somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দারুণ হতে পারতো : কি দারুণ দেখতে

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমানে ঢালিউডের মূলধারায় যারা সিনেমা বানাচ্ছেন, তাদের মাঝে শাহীন-সুমনের কাজ তুলনামূলকভাবে সহনীয় ও গোছানো। একক পরিচালক হিসেবে সুমনের ডাইরেক্টোরিয়াল ভেঞ্চার, বছরের প্রথম ছবি, রেকর্ড একশো হলে মুক্তি, ভিন্নধর্মী গল্পের ইঙ্গিত সব মিলিয়ে “কি দারুণ দেখতে” দারুণ এক সম্ভাবনাময় নাম হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছিল। কিন্তু মাহির জুতার কালি মাখা মুখ ও ছবির পটেনশিয়ালিটিতে নিজ দায়িত্বে পানি ঢেলেছেন ওয়াজেদ আলী সুমন। কিভাবে করলেন সেটা বলছি।
অনাথ বাপ্পীকে নিজের সন্তানের মত করে বড় করেছেন সোহেল খান আর রেহানা জলি। সোহেল লোক ঠকিয়ে সংসার চালালেও, স্বপ্ন দেখেন বাপ্পী শিক্ষিত মানুষের মত মানুষ হবে। বাপ্পীও ভালো ছেলের মত জিরো পাওয়ারের চশমা এঁটে, ব্যাগ দুলিয়ে কলেজ যাচ্ছিলেন। গোল বাঁধল যখন বাপ্পীর মায়ের ক্যান্সার হল। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ৩০ লাখ টাকা জোগাড় করতে ভিন্ন এক পথ বেছে নিলো বাপ-বেটা। বড়লোকের মেয়েদের সাথে প্রেমের অভিনয় শুরু করলো বাপ্পী। মেয়েদের বাবারা বাপ্পীকে মোটা অঙ্কের টাকা অফার করতে শুরু করলেন। বদলে বাপ্পীকে তাদের মেয়েদের জীবন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। দারুণ ব্যবসার ফাঁকিটা ধরে ফেললেন মাহিয়া মাহি। হুমকি দিলেন, বখরা না পেলে পুলিশে খবর দিবেন। বাধ্য হয়ে মাহিকেও পার্টনার করতে হল। নতুন পার্টনার মাহিও বিভিন্ন মক্কেল জোগাড় করে দিতে শুরু করলো।
বিত্তবান ঘরের মেয়ে মাহি প্রেমিকদের হাত থেকে বাঁচার জন্য মুখে জুতার কালি মেখে ঘুরে। বাপ্পীও মাহির এই রূপের সাথেই পরিচিত। কিন্তু এয়ারপোর্টে একদিন সত্যিকারের মাহিকে দেখে প্রেমে পড়ে গেল বাপ্পী। সময়ক্রমে জানতে পারলো দুই মাহি একই মানুষ। তাই একদিন নাটকীয়ভাবে মাহির গায়ে পানি ছিটিয়ে, প্রেম নিবেদন করল বাপ্পী। মাহি ধরে নিলো, এটাও বাপ্পীর আরেক চিটিং গেম। ফিরিয়ে দিল বাপ্পীকে। কিন্তু বাপ্পীও নাছোড়বান্দা, পিছে লেগে রইলো। কলেজের ছাত্রনেতা শাহরিয়াজ মাহিকে ভালোবাসে। তাই শাহরিয়াজকে দিয়েই বাপ্পীকে শায়েস্তা করতে পাঠাল মাহি। তুমুল লড়াইয়ের এক পর্যায়ে চোখে আঘাত পেয়ে অন্ধ হয়ে গেল বাপ্পী। পৃথিবী যতটা না ছোট, এফ.ডি.সি তার চেয়েও ছোট। শাহরিয়াজ আবিষ্কার করলেন বাপ্পীর তার ছোটবেলার সেই বন্ধু, যে তার জীবন বাঁচিয়েছিল।
অন্যদিকে শাহরিয়াজের সাথে বিয়ে ঠিক করে ফেললেন মাহির ভাই ওমর সানি। কিন্তু শাহরিয়াজ বন্ধু বাপ্পী আর মাহিকে গোপনে বিয়ে করতে পাঠিয়ে দিলেন। এ খবর জানতে পেরে ওমর সানি গুণ্ডা সানু শিবাকে নিয়ে গেলেন বাপ্পীকে শেষ করে দিতে। শাহরিয়াজ-ও হাজির হলেন, চলে শাহরিয়াজের বড় ভাই মিশা সওদাগরও। দেশীয় লাঠি আর পশ্চিমা অস্ত্রের ফিউশনে লড়াই চলল। শাহরিয়াজ গুলি খেলেন। প্রথমে বাপ্পীর জীবন থেকে মাহিকে “চক্ষুদান” করার চেষ্টা করলেও, মরার আগে বাপ্পীকে নিজের চোখ দান করে গেলেন শাহরিয়াজ। অতঃপর, তাহারা সুখে শান্তিতে দেখিতে লাগিল…।
ওয়াজেদ আলী সুমন আগে জুটি বেঁধে পরিচালনা করতেন। নিজের প্রথম ছবির পরিচালনার পাশাপাশি, গল্প ও চিত্রনাট্যর ভারটি তিনিই সামলেছেন। গল্প হিসেবে কি দারুণ দেখতে ইউনিকই বটে। কন আর্টিস্টদের নিয়ে বাংলা ভাষায় চলচ্চিত্রের সংখ্যা হাতেগোনা। পুরো ছবিটাই যদি এই ভিন্নতা ধরে রাখতো, তবে কি দারুণ দেখতে বাংলা ছবির জগতে একটা মাইলফলক হতে পারতো। কিন্তু দর্শকদের কথা ভেবে অথবা চিরকালীন সীমাবদ্ধতা থেকে গল্পটা Mellow করতে মেলো-ড্রামা এনেই সব নষ্ট করে ফেললেন। বাংলা চলচ্চিত্রের বয়স এখন অনেক বেড়েছে। সব ছবিকে জগাখিচুড়ী না বানিয়ে এখন সময় এসেছে জেনরভিত্তিক ছবি বানানোর। দর্শক-ও কিন্তু প্রস্তুত। ছবির প্রথমভাগে বাপ্পী-মাহির পার্টনারশিপ দেখে যে দর্শকরা তালি দিচ্ছিলেন, অহেতুক পরিচিত ঘটনাবলীর অবতারণায় তারা পরে চুপ মেরে গিয়েছিলেন।
স্ক্রীপ্ট প্রথমার্ধে বেশ গতিশীল হলেও, ইন্টারভ্যালের পর একদমই গতিহীন হয়ে পড়ে। বাপ্পী যেখানেই চিট করতে যাচ্ছে, মাহির ঠিক ঠিক সেখানে পৌঁছে যাওয়ার কোনও ব্যাখ্যা থাকলে ভাল হত। মাহি যেহেতু ধনী, তার বাপ্পীর সাথে নেমে লোক ঠকানোর কোন প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য কোন মোটিভ দেখানো উচিৎ ছিল। লোকেশনের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু জিওগ্রাফিকাল এরর দেখা গিয়েছে। মাহির বাসা গুলশান দুই নাম্বার সার্কেলে। অথচ তার বাসার সামনে থেকে স্পষ্টভাবে হাতিরঝিল দেখা যায়। সাভারের এনাম মেডিকেল থেকে হেঁটে বের হয়ে বাপ্পী-মাহি হাতিরঝিলে কিভাবে আসলো কে জানে। বাপ্পী ফিজিক্স পড়বেন ভাল কথা। কিন্তু সাভারের বি.কে.এস.পি-তে কেউ ফিজিক্স পড়তে ঢুকছে এটা খুব দৃষ্টিকটু। দশ বছরে সোহেল খানের বাসার ইন্টেরিওরের কোন পরিবর্তনই আসলো না। একটু খেয়াল করলেই এসব ত্রুটি এড়ানো যেত। তবে, বেশ কিছু পজেটিভ ব্যাপারও দেখলাম। বাপ্পী-মাহিকে খুঁজতে ওমর সানির জি.পি.এস এর সাহায্য নেওয়া। অথবা রেহানা জলি চা আনতে গিয়ে পড়ে যাওয়ার পর, রান্নাঘরের দেওয়ালে হালকা করে চায়ের দাগ লেগে থাকার মত ডিটেইলিং ভালো লেগেছে।
সংলাপ লিখেছেন আব্দুল্লাহ জহির বাবু। ক্যামেরায় ছিলেন এস.এম.আজহার। ক্যামেরার কাজ গতানুগতিক ছবিগুলোর তুলনায় বেশ ভাল ছিল। ক্ষেত্রবিশেষে, ফিল্ড অফ ডেপথ তৈরী ছাড়াও বেশ কিছু বেসিক ফটোগ্রাফির কাজেরও দেখা মিলল। তবে, রুল অফ থার্ড প্রয়োগের সময় সাবজেক্টের ফেস ডিরেকশনের দিকে মনোযোগ দিলে আরও ভালো লাগতো।
ছবির গানগুলো লিখেছেন সদীপ কুমার দ্বীপ আর সুর করেছেন আহমেদ হুমায়ূন। বাপ্পীর একক গানের চিত্রায়নটা ভালো ছিল। বিপাশার সাম্প্রতিক আইটেম সংগুলো খুব একঘেয়ে ছিল। নাচের একটা মুদ্রা যদিও “ডাবল ধামাল”-এর “জালেবি বাঈ” এর সাথে মিলে গিয়েছিল, কিন্তু তা না হয় খেয়াল নাই বা করলাম। সর্বোপরি “এ ঠোঁট দুটো গোলাপী” আইটেম সং হিসেবে উৎরে যায়। অন্য গানগুলো অ্যাভারেজ ছিল।
অভিনয়ে বাপ্পীর শিশুতোষ ভাবটা সহনীয় মাত্রায় কম ছিল। জটিল প্রেমের পরে এটা বাপ্পীর আরেকটা ভাল কাজ। মাহিকে নিয়ে আমি কিছুটা হতাশ। ওমর সানিকে দীর্ঘদিন পর দেখে অনেক “হালকা” লাগলো। মিশা সওদাগর তো বরাবরের মতোও ভাল। তবে আলাদা করে উল্লেখ করতে হয় শাহরিয়াজের কথা। আলাদা করে নবাগত হিসেবে শুধু নয়, সবার মাঝে ছবির সেরা কাজটা তার কাছ থেকেই দেখা গিয়েছে। দারুণ সম্ভাবনাময় এক অভিনেতার দেখা পাওয়া গেল এই ছবিতে। সোহেল খান, রেহানা জলি গড়পড়তা ছিলেন। ডা: এজাজ খুবই বাজে অভিনয় করেছেন। এই ছবির আরেকটি বিষয় ভালো লাগলো, সেটা হল নায়িকা বাদে কলেজের অন্য মেয়েগুলোও যথেষ্ট সুন্দরী ও স্মার্ট। বাংলা ছবিতে সাধারণত এ ধরণের চরিত্র এক্সট্রাদের দিয়ে করানো হয়। যাদেরকে কলেজপড়ুয়া হিসেবে মেনে নিতে বেশ কষ্ট হয়।
অন্যান্য গতানুগতিক ছবির তুলনায় “কি দারুণ দেখতে” বেশ আলাদা ছিল। যদিও ছবির মেসেজটি ঠিক স্পষ্ট নয়। বুদ্ধিমতী, কালো মাহির জন্য বাপ্পীর মনে কোন অনুভূতিই ছিল না। অথচ নাম না জানা ফর্সা মাহির পিছে বাপ্পী দৌড়ঝাঁপ করে দর্শকদের কি মেসেজ দিলেন? ছবি শেষে এটা যেন ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’র আড়াই ঘণ্টার এক বিজ্ঞাপন হয়ে গেল। যেখানে ভালোবাসা মুখ্য নয়, গায়ের রংটাই মুখ্য। আর সব ছবিকে জোরপূর্বক টক-ঝাল-মিষ্টি করার প্রয়োজন নেই। প্রত্যেকটি স্বাদের কিন্তু নিজস্ব আকর্ষণ আছে। অযাচিতভাবে টেস্টমেকারের প্রয়োগ দর্শক জিহ্বায় কি দারুণ নয় বরং নিদারুণ অনুভূতির জন্ম দেয়।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×