ছোট ছেলে-মেয়েদের কিছু বিব্রতকর প্রশ্নের উত্তরঃ
১. রনির বোন হয়েছে, কিন্তু ওর সুসু করার জায়গা নেই মা!
মা : হ্যাঁ সোনা আছে, আছে। কিন্তু সেটা তোমার আর রনির মতো নয়। তোমরা ছেলে ছেলেদের সুসুর জায়গাটা বাইরে থেকে দেখা যায়। তাই না?
ছেলে : হ্যাঁ মা, আমরা তো ধরতেও পারি।
মা : ঠিক তাই। কিন্তু রনির বোনের, রনির মায়ের, আমারসব মেয়েদের এই জায়গাটা শরীরের মধ্যে থাকে, তাই দেখা যায় না।
২.তুমি যে বললে ঠোঁটে কিসি করতে নেই, স্পাইডারম্যান যে মেয়েটাকে ঠোঁটে কিসি করল?
বাবা : তুমি তো জানো হাত না ধুয়ে খেতে নেই। কেন বলো তো?
মেয়ে : হাতে ময়লা থাকলে তা পেটে গেলে অসুখ করে।
বাবা : রাইট। কিসি করার সময়েও অন্যের মুখে থাকা কোনো ময়লা বা জার্ম তোমার পেটে চলে গেলে তোমার অসুখ করতে পারে। স্পাইডারম্যান তো তার পাওয়ার দিয়ে সব কিছু জানতে পারে তাই ও জানত যে ওই মেয়েটার কোনো প্রবলেম নেই, সেই জন্যই ওর বন্ধুকে কিসি করেছিল। কিন্তু আমরা তো স্পাইডারম্যানের মতো ম্যাজিক জানি না, তাই বুঝতে পারব না কোথায় জার্ম আছে। তাই আমরা গালেই কিসি করব। এই যেমন আমি তোমাকে কিসি দিই...।
মেয়ে : যেমন আমিও তোমায় কিসি দিই, মাকে, মাসিমণিকে...
(বাচ্চার বয়স যদি বেশি হয় তাহলে বড় হয়ে স্ত্রীর ঠোঁটে চুমু খাওয়াটা যে অপরাধ নয় তা বুঝিয়ে বলতে পারেন। কেবল মুখের কথায় নয়, আচরণের মধ্য দিয়ে কিছু বক্তব্য বুঝিয়ে দেয়া দরকার। কখনো আপনারা স্বামী-স্ত্রী খুব স্বাভাবিক পরিস্খিতিতে পরস্পরকে স্পর্শ করে, কিস করে এটা যে স্বাভাবিক, সিনেমা বা টেলিভিশনে আবদ্ধ নয়, সেটা বুঝিয়ে দিন।)
৩.বাবা, এফএম-এ বলল কনডম ব্যবহার করুন! ওটা কী বাবা?
বাবা : কনডম এক ধরনের ওষুধ যা ছেলেরা বড় হলে ব্যবহার করতে হয়। ছোটদের কোনো কাজেই লাগে না। তাও জেনে রাখ তুমি যখন বড় হবে, তোমার যখন ফ্যামিলি হবে...
ছেলে : ফ্যামিলি কেন হবে?
বাবা : সবারই হয়। ঠিক যেমন বড় একটা গাছের থেকে নতুন ডাল হয়, তাতে পাতা-ফল-ফুল সবই থাকে। তেমনই তুমি বড় হলেও তোমার আলাদা ফ্যামিলি হবে। আর এই ফ্যামিলি হলেই তোমার কাজে লাগবে কনডম। যখন বেবি চাইবে না তখনই কনডম ব্যবহার করতে হবে। তবে কনডম তোমাকে অনেক অসুখ থেকেও বাঁচাবে।
ছেলে : অসুখ থেকে বাঁচাবে মানে কী? অসুখ হলে তো ওষুধ লাগে।
বাবা : অসুখ হলে ওষুধ লাগে ঠিকই। তবে আবার চেষ্টা করলে অসুখ হওয়ার আগেই অনেক অসুখের হাত থেকে বাঁচা যায়। যেমন আমি আর তোমার মা মর্নিং ওয়াকে যাই, ব্লাড প্রেশার আর হার্টের অসুখ যেন না ধরে তার জন্য।
(বড় বাচ্চারা আরো গভীর প্রশ্ন করলে কনডমের ব্যবহার ও সুবিধাটা ধীরে ধীরে ব্যাখ্যা করতে পারেন।)
৪.তোমার পেটে আমি কেন হলাম? বাবার পেটে হলাম না কেন মা?
মা : বেবি মায়ের পেটেই হয়। বেবি যে ঘরে হয় সেটা মায়ের পেটেই আছে। বাবার পেটে তেমন ঘর নেই...
মেয়ে : কেন নেই মা?
মা : সব কিছুরই একটা নিয়ম আছে। যেমন বাবার দাড়ি আছে আমার নেই, আবার আমার এতটা লম্বা চুল আছে, বাবার নেই...।
৫.বেবি কী করে হয় মা?
মা : মা আর বাবা এক সঙ্গে থেকে দুজনে মিলে বেবি চাইলে তবেই বেবি হয়।
৬.ভাইয়ের মতো তুমিও কেন ডায়াপার পরো মা?
মা : ভাই ডায়াপার কেন পরে বলো তো?
ছেলে : সুসু করে ফেললে জামা-কাপড় ভিজে যাবে না বলে।
মা : ঠিক তাই, সুসু করে ফেলে। ও খুব ছোট বলতে পারে না তাই। আমি তো তাই নইআমি যেটা পরি সেটা ডায়াপার নয়, ওরকমই আর এক ধরনের ন্যাপকিন। মেয়েরা বড় হলে তাদের শরীর থেকে কিছু রক্ত বেরিয়ে যায়...
ছেলে : কী করে বেরোয়? কেটে যায়?
মা : না, সুসুর মতোই বেরোয়। সেই জন্যই ন্যাপকিন পরতে হয়।
ছেলে : রোজ রক্ত বেরোয় মা?
মা : না বাবা, তা হলে মরে যাব। প্রতি মাসে একবার, চার-পাঁচদিনের জন্য এটা হয়।
(আপনার যদি মেয়ে সন্তান থাকে তা হলে আট-নয় বছর বয়স হলে এই ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলা উচিত। কারণ অচিরেই তারা এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাবে। ছোট ছেলেদেরও ব্যাপারটার স্বাভাবিকত্ব ব্যাখ্যা করা দরকার।)
৭.ভাইয়া তোমার থেকে দুধু খায় কেন? বাবার থেকে খায় না কেন?
উত্তর : ভাইয়া যখন পেটে বড় হচ্ছিল তখনই বেবিকে খাওয়ানোর জন্য দুধু তৈরি হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। বেবি পেট থেকে বেরোনোর পর দুধুধু বেরোতে শুরু করে। ভাইয়া তো বাবার পেটে ছিল না, তাই ওখানে দুধু তৈরিও হয়নি। (বাচ্চা যদি প্রশ্ন করে বেবি কেন বাবার পেটে হয় না তা হলে চার নং প্রশ্নের উত্তরটা দিতে পারেন।)
৮.মা, সেক্স মানে কী?
মা : আমি ও তোমার বাবা যখন দুজন-দুজনকে খুব ভালোবাসলাম তখন বাবা আমাকে কত আদর করল, আমি বাবাকে কিসি করলাম...
মেয়ে : সে তো এখনো করো।
মা : করিই তো, এখনো যে ভালোবাসি! আর ভালোবেসে বাবা-মা নিজেদের আদর করে, কিসি করে একসঙ্গে থাকলে, বেবি চাইলে সেটাকে সেক্স বলে।
(আপনি কীভাবে এটা বোঝাবেন তা আপনার সন্তানের বয়সের ওপর নির্ভর করে। দশ-এগারো বছরের বেশি হলে ওকে সন্তান হওয়ার ব্যাপারটাও বুঝিয়ে বলতে পারেন।)
৯.হিজড়ারা ছেলে না মেয়ে?
বাবা : কোনোটাই নয়। আসলে আমি বা তুমি যেমন ছেলে, মা বা বোনু যেমন মেয়ে তেমনভাবে ওরা ছেলে বা মেয়ে নয়। আসলে আমরা তো সুসু জায়গা দেখেই বুঝি যে বেবিটা ছেলে না মেয়ে, হিজড়াদের ক্ষেত্রে অনেক সময় সেটা বোঝা যায় না। মায়ের পেটে থাকার সময়েই কোনো সমস্যা হলে এই রকমের গণ্ডগোল দেখা দেয়। তাই বড় হওয়ার পরও ওরা কখনো ছেলেদের মতো কিছু কাজ করে, কখনোবা মেয়ে-মেয়ে হয়ে থাকে।
১০.এইডস কী অসুখ বাবা?
বাবা : এইডস খুব খারাপ একটা অসুখ।
ছেলে : খুব রক্ত পড়ে?
বাবা : না শরীরের মধ্যে হয়, প্রথমদিকে তেমন বোঝাও যায় না।
ছেলে : তা হলে খারাপ কেন?
বাবা : বুঝতে পারার আগেই অনেকটা বেড়ে যায়। অসুখ আটকে রাখার যে স্বাভাবিক ক্ষমতা থাকে সেটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই সব সময় সর্দি-কাশি-পেট খারাপ হতে থাকে...
ছেলে : চ্যাবনপ্রাশ খায় না কেন?
বাবা : ওই যে বললাম খারাপ অসুখ। চ্যাবনপ্রাশ বা অন্য কোনো ওষুধেও সারে না।
ছেলে : কী করে এমন খারাপ অসুখটা হয়?
বাবা : অনেক রকমভাবে হতে পারে মায়ের থাকলে বেবির হতে পারে, অনেক সময়েই আমাদের ব্লাড নিতে হয়...
ছেলে : সুমিত কাকার অ্যাক্সিডেন্টের সময় যেমন তুমি রক্ত দিয়েছিলে?
বাবা : হ্যাঁ, ঠিক ধরেছ। আমাদের যদি এইডস থাকত, তা হলে রক্ত নেয়ার পর সুমিত কাকারও হয়ে যেত।
ছেলে : আর?
বাবা : এইডস আছে এমন মানুষ যদি কেউ বিয়ে করে, এক সঙ্গে থাকে, বেবি হয় তা হলে তারও এইডস হতে পারে।
১১.বাবা জানো, আজ স্কুলের টয়লেটে দুটো দাদা খুব নিজেদের আদর করছিল...
বাবা : তা তো করতেই পারে। আমি তোমাকে করি না?
ছেলে : না বাবা ওরকম আদর নয়...
বাবা : তা হলে কেমন আদর?
ছেলে : যেমন সিনেমায় গার্লফেন্সন্ড-বয়ফেন্সন্ডরা করে।
বাবা : ওই দাদা দুটোও হয়তো ফেন্সন্ড।
ছেলে : আমারও তো অনেক ছেলেফেন্সন্ড আছে বাবা, আমরা কিন্তু ওই রকম করি না।
বাবা : তোমাদের ইচ্ছা হয় না হয়তো, কিন্তু কারো কারো এই রকমের ইচ্ছা হতে পারে। ওটা নিয়ে একদম চিন্তা করবে না!
(প্রসঙ্গত জানাই, গার্লফেন্সন্ড-বয়ফেন্সন্ড ব্যাপারটা কথা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। নিজেদের নিয়ে কিংবা কোনো কাছের মানুষরা আগে প্রেমিক ছিলেন, পরে বিয়ে করেছেনএই উদাহরণ দিয়ে বোঝালে ওদের সংকোচও কেটে যাবে)।
১২.রেপ কী করে করতে হয় মা?
মা : সেটা আমি ঠিক জানি না। আর কখনো এই কাজটা করতে যাওয়া উচিত নয়। খুব খারাপ কাজ এটা
মেয়ে : খারাপ কেন?
মা : পৃথিবীতে অনেক কাজই খারাপ মারামারি করা, কাউকে গালাগালি দেয়া, চুরি করা, রেপ করা...। তাই ওগুলো নিয়ে একদম ভেবো না।
১৩.বোন কী করে পেট থেকে বেরোল, মা? তোমার পেটে তো কাটা নেই!
মা : বোনু পেটে ছিল, তবে পেট কেটে বেরোয়নি। টমির বেবি কি পেট কেটে হয়েছে।
ছেলে : এ মা ডগির তো পটি করার জায়গা দিয়ে বেরিয়েছিল...!
মা : না বাবা, তা নয়। দেখে মনে হয় যদিও তাই, আসলে ওটা বেবি হওয়ারই জায়গা। মায়েদেরও ওইরকম একটা বেবি হওয়ার জায়গা আছে।
ছেলে : সুসু করার জায়গা দিয়ে?
মা : না, সুসু আর পটির মাঝে আর একটা রাস্তা আছে যেখান দিয়ে সময় হলে বেবি বেরোয়।
ছেলে : খুব লাগে?
মা : একটু লাগে। তবে বোনুকে তো পাওয়া যায়!
(মেয়ে সন্তান হলে ধীরে ধীরে তাকে এই প্রসঙ্গে ঋতুচত্রের কথাটাও বলে নিতে পারেন। তা হলে ঋতু কীভাবে হয় সেটাও ওরা সহজে বুঝে যাবে।)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



