somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাপলা, শাপলা কলি আর ইঞ্জিনিয়ারিং কমিশন — এনসিপি ও প্রতীকের রাজনীতি

০২ রা নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
শাপলা, শাপলা কলি আর ইঞ্জিনিয়ারিং কমিশন — এনসিপি ও প্রতীকের রাজনীতি



বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতীক কখনো কখনো দল থেকেও বড় হয়ে যায়। ধানের শীষ, নৌকা, দাড়িপাল্লা — এগুলো শুধু মার্কা নয়, মানসিক পরিচয়েরও প্রতীক। এবার সেই প্রতীকের রাজনীতিতে নতুন সংযোজন: শাপলা কলি।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনীতিতে নতুন উদীয়মান শক্তি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শুরু থেকেই বলে আসছিল— তাদের প্রতীক চাই শাপলা। শাপলা তাদের আন্দোলনের প্রতীক, শান্তির প্রতীক, এবং ‘গণঅভ্যুত্থানের প্রতীক’।

কিন্তু নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলল, “তালিকায় নেই, তাই দেওয়া যাবে না।”
বিধি বদলে দাবি তুলল এনসিপি— তবুও শাপলা দেওয়া গেল না। তারপর হঠাৎ একদিন ইসি নতুন করে তালিকায় যোগ করল ‘শাপলা কলি’।

এমন কৌশল দেখে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর মুখে বেরিয়ে এলো নতুন শব্দবন্ধ—

“এটাকে ইঞ্জিনিয়ারিং কমিশন বলতে পারি। এখানে অনেক কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে।”

অর্থাৎ, নির্বাচন কমিশন এখন আর শুধু কমিশন নয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কমিশন।

প্রতীকের লড়াই থেকে বাস্তবতায়
অবশেষে এনসিপি ‘শাপলা কলি’ মার্কা নিতে রাজি হয়েছে। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর যুক্তি,

“আমরা বৃহত্তর স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রতীক নিয়ে পড়ে থাকলে নির্বাচনের ফেজে ঢোকা যেত না।”

তৃণমূলে দলীয় নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে— “শাপলা থাকলেই হলো, কলি না হয় ফুঁটে উঠবে নির্বাচনের পর।”

তবে এই ঘটনাটি শুধু প্রতীক বিতর্ক নয়— এটি বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও আইনি ক্ষমতা নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও তুলেছে।

ইসি কিভাবে দল নিবন্ধন দিচ্ছে?
আইন অনুযায়ী, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (RPO)–এর ৯(১)(গ) ধারা অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদন করলে, কমিশন তা যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন দিতে পারে যদি দলটি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে— যেমন নির্দিষ্টসংখ্যক জেলা কমিটি, সদস্যসংখ্যা, ও রাজনৈতিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা।

কিন্তু বাস্তবে, প্রশ্ন হলো—
এনসিপি যখন নিবন্ধন পেল, তখন তাদের সাংগঠনিক কাঠামো কতটা পূর্ণ ছিল?
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণে কি কমিশন দ্রুত এই নিবন্ধন দিয়ে ‘রাজনৈতিক ভারসাম্য’ তৈরি করতে চেয়েছে?


বেশ কিছু পর্যবেক্ষক বলছেন, এনসিপিকে নিবন্ধন দেওয়া এবং তাদের পছন্দসই প্রতীকের কাছাকাছি প্রতীক “শাপলা কলি” তৈরি করা— দুটোই এক ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতার ইঙ্গিত দেয়।

প্রতীকের রাজনীতি ও আরপিও বিতর্ক
নির্বাচনের আগে আরেকটি বড় প্রশ্ন উঠেছে— জোটে ভোট করলেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে কিনা।
আরপিও সংশোধনে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত প্রতিটি দলকে নিজস্ব প্রতীকেই ভোটে অংশ নিতে হবে।

বিএনপি এ বিধানের বিরোধিতা করছে, কিন্তু জামায়াত ও এনসিপি সমর্থন করছে।
এনসিপি এমনকি ইসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছে—

“এটা ঐতিহাসিক ও নীতিগতভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত।”

তাদের মতে, বিএনপির রাজনৈতিক চাপে যদি ইসি এখন অবস্থান পরিবর্তন করে, তাহলে তা “কমিশনের স্বাধীনতার ওপর আঘাত” হবে।
অর্থাৎ, নতুন দল এনসিপি এখন শুধু নির্বাচনের অংশ নয়, বরং নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার রক্ষক হিসেবেও অবস্থান নিচ্ছে— অন্তত বক্তব্যে।

রাজনীতির নতুন অঙ্ক
নাহিদ ইসলাম ও নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী— এই দুই তরুণ নেতা এখন এক নতুন রাজনীতির মুখ। তারা না পুরনো বিরোধী রাজনীতির অংশ, না ক্ষমতার ধারা।

তাদের দাবি— “আমরা সংস্কারের পক্ষে, সময়মতো নির্বাচন চাই।”
কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রতীক, বিধি ও কমিশনের ‘ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর ভেতর দিয়েই সেই রাজনীতি শুরু হচ্ছে।

শাপলা কলি হয়তো এখন কলি,
কিন্তু রাজনীতির মাটিতে যদি সত্যিই ফোটে—
তাহলে হয়তো বাংলাদেশের প্রতীক-রাজনীতিতে নতুন ফুলের ঘ্রাণ আসবে কিনা এদেশের মানুষ ইতোমধ্যে দেখে ফেলেছে।।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×