somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রাবণে বৃষ্টি নামে

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিরপুরে একটি বাসার চিলেকোঠায় থাকি। এই বাসাতে আছি প্রায় বছর দেঁড়েক হবে। প্রথমে ছিলাম দ্বিতীয় তালায়। সেখানে কিছু বড় ভাই ছিলেন। উনারা বলেছিলেন, তুমি আপাতত এখানেই থাকো। আমাদের লোক আসতে ছয় সাত মাস সময় লাগবে। তারা আসলে তুমি বাড়িওয়ালাকে বলে উপরে চলে যেও।
আমি ভাইদের বলেছিলাম, ভাই বাড়িওয়ালা যদি উপরে থাকতে না দেয়?
তারা বলেছিলেন, আরে! আমরা আছি কী করতে? এই বাসাতে আমরা পাঁচ বছর ধরে আছি। আর আমাদের মতো এত লম্বা সময় কেউ থাকেনি এই বাসায়। বাড়িওয়ালার সাথে আমাদের সম্পর্ক অনেক ভালো।

চারদিকে কোথাও মন মতো বাসা খুঁজে না পেয়ে শেষে এই বাসাতে এসেছিলাম। বাসা দেখে পছন্দও হলো। আর ভাইদের সাথে কথা বলেও ভালো লাগলো। তাই জিনিসপত্র নিয়ে উঠে পড়লাম। আমার মতো আরেকটা ভাই ছিলো। তার নাম নাঈম। বাড়ি চাঁদপুরে। ছেলেটা এত ভালো যে, তার প্রশংসা করতে গেলে শেষ হবে না। নাঈম ভাই আমার থেকে এক বছরের সিনিয়র। তবে পড়ালেখাতে দু'জন সেম।

দেখতে দেখতে ছয় মাস কেটে গেল। এদিকে রুমের বড় ভাইদের সেই বন্ধুরাও চলে এলো। বড় ভাইয়েরা আমার আর নাঈম ভাইয়ের জন্য চিলেকোঠার রুমটা চেয়ে নিলেন বাড়িওয়ালা আন্টির থেকে। আন্টি আবার মাটির মানুষ। কোনো কিছুতে তিনি না করেন না। আবার গভীর রাতে যদি আন্টির বাসায় নক করে বলি, আন্টি গেটের বাইরে আমার এক ফ্রেণ্ড দাঁড়িয়ে আছে। যদি চাবিটা একটু দিতেন!
এতেও আন্টি বিরক্ত হতেন না। বরং বিনা কথায় চাবি দিয়ে দিতেন। এ নিয়ে অবশ্য আংকেল আন্টিকে বিভিন্ন কথা শোনাতেন। কিন্তু আন্টি সেদিকে তেমন কান দিতেন না। তিনি আংকেলকে বলতেন, তুমিও কিন্তু একসময় ব্যাচেলর ছিলে। ওদের বয়সটা কিন্তু তুমিও পার করে এসেছো।

তারপর থেকেই আমি আর নাঈম ভাই চিলেকোঠায় থাকি। চিলেকোঠায় থাকতে বেশ ভালোই লাগে। তবে অসুবিধা কিছু আছে। যেমন বুয়াকে রান্নার জন্য জন প্রতি একশত টাকা করে বেশি দিতে হয়। কেননা তার নাকি এই ছয় তালা বেয়ে উপরে উঠতে কষ্ট হয়। আবার কোনো কিছুর দরকার পড়লে আমাদেরকে এই উপর থেকে নিচে গিয়ে সেটা নিয়ে আবার উপরে উঠতে হয়। কিন্তু সুবিধাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, ছাঁদটা আমাদের দখলে। রুম থেকে বাইরে বের হলেই ছাঁদ। যখন ইচ্ছা তখন ছাঁদে যেতে পারি, ঘুরাঘুরি করতে পারি। আবার বৃষ্টির দিনে মন মতো ভিজতেও পারি। বাধা দেওয়ার মতো কেউ নেই।

এই বাসার আরেকটা বড় সুবিধা হলো, কখনো গ্যাস কিংবা পানির সংকট পড়ে না। সচরাচর সব বাসাতেই গ্যাসের প্রবলেম না হলেও পানির প্রবলেমটা অন্তত লেগে থাকে। কিন্তু এই বাসাতে সেটা হয় না। আর এই কারণেই দ্বোতালার বড় ভাইয়েরা আজ তিন চার বছর ধরে এখানে রয়ে গিয়েছেন। আর আমরা দেঁড় বছর!
.
রাতে যখন ঘুমাই। তখন রুমের জানালাটা খোলাই রাখি। আর প্রভাতে সূর্যের আলো এসে রুমে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু আজ ঘুম ভাঙলো নাঈম ভাইয়ের ডাকে। আমি বললাম, ভাই সূর্যের আলো তো এখনো রুমে আসেনি। আরেকটু ঘুমাই। পরে উঠবো।
তিনি বললেন, আরে ভাই আকাশে মেঘ করেছে। আর এখন বেলা আটটা বাজে। মেঘের কারণে তোমার সূর্য মামা আজ উঠতে পারেনি। দ্রুত ঘুম থেকে উঠে পড়ো। খানিকবাদে বৃষ্টি নামবে। উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও, নয়তো এভাবেই চলো।
আমি বললাম, এই মেঘলা দিনে আবার কোথায় যাবো?
তিনি হেসে বললেন, বৃষ্টিতে ভিজতে হবে না? কতদিন বাদে বৃষ্টি আসছে। উঠে পড়ো, দ্রুত কুইক। আমি ততক্ষণে জানালাগুলো বন্ধ করে দেই।

আমি বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম। বন্ধ জানালা একটু টান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম আসলেই তো! দারুণ মেঘ জমেছে আকাশে। আহ! কতদিন পর আজ ভিজবো।
নাঈম ততক্ষণে বাইরে চলে গিয়েছেন। আমি ব্রাশ আর পেস্ট হাতে নিয়ে বাইরে গেলাম। ছাঁদের এক কোণে ট্যাব আছে। সেখান থেকে ব্রাশটা একটু ভিজিয়ে নিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে করতেই ঝুম ঝুম শব্দ করে বৃষ্টি নামলো। আমি দ্রুত ট্যাব চালু করে মুখটা ধুয়ে নিলাম। তারপর ব্রাশ আর পেস্টটা রুমে রাখতে যাওয়ার জন্য যেই না পা বাড়িয়েছি। অমনি দুইটা মেয়ে ছাঁদের গেটে ধাক্কা দিয়ে ছাঁদে এলো। তারা আমাকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো। আমি রুমের বাইরে থেকে দরজাটা খুলে পেস্ট আর ব্রাশটা বেডের উপর ছুঁড়ে মারলাম। তারপর অতি দ্রুত ছাঁদে ফিরে গেলাম। গিয়ে দেখি মেয়ে দু'টো ছাঁদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দু'দিকে দু'হাত ছড়িয়ে আকাশের পানে চেয়ে চোখ বুঝে আছে। দেখতে বেশ ভালোই লাগছে। আর নাঈম ভাই ছাঁদের এককোণে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তার কাছে যেতেই তিনি বললেন, এই আপদ আবার কোথথেকে উদয় হলো? ভাবলাম আজ মন ভরে বৃষ্টিতে গোসল করবো। কিন্তু এদের জন্যে তো তা হবার কোনো নামগন্ধও দেখছি না।
আমি বললাম, চলুন পরিচিত হয়ে নেই। তাহলে সংকোচ বোধটা কেটে যাবে। সাথে আমরা আমাদের মনের মতো করে ভিজতেও পারবো।
তিনি বললেন, কিভাবে? আর পরিচিত হতে গেলে তো কোনো একটা কথা দিয়ে কথা শুরু করতে হবে। কিন্তু কী বলে কথা শুরু করবো?
- ভাই এতো ফর্মালিটি মেইনটেইন করার কিছু নেই। যাস্ট ওদের কাছে যাবো। গিয়ে পরিচিত হবো। তারপর নিজেদের মতো করে বৃষ্টিতে ভিজবো। ব্যাস!
- আচ্ছা চলো।

আমি মেয়ে দু'টোর কাছে গিয়ে হালকা কাঁশি দিলাম। তারা তাদের দু'হাত শূণ্যে থেকে নামিয়ে মাথাটা সোজা করে আমাদের দিকে তাকালো। আমি বললাম, আমি শ্রাবণ। আর ইনি আমার রুমমেট নাঈম ভাই। এইযে চিলেকোঠা দেখছেন, আমরা এখানেই থাকি।
বড় মেয়েটা বললো, আমি বৃষ্টি। আর এ আমার কাজিন নীলা। এটা এদেরই বাসা।
আমি বললাম, ও। তা কিসে পড়েন?
সে বললো, এবার অনার্সে ভর্তি হয়েছি। মিরপুর কলেজ। আর নীলা এবার ইন্টারে।
- আমি অনার্স সেকেণ্ড ইয়ার। আপনার কলেজেই। আর নাঈম ভাই সিভিলে বিএসএসি করছেন ড্যাফোডিলে।

এদিকে বৃষ্টিও খানিকটা কমে এলো। মেয়ে দু'টো এদিক ওদিক চেয়ে বললো, ওহহো বৃষ্টিও থেমে গেছে। আচ্ছা আজ আসি। বাই।
তারা পূর্বের মতো সেই মুচকি মিষ্টি হাসি দিয়ে ছাঁদ থেকে প্রস্থান করলো। তারা চলে গেলে নাঈম ভাই বললেন, শ্রাবণ একটা জিনিস খেয়াল করেছো?
আমি বললাম, কী?
- তোমার নামের সাথে মেয়েটার নামের কিন্তু ব্যাপক মিল রয়েছে।
- যেমন?
- যেমন তোমার নাম শ্রাবণ। আর মেয়েটার নাম বৃষ্টি।
- ছোট মেয়েটার নামের সাথেও আপনার নামের যথেষ্ট মিল রয়েছে। ছোট মেয়েটার নাম নীলা। আর আপনার নাম নাঈম।
দু'জনে একটু শব্দ করেই হেসে উঠলাম।
.
রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখন নাঈম ভাই বলে উঠলেন, বৃষ্টি কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ে সেটা শুনলে না?
আমি বিছানার চাঁদর ঠিক করতে করতে বললাম, আজকের তরকারিটা কিন্তু ভালোই স্বাদ ছিলো।
তিনি মন খারাপ করে বললেন, এইযে আবারও শুরু করে দিলে সোজা প্রশ্নের বাঁকা উত্তর।
- যেহেতু একই কলেজে পড়ি। সেহেতু খুঁজে পেতে অতোটা কষ্ট হবে না। তাছাড়া মেয়েটা তো এই বাসাতেই থাকে। আর যেহেতু মিরপুর কলেজে ভর্তি হয়েছে। সেহেতু সে তার আন্টির বাসায় থেকেই লেখাপড়া করবে। আর আন্টির বাসায় থাকলে প্রায় দিনই সে ছাঁদে আসবে এবং আমাদের সাথে দেখা হবে। তখন না হয় জেনে নেওয়া যাবে কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ে।
- তা অবশ্য মন্দ বলোনি। আর মেয়েটাকে কিন্তু তোমার সাথে দারুণ মানাবে।

নাঈম ভাইয়ের কথায় একটু লজ্জাই পেলাম। বললাম, কী যে বলেন না ভাই!
- আরে এতো লজ্জা পেতে হবে না। কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমাকে বলবে। আমি তোমাকে সবদিক থেকে সহযোগিতা করবো। কেমন?
- জ্বী ভাই।
- এখন ঘুমাও। আর শোনো।
- হ্যাঁ, বলুন।
- তরকারিটা কিন্তু আসলেও অনেক স্বাদের ছিলো।
- তাহলে কালকেও চলবে নাকি আজকের আইটেম?
- না, প্রতিদিন এক খাবার খেলে রুচি ফুরাবে।
- হুম। তাও ঠিক।
- হুম। লাইট বন্ধ করে দাও। আমি ঘুমালাম।

নাঈম ভাই চোখ বুজলেন। আমি জানালা টান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম আকাশ একেবারে পরিস্কার। জানালাগুলো খুলে দিয়ে ফ্যান অফ করে দিলাম। তারপর রুমের আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম।
.
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে কলেজের দিকে রওনা দিলাম। আমাদের বাসা থেকে কলেজ বেশি দূরে নয়। পায়ে হেঁটে গেলে মিনিট পাঁচেক লাগে। রিকশা নেওয়ার প্রযোজন পড়ে না। কেননা স্টেডিয়ামের দুই নম্বর গেট থেকে মিরপুর কলেজ বেশি দূরে নয়। পা ফেললেই কলেজ। আমাদের বাসাটা মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ভিআইপি গেটের সামনে। সবাই আমাদের বাসাকে এক নামে চিনে। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, ভাই মিরপুর দুইয়ের কোথায় থাকেন?
তখন শুধু বলি স্টেডিয়ামের দুই নম্বর গেটের সামনে পেপসি বিল্ডিংয়ে।
তাই আর বাসার ঠিকানা জোড়ালোভাবে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

লাভরোড ক্রস করে কলেজে ঢুকতে যাবো। তখন হঠাৎ করেই আমার হাত ঘড়ির দিকে চোখ পড়লো। কেবল বাজে সাতটা। আরে এত সকাল সকাল আমি কলেজে কী করছি? ক্লাস শুরু হবে ন'টার সময়। তাড়াতাড়ি ঘুরে বাসার দিকে হাঁটা ধরলাম। বাসার গেটের সামনে এসে ভাবছি, আজ তো সূর্যের আলো রুমে আসেনি। তবে আমার ঘুম ভাঙলো কী করে? নাকি বৃষ্টি মেয়েটার জন্য!
ভাবাভাবি শেষ করে গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতে যাবো। ঠিক তখন দেখলাম বৃষ্টি গেট দিয়ে বের হচ্ছে। আমাকে দেখে মেয়েটা গতকালের মতো সেই মায়াবি মুচকি হাসিটা দিয়ে হাত নাড়িয়ে হাই বললো। আমি অনিমেষ নেত্রে তার দিকে চেয়ে রইলাম। আর আমার হাত দু'টো অটোমেটিকভাবে উপরে উঠে হাই জানালো। এতে মেয়েটা মুখ চেপে হেসে বললো, হাই এক হাত দিয়ে জানাতে হয় মিস্টার।
- শ্রাবণ, মিস্টার শ্রাবণ।
- ও হ্যাঁ মিস্টিার শ্রাবণ। এখন থেকে এভাবে হা করে তাকিয়ে না থেকে এক হাত দিয়ে হাই জানাবেন। কেমন?
- জ্বী।
- আর এই সাত সকালে ব্যাগ কাঁধে করে কোথায় গিয়েছিলেন?
- ঐ... ঐ... ঐ....
- কলেজে?
- হ্যাঁ.. হ্যাঁ... হ্যাঁ না মানে..
- বাব্বাহ। গুড স্টুডেন্ট। তা ফিরে এলেন কেন?

আমি প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললাম, আপনি এই সকালবেলায় কোথায় চললেন?
- দেখি একটু ঘুরাঘুরি করি। রোডে তো তেমন কেউ বের হয়নি। তাই শান্ত পরিবেশটা একটু উপভোগ করি।
- আমি আসতে পারি আপনার সাথে?
- কী?
- না মানে আসলে...
মেয়েটা হেসে বললো, আসুন।

আমি আর বৃষ্টি পিচ ঢালা পথের উপর দিয়ে হেঁটে চলেছি গন্তব্যহীন। এর মাঝে তার পুরো ডিটেইলস জেনে নিয়েছি। তার গ্রামের বাড়ি নাটোর গুরুদাসপুর। ফ্যামিলিতে মা, বাবা, বড় ভাই আর সে। আর এটা তার খালার বাসা। শুধু জানা হয়নি সে কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ে।
আমি তাকে কথা বলার ছলে হঠাৎ করেই বললাম, আচ্ছা আপনি কোন ডিপার্টমেন্টে যেন পড়েন?
মেয়েটা একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে প্রশ্ন করলো, এর আগেও কি আপনাকে আমার ডিপার্টমেন্টের কথা বলেছিলাম।
আমি বললাম, না।
- তাহলে "কোন ডিপার্টমেন্টে যেন পড়েন" এটার মানে কী? এখানে "যেন" আসলো কোথথেকে?
- ঐ হলো।
- না, হলো না। এরপর থেকে ভেবেচিন্তে ঠিক করে প্রশ্ন করবেন।
- আচ্ছা।
- আর আমি মার্কেটিংয়ে পড়ি।
- কি?
- যা শুনেছেন, সেটাই।
- আমিও কিন্তু মার্কেটিংয়ের স্টুডেন্ট।
- ও, তাই নাকি?
- হ্যাঁ।
- তাহলে তো আপনার থেকে হেল্প নিতে পারবো।

মনে মনে বললাম, কী মেয়েরে বাবা! হেল্প এর কথা আমি বলবো না কী, আর এদিকে সে বলে বসে আছে। বললাম, নিশ্চয়ই।
সে বললো, চলুন বাসার দিকে যাই। আর হাঁটতে ভালো লাগছে না। তাছাড়া দেখুন না রোডে মানুষজনের আনাগোণাও বেড়ে গিয়েছে।
- হ্যাঁ চলুন।

আমি আমার রুমে ঢুকতেই নাঈম ভাই সচকিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় ছিলে তুমি? আর ব্যাগ কাঁধে কেন?
- ভাই কলেজে গিয়েছিলাম।
- ফোন ধরো না কেন?
আমি পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখলাম এগারোটা মিসডকল।
- সরি ভাই, টের পাইনি একদম।
- এরপর থেকে বাইরে গেলে আমাকে বলে যাবে।
- আচ্ছা ভাই।

নাঈম ভাইয়ের এই জিনিসটা আমার খুব ভালো লাগে। তিনি আমাকে নিজের আপন ভাইয়ের মতোই দেখেন। আর আমিও বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তাকে বলে যাই, নাঈম ভাই একটু বাইরে যাচ্ছি। কিন্তু আজ বলে যাইনি।
.
দুপুরে আমি আর বৃষ্টি একসাথে কলেজ থেকে বের হয়ে লাভরোড হয়ে বাসায় ফিরছিলাম। অর্ধেক রাস্তা আসতেই সে হুট করে বলে উঠলো, মিস্টার শ্রাবণ আমরা তো ভালো বন্ধু হতে পারি। তাইনা?
আমি বললাম, বন্ধুর থেকে বেশি কিছু হলেই বা প্রবলেম কোথায়?
- বেশি কিছু বলতে কী হ্যাঁ?
- না, কিছু না।
- তাহলে আজ থেকে আমরা ফ্রেণ্ড!
- হুম।
- হুম কী?
- আমরা ফ্রেণ্ড।
- তুই করে বলতে হবে তাহলে।
- কিন্তু...
- নো কিন্তু।
- ওকে।
- আমার মতো একটা সুন্দরী মেয়ে তোর সাথে নিজে থেকে ফ্রেণ্ডশীপ করলো, আর তুই এখনো খালি হাতে দাঁড়িয়ে আছিস?
- কী করবো তাহলে?
- আমার জন্য একটা আইসক্রিম নিয়ে আয়।
- আইসক্রিম?
- হ্যাঁ আইসক্রিম। এতে এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। যা দ্রুত যা।
আমি পাশের একটা দোকানের দিকে পা বাড়াতেই সে পেছন থেকে আমাকে ডেকে বললো, কোণ আইসক্রিম আনবি কিন্তু!
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম। তারপর দোকান থেকে একটা কোণ আইসক্রিম নিয়ে এসে তাকে দিলাম।

আমাকে উৎফুল্ল মনে বাসায় ফিরতে দেখে নাঈম ভাই বললেন, কী ব্যাপার? আজ এত এত খুশি খুশি লাগছে কেন?
- বৃষ্টি আসবে।
- সত্যি নাকি? কখন আসবে? আর আকাশ তো ফকফকা। আকাশে তো কোনো মেঘও নেই।
- নাঈম ভাই, আমি এই বৃষ্টির কথা বলছি না। আমি সেই বৃষ্টির কথা বলছি, বৃষ্টির দিনে যেই বৃষ্টি ছাঁদে এসে বৃষ্টিতে ভিজেছিল। আর শ্রাবণ অপলক চেয়ে ছিল।
- বলো কি?
- হ্যাঁ ভাই। মেয়েটা আজ নিজে থেকেই আমার সাথে বন্ধুত্ব করলো।
- বাহ্ বেশ তো!
- এখন আপনি পরামর্শ দিন কিভাবে তাকে বন্ধু থেকে বউ বানাতে পারি।
- এত উত্তেজিত হওয়ার দরকার নেই। সময় গেলে সব হবে। শুধু অপেক্ষা করতে থাকো। আর বৃষ্টির মনে তোমার একটা অবস্থান তৈরি করো।
- নাঈম ভাই।
- বলো।
- ভাই, মেয়েটাকে আমার চাই চাই।
- এই প্রবল প্রবৃত্তিটা যেন সারাজীবন থাকে।
- দোয়া করবেন ভাই।
- হু। এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
- জ্বী ভাই।
.
বিকেলে আমি আর নাঈম ভাই ছাঁদের এককোণে দাঁড়িয়ে রাস্তার মানুষগুলোকে দেখছিলাম। আর গল্প করছিলাম। নূরী, নাঈম ভাইয়ের গার্লফ্রেণ্ডের নাম। সম্প্রতি একটা ঝামেলা হয়ে গিয়েছে দু'জনের মধ্যে। মেয়েটা আর আগের মতো ভাইয়ের খোঁজ খবর নেয় না। ভাই কল দিলেও রিসিভ করে না। তার এমন পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে সে বলেছে, দেখো নাঈম। তোমার পড়ালেখা কবে শেষ হবে না হবে, তার ঠিক নেই। আর এদিকে আমার বাবা মা তো আর তোমার চাকরির অপেক্ষায় আমাকে ঘরে বসিয়ে রাখবে না। তাছাড়া গ্রামের মধ্যে একটা বিয়ের উপযোগী মেয়ে থাকলে প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে সম্বন্ধ আসে। তুমি কিছু একটা করো।
নূরী আপু বেশ কয়েকটি মাস ধরেই নাঈম ভাইকে উক্ত কথাটা বলে যাচ্ছে। এদিকে নাঈম ভাই চাকরির জন্য কোনো চেষ্টায় করছেন না। কিন্তু এখন যখন নূরী আপু তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। তখন তিনি ঠিকই মনের মধ্যে কষ্ট পাচ্ছেন।

আমি রাস্তার দিকে তাকিয়েই বললাম, ভাই চাকরি এখন নেই তো কী হয়েছে? পরে তো হবে। বরং আপনি নূরী আপুর বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। তাছাড়া আপনার পরিবার আপুর মতো দশজনকে বসিয়ে খাওয়ানোর সামর্থ রাখে।
- তা অবশ্য ভুল বলোনি। দেখি কাল পরশুর মধ্যে বাড়ি যেতে পারি। কতদিন হলো তার সাথে কথা বলি না।

হঠাৎই একটা মেয়েলি কাঁশির শব্দে আমরা পেছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম বৃষ্টি দাঁড়িয়ে আছে। নাঈম ভাই বললেন, তোমরা কথা বলো। আমি আসছি।
নাঈম ভাই প্রস্থান করলেন। বৃষ্টি আমার কাছে এসে তার ডান হাতটা আমার বাঁ হাতে রেখে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সে বললো, রাতের বেলা এই শহরের মাঝপথ দিয়ে হেঁটেছিস কখনো?
.
শ্রাবণে বৃষ্টি নামে
পর্ব-১
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
লেখার সময়কাল: ০৫ মে ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৩০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×