somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উবুন্টু ব্যবহার না করার পক্ষে ৯টি কঠিন যুক্তি!

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


উবুন্টু কেন ব্যবহার করবেন এমন অনেক পোস্টই হয়তো পড়েছেন। কেন উবুন্টু উইন্ডোজের তুলনায় ভালো, তাও জেনেছেন আমার আগের পোস্টগুলো দেখেই। তবে তারপরও কার জন্য কোনটা ভালো সেটা মূলত ব্যক্তিনির্ভর। কোনো প্রকার ভমিকা ছাড়াই চলুন সরাসরি জানা যাক উবুন্টু ব্যবহার না করার পক্ষে ৯টি কঠিন যুক্তি। অন্য কথায় বলা যায়, এই ৯টি কারণে আপনি উবুন্টু ব্যবহার করবেন না। চলুন জেনে আসা যাক কারণগুলো কী কী।


১. আপনার ব্যবহারের আগে দেখে নেয়ার শখ নেইঃ উইন্ডোজ কিনতে প্রচুর টাকা লাগে। এতো টাকা নিয়ে মাইক্রোসফট নিশ্চয়ই ফালতু কোনো প্রোডাক্ট দেবে না। এই সৎ বিশ্বাসে অভ্যস্ত থাকলে উইন্ডোজই শ্রেয়। কারণ, উবুন্টু একে তো দিচ্ছে ফ্রি, তার উপর আবার টেস্ট-ড্রাইভের জন্য ইন্সটলের আগেই লাইভ সিডি ব্যবহার করে চেখে নেয়ার সুবিধা। আপনার এতো কিছুর দরকার নেই। কেবল টাকা দিয়ে প্রোডাক্ট কিনে আনলেই আপনি খুশি।

২. সফটওয়্যার ইন্সটল করা অতিরিক্ত সহজঃ বাজার থেকে সিডি কিনে আনা, অথবা বিশেষ কোনো সফটওয়্যারের জন্য ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করা। চার-পাঁচটা সোর্স থেকে ডাউনলোড করা। আনজিপ করা। ইন্সটল করা। সবশেষে যেটা কাজ করে সেটা রেখে বাকিগুলো ডিলিট করে ফেলা। হুমম, বেশ লম্বা কাজ। আপনাকে এতো কাজ করতে দেখলে যে কেউই নিশ্চয়ই ভাববে কত বড় কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ আপনি। খাইছে! অপর দিকে উবুন্টুতে কেবল সফটওয়্যার সেন্টারে ঢুকে না লেখা (এন্টার প্রেস করারও দরকার নেই), পছন্দের সফটওয়্যারের উপর ক্লিক করা আর পাসওয়ার্ড দেয়া। ব্যস! সফটওয়্যার একেবারে ডাউনলোডসহ ইন্সটলড। নাহ, অতিরিক্ত সোজা। আপনি বরং উইন্ডোজের প্রফেশনাল ভাবটাই বেশি পছন্দ করেন।

৩. অতি স্বল্প ভাইরাস, অতিরিক্ত নিরাপত্তাঃ অ্যান্টি-ভাইরাসের দখলেই থাকে কম্পিউটার। মাঝে মাঝে পর্দারও বেশিরভাগ অংশই বিভিন্ন থ্রেট এলার্টে পরিপূর্ণ থাকে। অ্যাভাস্ট ব্যবহারকারীদের ভাইরাস পেলেই মেয়েলি কণ্ঠের থ্রেট হ্যাজ বিন ডিটেক্টেড আর অ্যাভিরা ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে একেবারে পুলিশের সাইরেন। খাইছে! হলিউডের মুভির মতো অবস্থা। আর এসব বাদ দিলে কম্পিউটারও বেশ স্লো থাকে। কম্পিউটার স্লো থাকলে অন্যরাও আপনার কাছ থেকে কম কাজ আশা করবে। বেঁচে যাবেন আপনি। উবুন্টুর মতো ভাইরাস, অ্যান্টি-ভাইরাস, নোটিফিকেশন কিছুই নেই এমন খ্যাত (আসলে খ্যাত না, মরুভ’মি) মার্কা অপারেটিং সিস্টেম আপনার জন্য নয়।

৪. আপনি দামী অফিস স্যুট ব্যবহার করতে পছন্দ করেনঃ ধুত্তোরি! কোনখানের কোন ওপেনঅফিস না কী জানি। খ্যাত মার্কা নাম। তারচেয়ে মাইক্রোসফট অফিস ওয়ার্ড ২০১০; নাম শুনলেই একটা প্রো প্রো ভাব আসে। অকারণে কেন ৪০০+ ডলার দিয়ে অফিস না কিনে আপনার ছেলেমেয়ে বা আপনার নিজেরই অন্য কোনো চাহিদা পূরণ করবেন? তারচেয়ে ৪০০+ ডলার দিয়ে অফিস স্যুট করুন, বিল গেটসের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অবদান রাখুন।

৫. ফ্রি? কয় কী! বিনামূল্যে পুরো অপারেটিং সিস্টেম? নির্ঘাৎ কোনো গড়বড় আছে। আপনার মনে এমন সন্দেহ বা খুঁতখুঁত থাকতেই পারে। তারচেয়ে জেনুইন অপারেটিং সিস্টেম কিনলে অথবা ইন্টারনেট থেকে খুঁজে অ্যাক্টিভেটর নামিয়ে আপনার উইন্ডোজ কপিটি জেনুইন করলে আপনি অধিক নিরাপদ বোধ করেন? তারপর যখন নতুন কোনো ভার্সন বের হয় আর সেটায় আপগ্রেড করার জন্য মাইক্রোসফট টাকা চায়, তখন আপনার কী মনে হয় সেটা জানার ইচ্ছেটা নাহয় চাপাই দিলাম।

৬. অতিরিক্ত ফ্রি অ্যাপ্লিকেশনের বাহারঃ কম্পিউটারের জন্য কোনো সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন কিনছেন। বেশ সাড়াশব্দ ফেলে মাইক্রোসফটের ক্যাটালগ ঘাঁটলেন। অফিস স্যুটসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম নির্বাচন করলেন। বেশ ভাবসাব নিয়ে দোকান থেকে সিডি কিনে আনলেন। টাকার কথা বাদই দিলাম, কারণ আপনি দোকান থেকে জেনুইন অফিস (জেনুইন উইন্ডোজ তো অনেক শুনেছেন, অফিসের ক্ষেত্রে যে জেনুইন বলে একটা কথা আছে, জানেন কী?) কিনছেন না। ৫০ টাকায় জেনুইন অফিস পাওয়া যায় না। অন্যদিকে উবুন্টুতে এতো বেশি অ্যাপিকেশন আর সফটওয়্যার। নাহ, এসব সস্তা (সস্তাও না, মাগনা) জিনিস ঘেঁটে ‘ইমেজ’ নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।

৭. ডকুমেন্টেশন বেশি সহজঃ অন্য ব্যবহারকারীর কাছ থেকে হয়তো কোনো কিছু নিয়ে সাহায্য চাইতে পারেন, কিন্তু মাইক্রোসফটের পণ্য, মাইক্রোসফটের ক্যাটালগ ঘাঁটাই তো শ্রেয় তাই না? কিন্তু হায়, বহু ঘাঁটাঘাঁটি করেও মাইক্রোসফট উইন্ডোজের নিজস্ব এমন কোনো সাইট পেলেন না যেখানে উবুন্টুর http://help.ubuntu.com মতো সবকিছু এতো সহজে বলা আছে। থাক, চিন্তা করবেন না। অন্য ব্যবহারকারীর সাহায্যই নিন।

৮. অতিরিক্ত ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্টঃ বাজারে উইন্ডোজের বহুরূপী ভার্সন না খুঁজলেও পাওয়া যায়। আর আপনি যদি উইন্ডোজের এনভায়রনমেন্টে ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে চান, থিম ডাউনলোডের সাইটের অভাব নেই। অন্য দিকে উবুন্টু অফিসিয়ালিই অতিরিক্ত ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট সাপোর্ট করে। উবুন্টু চলে জিনোম ইন্টারফেসে। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার অনেক পুরনো? জুবুন্টু রয়েছে আপনার জন্যই। এডুবুন্টু ব্যবহার করে আপনি শিক্ষা সংক্রান্ত কাজ করতে পারবেন অন্য যেকোনো এনভায়রনমেন্টের তুলনায় অধিক সহজে। গ্রাফিক্সপ্রেমী হলে কুবুন্টু দেখে মাথা নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি ফাস্টার কম্পিউটিং-এর প্রয়োজন হয়, লুবুন্টু তো আছেই। এছাড়াও আরও বহু ইন্টারফেস রয়েছে। ধূর! এতো ঝামেলার দরকার কী। তারচেয়ে উইন্ডোজ নিয়েই থাকুন। এক ডেস্কটপ সব কাজ!

৯. বেশি ডিজাইনঃ আপনার কম্পিউটারে রোটেটিং উইন্ডো, উবলি উইন্ডো, ডেস্কটপ কিউব, মাল্টিপল ওয়ার্কস্পেস, উইন্ডো ট্রান্সপারেন্সি এতোকিছুর দরকার নেই। কে জানে পেছন থেকে কেউ না আবার আপনার ডেস্কটপের আর কী কারসাজি আছে তা দেখার জন্য পপকর্ন নিয়ে বসে পড়ে! তারচেয়ে আর দশজনের মতোই রাখুন আপনার ডেস্কটপ।

অতএব, খামোকা উবুন্টু নিয়ে সমাজে আপনার ইমেজ নষ্ট করার দরকার কী? তারচেয়ে উইন্ডোজ ব্যবহার করুন। সমাজে মাথা উঁচু করে চলুন এবং বুক ফুলিয়ে বলুন, ‘আমি উইন্ডোজ ব্যবহার করি!’
শেষ কথা

পোস্টটি পড়ে অনেকেই হয়তো এর মর্ম বুঝতে পারবেন না এবং উল্টাপাল্টা মন্তব্য করবেন। আমি অনুরোধ করছি, মন্তব্য করার আগে পোস্টটি ভালো মতো পড়ে নিন এবং এর টোন বোঝার চেষ্টা করুন। অবশ্যই আমি দাবি করছি না যে সবার জন্য উবুন্টু স্বয়ংসম্পূর্ণ। উবুন্টু নিজে অবশ্যই একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম। কিন্তু আপনি যদি ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর ইত্যাদিতে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন, তাহলে উবুন্টুর কী দোষ? ফটোশপ তো আর উইন্ডোজের সঙ্গে থাকে না। এটি থার্ড পার্টি সফটওয়্যার। তাই উবুন্টুতেও এটি পাবেন না। অবশ্য এখনও ফটোশপসহ বেশ কিছু সফটওয়্যার উবুন্টুতে কাজ করে না। এর কারণ কোম্পানিগুলো এখনও লিনাক্স ভার্সন বের করেনি এবং আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই বের করবে। কারণ, মানুষের লিনাক্সমুখিতা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি।

আরেকটি ব্যাপার, অনেকেই মনে করেন তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশেই বুঝি মানুষ উইন্ডোজ কিনতে পারে না বিধায় লিনাক্স নিয়ে মাতামাতি করে। আসল কথা উল্টোটা। বরং উন্নত দেশগুলোর মানুষই এখন ব্যাপকহারে লিনাক্স অথবা ম্যাকমুখী হচ্ছে। যদি অনেক টাকা থাকে এবং টাকা দিয়েই ওএস কিনতে হয়, ম্যাক কিনুন। অন্যথায় উবুন্টু ব্যবহার করুন। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেককে দেখেছি যারা লিনাক্স ব্যবহার করে ম্যাকের অভাব ভুলে গেছেন। কারণ, তাদের প্রয়োজন ছিল উইন্ডোজ থেকে দূর হওয়া এবং সুন্দর ও কাজ করার উপযোগী একটি ওএস। লিনাক্স তাদেরকে তা দিয়েছে, কারণ ম্যাক ও উবুন্টু, দু’টোই ইউনিক্সের উপর তৈরি এবং এদের কাজও একই রকম। ম্যাক ইউজাররা লিনাক্স ইউজ করতে পারবেন এবং লিনাক্স ইউজাররাও ম্যাক ইউজ করতে পারবেন সহজেই।

সংগ্রহিতঃ মূল লেখকঃ আমিনুল ইসলাম সজীব (বিজ্ঞান প্রযুক্তি.com )
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১:০৭
২০টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×