শেখ হাসিনার “ফ্যাসিজম” বনাম রাষ্ট্রের আত্মরক্ষা: জঙ্গিবাদ, সংস্কৃতি ও আজকের নব্য ফ্যাসিস্ট বাস্তবতা
ইতিহাস প্রায়ই নির্মমভাবে সত্যটা সামনে আনে। যাদের একসময় স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট, দমনকারী বলে গালমন্দ করা হয়—পরিস্থিতি বদলালে তারাই রাষ্ট্ররক্ষার শেষ প্রাচীর হিসেবে চিহ্নিত হন। শেখ হাসিনার শাসনামল আজ ঠিক সেই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে নতুন করে মূল্যায়িত হচ্ছে।
যে কঠোরতাকে এতদিন “ফ্যাসিজম” বলা হয়েছিল, আজ বোঝা যাচ্ছে—সেই কঠোরতা না থাকলে রাষ্ট্র হয়তো অনেক আগেই জঙ্গিবাদের হাতে জিম্মি হয়ে যেত। ৫ আগস্ট যদি একটি মোড়বদলের তারিখ হয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্ন জাগে—এই দিনটা কি আরও আগে আসতে পারত না? বাস্তবতা বলছে, অবশ্যই পারত।
জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্র: আপস না দমনের প্রশ্ন
রাষ্ট্র পরিচালনায় একটি চিরন্তন দ্বন্দ্ব আছে—স্বাধীনতা বনাম নিরাপত্তা। কিন্তু জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে এই দ্বন্দ্ব আর নৈতিক বিলাসিতা থাকে না। জঙ্গিবাদ কোনো মত নয়, এটি একটি সহিংস আদর্শ, যার লক্ষ্যই হলো রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামো ধ্বংস করা।
শেখ হাসিনার সময় এই বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকার করা হয়েছিল। সে কারণেই—
** ধর্মভিত্তিক উগ্র সংগঠনগুলো রাষ্ট্রীয় চাপের মুখে ছিল
** সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তার জায়গাগুলো তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত ছিল
** আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদবিরোধী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল
এই অবস্থান অনেকের চোখে ছিল “দমননীতি”, কিন্তু আজ স্পষ্ট—এটি ছিল রাষ্ট্রের আত্মরক্ষামূলক অবস্থান।
কেন প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট, উদীচী টার্গেট?
জঙ্গিবাদ কখনো এলোমেলোভাবে আঘাত হানে না। তাদের টার্গেট স্পষ্ট—যেখানে যুক্তিবাদ, সংস্কৃতি, অসাম্প্রদায়িক চর্চা, মুক্ত সাংবাদিকতা আছে, সেখানেই আঘাত।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার শুধু সংবাদমাধ্যম নয়, তারা মুক্তচিন্তার প্ল্যাটফর্ম।
ছায়ানট ও উদীচী শুধু সাংস্কৃতিক সংগঠন নয়, তারা বাঙালি পরিচয়ের বাহক।
এই জায়গাগুলোতে আঘাত মানে রাষ্ট্রের আত্মাকে আঘাত করা।
শেখ হাসিনার সময় এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর এমন হামলা কল্পনাতীত ছিল—কারণ রাষ্ট্র জানত, এখানে ছাড় মানে সর্বনাশ।
আজকের রাষ্ট্রীয় দুর্বলতা: অনুপস্থিতি, নীরবতা ও অস্পষ্টতা
আজ দৃশ্যপট সম্পূর্ণ আলাদা। হামলার পর আমরা কী দেখি?
** আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর উপস্থিতির অভাব
** আগাম গোয়েন্দা ব্যর্থতা
** হামলার পর অস্পষ্ট, দ্ব্যর্থক রাষ্ট্রীয় বক্তব্য
** তদন্তে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ঘাটতি
হাদি হত্যার তদন্ত আজও মানুষকে আশ্বস্ত করতে পারেনি। ভালকার লাশ নিয়ে রাষ্ট্রের বার্তা ধোঁয়াশায় ঢাকা। এই ধোঁয়াশা কোনো দুর্ঘটনা নয়—এটি রাষ্ট্রীয় অক্ষমতার প্রতিফলন।
আর এই অক্ষমতার সুযোগই নিচ্ছে জঙ্গিরা।
নব্য ফ্যাসিস্ট ইউনুস: গণতন্ত্রের মুখোশে আপসের রাজনীতি
শেখ হাসিনাকে সরিয়ে যারা আজ ক্ষমতার কেন্দ্রে বসেছেন, তারা নিজেদের গণতন্ত্রের দূত হিসেবে হাজির করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো—তারা আসলে কী করছেন?
আওয়ামী লীগের তৈরি প্রশাসনিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে তারা নতুন এক বন্দোবস্ত কায়েম করেছেন—যেখানে জঙ্গিবাদের সঙ্গে আপস আছে, কিন্তু মুক্তচিন্তার মানুষের নিরাপত্তা নেই।
এই আপসকেই আজ “সহনশীলতা”, “ইনক্লুসিভনেস” বলা হচ্ছে। অথচ বাস্তবে এটি নব্য ফ্যাসিজম—যেখানে সহিংস আদর্শকে প্রশ্রয় দিয়ে সমাজকে ভয়ের মধ্যে রাখা হয়।
শেখ হাসিনার “ফ্যাসিজম”-এর পুনর্মূল্যায়ন
আজ প্রশ্নটা নতুন করে করতে হবে—
শেখ হাসিনার ফ্যাসিজম আসলে কী ছিল?
** জঙ্গিদের দমন?
** রাষ্ট্রের শক্ত অবস্থান?
** সাংস্কৃতিক পরিসর রক্ষা?
যদি এগুলোই ফ্যাসিজম হয়, তাহলে আজকের নীরবতা ও দুর্বলতা কী?
বাস্তবতা হলো—শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের আদর্শ মূর্ত প্রতীক ছিলেন না, কিন্তু তিনি রাষ্ট্রকে জঙ্গিবাদের হাতে তুলে দেননি। ইতিহাসে অনেক সময়ই রাষ্ট্র বাঁচাতে কঠোরতা প্রয়োজন হয়।
কেন আজ আওয়ামী লীগের পক্ষে দাঁড়ানো জরুরি
আজ আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলা মানে শেখ হাসিনার সব সিদ্ধান্তকে নিঃশর্ত সমর্থন করা নয়। আজ আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলা মানে—
** জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন রাষ্ট্রীয় অবস্থান ফিরিয়ে আনা
** সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
** ভয়ের রাজনীতি নয়, শক্ত রাষ্ট্রের পক্ষে দাঁড়ানো
আজ যারা নিরপেক্ষতার ভান করছেন, তারা আসলে শক্তির রাজনীতি থেকে পালাচ্ছেন।
উপসংহার: রাষ্ট্র না সংস্কৃতি—কোনটা হারাতে চাই?
রাষ্ট্র যদি দুর্বল হয়, তাহলে আগুন শুধু উদীচী নয়—পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়বে।
আজ যদি আমরা পরিষ্কারভাবে অবস্থান না নিই, তাহলে আগামীতে আর কোনো ছায়ানট, কোনো প্রথম আলো টিকে থাকবে না।
এই কারণেই আজ আমাদের দাবি স্পষ্ট-
** জঙ্গি লালনকারী ইউনুসের পদত্যাগ
** স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত
** সাংস্কৃতিক ও গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
** জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠা
ইতিহাস ক্ষমা করে না। রাষ্ট্রও না।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





