আল্লাহ বলেন-হে মুহাম্মদ, তুমি জাগরণ কর কখনও রাত্রির প্রায় দুই তৃতীয়াংশে কখনও অর্ধাংশে এবং কখনও এক তৃতীয়াংশে এবং জাগে তোমার সংগে যারা আছে তাদের একটি দল (সুরা মুজ্জাম্মিল আয়াত নং ২০);
তাহাজ্জুদ নামাযের আগে করণীয়ঃ হুযাইফা (রাযিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) যখন তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতেন তখন মিসওয়াক করতেন এবং আমাদেরকেও মিসওয়াক করার হুকুম দেয়া হত, আমরা যখন তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতাম (নাসায়ী) । অতঃপর নবী (সাঃ) অযু করতেন (মুসলিম) । তারপর নীচের দু’আ ও তাসবীহগুলি দশবার করে পড়তেন । তারপর নামায শুরু করতেন (আবু দাউদ, মেশকাত ১০৮ পৃঃ)
১) দশবার “আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ)
২) দশবার আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই)
৩) দশবার সুব্হানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী (আমি আল্লাহ প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা ঘোষনা করছি)
৪) দশবার সুব্হানাল মালিকিল কদ্দুস (আমি মহা পবিত্র মালিকের গুণগান করছি)
৫) দশবার আসতাগফিরুলাহ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করছি)
৬) দশবার লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কেউ নেই)
৭) দশবার আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন যীক্বিদ্দুনিয়া ওয়া যীক্বি ইয়াওমিল ক্বিয়ামাহ (হে আল্লাহ! আমি এই জগতের এবং পরকালের সঙ্কট থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
তাহাজ্জুদও জামাতে পড়া যায় (বুখারী ১ম খন্ড ১৩৫ পৃঃ);
তারপর এখনও হাজী সাহেবদের নিকট শুনে দেখুন মক্কা মদিনায় তাহাজ্জুদের বা কায়দা আজান দিয়ে জামাত করা হয় । এর চেয়ে বিস্তারিত জানতে দেখুন উমদাতুল কারী শরাহ সহীহুল বুখারী ৩য় খন্ড ৫৯৭ পৃঃ মিশরী ছাপা । ফতোয়ায়ে সুবকী ১ম খন্ড ।
তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফযীলতঃ ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও নফল সব নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফযীলত সবচেয়ে বেশী (আহমাদ, মেশকাত ১১০ পৃঃ)
রাসুল (সাঃ) বলেন, আমাদের প্রভু পরওয়ারদিগার তাবারাকা ওয়া তা’আলা প্রত্যেক রাত্রে দুনিয়ার আসমানে (যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়) নেমে আসেন যখন রাত্রের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকে । অতঃপর তিনি বলেন, তোমাদের কে আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দেব । কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দেব, কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব (মুসলিম, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)
রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাত্রে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগিয়ে নামায পড়ায় এমনকি সে যদি জেগে না উঠে, তবে তার মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করে থাকেন । অনুরুপ কোন মহিলা যদি রাত্রিকালে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে এবং সে তার স্বামীকে নামাযের জন্য জাগায় এমনকি স্বামী না জাগলে স্ত্রী তার মুখে পানি ছিটিয়ে তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতিও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে (আবু দাউদ, নাসায়ী, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)
রাসুল (সাঃ) বলেন, আল্লাহর নিকট অতি প্রিয় নামায দাউদ (আঃ) এর নামায । তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন এবং রাতেন তৃতীয় ভাগে নামাযে দাঁড়াতেন আর ৬ষ্ঠ ভাগে আবার ঘুমাতেন (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)
তাহাজ্জুদ নামায কত রাকাত এবং পড়ার বিবরণঃ তাহাজ্জুদ নামায বিতরসহ ১৩, ১১, ৯ কিংবা ৭ রাকাত পড়া যায় (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)
প্রথমে দু’রাকাত ছোট ছোট সুরা মিলিয়ে হালকাভাবে পড়ে আরম্ভ করবে (মুসলিম, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)
অতঃপর দু’রাকাত করে । পাঁচ তাহাজ্জুদের নামায নয় কিংবা সাত রাকাতেও পড়া যায় । নয় রাকাত পড়লে চার সালামে আট রাকাত পড়বে । পরে এক রাকাত বিতর পড়বে । আর সাত পড়তে চাইলে দু’সালামে চার রাকাত পড়ে তিন রাকাত বিতর পড়বে । অথবা তিন সালামে ছয় রাকাত পড়ে এক রাকাত বিতর পড়বে (বুখারী, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)
তাহাজ্জুদের নামায এক সালামে চার রাকাতও পড়া যায় (বুখারী, মুসলিম, বুলগুল মারাম ২৭ পৃঃ);
এমতাবস্থায় দু’রাকাত পড়ে বসে “আত্তাহিয়্যাতু………ওয়া রাসুলুহু” পর্যন্ত পড়ে উঠে বাকী দু’রাকাত পড়তে হবে । তবে যে কোন সুন্নাত নামায দু’রাকাত করে পড়াই উত্তম (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ১১১ পৃঃ)
ছানাঃ- আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন, নবী (সাঃ) রাতে যখন তাহাজ্জুদ নামায শুরু করতেন তখন বলতেন-
আল্লাহুম্মা রাব্বা জিবরায়ীলা ওয়া মীকায়ীলা ওয়া ইস্রাফীলা ফাতিরাস্ সামাওয়াতি ওয়াল আর্যি, আলিমাল্গাইবী ওয়াশ্শাহাদাতি আনঁতা তাহ্কুমু বাইনা ইবাদিকা ফীমা কানূ ফীহি ইয়াখতালিফূন । ইহদিনী লিমাখতুলিফা ফীহি মিনাল হাক্কি বিইযনিকা ইন্নাকা তাহদী মানঁ তাশায়ু ইলা সিরাতিম মুসতাক্বীম ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! হে জিব্রাঈল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের প্রভু! আসমানসমুহ এবং যমীনের সৃষ্টিকর্তা, দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞাতা । তোমার বান্দারা যে সব বিষয়ে মত বিরোধ করেছে সে সব বিষয়ে তুমি তাদের মধ্যে ফায়সালা করবে । তোমার অনুমতি দ্বারা মতবিরোধ পূর্ণ বিষয়ে আমাকে সত্যের প্রতি হেদায়েত কর । নিশ্চয়ই তুমি যাকে খুশী সঠিক হেদায়েত দান করে থাক ।
উপরোক্ত দু’আ ব্যতীত তাহাজ্জুদ নামাযে ছানা হিসাবে “সুব্হানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাস মুকা………” অথবা আল্লাহুম্মা বা’ইদ বাইনী………ও পড়া যায় (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, আলবানী মেশকাত ১/৩৮৩ পৃঃ)
এশা বাদ বিতর পড়ার পর শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়া যাবে এবং তাহাজ্জুদের পর আর বিতর পড়তে হবে না । বরং প্রথম বিতর শেষ রাতেও বহাল থাকবে । বিতর ভেঙ্গে জোড়া বানানোরও প্রয়োজন নেই । চার ইমাম ও অধিকাংশ আলিমদের মতও তাই (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, আলবানী মেশকাত ১/৩৮৩ পৃঃ)
জানাতে পারেন
২৪) এছাড়া তাহাজ্জুদ নামাযের আরও কোন নিয়ম জানা থাকলে, কুরআন ও সহিহ হাদিসের পূর্ণাঙ্গ দলিল সহ লিখিত জানাবেন ।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




