গত সপ্তাহে হঠাৎই গুগলের এক ঘোষণা তোলপাড় তুলল প্রযুক্তি-বিশ্বে। শত কোটি ডলারের চীনের সার্চ ইঞ্জিন বাজার ছেড়ে তারা এবার ফিরতি পথে হাঁটবে! শুধু তাই নয়, এখন থেকে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে চীন সরকারের আর কোনো কাটছাঁট মানতে রাজি নয়। আর এ ঘোষণার মধ্য দিয়েই চীন-গুগলের সম্পর্ক এখন পেঁৗছে গেছে হিমাঙ্কে। এর জের লেগেছে এখন বেইজিং-ওয়াশিংটন সম্পর্কেও।
২০০৬ সালে মুক্ত বাণিজ্যের পতাকাবাহী যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে এসে এক দেশ দুই নীতির চীনে প্রবেশ করে গুগল। সেই সঙ্গে চীনা সরকারের নজরদারি ক্ষমতা মেনে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে লেরি পেজ ও সার্গেই ব্রিনের হাত গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটি। যাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং নৈতিকতা অন্য সবার চেয়ে আলাদা বলে মত ছিল বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু তাদের হতাশ করে গুগল চীনা সরকারের কথামতো বন্ধ করে দেয় কিছু ওয়েবসাইট। ১৯৮৯ সালের তিয়েনআমেন স্কয়ার বিদ্রোহ, তিব্বত ইস্যু অথবা ফালুং গংয়ের মতো চীন সরকারের কাছে স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকে গুগল তাদের সার্চ ইঞ্জিন আওতার বাইরে রাখে।
সম্প্রতি চীন পর্নোগ্রাফিক সাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে তাও মেনে নেয় গুগল। আর সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে নিজ দেশের 'মুক্ত ইন্টারনেট' সমর্থনকারীদের সমালোচনা। সবই মুখ বুজে সহ্য করেছিল গুগল। তার কারণ অবশ্য একটাই_চীনের বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার। যার ভোক্তাসংখ্যা এখন ৩৮ কোটি ৪০ লাখ। এর ৬০ শতাংশ বাজার দখলকারী চীনের স্থানীয় সার্চ ইঞ্জিন বাইদু'র সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে গুগল তার নিজস্ব একটি অবস্থানও এতদিনে তৈরি করে নিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ এই 'চীন ছাড়ো' হুমকি কেন? গুগলের ক্ষেপে ওঠার কারণ হ্যাকিং। চীনের অনেক জি-মেইল গ্রাহক ইদানীং হ্যাকিংয়ের শিকার হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে এসব গ্রাহক সাধারণ নন বরং প্রত্যেকেই রাজনৈতিক কিংবা মানবাধিকার কর্মী। এদের কেউ কেউ আবার পশ্চিমা। ব্যক্তি অধিকারে বিশ্বাসী সংস্থাটি এবার তাই বেশ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। তাদের কথা চীনা সরকারের সঙ্গে কোনো দফারফা না হলে এ দেশই ছাড়বে গুগল। এ বিষয়ে চীন সরকার কিছুটা নড়েচড়ে বসলেও বাড়তি কোনো উদ্যোগ অবশ্য নেয়নি। তাদের কথা, যেকোনো দেশের প্রতিষ্ঠানই চীনে ব্যবসা করতে পারে। তবে তার আগে শ্রদ্ধা রাখতে হবে দেশটির আইন আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি।
এদিকে ওবামা প্রশাসন চীনের এমন আচরণকে দেখছে মুক্ত বাণিজ্য সংস্থায় অঙ্গীকারের বরখেলাপ হিসেবে। সেই সঙ্গে গুগলের অভিযোগের জবাবও চেয়েছে তারা বেইজিংয়ের কাছে। শেষ পর্যন্ত এ ঘটনা কতদূর গড়ায় তা-ই এখন দেখার বিষয়।
সূত্র: ইন্টারনেট

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



