
ভূমিকা
বাংলাদেশে অপহরণ নিয়ে নানা রহস্যময় ঘটনা ঘটে, কিন্তু সম্প্রতি যে কাণ্ডটি গাজীপুর থেকে শুরু হয়ে পঞ্চগড়ে গিয়ে শেষ হলো—তা সত্যিই নাটকীয়।
মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী নামে এক খতিব দাবি করেছিলেন, তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।
কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ট্র্যাকিং ও চিকিৎসকের রিপোর্টে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো এমন সব অসঙ্গতি—যা গোটা কাহিনীটিকে পরিণত করেছে এক অবিশ্বাস্য নাটকে।
ঘটনাপ্রবাহ
২২ অক্টোবর সকাল ৭টা।
টঙ্গীর শিলমুন ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে মুহিব্বুল্লাহর “অপহরণের” খবর ছড়িয়ে পড়ে।
পরদিনই তাকে পাওয়া যায় পঞ্চগড়ে—হাত-পা বাঁধা, ক্লান্ত অবস্থায়।
গোটা দেশ ভাবল, একজন ধর্মীয় নেতাকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করা হয়েছে।
কিন্তু তদন্ত শুরু হতেই পুলিশ পেয়ে যায় প্রথম ক্লু:
ফুটেজে দেখা যায়, কথিত “অপহরণের” সময় তিনি একাই দ্রুত হেঁটে যাচ্ছেন।
অ্যাম্বুলেন্স? দেখা মেলেনি।
আরও চমকপ্রদ তথ্য—তিনি টানা দুই কিলোমিটার হেঁটে যান, তারপর নিজেই যানবাহনে চড়ে অদৃশ্য হন।
সিসিটিভি বনাম দাবি
যেখানে তিনি বলেছিলেন—“অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নেয়া হয়েছে”,
ফুটেজে দেখা গেল—“তিনি নিজেই রওনা হয়েছেন”।
এই বিপরীত বাস্তবতা পুলিশের চোখ খুলে দেয়।
মোবাইল ট্র্যাকিংয়ে পাওয়া যায় তার চলাচলের স্পষ্ট রুট:
টঙ্গী → সিরাজগঞ্জ → পঞ্চগড়।
অর্থাৎ, কেউ অপহরণ করেনি; তিনি নিজেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গিয়েছেন।
চিকিৎসকের রিপোর্টে ফাঁকফোকর
আরেকটি বড় ধাক্কা আসে মেডিকেল রিপোর্টে।
মুহিব্বুল্লাহ দাবি করেছিলেন, তাকে নির্যাতন করা হয়েছে।
কিন্তু পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন বলেন—
“দেহে কোনো আঘাতের দাগ পাওয়া যায়নি।”
শুধু ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়েছিল।
অর্থাৎ ‘নির্যাতনের গল্পটিও’ মিলে না বাস্তবের সঙ্গে।
সাংবাদিকের ছায়া
তদন্তে আরও এক নতুন চরিত্র যোগ হয়—সাংবাদিক ইলিয়াস।
পুলিশের দাবি, তিনিই পরামর্শ দিয়েছিলেন পুরো নাটক সাজাতে।
প্রচার পাওয়ার লোভে বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে মুফতি এই নাটক করেছিলেন—এমন ধারণা তদন্ত কর্মকর্তাদের।
নাটকীয় মোড়
শেষ পর্যন্ত যে মামলায় তিনি “ভুক্তভোগী”,
সেই মামলায়ই তিনি হচ্ছেন “আসামি”।
অপহরণের গল্প পুলিশি তদন্তে পরিণত হলো আত্ম-অপহরণের নাটকে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে অদ্ভুত “রিয়েল-টাইম থ্রিলার”—যেখানে অপরাধী, ভুক্তভোগী, ও চিত্রনাট্যকার—সবাই একই ব্যক্তি!
উপসংহার
সত্য কখনও লুকানো যায় না—সিসিটিভি ক্যামেরা, মোবাইল টাওয়ার আর মেডিকেল রিপোর্টে শেষমেশ উন্মোচিত হয় মুফতি মুহিব্বুল্লাহর “অপহরণের” মুখোশ।
এই কাহিনী কেবল এক ব্যক্তির নয়, বরং আমাদের সমাজে “সহানুভূতি-নির্ভর নাটক” কীভাবে সত্যকে বিকৃত করে তার একটি প্রতীকী উদাহরণ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




