত্র বদলায়নি।
এমনকি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার অনুমোদনের পরও রাশিয়া নিজের অবস্থান থেকে এক ইঞ্চি সরেনি।

অর্থাৎ, চাপ বাড়ছে, কিন্তু ফল আসছে না।

ট্রাম্পের হিসাব—পুতিনের কৌশল
ট্রাম্প নিজে বিশ্বাস করেন “বড় যুদ্ধ নয়, বড় চুক্তিই সমাধান।” কিন্তু রাজনীতির কূটচাল সবসময়ই একমুখী হয় না।
পুতিন জানেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে ইউক্রেন যুদ্ধ আসলে একধরনের অবাঞ্ছিত বোঝা।
তাই রাশিয়া যুদ্ধ লম্বা করতে চায়—যতদিন আমেরিকান করদাতারা ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
অন্যদিকে, ট্রাম্প চান দ্রুত যুদ্ধের ইতি টেনে নিজেকে শান্তির মধ্যস্থতাকারী নেতা হিসেবে তুলে ধরতে।

কিন্তু এ দুই ইচ্ছাই একে অপরের পরিপূরক নয়।
ফল—চাপ, জট, এবং অচলাবস্থা।

“মূল্য চোকানোর” কৌশলের যুক্তিগত ভুল
পশ্চিমা বিশ্বের নীতিনির্ধারকেরা দীর্ঘদিন ধরে ধরে নিচ্ছেন, রাশিয়ার ওপর যত চাপ বাড়বে, পুতিন তত নতি স্বীকার করবেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যদি পুতিন সত্যিই “ইউক্রেন দখল না করা পর্যন্ত থামবেন না” বলে স্থির থাকেন—তাহলে বাড়তি নিষেধাজ্ঞা বা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে কি তাঁর মন পরিবর্তন সম্ভব?

অর্থনৈতিক চাপ রাশিয়াকে কষ্ট দিচ্ছে, কিন্তু তা যুদ্ধ থামানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
বরং দীর্ঘমেয়াদে এই চাপ রাশিয়াকে আরও আত্মনির্ভরশীল করছে, পশ্চিম থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে চীন ও গ্লোবাল সাউথের দিকে।

যুদ্ধবিরতি কি সম্ভব?
নতুন নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শিগগিরই শেষ হবে—এমনটা ভাবা অবাস্তব।
বরং যদি পশ্চিমা বিশ্ব কোনো বাস্তব দর-কষাকষির পথ খোলে, তবেই যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি হবে।
সম্ভবত এর মানে এমন একটি সমঝোতা, যা রাশিয়ার জন্য কিছুটা সুবিধাজনক, যেমন—দনবাস অঞ্চল দখল রাখার অনুমতি।
এটি ইউক্রেনের জন্য অন্যায় হলেও, আরও বড় ধ্বংস ঠেকাতে হয়তো এটিই সবচেয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান।

শেষ পর্যন্ত কে জিতবে?
এই যুদ্ধের জয় বা পরাজয় শুধু ট্যাংক বা ক্ষেপণাস্ত্রে নির্ধারিত নয়; বরং কূটনীতি, অর্থনীতি ও জনগণের সহনশীলতায় নির্ভর করছে।
রাশিয়া হয়তো সামরিকভাবে কিছুটা এগিয়ে, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে একঘরে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র এখনো শক্তিশালী, কিন্তু অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বাস্তব সীমা উপেক্ষা করলে সেই শক্তির ফলাফল উল্টো হতে পারে—যেমনটা ভিয়েতনাম, ইরাক ও আফগানিস্তানে দেখা গেছে।

উপসংহার
এই মুহূর্তে কেউই জিতছে না।
পুতিন যুদ্ধ থামাচ্ছেন না, ট্রাম্প শান্তি আনতে পারছেন না।
তবুও ইতিহাস বলছে—যে নেতা “কৌশলগত ধৈর্য” দেখাতে পারবেন, তিনিই শেষ পর্যন্ত জিতবেন।

হয়তো সময়ই একমাত্র বিচারক, যিনি বলবেন—এই বিশ্ব দাবার বোর্ডে ট্রাম্পের চাল জিতবে, নাকি পুতিনের প্রতিরোধই ইতিহাসে টিকে থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:২৯
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×