somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কলম যখন পথ হারায়: সত্যের সংকট ও নতুন ‘পকেট সাংবাদিকতা

২৫ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“কলম যখন পথ হারায়: সত্যের সংকট ও নতুন ‘পকেট সাংবাদিকতা’”

সামাজিক নৈতিকতার অবক্ষয়, রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও যাচাইহীন খবরের দাপটে প্রশ্নবিদ্ধ আজকের সাংবাদিকতা— কোথায় যাচ্ছে গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার ভবিষ্যৎ?

— একটি অনুসন্ধানধর্মী প্রতিবেদন
একসময় সাংবাদিকতা ছিল সমাজ বদলের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। কলম ছিল প্রতিবাদের প্রতীক, সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর মহৎ দায়িত্ব ছিল সংবাদকর্মীর অস্তিত্বে অবিচ্ছেদ্য। যাঁরা সংবাদপত্র তৈরি করতেন, তাঁরা ছিলেন সাম্যের কণ্ঠ, সমাজের বিবেক; তাঁদের চোখ বন্ধ থাকলে গোটা জাতি অন্ধ হয়ে যেত।

কিন্তু আজ যেন আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডির মুখোমুখি। সত্য, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধের জায়গা দখল করে নিয়েছে ‘ভিউ-নির্ভর’, ‘লাইভ-নির্ভর’ ইউটিউব–ফেসবুক সাংবাদিকতার এক বিকৃত সংস্কৃতি। এদের কলম নয়— ক্যামেরার সামনে সস্তা নাটক, উত্তেজনামূলক শিরোনাম আর অসত্য বয়ানই এখন খবর তৈরির হাতিয়ার।

রাজনৈতিক মাঠ গরম, উত্থান ‘সুবিধাবাদী সাংবাদিক’
রাজনীতির উত্তাল পরিবেশে ভোটের হাওয়া বইতেই বেরিয়ে আসে বহু ‘সুবিধাবাদী মুখ’। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে তারা প্রচার-প্রচারণায় এমনভাবে জড়িয়ে পড়ে যে সাংবাদিকতা নয়— দলানুগত বাজার-চালিত উত্তেজনাই হয়ে ওঠে তাদের প্রধান পুঁজি।

নেতা হাঁটছেন, কাশছেন, বাজারের মুড়ি-ভর্তা খাচ্ছেন— এ-ও খবর!
এটুকু ঘটনা নিয়েই ফেসবুক লাইভ, ইউটিউব নিউজ, টাইটেল—
“বড় খবর! নেতার জরুরি বক্তব্য!”
বাস্তবে যেখানে কোনো খবরই নেই।

‘পকেট সাংবাদিক’— নতুন বিপদ
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এখন কিছু মানুষ ব্যবহার করছে ‘পকেট সাংবাদিক’—
যাদের কাজ—
** বক্তব্য থেকে কাটপিস করা
** ছবি বিকৃতি করা
** ভিত্তিহীন মন্তব্যকে চমকপ্রদ শিরোনামে রূপ দেওয়া
** এবং সেগুলোকে জাতীয় পত্রিকার পাতায়ও পৌঁছে দেওয়া যাচাই-বাছাই ছাড়া!

এটি শুধু সাংবাদিকতার হুমকি নয়— বরং জনমতকে প্রভাবিত করার ভয়ঙ্কর হাতিয়ার।

যে মানুষ রাজনৈতিক আদর্শের বাইরে কখনো যাননি, যিনি পরিবারসহ রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন— তাকেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। শুধু রাজনৈতিক ভিন্নমতের প্রতিহিংসার কারণে বয়স্ক মানুষের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ব্যবহার করা হয়েছে ভিত্তিহীন সাংবাদিকতা, তাতে তৈরী হচ্ছে মব, সেখান থেকে কেউ কেউ ইনকামের রাস্তাও তৈরী করছেন।

যাচাইবিহীন খবর— কেন ছাপা হয়?
প্রশ্ন উঠছে— জাতীয় পত্রিকায় এমন খবর ছাপা হয় কীভাবে?
কারণ—
** স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব
** ক্ষমতার অপব্যবহার
** দ্রুত খবর দেওয়ার প্রতিযোগিতা
** এবং পাঠকের নীরবতা
আজ সংবাদপত্রে খবর যাচাইয়ের বদলে জায়গা নিচ্ছে ‘চাইলে ছাপা যায়’ মানসিকতা। বিপজ্জনক অপেশাদারিত্ব।

সাংবাদিকতা কি তবে খোলা বাজার হয়ে গেল?
আজকের বাস্তবতায় সাংবাদিকতা যেন এক খোলা বাজার—
** যেখানে বিবেক বিক্রি হয়,
**যেখানে সত্য চাপা পড়ে,
**যেখানে মিথ্যার মোড়কই ‘নিউজ’ হয়ে ছাপা হয়।

নাগরিকের অধিকার রক্ষার বদলে অনেক মিডিয়া এখন ক্ষমতাসীন বা স্বার্থান্বেষীদের মুখপাত্রে পরিণত হচ্ছে। ফলে গণমাধ্যমের প্রতি জনগণের আস্থা দ্রুত কমছে।

সমাজের দর্পণ মলিন হয়ে যাচ্ছে
সংবাদপত্রকে সমাজের দর্পণ বলা হয়— কিন্তু দর্পণ তৈরির কারিগর যদি পক্ষপাতদুষ্ট হন, তবে প্রতিফলনও বিকৃত হবে। আজ অনেক সাংবাদিকই সত্য অনুসন্ধানের চেয়ে রাজনৈতিক আনুগত্যকেই বড় করে দেখছেন। অথচ মনে রাখা জরুরি—

রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সংবাদপত্রের ভূমিকা শর্তহীন স্বাধীনতা ও সত্যনিষ্ঠতার ওপর দাঁড়িয়ে।

সমাধান— সাংবাদিকতার মর্যাদা পুনরুদ্ধার
দরকার—
।১। কঠোর সম্পাদকীয় নীতিমালা
যাচাইহীন খবর ছাপা যাবে না— এ নীতি প্রতিটি পত্রিকায় বাধ্যতামূলক করতে হবে।
২। ডিজিটাল সাংবাদিকতার শৃঙ্খলা
ফেসবুক বা ইউটিউব সাংবাদিকতা মানেই সাংবাদিকতা নয়— এর স্পষ্ট সংজ্ঞা প্রয়োজন।
৩। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত গণমাধ্যম
গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।
৪। পাঠকের ভূমিকা
পাঠক নীরব থাকলে এই বিপদ আরও বাড়বে। পাঠকদেরও সঠিক তথ্য দাবি করতে হবে।

উপসংহার: ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা
সাংবাদিকতা যদি সত্য হারায়, তবে সমাজও অন্ধকারে ডুবে যায়।
রাজনীতি বদলায়, সরকার বদলায়, মতবাদ বদলায়— কিন্তু সত্যের প্রতি দায়বদ্ধতা বদলানো উচিত নয়

আজ প্রয়োজন—
সাহসী সাংবাদিকতা, নৈতিক সাংবাদিকতা, এবং দায়বদ্ধ সাংবাদিকতা।

কারণ কলম যখন সঠিক থাকে— তখন সমাজও সঠিক পথে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:২৪
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×