এক মহিলার সাতটি সন্তান। দুইটি মেয়ে আর ৫টি হলো ছেলে। মহিলা তার স্বামীর কাছে পরাজিত হয়ে বরাবরই মা হয়েছেন। প্রথম সন্তানটির পর তিনি আর চাননি, কিন্তু স্বামী বেচারা এতে ক্ষান্ত হতে পারেন না। প্রায় প্রতি বছরই তার সন্তান না হলেই যেন নয়। তবু আল্লাহপাক তাদের সাতটি সন্তানই কেবল দিলেন। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। দেয়া নেয়ার মালিক তিনি।
লোকটি তার স্ত্রীকে সদাই এই বলে আশ্বস্ত করতেন যে সন্তান হলো আল্লাহর নেয়ামত। আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন তাকে এই নেয়ামত বেশি বেশি ঢেলে দেন। আর আল্লাহই জানেন আমাদের সন্তান কজন হবে। যে আসবার তাকেতো আমরা কিছুতেই ফেকাতে পারবো না! এই সন্তানরাই তোমার বিপদে তোমার সম্বল হবে।....
বৃদ্ধ বয়সে লোকটি মারা গেলেন। তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিকে এদিক সেদিক করে সংসারটা মোটামুটি চালিয়ে নিলেন। এরপর একটা ছেলে বড় হয়, সে রোজগার করতে শুরু করে পরের বছর আরেকটা লেখাপড়া শেষকরে বের হয় রোজগার করতে শুরু করে। যদিও চাকরি এতো সহজ না, তবু যৌবনের শক্তি সব বাধাই দূর হয়ে যায়। বেশ ভালোভাবেই মেয়েদের তিনি বিয়ে দেন। ছেলেরাও একে একে প্রতিষ্ঠি।.... সুখের এমন এক আসরে এলো বিদায়র ডাক।...
সবাইকেই একদিন ছেড়ে যেতে হবে।....
মহিলা কঠিন পীড়ার মধ্যে পড়লেন। ছেলেরা তার আপ্রাণ চেষ্টা করছে সুস্থ করার জন্য। এই ডাক্তার সেই ডাক্তার সবধরনের চেষ্টাই করা হলো। কিন্তু কিছুতেই মা সুস্থ হন না। ছেলেরা ভাবেন আর কীভাবে মার চিকিৎসা করা যায়! মা যে বাঁচবেন না এটা মোটামুটি সবাই নিশ্চিত। শুধু জানে না ধর্মান্ধ ছোট্ট ছেলেটা। যে শুধু জানে মা চিরদিন বেঁচেই থাকে, তা না হলে ছেলেকে কে বাঁচিয়ে রাখে এতোকিছু থেকে। সে সারাদিন মায়ের কাছে ঘুরঘুর করে আর কাঁদে, মা তুমি কবে সুস্থ হবে?.....
এদিকে মেয়েরাও কিন্তু মায়ের সেবায় একনিষ্ঠ। মা বাঁচবে না জেনেই তাঁদের এতো আবেগ! সবার মাঝেই একটা প্রতিযোগিতার ভাব কে কতো বেশি মায়ের খেদমত করতে পারে, মাকে বেশি ভালোবাসে.... ইত্যাদি প্রমাণ করার জন্য। দেখা গেলো সকালে বড়ভাই নিয়ে এলেন একজন স্পেশালিস্টকে দুপুরে আরেক ভাই ধরে আনেন আরও বড় এফআরসিএস, বিকেলে হয়ত আরেকজন এতো এতো কবিরাজী ওষুধ!
মা এসব দেখেন আর হাসেন ভাবেন এই পাগলগুলি তাকে ভালোবেসে কী টাইনা করছে। ওগো তুমি সত্যিই বলেছিলে, সন্তান আল্লাহর নেয়ামত। এত সুখও কি লেখা ছিল আমার কপালে।
মেয়েরা তবু অভিযোগ করে বলে ভাইয়ারা একদমই খেয়াল করছে না মায়ের দিকে। তারা নিজেদের সংসার আর ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত। কথার ভয়ে ছেলেরা আরও আরও ডাক্তার দেখায়, ওষুধ খাওয়ায়।... মা কিন্তু ভালো হন না।
মেয়েরা এবার ভেবে বের করলো যে মনে হয় মাকে অপারেশন করালে মা ভালো হয়ে যেত। তাদের ধারণা ছিল ।ভাইয়েরা হয়ত অপারেশনে অনেক খরচ ভেবে মাকে সুচিকিৎসা দিচ্ছে না। বোনদের প্যানপ্যানানী শুনে ভাইরা রাজি হলো মাকে আরও ভালো ট্রিটমেন্ট এর জন্য অপারেশন করাবে।
ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ করলে জানা গেলো ডাক্তাররা এতে ভরসা পান না। যে বয়স এ বয়সে অপারেশন করালে ভালো না হয়ে এমনিতে যতোদিন বাঁচতো তাও হয়ত বাঁচবে না। তবে আবার ভালোও হতে পারে। এই নিয়ে পরিবারের মধ্যে তৈরি হলো নানা মত। ধর্মপ্রিয় ছোট্ট ছেলেটি বরাবরই এতোসব চিকিৎসার বিরুদ্ধে। তার কথা হলো আল্লাহই সবকিছুর মালিক। রাখে আল্লাহ মারে কে?...
সে এতাদিন এতো ওষুধ খাইয়েছে তাতে বিরোধীতা না করলেও এবার অপারেশনের ব্যাপারে তার ঘোর আপত্তি। তার মনে হলো ভাই আর বোনেরা মিলে মাকে নিয়ে তাদের জেদাজেদি, ভালোবাসার খরচের প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।
কই তারাতো কেউ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করে না। তাদের বউরাওতো সকালে ওঠেনা নামাজ পড়তে! শুধু টাকা আর গলাবাজি করে ভালোবাসা দেখানো হয়?...
পাগলের এসব প্রলাপে কেউ কান দেয় না। ও ছাপ ছাপ বলে দেয় অপারেশন করালে ওর মা হয়ত বাঁচবে না, অপএব অপারেশন না করে মা যে কদিন বাঁচে তাকে আরও ভালোভাবে বাঁচতে দেওয়া হোক। আর আল্লাহর কাছে সবাই প্রার্থনা করুক।...
কিন্তু তাতে কি আর কে মাকে বেশি ভালোবাসে তা প্রমাণ করা যাবে?
অতএব অপারেশনই করা হবে।....
বুকে লাগিয়ে দেওয়া হলো পেসমেকার। মা সুস্থ না হন অন্তত মৃত্যূর ঝুঁকিতো কমলো!... এখন প্রতিদিনই মায়ের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। সে কোনও সলিড খেতে পারে না। মুখ দিয়ে খেতে পারে না, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে... কথা বলা নিষেধ। এর চে যেন মৃত্যুই ভালো ছিল। কিন্তু কে বোঝে কার ভালো! তারা তাদের টাকার গরম, ভালোবাসার প্রতিযোগিতা করে সুখি হতে চায়।....
সুস্থ্ হবার পর ছোট ছেলেটি পরে গেলো বিপদে। যদিও সে অপারেশন চায়নি, কিন্তু যখন মা অপারেশন থিয়েটারে তখন সে মাথা কুটে মরেছে খোদার দরবারে....
কিন্তু এখন সবাই তাকে ভৎসর্না করে যে তুই মাকে বাঁচতে দিতে চাসনি। আর মা এখন তোকেই সবকিছু লিখে দিতে চায়। এটা তোর ষড়যন্ত্র! মাকে তাড়াতাড়ি মেরে সব সম্পত্তি হাত করার উদ্দেশ্যই তোর ছিল....
ছোটভাইকে সম্পদশালী ভাবতে তাদের গায়ে কাঁটা ফুটছিল। এদিকে তারা যে এতো ডাক্তার কবিরাজি করলেন তাতেও তারা ভেবেছিলেন মা হয়ত যার উপর সন্তুষ্ট থাকবেন তাকে একটু বেশি দিবেন...তখন এই খরচ পুষিয়ে যাবে।
বড়দের সঙ্গে গলাবাজি করে ছোট আর পারলো না। সবাই মিলে তাকে মাতৃঘাতক বলে বাড়ি থেকে তাড়ানোর ফন্দি করলো। এতে তার সম্পত্তিটুকু তারা ভাগবাটোয়ারা করে নিতে পারবে!...
কিন্তু গ্রামের কিছু ধর্মপ্রাণ মুরুব্বি এর বিরোধিতা করলো। কারণ তারা দেখেছে ছেলেটি মায়ের জন্য কীভাবে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করেছে। সেও মায়েল সুস্থতাই চেয়েছে। শুধু অপারেশনটাকে ভয় পেতো বলে তাতে অসম্মতি ছিল। ।অবশ্য এখনও তার ধারণা আল্লাহই তার মাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তার ধারণা মা আরও ভালো থাকতো যদি ওই অপারেশন টা না করতো। এখনতো মা বেঁচেও মরে আছেন প্রায়!....
ছেলে যখন কোনওভাবেই মাকে ছেড়ে যেতে চায় না, এবং কিছু মুরুব্বিও বুঝতে পারে বড়দের ষড়যন্ত্র তখন তারাও ছেলেটিকে সাপোর্ট করে। এতে ভাইয়েরা চায় অন্তত তাকে দিয়ে ক্ষমা চাওয়াতে। কিন্তু ছেলেটির কথা হলো সেতো কোনও ভুল করেনি, সেও আল্লাহর কাছে কেঁদেছে, সেতো মায়ের ভালোই চেয়েছে....
কেন সে ক্ষমা চাইবে?....
বিবাদ চলছে, বিবাদ চলবে। বিবাদ দেখে মা শুধু অশ্রুই ফেলবে। ছেলেরা মেয়েরা মিলে আজ এই ইস্যুতে কাল এই ইস্যুতে ছোট ছেলেকে তাড়ানোর কখনও কখনও বড় মেঝকে, এবং মেঝ বড়কে তাড়ানোর জন্য, পৈতৃক সম্পত্তির ভাগের জন্য সবাই প্রায় চাকরি ব্যবসা ভুলেই গেলো।... সংসারের অবস্থা আরও খারাপ গতে লাগলো। মিল থাকায় যেমন সবার আয় একযায়গায় হতো তেমনি শ্বশুর বাড়ির লোকের পরামর্শে এ ওরটা নষ্টের তালে থাকলো। যদি মেজ বউ রান্না করে তো বড় বউ গিয়ে লুকিয়ে তরকারিতে লবণ ঢেলে দেয়, মেজর বদনাম হয়, এই নিয়ে চলে আবার হাঙ্গামা। আবার বড় যদি বাজার করে তো মেজ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সেটাকে সস্তা পঁচা বলে নানানভাবে ছোট করে। তাই বাইরের লোক রাখা হয় বাজারের জন্য । সুযোগবুঝে সে আরামসে চুরি করে। চুরির ব্যাপারটা সবাই জানে, সবাই ভাগও নেয় কিন্তু ভাবে আর কেউ জানে না।.... এভাবে সংসারের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা আমরা জানি না। তবে আমাদের দেশ কোথায় এসে ঠেকেছে তা আমার দেখতেউ পাচ্ছি।...
স্বাধীনতার নামে ভারতের অধীনতা চায়নি বলে যদি জামাত ভুলকরে থাকে তবে তাতে ঘৃণা নয় বরং অহঙ্কার হওয়া উচিৎ।
গতকালও টিভিতে দেখলাম এদেশের চিনিশিল্পের কী অবস্থা! ভারতের চিনিতে বাজার সয়লাব। অন্যান্য কোন পণ্যটা নেই যা ভারতের নয়?
হায়রে ভালোবাসা? হায়রে দেশপ্রেম!....

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



