গতকাল রাতে টিভিতে আমাদের একমাত্র ২৪ ঘন্টা সং বাদ প্রচারকারী চ্যানেল (সি বি এস নিউজ বন্ধ হওয়ার পরে একমাত্র) এ নিউজ আওয়ার এক্সট্রা নামে একটি টক শো দেখলাম। এখানে উপস্থিত ছিলেন একজন বিখ্যাত সমাজসেবিকা, তার চেয়ে অধিক বিখ্যাত অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের দায়িত্ব পালনকারী একজন মহিলা সাংবাদিক যিনি কথা বলেছেন এবং চিৎকার করেছেন অন্য দুইজনের সমান । আর উপস্থিত ছিলেন ধান গবেষণা কেন্দ্রের একজন হতভাগা বিজ্ঞানী। দুই বিখ্যাতের চাপে পড়ে ঐ বিজ্ঞানী যেমন কোন একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেবার সময় পাননি তেমনি তাকে একের পর এক ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়েছে। এভাবে ডেকে এনে একজন বিজ্ঞানীকে নাজেহাল করার নজির আমি আগে কখনো দেখিনি।
বাতের ব্যথার মলম থেকে শুরু করে রকেট এর জ্বালানী মিশ্রণ সহ পৃথিবীর যাবতীয় বিষয়ে অসম্ভব প্রজ্ঞা ধারণকারী সেই সাংবাদিক আর সমাজসেবিকার বক্তব্যের বিষয় ছিল গোল্ডেন রাইস তথা এক প্রকার জেনেটিকালি পরিবর্তিত ধান এর প্রচলন এবং এর পিছনে যে বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র তা নিয়ে।
বিজ্ঞানীকে তারা যে প্রশ্নগুলো অনবরত করে যাচ্ছিলেন , তাকে একটি বার ও ঠিকমত উত্তর দেবার সুযোগ দেননি , তা অনেকটা নিচের মত
১.রাতকানা রোগ কী আমাদের দেশের জন্য খুব বড় একটি ঝুঁকি কিনা?
২. মাটির উর্বরতা ধ্বংস কেন করা হচ্ছে?
৩. যদি কেউ এই গোল্ডেন রাইস না খেতে চায় তবে ব্রি কী পদক্ষেপ নিবে?
যেহেতু আমাকে বিরক্ত ও নাজেহাল করার মত একজন বিখ্যাত সাংবাদিক অথবা একজন সমাজসেবিকা এখানে উপস্থিত নেই তাই আমি তাদের এই তিনটা প্রশ্নের উত্তর দিতেই আগ্রহী।
১.রাতকানা রোগ কী আমাদের দেশের জন্য খুব বড় একটি ঝুঁকি কিনা?
রাতকানা রোগ আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান রোগ বিশষেত শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য। প্রতি বছর ১-৫ বছরের সকল শিশুকে রাতকানা রোগের জন্য ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হয় যাতে প্রচুর অর্থ খরচ হয়। এবং এ সত্ত্বেও আমাদের দেশে অন্ধত্বের হার অনেক বেশি পার্শবর্তী দেশগুলোর তুলনায়। সুতরাং এক্ষেত্রে যদি আমাদের প্রধান খাদ্য তথা ভাত এর গুণাবলী পরিবর্তন করা হয় এবং এর মান উন্নয়ন করা হয় তা আমাদের এই অন্ধত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে । আমাদের দেশের ভিটামিন এ এর প্রধান উৎস ছিল ছোট মাছ আর ফলমূল। কিন্তু একদিকে যেমন এখন মাছের প্রাপ্যতা কমে দাম গরীবের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে আরেকদিকে ফলের বাজারে তো মধ্যবিত্তেরও প্রবেশ নিষেধ। যাও ভিটামিন পাওয়া যাওয়ার কথা ফলে তার মধ্যেই আবার মিশে থাকে কার্বাইড বিষ। সুতরাং আমাদের অন্ধত্ব এবং রাতকানা রোগের দুরীকরণে দরকার একটি নতুন ভিটামিন এর উৎস । যা হতে পারে এই নতুন প্রযুক্তির ধান।
২. মাটির উর্বরতা ধ্বংস কেন করা হচ্ছে?
একটি জমির উর্বরতা হিসাব করা যায় জমিতে উপস্থিত উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পদার্থের পরিমাণ দিয়ে। প্রাথমিক অবস্থায় মাটিতে যে পরিমাণ উর্বরতা থাকে, যেকোন প্রকার ধান চাষ করলেই তা হ্রাস পায়। সাধারণ অবস্থাতে , আমাদের দেশে এখন আর নাইট্রোজেন ঘটিত সার তথা ইউরিয়া এবং বিভিন্ন রাসায়নিক সার ব্যতীত কোন ধান চাষ করে ভাল ফলন পাওয়া যায় না। এর উপরে বিভিন্ন পোকা মারার কীটনাশক আর রোগ দমনের বালাইনাশক ব্যবহার জমি আর ফসলে বিষের পরিমাণ দিন দিন বাড়িয়ে তুলছে। অন্যদিকে যদি কিনা এই জেনেটিকালি মডিফাইড ধান চাষ করা হয় তবে তাতে এই পরিস্থিতির অবনতি না হয়ে বরং উন্নতি হতে পারে । কেননা ধানে অধিক রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা, পোকার আক্রমণ প্রতিহত করে উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানো সবই সম্ভব এই গোল্ডেন রাইস এর মাধ্যমে। এতে যেমন ধানে বিষের পরিমাণ কমবে, তেমনি করে মাটির উর্বরতাও বাড়বে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক/বালাইনাশক এর ব্যবহার কমে যাওয়াতে। সুতরাং মাটির উর্বরতার বিষয়টি ভিত্তিহীন।
৩. যদি কেউ এই গোল্ডেন রাইস না খেতে চায় তবে ব্রি কী পদক্ষেপ নিবে?
আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রযুক্তির প্রতিনিয়ত উন্নয়ন ঘটছে । অনেকেই আছেন এখনও যারা পোল্ট্রি ফার্মের মুরগি পাতে তুলতে চান না। তারা তাদের হাড্ডিসার দেশি তথা প্রাচীন পদ্ধতিতে পালনকৃত মুরগীকেই খাদ্য হিসেবে পছন্দ করেন। যদিও এই মুরগীর কোন জাতই প্রকৃত প্রস্তাবে দেশি না। এতে কী সরকার বা তার কোন পশু সম্পদ বিভাগ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন? তারা কী জোর করে কাউকে খাওয়াতে পারেন? না, সেটা তারা করতে পারেন না । আর তাইতো পোল্ট্রি শিল্পের এতো ব্যাপক বিস্তৃতির মাঝেও সেই দেশি মুরগি এখনও চলছে। এটা কখনোই ব্রি বা কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নয় যে কে কী খাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা। বরং , তাদের কাজ গবেষণা করা যা তারা করে যাবার চেষ্টা করছে। বরং সরকার তার প্রচার যন্ত্র দ্বারা এই অধিকতর পুষ্টি সমৃদ্ধ ধানের প্রচারে এগিয়ে আসতে পারে।
একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ভাল বা খারাপ উভয় দিকই থাকতে পারে । কিন্তু সেগুলো না জেনে, অথবা, শুধু মাত্র অপরকে হেয় করার উদ্দেশ্যে যেসব বিখ্যাত সাংবাদিক কাজ করেন তাদের প্রতি আমার তীব্র ঘৃণা, তারা যতটাই না আপনজন হন। সঞ্চালকের দায়িত্বে নিয়োজিতদের আরও বেশি ভদ্রোচিত আচরণ কামনা করাটা বোধহয় দোষের কিছুই না যেখানে আমাদের দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থ জড়িত।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



