ফরজ নামাজ জামায়াতে সহিত পড়ে সালাম ফিরানোর পর কি করণীয় বা শরীয়া নির্দেশ কি ? তা আমাদের জানা খুবই জরুরী ।
১) রাসুল (সাঃ) ফরয নামাযে সালাম ফিরেই الله أكبر আল্লাহু আকবার ১ বার উচ্চঃস্বরে বলতেন । ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি ঐ তাকবীর শুনে রাসুল (সাঃ) এর নামায শেষ হওয়া বুঝতে পারতাম (মুসলিম, মেশকাত ৮৮ পৃঃ)
২) তারপর তিনবার নিম্নস্বরে- «أستغفر الله، أستغفر الله، أستغفر الله، আস তাগফিরুল্লাহ্ (মুসলিম, মেশকাত ৮৮ পৃঃ)
اللهم أنت السلام ومنك السلام، تباركت يا ذا الجلال والإكرام»؛
৩) অতঃপর রাসুল (সাঃ) বলতেন- আল্লাহুম্মা আনঁতাস সালাম, ওয়ামিনঁকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া যাল জালালী ওয়াল ইকরাম ।
এই তিনটি দু’আ ইমাম সাহেব ক্বিবলামুখী থেকে পড়ে উঠে যেতে পারেন অথবা মুসল্লীদের দিকে ফিরেও বসতে পারেন এবং অন্যান্য মাসনূন দু’আও তাসবীহ পাঠ করতে থাকবেন (মুসলিম, মেশকাত ৮৮ পৃঃ)
৪) বিখ্যাত সাহাবী মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) এর হাত ধরে রাসুল (সাঃ) বললেন- হে মুয়ায! আমি তোমাকে ভালবাসি । সুতরাং আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি প্রত্যেক নামাযের পরে এ কথাগুলি বলতে কখনই ভুলবে না (আবু দাউদ, আহমাদ, মেশকাত ৮৮ পৃঃ)
আল্লাহুম্মা আয়ি’ন্নী আলা যিক্রিকা ওয়া শুক্রিয়া ওয়া হুসনি ইবাদাতিক ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার যিক্র করার, তোমার শুকর আদায় করার এবং তোমার উত্তম ইবাদত করার জন্য সাহায্য কর ।
৫) আবূ উমামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে, তাকে মওত ছাড়া আর কোন কিছুই জান্নাতে যেতে বাধা দিতে পারবে না । তাবারানীর রেওয়ায়তে আয়াতুল কুরসীর সাথে সুরা ইখলাস পড়ার কথাও আছে (সুবলুস সালাম ১/২০০ পৃঃ)
﴿ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَيُّ ٱلۡقَيُّومُۚ لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةٞ وَلَا نَوۡمٞۚ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيۡءٖ مِّنۡ عِلۡمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَۚ وَسِعَ كُرۡسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۖ وَلَا ئَُودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ وَهُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡعَظِيمُ ٢٥٥﴾[البقرة:255 ]
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়ালহাইয়্যুল কাইয়্যুম ………… ওয়ালা ইয়াদুহু হিফযুহুমা ওয়া হুয়াল আলিইয়্যুল আযীম ।
অর্থঃ ঐ আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী । তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা পাকড়াও করতে পারে না । আসমান সমুহে এবং যমীনে যা কিছু আছে সবই তাঁর জন্য । তাঁর বিনা অনুমতিতে এমন কে আছে যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তিনি তাদের সামনের ও পিছনের সব কিছু জানেন । আর তারা তাঁর জ্ঞানের কোন কিছুই আয়ত্ব করতে পারে না কিন্তু তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন । তাঁর কুরসী আসমান সমুহ ও জমীনে পরিব্যপ্ত হয়ে আছে । এতদুভয়ের রক্ষনাবেক্ষণ ও দেখাশুনা তাঁকে ক্লান্ত করতে পারে না । তিনি হলেন বহু উচ্চ মর্যাদাবান ও মহান ।
«سبحان الله، والحمد لله، والله أكبر (ثلاثًا وثلاثين) لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير»؛
আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পরে “সুব্হানাল্লাহ” ৩৩ বার, “আলহামদুলিল্লাহ” ৩৩ বার এবং “আল্লাহু আকবার” ৩৪ বার এই পূর্ণ ১০০ বার পড়বে (বুখারী) অথবা উক্ত তিনটি ৩৩ বার করে পড়ে শেষে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ও লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদির”; ১ বার পড়ে ১০০ বার পুরা করবে তার সমস্ত গোনাহ মা’ফ হয়ে যাবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয় (মুসলিম, মেশকাত ৮৮ পৃঃ; সুবুলুস সালাম ১/২০০ পৃঃ)
রাসুল (সাঃ) সাহাবী মুসলিম তামীমী (রাযিঃ) কে বলেন- তুমি যখন মাগরিব ও ফজরের নামাযের পর সালাম ফিরাবে তখন কারো সাথে কথা বলার আগে নিম্ন লিখিত দু’আটি সাতবার বলবে ।
আল্লাহুম্মা আজিরনী মিন্নান্নার ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও ।
অতঃপর তুমি যদি ঐ দিন বা রাতে মরে যাও তাহলে তোমার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি সনদ লিখে দেয়া হবে (আবু দাউদ, মেশকাত ২১০ পৃঃ)
রাসুল (সাঃ) বলেন- যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামা’আতের সাথে পড়ে, অতঃপর সে ওখানেই বসে আল্লাহর যিকর আযকার করতে থাকে যতক্ষণ না সূর্য উঠে । অতঃপর সূর্য উঠার কিছুক্ষণ পর দু’রাকাত নামায পড়ে তার জন্য এক পূর্ণাঙ্গ হজ্ব ও উমরার সমান সওয়াব হয় (তিরমি্যী, তাহক্বীকুল মেশকাত ৩০৬ পৃঃ)
একদা উম্মুল মু’মিনীন জুয়াইরিয়া (রাযিঃ) ফজরের নামাজের পর নামাযের বিছানায় বসে চাশতের সময় পর্যন্ত তাসবীহ তাহলীল করছিলেন । এমন সময় রাসুল (সাঃ) উপস্থিত হয়ে বললেন- আমি চারটি কালিমা তিনবার পাঠ করেছি যার নেকী আজকের দিনের শুরু থেকে তোমার সমস্ত তাসবীহ তাহলীলের নেকির সমান হবে (মুসলিম, মেশকাত ২০০, ২০১ পৃঃ) কালিমা চারটি-
সুব্হানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী আদাদা খালক্বিহী ওয়া রিযা নাফসিহী ওয়া যিনাতা আরশিহী ওয়া মিদাদা কালিমাতিহ ।
অর্থঃ আমি প্রশংসা সহকারে আল্লাহ তা’আলার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, তাঁর সৃষ্টির সংখ্যানুপাতে, তাঁর নিজের সন্তুষ্টি মত, তাঁর আরশের ওজন সমপরিমান এবং তাঁর অফুরন্ত বাণী পরিমাণ ।
সকাল সন্ধ্যায় তাসবীহঃ
হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আযীম ।
অর্থঃ আমার জন্য একমাত্র আল্লাহই যথেষ্ট যিনি ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই । আমি একমাত্র তাঁর উপরই ভরসা করলাম । আর তিনি সুবৃহৎ আরশের মালিক (সুরা তাওবাহ ১২৯ নং আয়াত)
যে ব্যাক্তি প্রতি সকাল সন্ধ্যায় সাতবার আয়াতটি পাঠ করবে দুনিয়া ও আখিরাতের যে বিষয়ই তাকে চিন্তাগ্রস্থ করুক তা তার ব্যাপারে যথেষ্ট হবে (আবু দাউদ, যাদুল মা’আদ ২/৩৭৬ পৃঃ)
সাইয়্যিদুল ইসতেগফারঃ
আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বী লা ইলাহা ইল্লা আন্তা খালাক্বতানী ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওআ’দিকা মাসতাত্বা “তু” আঊযুবিকা মিন্ শাররি মা সান’তু আবূ উ লাকা বি নি’মাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবূউ বিযামবী, ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আন্তা ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই । তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ । আমি তোমার বান্দা, আর আমি সাধ্যানুযায়ী তোমার ওয়াদা অঙ্গীকারের উপর ঠিক রয়েছি । আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই আমার কৃত কর্মের অনিষ্টতা থেকে । অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর । কারণ তুমি ছাড়া নেই কোন পাপ মোচনকারী ।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যদি কেউ উক্ত দু’আটি সন্ধ্যায় পাঠ করে অতপর ঐ রাত্রিতে মৃত্যু বরণ করে তাহলে জান্নাতে প্রবেশ করবে । আর যে ব্যক্তি সকাল বেলা পাঠ করে ঐ দিন মৃত্যু বরণ করলে সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে (বুখারী হাদিস নং ৫৩০৬)
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير»
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারী কালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির ।
অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই । তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই । তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব ও সকল প্রশংসা । আর তিনি সব কিছুর উপরই ক্ষমতাবান ।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এই বাক্যগুলির ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে ব্যক্তি উহা সকালে ১০০ বার পাঠ করবে দশটি গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব পাবে এবং ঐ দিন তার চেয়ে বেশী নেকী অন্য কেউ কামাতে পারবে না । কিন্তু যে ব্যক্তি এর চেয়েও অধিকবার পাঠ করবে । ১০ বার পাঠে একটি গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব পাবে । এছাড়াও তার জন্য একশত নেকী বা দশ নেকী লিখা হয় এবং একশত পাপ বা দশটি পাপ মোচন করা হয় এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় । সকালে পাঠ করলে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য শয়তান থেকে রক্ষিত থাকার ব্যবস্থা হয়ে যায় । অনুরুপ ভাবে সন্ধ্যায়ও (মুসলিম হাদিস নং ৪/২০৭১; মেশকাত হাদিস নং ২/২৩৯৫)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার
“সুব্হানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী” ।
পাঠ করবে তার গোনাহ সমুহ মাফ করে দেয়া হবে । যদিও তা সমুদ্রের ফেনা সমতুল্য হয় (বুখারী, মুসলিম, তাহক্বীকুল মেশকাত ৭১১ পৃঃ);
অন্য বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় এই তাসবীহটি ১০০ বার পাঠ করবে ক্বিয়ামতের দিন তার চেয়ে উত্তম কিছু নিয়ে অন্য কেউ আসতে পারবে না । কিন্তু যে তার মত অথবা তার চেয়ে বেশী পাঠ করবে (বুখারী, মুসলিম, তাহক্বীকুল মেশকাত ৭১১ পৃঃ)
কুরআন পড়াঃ
“নিশ্চয় ফজরের কুরআন পড়ার সাক্ষ্য দেয়া হবে” (বনী ইসরাঈল আয়াত ৭৮)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, সুরা যিলযাল “ইযাযুল যিলাত” অর্ধেক কুরআন, সুরা ইখলাস “কুলহুয়াল্লাহু আহাদ” কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ এবং সুরা কাফিরুন “কুল ইয়া আইয়্যুলহাল কাফিরুন” কুরআনের চার ভাগের এক ভাগ (বুখারী, তিরমিযী, মেশকাত ১/৬৬৩);
অর্থাৎ সুরা যিলযাল দুইবার পড়লে ১ খতম, সুরা ইখলাস তিন বার পড়লে ১ খতম এবং সুরা কাফিরুন ৪ বার পড়লে ১ খতম করে সওয়াব পাওয়া যাবে ইন্শাআল্লাহ্ ।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি সুরা তাকাছুর “আলহাকুমুত তাকাছুর” প্রতিদিন পাঠ করবে সে কুরআনের এক হাজার আয়াত পাঠের সমান সওয়াব পাবে (বাইহাকী, মেশকাত ১/৬৬৯)
জুমআঃ রাসুল (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি জুমুআর দিনে সুরা আল কাহাফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমুআর মধ্যবর্তী সময় নূরে আলোকিত হয়ে থাকবে (বায়হাকী, মেশকাত ১/৬৬৭ পৃঃ)
ফরজ নামাজ জামায়াতে সহিত পড়ে সালাম ফিরানোর পর কি করণীয় বা শরীয়া নির্দেশ কি ? তা আমাদের জানা খুবই জরুরী ।
সচরাচর দেখা যায়ঃ-ইমাম সাহেব হাত তুলে উচ্চ স্বরে মুনাজাত করেন ।
বিবেকের কাছে প্রশ্নঃ
মুনাজাত কি নামাজের অংশ ? মুনাজাত না করলে কি নামায হবে না ?
মাসবুক ব্যক্তি (দুই, এক রাকাত পরে আসা ব্যক্তি), যে সালামের পর তার ছুটে যাওয়া বাকি নামায আদায় করে । উচ্চ স্বরে মুনাজাত করলে ঐ ব্যক্তির কি নামাযে ব্যাঘাত ঘটে না ?
সর্বোপরি যে সমস্ত দুয়ার নির্দেশ শরিয়ায় উল্লেখ আছে সওয়াবের দিক দিয়ে তার গুরুত্ব বেশি না ইমাম সাহেবের মুনাজাতের গুরুত্ব বেশি ?
ফরজ সালাতের জামায়াতের পর হাত তুলে মুনাজাত বিদ’আত দেখুন (মেশকাত মাওলানা নুর মোহাম্মাদ আযমী ৩য় খন্ড হাঃ ১৪১২; মেশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য ২য় খন্ড হাঃ ১৪১২; সহীহ আল বুখারী আঃ প্রঃ ১ম খন্ড হাঃ ৯৬৮; সহীহুল বুখারী তাওঃ পাঃ ১ম খন্ড হাঃ ১০৩১; বুখারী শরীফ ইঃ ফাঃ ২য় খন্ড হাঃ ৯৬৮)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



