somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ছোটবেলা থেকে বিজনেস চিন্তা এবং বড় হয়ে চাকরিজীবী হয়ে ওঠা

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চাকরি করা বিষয়টা আসলে আমার সাথে যায়না। আমার হবার দরকার ছিল একজন পাকা ব্যবসায়ী। সেই ছোটবেলায় সবচেয়ে সুখি ভাবতাম বাদাম বিক্রেতাদের। ইস কি সুন্দর সারাদিন ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করে। ঘুরে ঘুরে ভিবিন্ন জায়গা দেখতে পায় আবার ইচ্ছে হলেই বাদাম খায়। তাই ছোটবেলায় কেউ যদি জিজ্ঞেস করত বড় হয়ে কি হবে, অকপটে বলে ফেলতাম বাদাম বিক্রেতা হব। সবাই শুনে হাসত। একটু বড় হয়ে এই বাদাম বিক্রেতা হবার ইচ্ছা নিজে নিজেই চলে গেছে। ফটিকের মত দুরন্ত না হলেও আমার বন্ধু মহলে দু-একজন ফটিক ছিল সবসময়। নিজেকে একা ভাববার মত সুযোগ করে দেয়নি এই ফটিকেরা।
আর একটু বড় হয়ে ভাবতাম সাইকেল মেকার হব। সাইকেল মেকার হবার একটা বিশেষ কারণ ছিল। তখনো আমার নিজের কোন সাইকেল ছিলনা। বাসা থেকে কিছু দুরে স্টেশন রোডে একটা সাইকেলের মেকার বসত। তার কাছে ছিল প্রায় ৮-১০টা সাইকেল। আমার মত অনেকেই ৫ টাকা ঘন্টায় এই সাইকেল ভাড়া নিত। অনেক সকালে গিয়ে দাঁড়ায় থাকতে হত এই সাইকেলের জন্য। একটু দেড়ি করে ফেললেই ৮-১০ টি সাইকেলের একটিও পাওয়া যেতনা। তখন বেশ মন খারাপ করে বাসায় ফিরে আসতে হত। তো যাই হোক, আমার কাছে মনে হত এই সাইকেল ভাড়া খাটানোর ব্যবসাটা মন্দনা। আমি এরকম ৮-১০টি সাইকেল পেলে একটা জমজমাট ব্যবসা করতে পারতাম আর উপরি হিসেবে সারাদিন নিজের সাইকেল চালাতাম। এই হল আমার সাইকেল মেকার হতে চাওয়ার রহস্য।
একই বয়সে আমি আর একটা ব্যবসার কথা ভাবতাম। আর সেটা হচ্ছে ভিডিও গেমের ব্যবসা। বাসা ছেড়ে অনেক দূরে গিয়ে ভিডিও গেম খেলতে হত। ভিডিও গেমের দোকানে প্রচুর ভীড়। দুই টাকায় এক কয়েন। সারাদিন দুই টাকা দুই টাকা করে কত কয়েন নষ্ট হয়ে যেত তার হিসেব নেই। এই ভিডিও গেমের ব্যবসার চিন্তাটা প্রবল আকার ধারণ করল যখন দেখলাম পাড়ার মোড়ে একেবারে বাসার কাছাকাছি নতুন একটা ভিডিও গেমের দোকান চলে এসেছে। ওরা আসলে এর উপযোগিতাটা বুঝতে পারছে, কিন্তু ওদের আগে এই একই জায়গায় একটা ভিডিও গেমের দোকান নির্মাণের চিন্তা আমার ছিল। আফসোস আমার টাকা ছিলনা।
আর একটু বড় হয়ে আমার বিজনেস চিন্তা অন্য দিকে ডাইভার্ট হল। এবার মনে হল একটা ছোটখাটো ফুলের দোক দিলে মন্দ হয়না। স্কুলের পাশেই ছিল ফুলের দোকান। স্কুলে যাওয়া আসার পথে দাঁড়িয়ে দেখতাম ফুলের দোকানের ভীড়। আহারে মানুষ কত্ত ফুল কেনে। তাছাড়া পাশেই ছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ক্লাশগুলোতে প্রত্যেকেই ফুল উপহার পেত। মনে হত এরকম একটা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থাকলেইতো ফুলের ব্যবসা রমরমা। কিন্তু নাহ। আমার এই ফুলের ব্যবসাটাও পরে আর করা হয়ে ওঠেনি।
এবার আমার মাথায় যে ব্যবসার চিন্তাটা এল তা বলতে পারেন ভয়ানক। টিভি ভিসিডি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা। এই ব্যবসাটা ভয়ানক কেন বা কেন এই ব্যবসাটা করার জন্য আমার খুব ইচ্ছে হয়েছিল তা একটু আড়াল করলাম। তবে এখনো মাঝে মাঝে মনে হয় এই ব্যবসাটা খারাপ না। তবে এই ব্যবসার কনসেপ্টকে কেন্দ্র করে আরেকটা দুর্দান্ত ব্যবসার কনসেপ্ট মাথায় আসে। কনসেপ্টটা হল সিনেমা হলের ব্যবসা। কি দুর্দান্ত কনসেপ্ট না? হায়রে মানুষ! কত্ত মানুষ হলে গিয়ে সিনেমা দেখে! ইস আমার কাছে যদি টাকা থাকত তাইলে একটা সিনেমা হল দিয়ে সারাদিন সেখানে সিনেমা দেখতাম। আর সেই সাথে বিজনেসটাও চরম হত। নাহ্, সে আশাতেও গুড়ে বালি।

এরপর আরো আরো অনেক ধরনের বিজনেসের চিন্তা আমার মাথায় আসছিল। কিন্তু টাকার অভাবে সেই চিন্তাগুলো কাজে লাগাতে পারিনি। তবে আপুর বিয়ের জন্য পাত্র খোজাখুজি শুরু হলে বাসায় সবাই বলত ব্যবসায়ী ছেলের সাথে বিয়ে দেবেনা। কেন দেবেনা? এই বিষয়ে আমি বরাবরই দ্বান্দিক অবস্থানে ছিলাম। কেন? ব্যবসায়ীরা কি মানুষ না?
যাই হোক, এখনো মনে হয় বাদাম বিক্রেতা, সাইকেল মেকার, ভিডিও গেমের দোকানদার, ফুল বিক্রেতা, টিভি-ডিভিডির ব্যবসা কিংবা সিনেমা হলের ব্যবসা করলেই বুঝি ভাল করতাম। কষ্ট করে পড়ালেখা করে এত এত ভাল-মন্দ বোঝার উপলব্ধি করতে হতনা। নাহ্! আমি ব্যবসায়ী হইনি, যা হয়েছি তা কখনো হতে চাইনি। এরকম হাত-পা বাঁধা মিডিয়া কর্মী হবার চেয়ে স্বাধীন বাদাম বিক্রেতা হলেই বোধহয় ভাল করতাম। হাসি মুখ নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম আর বাদাম বিক্রি করতাম, এই বাদাম ! এই বাদাম !
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×