somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইলেকট্রিক সার্কিট নিয়ে সংক্ষিপ্ত টিউটরিয়াল (পর্ব-৩)

০৯ ই জুন, ২০১১ রাত ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বিতীয় পর্বে কার্শহফ’স কারেন্ট নীতি ও ভোল্টেজ নীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই পর্বে কার্শহফ’স কারেন্ট নীতির উপর ভিত্তি করে নোডাল অ্যানালাইসিস (Nodal Analysis) নিয়ে আলোচনা করা হবে। নোডাল অ্যানালাইসিস হচ্ছে একটি প্রণালী যার দ্বারা কোন সার্কিটের নোড ভোল্টেজ নির্ণয় করা হয়। একটি সার্কিটের নোড ভোল্টেজ জেনে গেলে সেই সার্কিটের যে কোন ব্র্যাঞ্চের কারেন্টও বের করা যায়। নোডাল অ্যানালাইসিস এর জন্য ওহমের সূত্র এবং কার্শহফ’স কারেন্ট নীতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা আবশ্যক। উল্লেখ্য যে, সাধারণ অর্থে দুই বা ততোধিক ব্র্যাঞ্চ এর মিলিত সংযোগস্থলকে নোড বলা হয়, তবে নোডাল অ্যানালাইসিস এর ক্ষেত্রে তিন বা ততোধিক ব্র্যাঞ্চ এর মিলিত সংযোগস্থল বিবেচনা করা হয়ে থাকে যাকে বলে এসেনশিয়াল নোড (Essential Node)। নোডাল অ্যানালাইসিস এর ক্ষেত্রে নিম্নের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:

ধাপ-১: প্রথমে এসেনশিয়াল নোডগুলো (তিন বা ততোধিক ব্র্যাঞ্চ এর মিলিত বিন্দু) সনাক্ত করতে হবে।

ধাপ-২: এসেনশিয়াল নোডগুলোর মধ্য থেকে একটিকে রেফারেন্স নোড হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। যে নোডে সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্র্যাঞ্চ যুক্ত থাকে সেটিকে রেফারেন্স নোড ধরা সুবিধাজনক। রেফারেন্স নোড সাধারণত সার্কিটের তলদেশে থাকে। রেফারেন্স নোডের ভোল্টেজ শূন্য ধরা হয় বিধায় গ্রাউন্ড চিহ্ন দ্বারা লেবেল করা হয়।

ধাপ-৩: নন-রেফারেন্স নোডগুলোকে V1, V2, Vn দ্বারা লেবেল করতে হবে, যেখানে V1 হচ্ছে রেফারেন্স নোডের সাপেক্ষে নোড-১ এর ভোল্টেজ এবং Vn হচ্ছে নোড-n এর ভোল্টেজ। কোন নোডের ভোল্টেজ জানা থাকলে সেই নোডকে লেবেল করার দরকার নাই।

ধাপ-৪: প্রত্যেক নন-রেফারেন্স নোডে কার্শহফ’স কারেন্ট নীতি প্রয়োগ করতে হবে। কার্শহফ’স কারেন্ট নীতি প্রয়োগের সুবিধার্থে ব্র্যাঞ্চ কারেন্টগুলোকে I1, I2, In দ্বারা লেবেল করা যেতে পারে। একটি সার্কিটে যদি দুটি নন-রেফারেন্স নোড থাকে তাহলে কার্শহফ’স কারেন্ট নীতি প্রয়োগ করার পর দুটি সমীকরণ পাওয়া যাবে। অনুরূপভাবে, n সংখ্যক নন-রেফারেন্স নোডের ক্ষেত্রে n সংখ্যক সমীকরণ পাওয়া যাবে।

ধাপ-৫: সমীকরণগুলো সমাধান করে অজানা নোড ভোল্টেজ (V1, V2, Vn) নির্ণয় করতে হবে।

এবার দুটি উদাহরণ দেয়া যাক। নিচের সার্কিটে দুটি এসেনশিয়াল নোড আছে, যাদের মধ্যে একটিকে নন-রেফারেন্স নোড (উপরের লাল বিন্দু) এবং অন্যটিকে রেফারেন্স নোড বা গ্রাউন্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে (পাদদেশের লাল বিন্দু)। নন-রেফারেন্স নোডটিকে Vb দ্বারা লেবেল করা হয়েছে, যার মান নির্ণয় করতে হবে। বুঝার সুবিধার জন্য Va ও Vc দ্বারা দুটি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে রেফারেন্স নোডের সাপেক্ষে Va = V1 = 32 V এবং Vc = V2 = 20 V.



এবার যদি নন-রেফারেন্স নোডে কার্শহফ’স কারেন্ট নীতি প্রয়োগ করা হয় তাহলে নিচের সমীকরণ পাওয়া যাবে (তীর চিহ্ন অনুযায়ী i1 ও i2 নোডের দিকে প্রবেশ করছে এবং i3 নোড থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে),

i1 + i2 = i3

যেখানে ওহমের সূত্র অনুযায়ী i1 = (Va – Vb)/R1, i2 = (Vc – Vb)/R2, এবং i3 = (Vb – 0)/R3 = Vb/R3. এবার i1, i2, ও i3 এর মান উপরের সমীকরণে বসিয়ে দিয়ে পাওয়া যায়,

(Va – Vb)/R1 + (Vc – Vb)/R2 = Vb/R3

এই সমীকরণে একমাত্র Vb ছাড়া সবগুলো চালকের মান যেহেতু দেয়া আছে সেহেতু সমীকরণটি সমাধান করলে Vb = 24 V পাওয়া যাবে। Vb এর মান পাওয়া গেলে ব্র্যাঞ্চ কারেন্ট i1, i2, ও i3 এর মানও সহজেই বের করা যাবে। মানগুলো হচ্ছে: i1 = (Va – Vb)/R1 = (32 – 24)/20 = 0.4 A, i2 = (Vc – Vb)/R2 = (20 – 24)/40 = – 0.1 A, i3 = Vb/R3 = 24/80 = 0.3 A. উল্লেখ্য যে, তীর চিহ্ন দ্বারা কারেন্টের যে দিক নির্দেশ করা হয়েছে সেগুলোর নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নাই। ইচ্ছেমতো দিক নির্দেশ করা যায়, তবে সে অনুযায়ী সমীকরণ লিখতে হবে এবং সমাধান একই হবে। আরো উল্লেখ্য যে, সমাধান সঠিক হয়েছে কিনা তা প্রথম সমীকরণের দ্বারা যাচাই করা যাবে।

দুই নোড বিশিষ্ট সার্কিট ভাল করে বুঝার পর নোডের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। নিচের সার্কিটে মোট তিনটি এসেনশিয়াল নোড আছে, যাদের মধ্যে দুটিকে নন-রেফারেন্স নোড (দুটি লাল বিন্দু) এবং একটিকে রেফারেন্স নোড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে (পাদদেশ)।



এই সার্কিটের দুটি নন-রেফারেন্স নোডে কার্শহফ’স কারেন্ট নীতি প্রয়োগ করা হলে নিচের সমীকরণ দুটি পাওয়া যাবে,

(V1 – 2)/2 + V1/3 + (V1 – V2)/1 = 0 (বাম পাশের নোডের জন্য)

এবং

(V2 – V1)/1 + V2/5 - 2 = 0 (ডান পাশের নোডের জন্য)

এবার উপরের সমীকরণ দুটি সমাধান করলে V1 ও V2 এর মান যথাক্রমে – 2 V ও – 4/3 V পাওয়া যাবে।

নোট: দুটি নন-রেফারেন্স নোডের মধ্যে যদি শুধু ভোল্টেজ সোর্স থাকে তাহলে সেই নোড দুটিতে কার্শহফ’স কারেন্ট নীতি প্রয়োগ করা যায় না, যেহেতু এই নীতির ক্ষেত্রে ওহমের সূত্র প্রয়োগ করতে হয়; আর ওহমের সূত্রের ক্ষেত্রে অবশ্যই রোধ থাকতে হবে। ফলে এই ধরণের ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে সুপারনোড (Supernode) পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে, অর্থাৎ দুটি নোডকে একটি নোড হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তবে তার আগে সুপারনোড ছাড়াই তিন/চার নোড বিশিষ্ট বেশ কিছু সার্কিট সমাধান করে নোডাল অ্যানালাইসিস সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১১:৪৮
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×