somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুন্নতী জীবন বলতে কী বোঝায়?

১৯ শে মে, ২০১২ বিকাল ৪:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

اللهم صل وسلم وبارك علي سيدنا محمد وعلي اله واصحابه اجمعين
মাগরিবের ফরয নামাজ পড়তে পারলাম, আলহামদুলিল্লাহ! দিন শেষ হয়ে গেছে, রাতের আঁধার নেমে এসেছে। দৃষ্টিগোচর হওয়ার কথা না কিন্তু, আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি আর এই প্রজ্বলিত বাতির আলো, উভয়ের সমন্বয়েই আমরা একে অপরকে দেখত পাচ্ছি। যদি এই বাতি জ্বলতে থাকে কিন্তু আমার চোখের দৃষ্টিশক্তি না থাকে, তাহলে যেমন কিছুই দেখা যাবে না, তেমনি চোখ দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন হলেও বাতি যদি বন্ধ থাকে তাহলেও কিছু দেখা যাবে না। আল্লাহ পাক আমাদেরকে তাঁর নেয়ামতের যথাযথ শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক দান করুন।
দিনের সূর্য ডুবে গেছে। এভাবে আজ হোক কাল হোক আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সূর্য ডুবে যাবে। কারো ক্ষেত্রেই এর কোন ব্যতিক্রম হবে না। দিবসের তিনটি সময়ের সাথে মানব জীনের খুব মিল। সকাল, দুপুর, বিকাল এরপর দিনের আলো নিভে যায়, তদরূপ মানব জীবনের শিশুকাল, যৌবনকাল, বৃদ্ধকাল এরপর জীবনের আলো নিভে যায়। পৃথিবীর কোন শক্তি এটাকে আগে পিছে করতে পারবে না। সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা এক সাথে হয়েও এই সিস্টেমের সামান্য হেরফের করতে পারবে না। বস্তু জ্ঞানে জ্ঞানীদের বিশ্বাস হলো, যে কোনো অসাধ্যকে বিজ্ঞানীরা নাকি সাধন করতে পারে। তাহলে আমি চ্যালেঞ্জ করছি যে, পৃথিবীর সকল ডাক্তার ও বিজ্ঞানী চেষ্টা করুক, যেন তাদের নিজেদেরসহ সব মানুষের বার্ধক্য আগে আসে যৌবন পরে আসে; তাহলে আর বৃদ্ধ-আশ্রমে গিয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাতে হবে না। বস্তুত একাজ তাদের যোগ্যতা ও ক্ষমতার সম্পূর্ণ বহিরাভুত।
মাগরিবের নামায তিন রাকাত কেন? মূল রহস্য তো আল্লাহই জানেন। কিন্তু আমার কাছে একটা রহস্য এই মনে হয় যে, দিবসের যেমন সকাল, দুপুর, বিকাল এই তিনটা কাল শেষে সন্ধ্যা আসে তেমনি আমারও তিনটা কাল শেষে জীবনে সন্ধ্যা শুরু হবে- একথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্যই বোধ হয় আল্লাহ মাগরিবের নামায, তিন রাকাত ফরয করেছেন। অর্থাৎ তুমি গরিব হও, ধনী বা মুসাফির হও, শিক্ষিত বা অশিক্ষিত হও, দেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি বা সাবেক রাষ্ট্রপতি যাই হও তোমার জীবনের সবকাল শেষ হওয়ার পর মৃত্যু বরণ তোমাকে করতেই হবে। আল্লাহপাকের সুস্পষ্ট ঘোষণা হলো,
كل نفس ذائقة الموت
فاذا جاءأجلهم لايستأخرون ساعة ولا يستقدمون
“যখন মৃত্যুর নির্ধারিত সময় এসে যাবে তখন সামান্য আগ-পিছ হবে না।”
পৃথিবীর কোন শক্তি নেই মৃত্যুকে এক সেকেন্ড আগে বা পরে নিয়ে যাবে। ১২টা এক মিনিটে ফাঁসি হবে, তো কেউ এক মিনিট আগে বা পরে করতে পারবে না। আমাদের অন্তরে কোন প্রশ্ন জাগ্রত হয় না। মুসলমানের অন্তরে এমন প্রশ্ন না আসাই উচিত। কিন্তু কিছু মুসলমান আছে যারা প্রশ্ন করে যে, হুজুর! একজনকে ফাঁসি দিচ্ছে ১২টা এক মিনিটের সময়; এটা তো মানুষের সিদ্ধান্ত, আল্লাহর সিদ্ধান্ত তো না। এদেরই একজনকে আমি বললাম, আমি তো এটার মধ্যে আল্লাহর সিদ্ধান্তই দেখতে পাচ্ছি। সে জিজ্ঞেস করলো, সেটা কীভাবে হুযুর? আমি বললাম, তর্ক যদি না করেন তাহলে আমি একটা কথা বলি। শুনুন আমি যা বলি আপনি তা বোঝেন না। কারণ আপনি যে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে ভাবেন আমি সে বুদ্ধি-জ্ঞান দিয়ে ভাবি না। আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিচ্ছি যে, এটাই আল্লাহর সিদ্ধান্ত ছিল। এজন্যই ১২টা না করে ১২ টা এক মিনিটে করা হয়েছে। এটাই যে আল্লাহর সিদ্ধান্ত না সে কথা বলি কী করে? জল্লাদ তার ফাঁসি দুপুর একটায় করতে পারত, বিকাল ৪টায় করতে পারত কিংবা রাতের শুরু ভাগে করতে পারত। কিন্তু না, সে করেছে ১২টা এক মিনিটে। এটাই আল্লাহর সিদ্ধান্ত ছিল। জজের অন্তরে আল্লাহ এই সময়ের কথাই ঢেলেছেন। অতএব জল্লাদ তাই করেছে যা আল্লাহর সিদ্ধান্ত ছিল। আপনি যেটা বলেছেন এটার ভিত্তি হলো আপনার জ্ঞান। আর আমার বক্তব্যের ভিত্তি হচ্ছে, আল্লাহ পাকের কথা। তিনি বলেছেন, বিশ্বে যা কিছু হয় সব আল্লাহর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক হয়। আমি তাকে আরো বললাম আপনি যে নিজের ভেতরে এই জিজ্ঞাসা পোষণ করছেন, এটা বস্তুতান্ত্রিক শিক্ষার উপর প্রচন্ড নির্ভরতার কারণে হয়েছে। আমি যেটা বলেছি এটা আমার বুদ্ধি-যুক্তির দ্বারা বলিনি। বরং আমি একজনকে চোখ বন্ধ করে মেনে নিয়েছি। তিনি হলেন মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানের অকাট্য বিশ্বাস হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেটা বলেন সেটাই সঠিক, যদিও আমার বুঝে না আসে। ব্যক্তি জীবন, সামাজিক, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যে কোনো প্রসঙ্গে তিনি যেটা বলেছেন সেটাই মান্য। যদি তার রহস্য আমার বুঝে আসে তাহলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবো যে, আল্লাহ! তুমি আমাকে বুঝিয়েছ, তোমার শোকর। আর যদি বুঝে না আসে তবুও মনে করতে হবে যে, এটা নবীর কথা। অতএব লংঘন করার কোনো সুযোগ নেই। মুসলমানের মৌলিক বিশ্বাস হল, আল্লাহ যা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, তার মধ্যে বিন্দুমাত্র ভুল নেই।
তাকে আরো বললাম, চোখের মধ্যে চশমা লাগালে বেশি দেখা যায়। আমি চোখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নতের চশমা লাগিয়েছি। এ জন্য আমার সহজে বুঝে আসে, আপনার আসে না। রাসূলের সুন্নতের চশমা যদি আপনিও পরেন তাহলে আপনার মনেও কোনো সন্দেহ-সংশয় থাকবে না।
এখানে আমাদের বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহেব বসে আছেন। আল্লাহ তার মনে দ্বীনের প্রতি, ইসলামের প্রতি মুহাব্বত আরো বাড়িয়ে দিন! তাঁকে একদিন বললাম যে, আপনি অনেক হায়াত পেয়েছেন। আমি চাই, আপনি শেষ জীবনে দ্বীনের জন্য কুরবানী করতে করতে ইন্তেকাল করুন। মানুষে যাতে বলে যে, বাংলাদেশের একজন প্রেসিডেন্ট ইসলামের জন্য জীবন দিয়েছেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত জিন্দা করার জন্য জীবন কুরবান করেছেন।
বাংলাদেশে ৯০% মুসলমান। শবে বরাত, শবে কদর আসলে সবাই সারা রাত নামায পড়ে। এটা ঐ দেশ যার অধিবাসীরা মদ খাবে তবে নবীর বিরুদ্ধে কিছু শুনতে রাজি না। কিন্তু আফসোস! দুঃখ লাগে যে, বাংলাদেশের পার্লামেন্টে ৯০% মুসলমান এমপি হওয়া সত্তেও সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি এই সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহেবকে জিজ্ঞেস করি যে, এটা আপনারা কী করলেন? উত্তরে তিনি বললেন, হুযুর! বুঝতে পারিনি। দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে বুঝতে পারেননি! এ কথা শুনে আমার একটি কথা বুঝে এসেছে যে, পার্লামেন্টে স্পীকার সাহেব যখন উক্ত বিলটা পাশের প্রস্তাব পেশ করেছিল, সদস্যরা বলেছিল হ্যাঁ। তখন স্পিকার সাহেব বলেন, হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে (তিনবার)। অথচ অনেক এমপি-মন্ত্রী বিলের-আগা গোড়া ভালোভাবে অবহিত নয়। তারা তো সবাই মুসলমান। যদি এভাবে বলা হত যে, “৮নং সংশোধনী থেকে আল্লাহর উপর আস্থার কথা বাদ যাচ্ছে”, তাহলে কেউ রাজি হত? কোনো মুসলমান এ প্রস্তাবে কীভাবে হ্যাঁ বলবে?
আমরা দাওয়াতুল হকের এই ইজতেমায় শরীক হয়েছি একমাত্র আল্লাহ ওরাসূলের মুহাব্বতে।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
تركت فيكم امرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله وسنة رسوله
দুনিয়াতে কোনো গন্তব্যে যাওয়ার লক্ষেযে সেই গন্তব্যের জন্য নির্ধারিত জন পরিবহন ধরতে হয়, অন্যথায় পথহারা হতে হয়। হাদীসে একথাই বলা হচ্ছে যে, আমার রেখে যাওয়া দুটি জিনিস শক্ত করে ধরে রাখো, তাহলে আপন গন্তব্য তথা জান্নাতে চেল যাবে। কিতাবু্ল্লাহর মূল ও প্রথম পরিচয় হলো لاريب فيه তার মধ্যে কোন সন্দেহের কিছু নাই। তদরূপ সুন্নতে নববীর মাঝেও কোনরূপ সন্দেহ নাই। কারণ, কুরআন হলো সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে আর সুন্নত হলো আল্লাহর নির্দেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে।
হযরত মুসা আ. একদিন বলেন, হে আল্লাহ! আমি তোমাকে দেখতে চাই। আল্লাহর জবাবটা দেখুন! আল্লাহ বললেন, “আমাকে দেখতে পরবে না তবে...” আল্লাহর এমনভাবে জবাবা দেয়ার কারণ হলো, যদি ডাইরেক্ট বলে দিতেন যে, “দেখতে পারবে না,” তাহলে মূসা আ.হয়তো মরে যেতেন। কারণ তাঁর মুহাব্বত চূড়ান্ত পর্যায়ের ছিল। “দেখতে পারবে” এটাও বলবেন না। কারণ আল্লাহকে দুনিয়াতে দেখা যাবে না। তাই আল্লাহ বলেছেন, لن تراني ولاكن ‘তবে’ বলাতে বোঝা গেল, দেখা দিবে মনে হয়। মূসা আ. শান্ত হয়ে গেলেন। এরপরই সুন্দর করে আলøাহ বলেছেন যে, انظر الي الجبل.....ঐ যে, পাহাড়ের দিকে তাকাও। মন শান্ত করার জন্য একটু পহাড়ের দিকে তাকাও। মুসা আ. যখনই তাকালেন বেহুশ হয়ে নিচে পড়ে গেলেন। আ্লাহ বলেন, আমি জানি আমার মুহাব্বত তোমার দিলকে কাবু করে ফেলেছে। আমাকে দেখার জন্য তুমি পাগল হয়ে গেছ। কিন্তু আমাকে দেখার আগে কিছু কাজ করতে হয় তুমি তা করনি। সে কাজ করলে তুমি আমাকে দেখতে পারবে।তবে একটু দেরি লাগবে। যখন সময় আসবে তখন আমি দেখা দিব। তোমাদের সবাইকে দেখা দিব।
থানবী রহ. এক বুযুর্গের ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে, সেই বুযুর্গ ৩০ বৎসর সেজদায় পড়ে ছিলেন। হাকীমুল উম্মত বলেছেন, ৩০ বৎসর পর আল্লাহ বললেন, হে বান্দা! মাথা ওঠাও, তুমি কী চাও? মাথা উঠিয়ে তিনি বললেন, আল্লাহ! জান্নাতে নাকি অতি সুন্দর রমনী থাকবে? আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ। শুধু তাই না, বাদশাহী খুব ভাল খাওয়া-দাওয়া খানাদানা ও লেবাস পোশাক হবে। একথা বযুর্গ বললেন, আল্লাহ! তাহলে জান্নাতে আমি যাব না। কারণ, দুনিয়াতে যত ফেতনা-ফাসাদ, মারামারি, কাটা-কাটি হচ্ছে তার প্রায় সবগুলোই নারীর মোহসংক্রান্ত্র কারণে কিংবা ক্ষমতার লোভে। শায়েখ আব্দুল্লাহ উন্দুলসী কত বড় শায়েখ হয়েও এক নারীর মোহে পড়ে গিয়েছিলেন, ফলে তার অনেক ক্ষতি হয়েছিল। আমাকে তুমি চক্ষু দিয়েছ। এই চোখের দ্বারা কেবল তোমাকেই আমি দেখতে চাই। দুনিয়ার সামান্য সুন্দরী নারীর মোহে পড়ে মানুষ তোমাকে ভুলে যায়, আর জান্নাতের চিরস্থায়ী নারী তো মহা সুন্দরী হবে, সেখানে চিরস্থায়ী বাদশাহী হবে, তা পেয়ে যদি তোমাকে আমি ভুলে যাই। আমি শুধু তোমাকে চাই, জান্নাত চাই না।
আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, কিন্তু ওয়ারিস রেখে গেছেন। আলেমরাই তাঁর ওয়ারিছ। আলেমদের নববী কাজ আঞ্জাম দেয়ার বাইরে আর কোনো কাজ নাই। আজ দেশের সব আলেমরা যদি সম্মিলিতভাবে সুন্নত জিন্দার জন্য দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে অল্প সময়েই দেশের অবস্থা পাল্টে যাবে। তবে এমন হলে চলবে না যে, সুন্নত জিন্দার কথা বলবো কিন্তু নিজের জীবনে সুন্নত নাই। এখানের কেউ বুকের উপর হাত রেখে বলতে পারবো যে, প্রতিদিন আলাদাভাবে ১০ মিনিট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দুরুদ পড়ি? নামাযের দুরুদ এবং অন্যান্য পঠিত দোয়ার মধ্যকার দুরূদ ব্যতীত শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুহাব্বতে একটি সময় বের করে দুরুদ পড়ি কি না? তাহলে কিসের মুহাব্বতের দাবী করি? তার নামের উপর আমরা চলছি। যদি ওয়ারিছরা এমন হই তাহলে কেমন করে অন্যদের বোঝাবো?
এই যে শরীরের চামড়া, তার নিচে রক্ত, তার নিচে গোস্ত, তার নিচে হাড্ডি, তার মধ্যে মগজ। এ গুলোর মধ্যে আত্মা আছে। যদি চামড়া একটু কেটে দেয়া হয় এবং ট্রিটমেন না করা হয় তাহলে কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে সেখানে পঁচন ধরেছে। এক সময় পুরো শরীরই নষ্ট হয়ে লোকটা মারা যাবে। ঠিক এমনিভাবে শরীয়তের সব কিছুকে সুন্নত ঢেকে রেখেছে। সুন্নত ছুটে গেলে পুরো শরীয়ত, তরীকত, হাকীকত, মারেফত দুনিয়া-আখেরাত সব ধ্বংস হয়ে যাবে। মজলিসে দাওয়াতুল হক আল্লাহ পাকের দয়া। হাকীমুল উম্মত এই কাজ শুরু করেছেন। হাফেজ্জী হুজুর রহ., হারদুয়ী রহ. কে বাংলাদেশে এনেছিলেন। হারদুই রহ. বুঝতে পেরেছিলেন যে, বাংলাদেশের উলামারা বিপদে আছে। এদেশে ইসলামের অবস্থা খারাপ, সুন্নতের অবস্থা খারাপ। তাই তিনি বাংলাদেশে এসে জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করেছেন, আমাদেরকে কাজে লাগিয়েছেন।
আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা এতীম ও অসহায় হয়ে পড়েছে নবীর সুন্নাত। নামায তো মানুষ পড়ে। ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল সব পড়ে। কিন্তু সে নামাযগুলো সুন্নত তরীকায় হলো কি না এটার খবর নেই। দুনিয়ার মধ্যে রাসূলের সুন্নতের চেয়ে দামী কিছু নেই, কসম খোদার! আল্লাহর রাসূলের সুন্নতের বাইরে দ্বীনের কিছু নেই। কুরআন যদি অশুদ্ধ পড়ো তাহলে কুরআন তোমাকে লা’নত দিবে। তেলাওয়াত সুন্নত মোতাবেক হতে হবে। তুমি মারেফাতের কথা বলো, শরীয়তের কথা বলো, সে কথা সুন্নতের বাইরে হলে চার পয়সার দাম নেই। বরং এটা তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। সুন্নত ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে উন্নত করে, বাদশাহীকে দীর্ঘস্থায়ী করে। অনেক মানুষ মনে করে, স্ন্নুত না জানি কত বড় কিছু, মাথায় নিলে আবার মারা যাই কি না! সুন্নত অনেক রকমের আছে সুন্নাতুল্লাহ, সুন্নাতুর রাসুল, সুন্নাতুসসাহাবা। প্রত্যেকটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত। আল্লাহর সুন্নতের অর্থ হলো, আগুনে হাত দিলে পুড়ে যাওয়া, পানিতে হাত দিলে তা ভিজে যাওয়া। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সবকিছুকে একটি নিয়মের আওতাধীন করেছেন। যুবক অবস্থায় বৃদ্ধ হতে পারবো না, বৃদ্ধ অবস্থায় বাচ্ছা হতে পারবো না। এই যে সিস্টেম এটা হল আল্লাহর সুন্নত। এটা নবীর সুন্নত না। নবীর সুন্নত দুটি। একটার নাম হলো তরীকা, নিয়ম। এই অর্থে নামায সুন্নত, রোজা সুন্নাত, হজ সুন্নাত। অর্থাৎ এগুলো পালন করার যে পদ্ধতি ও তরীকা আছে সেটা হলো রাসূলের সুন্নাত। আরেক প্রকার সুন্নত হলো পজিশন। যেমন ফরয নামাযের আগে-পরের নামায।
দাড়ি রাখাও রাসূলের সুন্নত তবে এটা প্রথম প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটার হুকুম হল ফরজ, আমলে ওয়াজিব। অনেক মানুষ দ্বিধাদন্ধে পড়ে যায় যে, দাড়ি রাখা তো সুন্নত। সুন্নত তরক করলে তেমন অসুবিধা কি? তারা একে দ্বিতীয় প্রকারের সুন্নত বুঝে নিয়েছে।
আরেক প্রকারের সুন্নত হলো সাহাবাদের সুন্নত। এটা নবীর সুন্নত না। হাদীসে এসেছে-
عليكم بسنتي وسنة خلفاء الراشدين
সব আলেমরা জানি যে, ‘ওয়াও’ অÿর কিসের জন্য আসে। অর্থাৎ এই হাদীস থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত এবং সাহাবাদের সুন্নত ভিন্ন। মনে রাখবেন, সুন্নত হলেই মানতে হবে। তবে হ্যাঁ হাদীসে কোনো কিছু বর্ণিত থাকলেই তা মানতে হবে এমন কথা নেই। বুখারী শরীফে একটা হাদীস আছে, যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেছেন” একথা বর্ণিত আছে। তাহলে কি দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা সুন্নত? আল্লাহ আমাদেরকে সহী বুঝ দান করুন! তবে যেখানে বসে করার ব্যবস্থাই নাই সেকানে ভিন্ন কথা। একদিন এক অফিসে গিয়ে আমি পড়লাম মহা বিপদে। যে প্রস্রাবখানা বানিয়ে রেখেছে সবগুলোই আমার বুক সমান। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে প্রসাব করতে হবে। কিছুক্ষণ খুঁজে বসারটা না পেয়ে ফিরে এলাম। একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলো, হুজুর! প্রয়োজন সেরে এসেছেন? আমি বললাম, সম্ভব না। আপনার এখানে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার যোগ্যতা আমার নেই। কী বাথরুম বানালেন? কত ধরনের লোক এখানে আসা-যাওয়া করে। আপনি শুধু আপনার সুবিধা মতো বানালেন। আমাদের বিষয়টা খেয়াল করলেন না কেন? তখন তিনি বললেন, হুজুর আগে এসব বুঝতে পারিনি। বললাম এত পড়ালেখা করলেন, দুনিয়ার সবকিছুই বোঝেন, এই সামান্য একটা বিষয় বুঝে আসলো না? আলেমদেরকে উপদেষ্টা বানান, সব কিছু সময় মতো বুঝে আসবে। দ্বীনকে, সুন্নতকে ভালো-বাসুন, জীবনটা সাজানো-গোছানো হবে।
একবার আমি বাংলাদেশ সচিবালয় গেলাম। অন্যান্য আলেমরা আগে প্রবেশ করেছে, আমি পরে ছিলাম। এক পুলিশ আমাকে পা উঠিয়ে সালাম দিল। গাড়ি থেকে নেমে ঐ পুলিশকে বললাম, আমাকে লাথি দেখালে কেন? পুলিশ বললো আমি সালাম দিয়েছি হুজুর! বললাম, এভাবে কি সালাম দেয়? অতঃপর তাকে সালাম শিখালাম এবং বললাম, আমার মত হুজুরকে দেখলে সালাম দিবে। শুদ্ধভাবে বলবে, السلام عليكم আর একটু আগে আমাকে যেটা দেখালে সেটা তোমাদের নেতাদেরকে দেখাবে।
এখন আমরা সবাই মোবাইলে কথা বলি । ধরেই প্রথমে বলে, হ্যালো। এটা খেলাফে সুন্নাত। হ্যালো মানে লুহা। তাহলে কি প্রথমেই লুহা দিয়ে পেটানোর ভয় দেখালো? নিয়ম হলো, প্রথমে সালাম দিতে হবে। এভাবে তিনবার দিবে। উত্তর না আসলে রেখে দিবে। এটা কোন কঠিন কাজ নয়।
একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা শুনুন হযরত উমরের যুগে মুসলমানদের বিজয় আসছে না। তাঁর কাছে খবর পাঠানো হয়েছে যে, মুসলমানদের বিজয় হচ্ছে না, আরো অস্ত্র ও রশদ পাঠান! হযরত উমর রা. বললেন, (বক্তব্যের মর্মকথা) যুদ্ধের সব সরঞ্জাম পাঠিয়েছি, তারপরও কেন বিজয় আসছে না? তোমরা কোন ভুল করেছ মনে হয়। নতুবা বিজয় অবশ্যই আসবে। আমরা কখনোই তাদের (কাফেরদের) মতো সম্পদশালী হতে পারবো না। কারণ তাদের ১০০% চিন্তা ফিকির ও চেষ্টা কেবল দুনিয়ার পেছনে ব্যয় হয়। পক্ষান্তরে আমাদের ফিকির ও চেষ্টার সিংহভাগই ব্যয় হয় আখেরাতের জন্য। সুতরাং আমরা কিভাবে তাদের সাথে পারবো। আমাদের প্রধান শক্তিই হলো আল্লাহর সাহায্য। আল্লাহ বলেছেন,
ان تنصر الله ينصركم ويثبت اقدامكم
বদরে হুযুর সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় পড়ে গেছেন। নবী কি গুনাহ করেছেন? তাহলে কেন যুদ্ধে বিজয় আসছিল না। কারণ, আল্লাহর কাছে মাথা নুয়ানো ছাড়া, কান্নাকাটি ছাড়া বিজয় আসবে না। মোটকথা আল্লাহর দয়ায় মুসলমানদের বিজয় আসবে।
আমরা কি কোন দিন দেশের জন্য কেদেছি? সকল উলামা মিলে কোন একটি দিন নির্দিষ্ট করে জাতির জন্য,দেশের জন্য কেঁদেছি? কাঁদিনি। তাহলে কীভাবে দ্বীন বিজয় হবে?
হযরত উমর বললেন, ভেবে দেখো, তোমরা কোনো সুন্নত ছেড়েছো কি না। তখন মুসলমানগণ বললেন, আমরা মদীনায় থাকতে বেশি বেশি মিসওয়াক করতাম এখন একটু কম করি। উমর রা. বললেন, মিসওয়াক শুরু করো। নির্দেশনা মোতাবিক মুসলমান গণ গাছের ডাল দিয়ে যখন মিসওয়াক করছিল, তখন কাফেরগণ তা দেখে ভয় পেয়ে গেলো। তাদের মনে একথা আসল যে, মুসলমানদের বোধহয় খাবার শেষ হয়ে গেছে, এখন ডাল খেয়ে ফেলছে এরপর আাদেরকে মনে হয় থাবে। অগত্যা এই ভয়ে সব কাফের পলায়ন করলো। আলøাহু আকবার! একটা সুন্নতের উপর আমল করে যুদ্ধে বিজয় হয়ে গেল।
হযরত হারুনুর রশিদের একটি ঘটনা আছে। বাদশার একজন মন্ত্রি ছিল। লোকটা খুব ভাল চরিত্রতের ছিল। সুন্নতের আশেক ছিল। কিন্তু অন্যান্য মন্ত্রীরা তার বিরুদ্ধে লেগে পড়লো। সবাই একমত হলো যে, তাকে বাদশার কাছে অপরাধী সাব্যস্ত করে অপমানের সাথে চাকরি থেকে বিদায় করবে। সে মতে একজনকে দিয়ে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বাদশার কাছে মামলা দায়ের করাল। বিচারের জন্য বাদশা দরবার বসালো। এরই মধ্যে এক সময় বাদশা হাঁচি দিল। অন্যান্য সকল মন্ত্রী তখন ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলল। কিন্তু বিবাদী মন্ত্রী কিছুই বললো না। বাদশা রাগের সাথে জিজ্ঞেস করলো, সবাই ইয়ারহামুকাল্লাহ বলেছে,তুমি বললে না কেন? মন্ত্রী বললো, তারা কেন বললো, সেটা জিজ্ঞেস করুন। তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হল, তোমরা ইয়ারহামুকাল্লাহ কেন বলেছো? তারা বললো, হাঁচি হওয়ার কারণে আপনার দেমাগ ছাফ হয়েছে, তাই আমরা আপনার জন্যে দোয়া করলাম। এরপর বাদশা ঐ মন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি এবার বলো, কেন বললে না? সে বললো, নবীর সুন্নত হলো, যে হাঁচি দিবে সে আগে আলহামদুলিল্লাহ বলবে। আর যে তা শুনবে সে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে। আপনি তো আলহামদুলিল্লাহ বলেন নাই। তাহলে আমি পরের দোয়া কীভাবে বলবো? বাদশা এবার বুঝলেন যে, এরা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। কারণ যে নবীর একটা সুন্নত ছাড়তে রাজি না সেকীভাবে অন্যকে কষ্ট দিতে পারে? অবশেষে বাদশা ঘোষণা করলো যে, আজ থেকে এই মন্ত্রীকে আমার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিলাম। দেখুন! একটা সুন্নতের উপর আমল করায় আল্লাহ তাকে কত বড় মর্যাদা দিয়েছেন।
সার্কভুক্ত দেশ মালদ্বীপে ইসলাম আসার ঘটনা আপনারা হয়তো শোনেননি। এখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহেব বসে আছেন। অনেকে মনে করে আমি এরশাদের দল করি। কসম খোদার! আমি দ্বীনের জন্য তাঁকে মুহাব্বত করি দ্বীনের স্বার্থে আমি বেদআতী এমনকি কাফেরকেও আমার বুকে নিতে পারি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমার বা আবু জাহলের ঈমানের জন্য দোয়া করতেন। অথচ তখন তারা ইসলামের ঘোরতর বিরোধী ছিলো। কারণ কী? কারণ হলো, তাদের মধ্যে গভীর প্রজ্ঞা ও প্রতিভা ছিলো। শুধু ব্রেকটা ঘুরিয়ে দিলেই হয়। হযরত উমার রা.-এর ব্রেক ঘুরে যাওয়ার পর কী হয়েছে তা তো বিশ্বের কারো অজানা নয়। মানুষকে দাওয়াত দিতে হবে নম্রতা-ভদ্রতা ও হেকমত সহকারে। এমন কথা বলা যাবে না, যাতে করে শ্রোতা ক্ষুব্ধ হয়, বক্তার বিরুদ্দে চলে যায়, ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়। মজলিসে দাওয়াতুল হকের মূলনীতি হলো নম্রতা-ভদ্রতা ও সুন্দর আচরণের সাথে দাওয়াত দেয়া। এখানে প্রেসিডেন্ট সাহেব আছেন। তার উদ্দেশ্য মালদীপের ঘটনাটা বলবো। আমরা শুধু টাকা ওয়ালাদের কাছ থেকে দান নিতে চাই, তাদেরকে কিছু দিতে চাই না বা দেই না। মনে করি, তাকে আমি কী দেবো? তার তো অভাব নেই। আরে তার তো বেশি অভাভ। তার আছে শুধু টাকা, যা খরচ করলে শেষ হয়ে যায়, অথচ আমার আছে এমন জিনিস তথা ইল্ম্ যা খরচ করলে আদৌ শেষ হবার নয়। সে যখন আমার কাছে দশ হাজার টাকা দেয় তখন আমি যদি বলি, আপনি আমার কাছে বসে সূরা ফাতেহাটা শিখে যান। তাহলে তো হাদীসের উপর আমল হয়ে যায়। কারণ "তোমাকে যে হাদিয়া দেয়, তুমি তাকে তার চাইতে উত্তম জিনিস হাদিয়া দিও"। সুতরাং আমার কাছে মাল নেই। কিন্তু ইল্ম্ আছে। এটাই দেবো। বলবো, আপনি একটা দোয়া শিখে যান না হয় টাকা নেব না। এতে আমার প্রতি তার মুহাব্বত ও আস্থা আরো বাড়বে। আমাদেরকে এভাবেই দাওয়াতের কাজ করতে হবে।
এবার ঘটনাটা শুনুন-
মালদ্বীপে কোন মুসলমান ছিল না। কাফেরের রাষ্ট্র ছিল। ইউসুফ বারবারী মাগরীবি নামে একজন আলেম ছিলেন। পর্যটক হিসেবে মালদ্বীপে এসেছিলেন। যাহাবী রহ. এর ইতিহাসগ্রন্থ তারীখে কাবীরে লেখা আছে এই ঘটনা। মালদ্বীপের নিজস্ব ইতিহাসেও আছে। তিনি যখন সেই দেশে প্রবেশ করলেন, এক জায়গায় দেখলেন, কিছু লোক কাঁদছে। মানুষ মারা গেলে যেমন কাঁদে এভাবে কাঁদছে। তিনি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন। কী হয়েছে? তারা বললো, প্রতি মাসে এই দ্বীপের মাঝে এক বিশাল বড় ষ্টিমার বের হয়। এটার মধ্যে ভূত থাকে না জিন, জানি না। তারা এসে আমাদের যুবতী মেয়েদেরকে যিনা করে অথবা তাদের সাথে নিয়ে যায়। কেউ বাধা দিলে তাকে মেরে ফেলে। একারণে এদেশের বাদশা নিয়ম করেছে যে, প্রতি মাসে এক এক পরিবারের মেয়েকে দিয়ে দিবে, তাহলে নাকি দেশে শান্তি হবে। সে মতে প্রতি মাসে লটারী দেয়া হয়। যার নাম আসে তার মেয়েকে শ্মশানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে ভূত এসে তাকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলে চলে যায়। আজ লটারিতে আমাদের নাম এসেছে। তাই আমরা কাঁদছি। পর্যটক এ কাহিনী শুনে ভীষণ আশ্চর্যান্বিত হলেন। তিনি আল্লাহওয়ালা ছিলেন। এখনো মুখে দাড়ি ওঠেনি। আমার মনে হয় আগত ঘটনা ঘটানোর জন্যই বোধ হয় আল্লাহ মুখে এখনো দাড়ি দেননি। উনি বললেন ঠিক আছে, আমার তো দাড়ি নেই, তোমরা আমাকে মেয়ে সাজিয়ে শ্মশানে রেখে আসবে। পরে যা হবার তাই হবে। কথা মতো তাই করা হলো। তিনি শ্মশান থেকে রাতের আঁধারে দেখতে পেলেন বিরাট বড় জাহাজ আসছে। যখন প্রায় কাছাকাছি এসে গেলো তিনি তাড়াতাড়ি উঠে ওযু করে নিলেন এবং দুই রাকাত নামায পড়ে নিলেন। যখন একেবারে কাছে এসে গেলো তখন খুব জোরে কুরআন তেলাওয়াত শুরু করলেন। যখন আরো কাছে আসলো তখন আরো জোরে কুরআন পড়তে লাগলেন। পড়ছেন তো পড়ছেন। হঠাৎ দেখা গেলো জাহাজ আর সামনে আসতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত জাহাজ ডুবে ধ্বংস হয়ে গেলো। সকালে লোকেরা গিয়ে দেখলো, তিনি তেলাওয়াত করছেন। কাছে গিয়ে তারা বিস্ময়ের সাথে জিজ্ঞেস করলো, কী ব্যাপার! কীভাবে আপনি এখনো বেঁচে আছেন? তিনি বললেন, আল্লাহর ফযলে সব কিছু হয়েছে। তোমাদের বিপদ দূর হয়ে গেছে, ষ্টিমার ডুবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
অতঃপর দেশের বাদশার কাছে তার খবর পৌঁছে গেল। বাদশা তার প্রতি যারপরনাই খুশি হলেন। বাদশার নাম ছির সনুরাজা। এটা ১১৪০ সালের ঘটনা। ইউসুফ বারবারী সুযোগ বুঝে বাদশাকে কালিমার দাওয়াত দিলেন। বাদশার মনে ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা আগে থেকেই ছিলো। তিনি বললেন, ঠিক আছে, আমাকে একমাসের সময় দিন। এক মাস পর বাদশা মুসলমান হয়ে গেলেন। তার ইসলাম গ্রহণের কারণে পুরো মালদ্বীপবাসী ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে গেলো। এরপর আটশত বছর পর্যন্ত মালদ্বীপ ইসলামী রাষ্ট্র ছিল। ঐ দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল কাইয়্যুমের সাথে মক্কার হারাম শরীফে আমার সাক্ষাৎ হয়ছে। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ইবনে বতুতায় যে ঘটনা উল্লেখ আছে সেটা কি ঠিক? বললেন, হ্যাঁ ঠিক।
এই ঘটনা বলার উদ্দেশ্য হলো, একজন আলেমের অন্তরে কী পরিমাণ দ্বীনী জযবা থাকতে হবে তা স্মরণ করানো। একজন আলেমের উছিলায় লক্ষকোটি মানুষ হেদায়েতপ্রাপ্ত হতে পারে। তার নযীর এ ঘটনা।
আলেমদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে। নতুবা কাজের সুফল পাবে না। আল্লাহপাক বলেন,
(তরজমা) “হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত তেমনি ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।”
মুসলমান কিভাবে হব? আল্লাহ বলেন,
(তরজমা) “আর তোমরা সকলে আল্লাহর রুজ্জুকে সুদৃঢ়হস্তে ধারণ এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ করো যা আল্লাহ তোমাদেরকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রæ ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদেরমনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছো।”
কুরআনের ভিত্তিতে, সুন্নতের ভিত্তিতে এক হও। কুরআনকেই আসল বানাতে হবে। অনেকে বলে হুজুর শুধু সুন্নত সুন্নত করেন, ফরজের কথা তো বলেন না? আরে ভাই একটি সুন্নতের অভাবেই তো উমর রা.-এর যুগে কাফেররা দেশ নিয়ে যাচ্ছিল। সুন্নত না থাকলে ফরযও থাকবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে না দেখে শেষ যামানায় আমার একটি সুন্নত আদায় করবে, আমার সাহাবাদের সমান তার সওয়াব হবে। মজলিসে দাওয়াতুল হক রাসূল সা.-এর সুন্নতের প্রচার প্রসার ও বা¯Íবয়ানের লক্ষ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন।
মজলিসে দাওয়াতুল হকের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। হযরত হারদুয়ী রহ. বলেছেন, তোমরা দাওয়াতুল হকের কাজ সম্পূর্ণ দলনিরপেক্ষ থেকে করবে। যাতে সব ধরনের মানুষ মিলতে পারে। আমরাও সে ভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। যেভাবে কাজ সহজ হয়, যে তরীকায় সুন্নতের কাজ ফলপ্রসু সে তরীকায় কাজ করতে হবে। শাইখুল হাদীস আল্লামা আজীজুল হক দা. বা. যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় এসে এখানে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “আমার শায়েখ দাওয়াতুল হকের কাজ করছে। মাওলানা মাহমূদুল হাসানকে দায়িত্ব দিয়েছে। যদি আমি মারা যাই আর তখন দাওয়াতুল হকের ইজতেমা চলছে, তাহলে আমার লাশ ইজতেমায় ঘুরিয়ে না এনে দাফন করবে না।”
আমাদের প্রেসিডেন্ট সাহেব সব সময় এখানে আসেন। দুই-তিন ঘণ্টা একাধারে বসে থেকে দ্বীনের কথা শোনেন। সম্মেলন-সেমিনারে তাদেরকে দাওয়াত দিলে দশ মিনিট সময় দিতে পারে না, অথচ এখানে এসে ঘন্টার পর ঘণ্টা এই মজলিসে বসে থাকে। এ অভ্যাস তার অনেক বছর ধরে। আমার কাছে সবসময় দোয়া চান। আমি দোয়া করছি, আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন! আপনি সুন্নতের জন্য কাজ করতে রাজি আছেন কি না? (তখন সাবেক প্রেসিডেন্ট বললেন,) আমি হুজুরকে ভালবাসি, আজীবন ভালবাসবো। সুন্নতের প্রতি ভালোবাসা হুজুর থেকে শিখেছি। সুন্নতের রাস্তায় আমি আজীবন চলবো। তখন হযরত বললেন) আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে কবূল করুন।

মূল:মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×