ফেরা... ...
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
কলেজ জীবন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত হলেও এর স্মৃতিগুলো অনেক বেশি সমৃদ্ধ , অনেক বেশি প্রখর। রঙিন স্বপ্ন আর বড় হওয়ার মানসিকতা সম্বল করে কলেজ এর আঙিনায় পা রাখা। কোন এক ভুলে যাওয়া দিনে অকস্মাত পা রেখেছিলাম কলেজের আঙিনায়, আর সেই আগমনী রেশ কাটতে না কাটতেই বিদায়ের ঘনঘটা। ধূমকেতুর ন্যায় কলেজ জীবন, যেন হঠাৎ কুড়িয়ে পাওয়া কোন সুখ।
শেষ থেকে শুরু করছি। কলেজ জীবনে আমাদের যারা সহপাঠী, তাদের সবার একটা স্মৃতি একত্রে থাকা দরকার। এরকম একটা চিন্তা মাথায় আসার সাথে সাথেই তা শেয়ার করলাম। কেউ এটাকে আমার উর্বর মস্তিষ্ক-প্রসূত অন্যান্য চিন্তার মত উড়িয়ে দিলো গরম চায়ের কাপের ধোঁয়ায়, আর কেউবা সম্মতি জানালো। আমার দেওয়া বাতিলের খাতায় যাওয়া আর দশটি পরিকল্পনার মত এর পরীটিও যখন ভাবনার আকাশে উড়াউড়ি করছিল, তখনও এর কল্পনাটুকু মুছে যায়নি। বরং গাজী আজমল স্যার ক্লাসে এসে যখন সেই স্মৃতি নামক রূপকথার পরীর বর্ণনা করলেন ;তার পরই পরীটিকে মর্ত্যলোকে আনার সম্মিলিত চেষ্টা শুরু হয়ে গেল। শেষ ক্লাসের দিনে কয়েকজন এর আগ্রহ দেখেই বুঝতে পারলাম , আমরা পারবো।
আর তারপর শুরু হলো ‘অনুধ্যান’ সংক্রান্ত কাজ। তখনও অবশ্য এটি ‘অনুধ্যান’ হয়ে ওঠেনি । নাম না জানা স্মৃতির ভাণ্ডার রচনার দায়িত্ব পেলাম আমরা কতিপয় ভাগ্যবান। সামাজিক যোগাযোগের সর্বোচ্চ সুবিধা কাজে লাগিয়ে শুরু করলাম প্রচারনা। ‘অনুধ্যান’ এর কিছু দায়িত্ব আমার কাঁধেও পড়লো। জানিনা কতদূর করতে পেরেছি। তবে চেষ্টা করেছি সাধ্যমত।
এর আগে আমরা উদ্যাপন করেছি কলেজ জীবনের শেষ দিনটিকে। সকল কাজই একটু একটু করতে পারার একটা দোষ আমার ছিল। সেই অপরাধে শেষ ক্লাসের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে চাঁদা তোলা, রাত ৮টায় চাঁদার হাজার পঞ্চাশেক টাকা ছেঁড়া নটরডেমিয়ান প্লাস্টিক ব্যাগে নিয়ে বঙ্গবাজার এর মার্কেট থেকে টি শার্ট কেনা, তারপর সেই টি শার্ট প্রিন্ট এর জন্য পুরানো ঢাকার অলি-গলিতে ঘুরাঘুরি, ১৯৬/= এর হিসাব নিয়ে বন্ধুর সাথে উচ্চকণ্ঠের মধুর বাণী বর্ষণ কোনটাই বাদ যায়নি। সব কিছুই যখন ঠিক, আমরা যখন প্রস্তুত একটি দুর্দান্ত আয়োজনের জন্য তখনই হাজির হলেন আমাদের সকলের প্রিয় কলেজ কর্মচারীগণ। এর পরের অংশটুকুতো ইতিহাস। কোন রকমের গাড়িঘোড়ার তোয়াক্কা না করে আমাদের উৎসব পালিত হলো কলেজ ভবনের বাইরে, প্রধান সড়কে। সবাই যখন আনন্দে ব্যস্ত, তখন আমি হাতের লিস্ট মিলিয়ে দেখছি, কার কার টি-শার্ট দেওয়া এখনো বাকী। আর টিশার্ট, কেক বিতরণের পর অভিযোগের সংখ্যা যখন ছিল শূন্য, তখন বুঝতে পারলাম যে আমাদের আয়োজনটি সার্থক। অবশ্য এটা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কও করা যায়।
বিতর্কের বিষয়টা চলেই আসলো । আমার কলেজ জীবনের বিরাট একটা সময় কেটেছে এই বিতর্ক করে, ডিবেটিং ক্লাবের কাজে। যারা নটর ডেমের কোন না কোন ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিল, তারাই জানে ক্লাব এর মাহাত্ম্য। কলেজ এর নিয়ম কানুন যতটা কঠিন, ক্লাবগুলো ঠিক ততটাই নির্মল আনন্দের জায়গা। ৩য় বর্ষ (এইচ . এস. সি পাসকৃত) আর ২য় বর্ষের বড় ভাইদের সান্নিধ্যে আসা, কলেজ সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য জানা থেকে শুরু করে রাত ১১টায় শেষ বাসে করে বাড়ি ফেরার মতো ঘটনাও ঘটেছে ক্লাবে থাকার সময়। ১ম বর্ষে থাকাকালীন ক্লাবের সক্রিয় সদস্য হিসেবে অকারণ খাটুনি আর বাবা-মা এর বিরাগভাজন হওয়ার ফল পাই ২য় বর্ষে এসে। বহুল আকাঙ্খিত সভাপতির পদটি পেয়ে যাওয়া কিংবা নটর ডেম গোল্ড টিমের হয়ে বিতর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের দলগুলোকে হারানো, সবই হয়েছে এই নটর ডেম এ এসে।
ভুবন বিখ্যাত অমল কৃষ্ণ বণিক স্যারের বোটানি কুইজের আগের রাত ১১.৩০ টায় বিতর্ক করে জিতেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন এক হলের বিতর্ক দলের সাথে। যার ফলাফল পরদিন পরীক্ষার খাতায় হাতেনাতে পেয়েছিলাম। সামনে পিছনে আলোচনার মাধ্যমে বোটানির উত্তর দেওয়ার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করায় খাতা থেকে যা পাওয়ার কথা তাও হারিয়ে প্রথমবারের মত কোন বিষয়ে ফেল এর সম্মুখীন হই।
আবার এর উল্টো অনুভূতি ও পেয়েছি অহরহ। পত্রিকায় কৃতি বিতার্কিক শিরোনামে প্রতিবেদন , বাসায় ডজন খানেক ক্রেস্ট আর অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীর কাছে বিশেষ পরিচিতি লাভের আনন্দ তো ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। শেষ দিকে টানা ৬-৭ টি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ায় এক সময় তো ক্লাসে ফরেনার উপাধিও লাভ করি। শুধুমাত্র ক্লাবের তকমা থাকায় আসি আসি করেও আমাদের অ্যাটেন্ডেন্স এর তালিকায় কখনোই আমার প্রিয় নামখানা আসেনি। তাই নটর ডেম ডিবেটিং ক্লাবের কাছে আমি চির ঋণী হয়ে থাকবো।
এবার একেবারে কলেজ জীবনের শুরুতে চলে যাই, একেবারে ভর্তির পর মুহুর্তে। এতটা গর্বিত আগে কোনদিনও অনুভব করিনি, যতটা করতাম সেই সময়ে। নানা কারণে বিধ্বস্ত একটি মন নিয়েও যখন বহুল আকাক্সিক্ষত এই কলেজে ভর্তি হতে পারলাম, তখন আমার মনটা যেন সেই নাম না জানা পাখির মত উড়ছিল। উপর থেকে দেখতে পাওয়া রঙ আর উড়তে পারার সুখ একে একে বিলীন হতে শুরু করে পুরাতন বৃত্তের অভ্যন্তরে।
প্রতিনিয়ত একটু একটু করে নটরডেমিয়ান হয়ে উঠি। ভুলগুলোকে সংশোধনের চেষ্টা চালাই। শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত শাসন আর উপদেশের মাঝেও বন্ধুত্ব খুঁজে ফিরতে থাকি। তখনই স্মৃতি হাতড়ে পাই ১১১১... রোলধারী কতিপয় দুরন্ত মনকে। যারা না থাকলে হয়তো আমার জীবনটা এতটা সুন্দর হতো না।
বারবার তাই ফিরে যেতে চাই সেই রঙিন দিনগুলোয়। স্বপ্নের রঙে ডানা মেলে উড়তে চাই সম্মুখপানে... ... ....
void(1);
[আমার সদ্য সমাপ্ত কলেজ জীবন নিয়ে অনুধ্যান নামক স্মরণিকায় প্রকশিত স্মৃতিচারণ ]
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন
মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)
ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)
০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন
টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন
আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।
ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।