মদন এখন বাসে।
সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় যাবে। ওখানে ভাই আছে, আছে ছোট কাকা। নিজের আত্মীয় বলতে এরাই। মেজাজটা খিছড়ে গেছে সকালেই। গ্রামের বেশকিছু লোক তাদের আত্মীয়দের জন্য এটা সেটা পাঠিয়েছে। নিজের আত্মীয় তো আছে দুর সম্পর্কের আত্মীয়ও যোগ হয় কেউ ঢাকায় যাচ্ছে শুনলে। প্রায় মন খানেক হবে সব মিলিয়ে ওজন। এগুলো গোছাতে গোছাতে বাসের সময় হয়ে এলো। তাড়াহুড়া করে উঠেছে শেষে। তলপেটের ছোট্ট চাপের কথা খেয়াল ছিলো না। এখন বুঝছে পেশাবটা না করে কত ভুলই না করেছে। খুব যন্ত্রণা হচ্ছে এখন।
মাঝে নাভারন থেকে মোটামুটি সুন্দরী এক তন্বী উঠেছে তার পাশের সিটে। সাতক্ষীরা থেকে এ পর্যন্ত জানালার পাশেই বসেছিলো। এখন বাসের সুপারভাইজর বলছে এই সিট নাকি ওই মেয়ের আগে থেকে বুক করা। কি আর করবে? ছেড়ে দিয়ে সরে এলো। সুন্দরী বলে কথা। কথা জমানোর চেষ্টা করেছিলো প্রথম প্রথম। আড়চোখে তাকিয়েছেও বেশ কয়েকবার। কিন্তু প্রতিবার মেজাজটাকে বিগড়ে দিয়েছে হতচ্ছাড়া তলপেট। এখন গ্যাঁট হয়ে বসে শধু আড়মোড়া মারছে। মেয়েটা জানি সন্দেহ ভরা চোখ নিয়ে ওর দিকে তাকালো। কি জানি কি ভাবছে আবার। পাগল- টাগল না ভাবলেই হয়। চাপটা ক্রমে ক্রমে বাড়ছে তো বাড়ছেই। মনে মনে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছে। ও আল্লাহ, এই যাত্রায় রেহাই দাওগো। আর তো পারি না। ব্লাডার তো মনে হয় ফেটে যাবে। উহ্ যন্ত্রনা! আল্লাগো! মাঝে মনে হয়েছিলো, সুপারভাইজররে বলে কোথাও নেমে কাজটা সেরে আসে। কিন্তু পাশে সুন্দরী। তার সামনে থেকে যেয়ে মুতে আসার মতো অভদ্র পবলিক মদন নয়। অগত্যা আর কি করা। বসে আছে।
বাতাসে মেয়েটার চুল উড়ছে। উড়ন্ত ওড়নার মৃদু আঘাত লাগছে মদনের হাতে। পোলো ব্রান্ডের ঘটিহাতা টি-শার্টের উপর দিয়ে স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে সে আঘাতের মাধুর্য। কৈশর-যৌবনের সন্ধিক্ষনে মদনের একবার প্রেম হয়েছিলো। গোল-গাল কচি কলাপাতার বর্ণময়ী এক কিশোরীর সাথে। তার চুল বলে আর ওড়না বলে, কোনোটাই মদনের ছুয়ে দেখার সাহস হয়নি। আজ আবার তার কথা- উফ্, তলপেটে।
পাহাড় থেকে জলের ঢল নামছে মনে হয়। পানির গভীরতা বাড়ছে নদী-খালের। আর অল্প বাড়লে বুঝি বাঁধ ছাপিয়ে যাবে। বন্যা হবে নাকি? অবশ্য তাদের ওখানে বন্যা হয় না। যা হয় তা জলোচ্ছাস। বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে চলে আসে। গ্রামের পর গ্রাম সে ভেসে যেতে দেখেছে। কতো লোক ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে যায়। পানি নেমে যায় কয়েকদিন পর। কিন্তু তার পদচিহ্ন মানুষ ঘাড়ে করে বয়ে নিয়ে চলে বহু দিন। জীবন আর বাস্তবতা। নদীমাতৃক মানে নদী মাতা। হাসি আসে মদনের। হয়তো ছিলো কোনো এক সময়।
আর সহ্য করার মতো নেই। বাসের ঝাঁকুনিও অসহ্য লাগছে। অন্যবার এরকম ঝাঁকুনিতে ভালো ঘুম হতো। দুই পা'কে প্রানপণে একটা লেভেলে ধরে রেখেছে। না যায় সরানো না যায় নাড়ানো। চেয়ারটাকে খাঁড়া করে নিয়েছে অনেক আগেই। এখন চেয়ারে পিঠ ঠেঁকিয়ে অনেক কস্ঠ করে বসে আছে। সামনে দৌলতদিয়া। ফেরীতে উঠার জন্য যানবাহনের সারিবদ্ধ লম্বা মিছিল। কচ্ছপ গতি। নিচে নেমে এলো। কোথাও নির্জন জায়গা পাচ্ছে না। পথের দুধারে অজস্র ভাতের হোটেল, চায়ের স্টল। সবখানে ব্যস্ততা। তারচেয়েও ব্যস্ততা মদনের। নির্জন জায়গা যে তাকে পেতেই হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। অবশেষে খুঁজে পেলো। একটা কলাগাছের ঝোপ। টয়লেটে ঢোকার দোয়া পড়ে ভিতরে ঢুকে গেলো। নজরটা পিছনে। কেউ দেখছেনা তো আবার। একটু এগিয়ে যেতেই দেখা গেলো পিছনটা ক্লিয়ার। তার মানে কেউ দেখছেনা এখন শুধু কলাগাছ ছাড়া। এ সময়টাতে যেন আরও অসহ্য। জিপারটা খুলবে সে দেরীও যেন কতকাল। জিপার খোলা শেষ, ক্যামেরা রেডী, অ্যাকশন।
কাট্! কাট্!! ও কি সামনে! যেখানে দাড়ানো, কয়েক হাত দুরে যেয়ে রাস্তার মাটি খাঁড়া নেমে গেছে নিচে। বর্ষার পদ্মা জেলে পাড়ার ভিতরেও। ছোট্ট দ্বীপ। দু'টি বাড়ি। একজন রমনী। খোলা গায়ে ভেজা শাড়ী। এই ভর দুপুরে সাবান নেড়ে চেড়ে গোসলে মত্ত। মাথা তুললেই সামনে মদন। কামেরা, অ্যাকশন সব ক্যানসেল। এখন খুব সাবধানে ঐ রমনীর দিকে চোখ রেখে, কলাগাছের গোড়া থেকে আন্দাজ একহাত পরিমান উপর দিয়ে আস্তে আস্তে ছেড়ে দিলো। আহ!!!! শান্তি!
পায়ের উরুতে উষ্ণ জলের মৃদু ছোয়া। অজান্তেই হাত চলে গেলো। ধড়মড় করে উঠে পড়ল বিছানায়। এ কি! ছি! ছি! ছি! এই বয়সেও বিছানায় প্রশ্রাব। মুখ দেখাবে কেমনে
নাগু ও আমু আর ফেসবুকেও আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



