somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আতঙ্কে কর্মীরা

১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আতঙ্কে ভুগছেন মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের কর্মীরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অনবরত খবরদারি ও নজরদারির মুখে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়েছে। গ্রেপ্তার আতঙ্ক নিয়ে অফিস করছেন তারা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিজেদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি অধিকারের তথ্য ভাণ্ডার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও করছেন তারা। গতকাল মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই ‘অধিকারে’র কর্তাব্যক্তিরা অস্বস্তিতে ভুগছিলেন। হঠাৎ করেই সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় গুম হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন ‘অধিকারে’র কয়েকজন কর্মকর্তা। বছরখানেক আগে থেকে সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাদের ওপর নজরদারি করায় এ আতঙ্ক ভর করে। এছাড়া, রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত মানবাধিকার কর্মীদের কর্মকাণ্ডে প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করছিলেন বিশেষ সংস্থার লোকজন। বিশেষ করে গত তিন মাস ধরে ‘অধিকারে’র গুলশান কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। ‘অধিকারে’র মতে- আদিলুর রহমান খানকে আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়নি। অন্য কোন মতলবে তুলে নেয়ার চেষ্টা হয়েছে। যদিও এদেশের দেশের গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক চাপের কারণে তাদের মতলব সফল হয়নি। ওইদিন রাত ১০টা ২০ মিনিটে যখন তাকে তুলে নেয়া হয়, তার আগে তিনি বারিধারা থেকে গুলশান ১১৭ নম্বর রোডের নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তার বামপাশের সিটে বসেছিলেন তার স্ত্রী এডভোকেট সায়রা রহমান খান। পেছনের সিটে বসেছিল তাদের দশম ও কেজি শ্রেণীর দুই ছেলে সন্তান। সূত্র জানায়, আদিলুর রহমান গাড়ি নিয়ে ১১৭ নম্বর রোডে প্রবেশ করেই দেখতে পান, বাসার অদূরে আবছা অন্ধকারে সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার পার্কিং করা। ওই গাড়ির সব দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে ৬-৭ জন লোক। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হয়েছিল। সন্দেহজনক ওই গাড়িটি অতিক্রম করে ৩৫ নম্বর বাড়ির গেটের সামনে থামেন আদিলুর। গেট খোলার জন্য হর্ন বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে প্রচণ্ড আলো ফেলে একটি প্রাডো ও একটি মাইক্রোবাস এসে তাদের গাড়ি ঘিরে ফেলে। গাড়ি থেকে হুড়মুড় করে নেমে পড়ে ১০-১২ জন। গাড়ি থেকে নামিয়ে আদিলুরকে ঘিরে ধরে তারা। একজন বলে, কিছু তথ্যের জন্য আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। তারা কারা এবং কোথায় যেতে হবে জানতে চাইলে বলা হয়, তারা ডিবি পুলিশের সদস্য। তাদের কার্যালয়ে যেতে হবে। ‘অধিকারে’র মতে- আদিলুর রহমানকে এমনভাবে ঘিরে ধরা হয়েছিল এবং এতই নিচু স্বরে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে কথা বলা হচ্ছিল যে, তার কিছুই শুনতে পাচ্ছিলেন না তার স্ত্রী ও সন্তানরা। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যেতে যেতে বাধ্য করায় আদিলুর নিজেই তার পরিবারের লোকজনকে জানানোর জন্য উচ্চকণ্ঠে বলেছিলেন, আমাকে ডিবি অফিসে যেতে হবে। আদিলুরের মুখে ওই কথা শোনার পরই তার স্ত্রী ও সন্তানরা বুঝতে পেরেছিলেন, ওরা ডিবি পুলিশের সদস্য। এরপর আদিলুরকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর ‘অধিকারে’র পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নেয়া হয়। মধ্যরাত পর্যন্ত তার অবস্থান জানতে পারেননি তারা। গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যান আদিলুরের স্ত্রী। কিন্তু থানার ওসি ও ডিউটি অফিসার জিডি নেননি। তারা বলেছিলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই এ বিষয়ে জিডি নেয়া যাবে না। সূত্রমতে, ডিবি পুলিশের পরিচয়ে যে কায়দায় আদিলুরকে তুলে নেয়া হয় তখন থেকেই তার গুম হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন পরিবারের সদস্যরা। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, রাজনৈতিক সহিংসতা ও সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন প্রকাশ করায় নানা ভাবে চাপ দেয়া হচ্ছিল ‘অধিকার’কে। সংস্থাটির অনেক প্রজেক্ট আটকে দেয়া হয়েছিল। সর্বশেষ রাজধানীর শাপলা চত্বরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অপারেশনে হেফাজত কর্মীদের হতাহতের প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর আরও বেশি চাপে পড়েন তারা। গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন শক্তি তাদের বিপক্ষে সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের বেশ কিছু ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদন প্রকাশ করায় পার্শ্ববর্তী একটি দেশের বিরাগভাজন হয়ে পড়ে সংস্থাটি। এছাড়া, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে আরও কিছু অনিয়মের তথ্য প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল ‘অধিকারে’র প্রতিবেদনে। যে প্রতিবেদন হয়তো বর্তমানে সরকারের জন্য নেতিবাচক হয়ে উঠবে। আসন্ন নির্বাচনে এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছিল সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থা। একারণে ‘অধিকারে’র কর্মকাণ্ড থেকে আদিলুরকে বিচ্ছিন্ন রাখার জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সিগন্যাল দেয়া হয়। পরে ডিবি পুলিশের হাতে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারের খবর জানাজানির পর সরকারের তরফ থেকে হেফাজত ইস্যু, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সম্পর্ক ও পাকিস্তানে লোক পাচারের কাল্পনিক অভিযোগ আনা হয় এই মানবাধিকার সংস্থাটির বিরুদ্ধে। জব্দ করা হয় ‘অধিকারে’র ডকুমেন্টেশন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ল্যাপটপ ও দু’টি সিপিইউ। ‘অধিকার’ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গোয়েন্দা পুলিশের জব্দ করা ওই পাঁচটি কম্পিউটারে তাদের ১৯ বছরের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত আছে। সূত্রমতে, ‘অধিকার’ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার মানুষ। রাজনৈতিকভাবে জাসদ (ইনু)-র সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্য ছিলেন। ডেপুটি এটর্নি জেনারেল থাকাকালে ট্র্যাফিকিং-এর মতো মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করেছেন। ওয়ান ইলেভেনের পর সেনাসমর্থিত সরকার আসার প্রতিবাদে তিনি তার পদ ইস্তফা দিয়ে ফের সক্রিয় হন মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকারে’র কর্মকাণ্ডে। তার শ্বশুর থেকে শুরু করে পরিবারের বেশির ভাগ লোক মুক্তিযোদ্ধা। ‘অধিকারে’র একজন কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, এমন একজন ব্যক্তিকে সরকার গ্রেপ্তার করে ‘অধিকার’কে জামায়াত-বিএনপির সংস্থা বলে গুজব ছড়াচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক। ওই কর্মকর্তার আশঙ্কা, আদিলুর রহমানের বিরুদ্ধে দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সরকারের শেষ সময়ে পরিকল্পিতভাবেই ‘অধিকারে’র কর্মকাণ্ড থেকে আদিলুর রহমানকে সরিয়ে রাখার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×