বিতর নামায সুন্নত (নাসাঈ, তিরমিযী, হাকেম, বুলগুল মারাম ১০০ পৃঃ);
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন বিতর নামায ফরজ নামাযের মত লাযেম ও আবশ্যক নয়; বরং সে নামায রাসুল (সঃ) সুন্নত করেছেন । তিনি (সঃ) বলেন আল্লাহ তা’আলা বেজোড় বা একক, তার কোন শরীক নেই, তিনি বিতর তথা বেজোড় নামায পছন্দ করেন এবং তাতে প্রচুর ছওয়াব দিয়ে থাকেন । সুতরাং হে কোরআনের অনুসারীগণ তোমরা বিতরের নামায পড় (তিরমিযী অধ্যায় সালাত হা; ৪১৫; ইবনে মাযাহ অধ্যায় নামায কায়েম কর ও তার মধ্যে সুন্নত হাঃ ১১৫৯; সহীহ তারগীব তারহীব হাঃ ৫৯২);
আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন রাতের প্রত্যেকভাগে রাসুল (সঃ) বিতর নামায পড়েছেন । রাতের প্রথম্ভাগে, রাতের মধ্যভাগে অতঃপর রাতের শেষভাগে বিতর পড়া তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয় (মুসলিম অধ্যায় মুসাফীরের নামায হাঃ ১২৩১; বুখারী অধ্যায় জুমআ হাঃ ৯৪১);
নবী (সঃ) বিতরের শেষ সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন । আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী (সঃ) বলেন ফজর হওয়ার পূর্বে তোমরা বিতর নামায আদায় করে নাও (মুসলিম অধ্যায় মুসাফীরের নামায অনুচ্ছেদ রাতের নামায দু’দু রাকাত করে এবং শেষ রাতে এক রাকাত বিতর হাঃ ১২৫৩);
আবু আইয়্যুব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল (সঃ) বলেছেন প্রত্যেক মুসলমানের উপর হক হচ্ছে বিতর নামায আদায় করা । অতএব যে পাঁচ রাকাত বিতর পড়তে চায় সে পাঁচ রাকাত, যে তিন রাকাত পড়তে চায় সে তিন রাকাত এবং যে এক রাকাত পড়তে চায় সে এক রাকাত পড়তে পারে (আবু দাউদ অধ্যায় নামায অনুচ্ছেদ বিতর কত রাকাত হাঃ ১২১২; ইবনু মাযাহ অধ্যায় নামায প্রতিষ্ঠা কর অনুচ্ছেদ বিতর নামায তিন, পাঁচ, সাত ও নয় রাকাতের বর্ণনা হাঃ ১১৮০);
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুল (সঃ) বলেন তোমরা মাগরীবের নামাযের সাথে সাদৃশ্য করে তিন রাকাত বিতর নামায পড় না বরং পাঁচ রাকাত বা দাত রাকাত দ্বারা বা নয় রাকাত দ্বারা কিংবা এগার রাকাত দ্বারা বিতর পড় (ফাতহুল বারী ২/৫৫৮; নাইলুল আওতার ৩/৪২-৪৩; সালাতু তারাবীহ্ ৮৪ ও ৯৭ পৃঃ);
বিতর নামায এক, তিন, পাঁচ, সাত ও নয় পর্যন্ত পড়া যায় (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ১১১-১১২ পৃঃ);
বিতর এক, তিন, পাঁচ, ও সাত রাকাতে একটি মাত্র বৈঠক এবং কুনুতের পূর্বে হাত তোলার নির্দেশ সহীহ হাদিসে নেই দেখুন (মুসলিম ১ম খন্ড ২৫৪ পৃঃ; আবু দাউদ ১৮৯ পৃঃ; নাসাঈ ২৫০ পৃঃ; মেশকাত মাওলানা নুর মোহাম্মাদ আযমী ৩য় খন্ড হাঃ ১১৮৭; মেশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য ২য় খন্ড হাঃ ১১৮৭);
তিন রাকাত পড়ার প্রথম পদ্ধতিঃ ইবনে উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত জনৈক ব্যক্তি রাসুল (সঃ) কে বিতর নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি (সঃ) বললেন দু’রাকাত এবং এক রাকাতের মাঝে সালাম ফিরে পার্থক্য করে নিবে (আল মুগনী ২/৫৮৯); এ পদ্ধতি অনুযায়ী বিতর মুলত এক রাকাত । দু’রাকাত পড়ে সালাম ফিরানো অতঃপর এক রাকাত পড়া ।
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ তিন রাকাতেও শুধু একটি বৈঠক করতেন (হাকেম বায়হাকী ৩য় খন্ড ৩১ পৃঃ);
আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল (সঃ) তিন রাকাত বিতর নামায পড়তেন, এর মধ্যে তাশাহুদের জন্য বসতেন না, একাধারে তিন রাকাত পড়ে শেষ রাকাতে বসতেন ও তাশাহুদ পড়তেন । এভাবেই বিতর নামায পড়তেন আমীরুল মু’মিনীন ওমর বি খাত্তাব (রাঃ) হাদিসটি বর্ণনা করেন ইমাম হাকেম তিনি হাদিসটিকে সহীহ বলেন ।
পাঁচ রাকাত পড়ার পদ্ধতিঃ আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী (সঃ) পাঁচ রাকাত বিতর পড়তেন । এর মধ্যে কোথাও বসতেন না একেবারে শেষ রাকাতে বসতেন (মুসনাদে আহমাদ হাঃ ২৪৫২০; সুনান নাসাঈ অধ্যায় ক্বিয়ামুল্লায়ন ও নফল নামায অনুচ্ছেদ কিভাবে পাঁচ রাকাত বিতর পড়বে হাঃ ১৬৯৮);
পাঁচ রাকাত হলে মধ্য বৈঠক না করে শুধু শেষ বৈঠক করে আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরাতে হবে (বুখারী মুসলিম, মেশকাত ১১১ পৃঃ);
সাত রাকাত বিতর পড়ার প্রথম পদ্ধতিঃ আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন রাসুল (সঃ) বয়স্ক হয়ে গেলে এবং তাঁর শরীর ভারী হয়ে গেলে তিনি সাত রাকাত বিতর পড়েছেন, একেবারে শেষ রাকাতে তাশাহুদে বসেছেন (সুনান নাসাঈ অধ্যায় ক্বিয়ামুল্লায়ন ও নফল নামায অনুচ্ছেদ কিভাবে সাত রাকাত বিতর পড়বে হা; ১৬৯৯);
দ্বিতিয় পদ্ধতিঃ আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন রাসুল (সঃ) বয়বৃদ্ধ হয়ে গেলে এবং দূর্বল হয়ে পড়লে সাত রাকাত বিতর পড়েছেন । একাধারে ছয় রাকাত পড়ে তাশাহুদে বসেছেন । তারপর সালাম না ফিরিয়েই দাঁড়িয়ে পড়েছেন এবং সপ্তম রাকাত পড়েছেন তারপর সালাম ফিরিয়েছেন (সুনান নাসাঈ অধ্যায় ক্বিয়ামুল্লায়ন ও নফল নামায অনুচ্ছেদ কিভাবে সাত রাকাত বিতর পড়বে হা; ১৭০০);
সাত ও নয় রাকাত পড়লে ৬ ও ৮ রাকাতে মধ্য বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পরে আবার ওঠে এক রাকাত পরে আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরাতে হয় (মুসলিম, মেশকাত ১১১ পৃঃ);
নয় রাকাত পড়ার পদ্ধতিঃ সা’দ বিন হিসাম (রাঃ) বলেন আমি উম্মুল মুমেনীন আয়িশাহ (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম আপনি রাসুল (সঃ) এর বিতর নামায সম্পর্কে আমাকে বলুন? তিনি বললেন আমরা তাঁর জন্য মেছওয়াক এবং ওজুর পানি প্রস্তুত করে রাখতাম । আল্লাহর ইচ্ছায় যখন তিনি জাগ্রত হতেন তখন মেছওয়াক করতেন এবং অজু করতেন অতঃপর নয় রাকাত নামায আদায় করতেন । এ সময় মধ্যখানে না বসে অষ্টম রাকাতে বসতেন । বসে আল্লাহর যিকির করতেন তাঁর প্রশংসা করতেন ও দোয়া করতেন । অতঃপর সালাম না ফিরিয়েই দাঁড়িয়ে পড়তেন এবং নবম রাকাত আদায় করতেন । এরপর তাশাহুদে বসে আল্লাহর যিকির করতেন তাঁর প্রশংসা করতেন ও দোয়া করতেন । অতঃপর আমাদেরকে শুনিয়ে জোরে সালাম ফিরাতেন (মুসলিম অধ্যায় মুসাফীরের নামায হা; ১২৩৩);
হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) বলেন নবী করীম (সঃ) বিতরের প্রথম রাকাতে সুরা আলা দ্বিতিয় রাকাতে সুরা আল কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সুরা এখলাছ পড়তেন । আর শেষ রাকাতেই সালাম ফিরাতেন (সহীহু সুনানিন নাসাঈ ১/৫৪৮ হাদিস নং ১৭০০; আবু দাউদ অধ্যায় সালাত অনুচ্ছেদ তাতে কি পাঠ করবে হাঃ ১২১৩);
উবাই বিন কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল (সঃ) বিতর নামায পড়তেন তখন রুকুর পূর্বে ক্বনুত পড়তেন (ইবনে মাযাহ অধ্যায় নামায প্রতিষ্ঠা কর ও তাতে সুন্নত অনুচ্ছেদ রুকুর পূর্বে ও পরে ক্বনুতের বর্ণনা হাঃ ১১৮২);
আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন রাসুল (সঃ) একমাস রুকুর পর ক্বনুত পাঠ করেছেন তাতে তিনি আরবের কয়েকটি গোত্রের উপর বদদু’আ করেছেন (বুখারী অধ্যায় বিতর অনুচ্ছেদ রুকুর আগে ও পরে ক্বনুত পাঠ করা হাঃ ১০০২);
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) কে ক্বনুত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বলেন রাসুল (সঃ) রুকুর পর ক্বনুত পড়তেন । অন্য এক বর্ণনায় আছে রুকুর আগে ও পরে উভয় নিয়মেই পড়তেন (সহীহু সুনানী ইবনে মাযাহ ১/৩৪৯ হাঃ নং ১১৯৬);
ক্বনুত একটি দু’আ তাই এ অবস্থায় হাত তুলা উচিত । তাছাড়া হাত তুলে দু’আ ক্বনুত পড়ার ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম থেকেও প্রমান পাওয়া যায় । ইবনে মাসউদ, উমর বিন খাত্তাব, ইবনে আব্বাস, আবু হুরায়রাহ (রাঃ) প্রমুখ সাহাবী দু’আ ক্বনুত পড়ার সময় বুক বরাবর দু’হাত তুলতেন । ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক ও এরুপ করতেন (আল মুগনী ২/৫৮৪; তোহফাতুল আহওয়াযী ৪৬৪ নং হাদিসের আলোচনা দ্রষ্টব্য);
হযরত হাসান ইবনে আলী (রাঃ) বলেন রাসুল (সঃ) আমাকে বিতরের নামাযে পড়ার জন্য এই দোয়া ক্বনুত শিক্ষা দিয়েছেন- আল্লাহুম্মাহদিনী ফীমান হাদাইতা………ওয়া সাল্লাল্লাহু আলান্নাবীয়্যি মুহাম্মাদিন । (নাসাঈ অধ্যায় ক্বিয়ামুল্লায়ন ও দিনের নফল নামায অনুচ্ছেদ বিতরের দু’আ হা; ১৭২৫; তিরমিযী অধ্যায় বিতর নামায অনুচ্ছেদ বিতরে ক্বনুতের বিবরণ হাঃ ৪২৬; ইবনে মাযাহ অধ্যায় নামায প্রতিষ্ঠা কর ও তাতে সুন্নাত অনুচ্ছেদ বিতরে ক্বনুতের বিবরন হাঃ ১১৬৮; দারেমী সহীহু সুনানী আবি দাউদ ১/৩৯২ হাঃ নং ১৪২৫);
হযরত উমর (রাঃ) এই দোয়া ক্বনুত পড়তেন- আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা,………ইন্না আযাবাকাল জিদ্দা বিল্ কুফফারি মুলহিক (সহীহ ইবনু খুযায়মা হাঃ ১১০০; বায়হাকী সুনানে কুবরা ২/২১১; ত্বহাবী, ইরউয়াউল গালিল ২/১৬৩; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৩/১১০ হাঃ নং ৪৯৪৮);
বিতর এক রাকাত এর আরও দলিল দেখুন (মিশকাত-মাওলানা নুর মোহাম্মাদ আযমী ৩য় খন্ড হাঃ ১১৮৫, ১১৮৬, ১১৯৬; মিশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য ২য় খন্ড হাঃ ১১৮৫, ১১৮৬, ১১৯৬; বাংলা অনুবাদ বুখারি মাওলানা আজীজুল হক ১ম খন্ড হাঃ ৫৪০; সহিহ আল বুখারি আঃ প্রঃ ১ম খন্ড হাঃ ৯৩২, ৯৩৪, ৯৩৬, ৯৪২, ৯৪৩; সহিহুল বুখারী তাঃ পাঃ ১ম খন্ড হাঃ ৯৯০, ৯৯৩, ৯৯৫, ১০০১, ১০০২; বুখারী শরীফ ইঃ ফাঃ ৩য় খন্ড হাঃ ৯৩২, ৯৩৪, ৯৩৬;
জানাতে পারেন
২৩) তিন রাকায়াত বেতের নামাযের দুই রাকাতের পর মধ্য বৈঠক করতে হবে । এর কুরআন ও সহিহ হাদিসের পূর্ণাঙ্গ দলিল লিখিত জানাবেন ।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




