অপরাধীদের সম্পর্কে বলবেঃ তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নীত করেছে । তারা বলবেঃ আমরা নামায পড়তাম না, অভাবগ্রস্থদেরকে আহার্য দিতাম না, আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম এবং আমরা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম, আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত (আল মুদ্দাস্সীর আয়াত ৪১-৪৭);
অবশ্যই মুনাফেকরা প্রতারনা করেছে আল্লাহর সাথে । অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে । বস্তুতঃ তারা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায় একান্ত শিথিল ভাবে লোক দেখানোর জন্য আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে (নিসা আয়াত ১৪২);
যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে না কেয়ামতের দিন তার জন্য উহা জতি দলিল ও মুক্তির উপায় হবে না (আহমাদ দারেমী মেশকাত ৫৯ পৃঃ);
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বে নামাযীদের কে তওবা করে নামাযী না হওয়া পর্যন্ত কোড়া মারতে এবং কয়েদ খানায় রাখতে আদেশ দিতেন । আর ইমাম মালেক (রহঃ) ও ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বে নামাযী কে তওবা করে আমল আকিদা ঠিক না করলে কতল করার হুকুম দিতেন (মুসলিম শরাহ লব্বী ১ম খন্ড ৬১ পৃঃ);
শাহ আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) তার কিতাবে লিখেছেন- বে নামাযীর জানাযা পড়বে না এবং মুসলমানদের কবর স্থানে দাফনও করবে না । ইমাম আব্দুল ওহাব শারানী লিখেছেন- বে নামাযীর উপর মুরতাদের হুকুম জারি হয় । অতঃএব তার জানাযা পড়া হবে না (মিযানে শারানী) ।
সৈয়দ নযীর হোসেন দেহলভী (রহঃ) লিখেছেন- বে নামাযীর জানাযায় কোন আলেম, মুক্তাকী এবং বিশিষ্ট লোক যাবে না । কোন রকমে কাজ সেরে নিতে যাবে কিছু মুর্খ সাধারণ লোক (ফতোয়ায়ে নাযিরীয়া ১ম খন্ড ৩৯৬ পৃঃ);
কোন মানুষ এবং শির্ক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হল নামায না পড়া (মুসলিম, মেশকাত ৪৮ পৃঃ);
পরিশেষ
আমরা যারা নামাযী তাদের অধিকাংশ জন্মগত ভাবে তাদের বাবা মায়ের নামায পড়ার পদ্ধতি অনুসরণ করি । যারা ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত তারা অনুসরণ করে কোন মাযহাব ।
মাযহাব পালনের ক্ষেত্রে মাযহাবের ইমামগণের কিছু মূলনীতি ও উপদেশ রয়েছে, তা আমরা অনেকেই জানি না । বিশেষ করে মতবিরোধপূর্ণ মাস’আলাগুলোতে তথ্যসূত্র দুর্বল হলেও নিজ নিজ মাযহাবের রায় অন্ধভাবে মেনে চলি অনেকেই । এমন অনুসরণের অনুমতি কি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দিয়েছেন ? কোন বিষয়ে দুর্বল হাদীসে আমল করা, অথচ একই বিষয়ে প্রাপ্ত বিশুদ্ধ হাদীসটি আমলে না আনা- এমন অদ্ভুত, অযৌক্তিক আমলের নির্দেশ কি মাযহাবের ইমামগণ আমাদের দিয়েছেন ?
এ বিষয়ে তাঁরা আমাদের কি উপদেশ দিয়েছেন, এতদসংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণী নিম্নে তুলে ধরা হলো,
১) ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার কোন সিদ্ধান্ত যদি রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশের বিপরীত হয়, তখন আমরা কী করব ? ইমাম সাহেব বললেন, রাসুল (সাঃ) এর হাদিসের মুকাবিলায় আমার উক্তি ফেলে দিও । আবার তাকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনার কথা যদি সাহাবাদের উক্তির প্রতিকুল হয় তখন কী করতে হবে ? ইমাম সাহেব বললেন, সাহাবাগণের উক্তির মুকাবিলায় আমার উক্তি প্রত্যাখ্যান করো । (ইরশাদ ২৬ পৃঃ; ইকদুল জীদ ৫৪ পৃঃ)
তিনি আরো বলেন- “মানুষ ততদিন পর্যন্ত সত্যপথে প্রতিষ্ঠিত থাকবে, যতদিন পর্যন্ত তাদের মধ্যে হাদিসের অনুসন্ধানের অনুরাগ বিদ্যমান থাকবে । কিন্তু তারা যখন হাদিস পরিত্যাগ করে অন্য কিছুর সন্ধান করবে তখনই তারা বিপথগামী হবে” । (মীযান মিসরে মুদ্রিত ৪৯ পৃঃ)
২ ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘আমি নিছক একজন মানুষ । ভুল করি, শুদ্ধও করি । তাই আমার মতামতকে যাচাই করে দেখে নিও । কুর’আন ও সুন্নাহর সাথে যতটুকু মিলে সেটুকু গ্রহণ করো, আর গড়মিল পেলে সেটুকু বাদ দিয়ে দিও’ । (ইকাযুল হিমাম, পৃঃ ১০২; কওলুল মুফীদ ১৭ পৃঃ)
৩ ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা আমার কোনো কথা হাদীসের সাথে গড়মিল দেখতে পাও, তাহলে তোমরা হাদীস অনুযায়ী আমল করো, আমার নিজের উক্তিকে দেয়ালে ছুড়ে ফেল’ । (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ; ১/৩৫৭)
তিনি (রহঃ) বলেন-তোমরা আমার গ্রন্থে যদি কোন কথা রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাতের প্রতিকুল দেখতে পাও, তাহলে রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাত অনুসারে ব্যবস্থা দিও, আমার উক্তি ছেড়ে দিও । (ইকাযুল হিম ১০০ পৃঃ)
যেসব মাসআলায় রাসুল (সাঃ) এর সহিহ হাদিসের সমর্থন মিলবে তাই লিপিবদ্ধ করা সিদ্ধ । সহিহ হাদিসের পরিপন্থী আমার সমুদয় উক্তিকে আমি আমার জীবিতকালে এবং মৃত্যুর পরও প্রত্যাহার করে নিচ্ছি ।(ইকাযুল হিম ১০৪ পৃঃ)
৪ ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘তুমি আমার মাযহাবের অন্ধ অনুকরণ করো না । মালেক, শাফেয়ী, আওযায়ী, সাওরী-তাঁদেরও না; বরং তাঁরা যেখান থেকে (সমাধান) নিয়েছেন তুমিও সেখান থেকেই নাও’ । (ইবনুল কাইয়িম রচিত ‘ঈলামুল মুওয়াক্কেয়িন; ২/৩০২)
তিনি (রহঃ) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহীহ হাদীসকে প্রত্যাখান করবে, সে লোক ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত’ । (ইবনুল জাওযী রচিত, আল মানাকির; ১৮২)
তিনি (রহঃ) বলেন- “আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর উপর কারও কোন কথা বলার কোনই অধিকার নেই । (মীযান ১ম খন্ড ৫১ পৃঃ)
৫ আল্লামা ইবনে আবেদীন বলেন, ‘কোনো মাস’আলা সহীহ হাদীসের সাথে গড়মিল হলে ঐ হাদীসটিই আমল করবে । আর ঐ হাদীসই হবে তার মাযহাব । এরুপ আমল তাকে মাযহাব থেকে বের করে দেবে না । হানাফী হলে সে হানাফীই থেকে যাবে’ । (রাদ্দুল মুখতার; ১/১৫৪)
৬ সুনানে আবি দাউদ গ্রন্থের সংকলক মুহাদ্দিস আবু দাউদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘এমন কোনো লোক নেই, যার সব কথাই গ্রহণযোগ্য; কেবল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া’ । (মাসাইলে ইমাম আহমদ; ২৭৬)
আমরা যে মাযহাবের হই না কেন আমাদের এবাদত বন্দেগীর সকল বিষয় কুরআন হাদিসের সাথে মিলিয়ে পালন করতে হবে ।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম (মায়াদা আয়াত ৩);
যারা তাদের ইবাদতের পদ্ধতি কুরআন হাদিসে দেখাতে পারবেনা তাদের কাছে প্রশ্ন তাহলে কি আপনি বলতে চান দ্বীন পূর্ণাঙ্গ নয় ?
যারা সত্য মিথ্যা গুজামিল দিবে তাদের স্বরন রাখা দরকার- প্রত্যেক প্রাণী আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু (ইমরান আয়াত ১৮৫);
বলুন সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে । নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল (বণী ইসরাঈল আয়াত ১৮১);
তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটি বিষয় পছন্দসই নয় অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যানকর । আর হয়তো বা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্য অকল্যান কর । বস্তুতঃ আল্লাহ জানেন তোমরা জাননা (বাক্বারা আয়াত ২১৬);
কেউ যেন অপর কাউকে অপহাস না করে (হুজুরাত আয়াত ১১);
প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দা কারীর দুর্ভোগ (হুমাযাহ আয়াত ১);
তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর । পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা (ইমরান আয়াত ১০৩);
যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে । প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত (আর রুম আয়াত ৩২);
মানুষ তাদের বিষয়কে বহুধা বিভক্ত করে দিয়েছে প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত হচ্ছে (মু’মিনুন আয়াত ৫৩);
নিশ্চয়ই যারা স্বীয় ধর্মেকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল হয়ে গেছে তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই (আনআম আয়াত ১৫৯);
হে ঈমানদারগণ! অধিকাংশ আলেম ও দরবেশদের অবস্থা এই যে তারা জনগনের ধনমাল বাতিল পন্থায় ভক্ষণ করে তাদেরকে আল্লাহর পথ হতে ফিরিয়ে রাখে (তওবা আয়াত ৩৪);
তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি কর না (আশ শুরা আয়াত ১৫);
আপনি তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করবেন না বলুনঃ আল্লাহ যে কিতাব নাযিল করেছেন আমি তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি (আশ শুরা আয়াত ১৫)
আর কেহ আল্লাহ ও রাসুলের অবাধ্য হলে এবং তাঁহার নির্ধারিত সীমা লংঘণ করলে তিনি তাহাকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করবেন । সেখানে সে চির কাল থাকবে এবং তার জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রয়েছে (নিসা আয়াত ১৪);
নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে বিরোধীতা করে তারা লাঞ্ছিত হবে (মুজাদালা আয়াত ২০);
যারা রাসুলের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের সতর্ক থাকা উচিত যে তারা যে কোন বিপদের সম্মুখীণ হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে (নূর আয়াত ৬৩);
এক্ষণে যে কেহ আল্লাহ ও রাসুলের কথা অমান্য করবে, তার জন্য জাহান্নামের আগুন রয়েছে এবং তারা উহাতে চিরকাল থাকবে (জ্বীন আয়াত ২৩);
রাসুল (সঃ) বলেন- বিদআতিদের নামায, রোযা, হজ্জ, উমরাহ, জিহাদ, যাকাত এবং ফরজ নফল কোন এবাদতই আল্লাহর নিকট কবুল হবে না । তারা ইসলাম থেকে সেরুপ ভাবে খারিজ হয়ে যাবে, যেভাবে আটা থেকে চুল পৃথক হয়ে যায় (ইবনে মাযাহ ইঃ ফাঃ ১ম খন্ড হাঃ ৪৯);
রাসুল (সঃ) বলেছেন-তোমরা যদি ২টা জিনিষ আঁকরে ধরে থাক তাহলে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না, এ দু’টি জিনিষ হলো আল্লাহর কুরআন ও আমার সুন্নাহ (মিশকাত ১ম খন্ড হাঃ ১৭৭);
তোমাদের নিকট যে জ্ঞান পৌঁছেছে তারপরও যদি তোমরা তাদের (কুরআন-হাদিস বহির্ভূত কারো কথা) মনের ইচ্ছা ও বাসনার (দলিল বিহীন মতবাদ) অনুসরণ কর তাহলে নিশ্চিত রুপে তোমরা যালিমদের মধ্যে গণ্য হবে (বাক্বারা আয়াত ১৪৫);
(নামায সমাপ্ত)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




