somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রাবণে বৃষ্টি নামে

১০ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রাবণে বৃষ্টি নামে
পর্ব-২
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
বৃষ্টি আমার কাছে এসে তার ডান হাতটা আমার বাঁ হাতে রেখে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সে বললো, রাতের বেলা এই শহরের মাঝপথ দিয়ে হেঁটেছিস কখনো?
আমি রাস্তার দিকে তাকিয়েই বললাম, একা একা হেঁটেছি। সেটাও বছর দু'য়েক আগে।
- তারপরে আর হাঁটিসনি?
- না, তবে প্রবৃত্তি জাগে কারো হাত ধরে হাঁটার। হাঁটবি কি তুই আমার সাথে?
- আচ্ছা দু'জন দু'জনার হাত ধরে গভীর রাতে পিচঢালা পথে হাঁটলে কি নাটক সিনেমার ঐসব সুন্দর মুহূর্তের মতো ফিল আসবে?
- তা ঠিক বলতে পারি না। তবে তুই চাইলে একবার হেঁটে দেখতে পারি, কেমন ফিল আসে!
- আজকেই হাঁটবি নাকি?
- সেটা তোর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।
- চল তাহলে আজকেই হাঁটবো।

আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে তার নাম ধরে ডাকলাম, বৃষ্টি।
সে বললো, বল।
- আমাদের পরিচয় ক'দিনের?
- দুই দিনের।
- আর বন্ধুত্ব?
- এক দিনের।
- এক দিন কি পার হয়েছে?
- না। তবে আজ রাতটা পেরুলেই পার হবে।
- তুই আমাকে ভালোভাবে চিনিস না, জানিস না, কিন্তু একলা একা নিশুতি রাতের বেলা আমার সাথে এই বিশাল শহরে হাত ধরে হাঁটার ইচ্ছে পোষণ করছিস!
- বিশ্বাসে বন্ধুত্ব হয়।
- সতত সত্য।
- তাহলে ভয় কিসের? ইচ্ছা পোষণ যখন করেছি। তখন হাঁটবোই।
আমি নিজেই প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললাম, বৃষ্টি কাঠগোলাপ দেখেছিস কখনো?
- না তো! তুই দেখেছিস?
- হ্যাঁ, দেখবি তুই?
- দেখবো না মানে? একশতবার দেখবো।
- কাল ক্লাস শেষ করে দু'জনে কাঠগোলাপ কিনতে যাবো।
- আচ্ছা।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে। পশ্চিমের বিল্ডিংগুলোর ওপাশে সূর্য ডুবে যাচ্ছে। একটা কাক তখনো ছাঁদের আশে-পাশে ঘুরাঘুরি করছে। বোধ তার সঙ্গীকে সে হারিয়ে ফেলেছে। কিয়ৎকাল বাদে সঘন সায়াহ্নে হঠাৎই দৃষ্টিগোচর হলো সেই কাকটির দিকে। এখন দু'টি কাক। আমার চিলেকোঠার রুমের উপর দিয়ে উত্তর দিকে উড়ে গেল। বৃষ্টি তখনো আমার সাথে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকে বললাম, বাসায় যাবি না?
সে বললো, তাড়িয়ে দিচ্ছিস কেন? আর বাসা কিরে? সিড়ি দিয়ে নামলেই তো বাসায় পৌঁছে যাবো। আমি কি অন্যত্রে রয়েছি নাকি যে বাসায় পৌঁছাতে ব্যাপক বেগ পোহাতে হবে?
- সন্ধ্যাবেলায় বাসায় ফিরতে হয়। দেখলি না, কাক দু'টো কেমন করে উড়ে তাদের বাসার দিকে রওনা দিলো?
- শ্রাবণ।
- হুম বল।
- তুই না অনেক ভালো।
- কিভাবে বুঝলি?
- আমি কারো সাথে কয়েক ঘণ্টা কথা বললে, সময় কাটালেই তার সম্বন্ধে পূর্ণরূপে অবগত হতে পারি।
- বাহ! বেশ তো।
- এখন রুমে যা। আমিও যাই। নাঈম ভাই বোধ হয় একা একা বোর হচ্ছেন।

বৃষ্টি চলে গেলে আমি রুমে ফিরলাম। দেখলাম নাঈম ভাই রুমে নেই। বাথরুমের দরজার খোলা। আমাদের রুমের পাশেই কিচেন রুম। সেখানে উঁকি দিতেই দেখলাম নাঈম ভাই রান্না করছেন। আমি বললাম, ভাই আপনি হঠাৎ রান্না করছেন! খালা আসেনি?
- না, তিনি আজ অসুস্থ আছেন। তাই নিজেই রান্না করছি।
- আমাকে ডাকেননি কেন?
- প্রয়োজন পড়েনি।
- প্রয়োজন পড়েনি? নাকি বৃষ্টির সাথে কথা বলছিলাম সেজন্য?
তিনি একটা মাংসের পিস চামচে করে তুলে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, দেখো তো লবণ হলো কিনা!

আমি বুঝলাম তিনি কথা ঘুরাচ্ছেন। ঘুরাক না, আর ঘুরাবেই না বা কেন? নাঈম ভাই যে আমাকে কতটা ভালোবাসে, তার প্রমাণ আমি আজ আবারও পেলাম। এর আগে একবার আমার প্রচণ্ড জ্বর এসেছিলো। আমি ক্লান্ত চোখে দেখেছিলাম তিনি রাতভরে আমার মাথায় জলপট্টি করে দিচ্ছেন। তারপর নিচের ফার্মেসি আর দোকান থেকে নিজের টাকায় আমার জন্য ঔষুধ আর ফল-মূল নিয়ে আসছেন।

আমি চামচের উপর থেকে মাংসটা নিয়ে খেয়ে দেখলাম দারুণ স্বাদ হয়েছে। বললাম, নাঈম ভাই একদম পার্ফেক্ট হয়েছে। আপনি তো দারুণ রান্না করতে জানেন?
তিনি হেসে বললেন, পাম দিও না। আর রান্না করতে না ছাই জানি। ইউটিউব থেকে রান্নার টিউটোরিয়াল দেখে রান্না করতেছি।
- যাই করেন, দারুণ স্বাদের হয়েছে কিন্তু।
- তাহলে তো ভালোই হলো।
- মাঝে মাঝেই কিন্তু রান্না করে খাওয়াবেন।
- পারিশ্রমিক দিতে হবে তাহলে।
- সে না হয় দেওয়া যাবে।
.
রাত দশটা বাজে। আমি নাঈম ভাইকে বললাম, ভাই বৃষ্টি আজ রাতে আমার হাত ধরে ল্যাম্পোস্টের আলোয় পিচঢালা পথে হাঁটতে চেয়েছে।
তিনি ল্যাপটপে কীসের যেন একটা কাজ করছিলেন। ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ রেখেই তিনি বললেন, হাঁটতে চেয়েছে, হাঁটবে। প্রবলেম কোথায়?
- আপনি থাকবেন একটু আমাদের সাথে?
- আমি থাকলে হেঁটে মজা পাবে না।
- আপনি আমাদের পেছনে থাকবেন। একদম ছায়ার মতো।
- কখন বের হবে?
- বৃষ্টি কল করবে।
- আচ্ছা ঠিক আছে।

নাঈম ভাই আবারও ল্যাপটপে মনযোগ দিলেন। আমি ছাঁদে গেলাম। অন্তরীক্ষে আজ জ্যোৎস্না উঠেছে। সাথে নক্ষত্রগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে যেন আকাশের বুকে খই ছিটানো রয়েছে। আমি ছাঁদের এক কোণায় গিয়ে রাস্তার দিকে তাকালাম। জন-মানুষের ভীড় এখনো কমেনি। রাস্তার গাড়িগুলো আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। দক্ষিণে তাকিয়ে দেখলাম মিরপুর শপিং কমপ্লেক্সের সামনের রোডটাতে জ্যাম লেগে আছে। আমি সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম। রাতের জ্যোৎস্নাটা বোধ হয় আজ আমায় সঙ্গ দেবে বলেই উদিত হয়েছে। আর তারাগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরা জ্যোৎস্নাকে উৎসাহ দিচ্ছে।

অনেকটা সময় কেটে গেল। আমি রাস্তার দিকে আবারও তাকালাম। রোডে মানুষজন কমে এসেছে। হঠাৎ দু'একজনকে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। গাড়ি-ঘোড়াও তেমন নেই। মাঝে মাঝে দু'য়েকটা প্রাইভেট কার দেখা যাচ্ছে। আমি আমার হাত ঘড়িটার দিকে তাকালাম। জ্যোৎস্নার আলোয় ঘড়ির সময়টা একদম স্পষ্ট দেখতে পেলাম। রাত ১১ টা বেজে ৩৫ মিনিট। হঠাৎই নাঈম ভাইয়ের গলা শোনা গেল। তিনি আমাকে ডাকছেন। আমি রুমে ঢুকতেই তিনি বললেন, বৃষ্টি কল করেছিলো। সে ছাঁদে আসছে। তারপর মধ্যরাত হলে সে তোমাকে নিয়ে হাঁটতে বের হবে।
এতক্ষণে আমার মনে পড়লো, আরে আমি তো আমার ফোনটা রুমে রেখে ছাঁদে গিয়েছিলাম।

খানিক পরেই বৃষ্টি ছাঁদে এলো। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আন্টি কিছু বললো না?
- আন্টিকে বলেই এসেছি।
- কী বলেছিস?
- আজকে রাতে ফাঁকা রাস্তায় হাঁটবো।
- আন্টি কী বললো?
- কী আর বলবে? আমাকে হাসিখুশি দেখতে তিনি আর না করেননি।
- তো কখন বের হবি?
- বারোটা বাজুক!
- নাঈম ভাইকেও সঙ্গে নিচ্ছি।
- কেন? নাঈম ভাইকে কেন?
- রাতের বেলা এডাল্ট দু'টো ছেলেমেয়ে একসাথে হাঁটলে প্রবলেম আছে। পুলিশ ধরলে কী বলবো তখন?
- পুলিশ নিয়ে টেনশন করিস না। মডেল থানাতে আমার এক আংকেল আছেন। তার নাম বললেই সব প্রবলেম সলভ।
- তবুও।
- তবুও কী?
- নাঈম ভাইকে সাথে নেবো।
- তুই না...
- কী?
- তুই না আসলেও অনেক ভালো একটা ছেলে। আর এজন্যই আমি নিজ থেকে তোর সাথে বন্ধুত্ব করেছি।
- তুইও অনেক ভালো।
- কী দেখে বললি?
- এইযে সবসময় হাসিখুশি থাকিস।
- হাসিখুশি থাকলেই কি কেউ ভালো হয়ে যায়?
- জানি না।
- আজকের আকাশের জ্যোৎস্নাটা দেখেছিস?
- হ্যাঁ।
- অনেক সুন্দর না?
- হ্যাঁ, একদম তোর মতো।
- আমার মতো?
- তা নয়তো কী? তুই জ্যোৎস্নাটার দিকে চেয়ে দেখ সে তোর মতো করেই হাসছে।
- তুই একটা পাগল।
- তোর পাগল।
- আমার পাগল মানে?
- মানে তোর বন্ধু আরকি!
.
বারোটা বাজলে আমি, বৃষ্টি আর নাঈম ভাই বের হয়ে গেলাম। বাড়ির মেইন গেটের চাবি বৃষ্টির কাছেই ছিলো। তাই আর আন্টির বাসায় নক করতে হয়নি। আমি আর বৃষ্টি দু'জনে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাত ধরে হেঁটে চলেছি। আর আমাদের পিছে ছায়ার মতো নিঃশব্দ পায়ে হেঁটে চলেছেন নাঈম ভাই। ফাঁকা রাস্তা, ল্যাম্পোস্টের আলো, আহ! কী অনুভূতি গো। হঠাৎই বৃষ্টি আমাকে বললো, শ্রাবণ তোর প্রেমিকা আছে?
আমি বললাম, না, কেন?
- সত্য বলছিস তো?
- পারলে নাঈম ভাইকে জিজ্ঞেস করে দেখ।

সে সত্য সত্যই নাঈম ভাইকে জিজ্ঞেস করলো, ভাইয়া শ্রাবণের কি কোনো গার্লফ্রেণ্ড আছে?
নাঈম ভাই বললেন, না তো কেন?
এবার সে আমাকে অবাক করে দিয়ে নাঈম ভাইকে বললো, আমি শ্রাবণের গার্লফ্রেণ্ড হতে চাই।
নাঈম ভাই আর কোনো উত্তর দিলেন না। আমি পেছনে না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম তিনি মুচকি হাসছেন। বৃষ্টি বললো, প্রপোজ কর আমাকে।
আমি বললাম, পারি না তো।
- অত পারতেও হবে না। শুধু হাঁটু গেড়ে আমার হাত ধরে ভালোবাসি বল।
- লজ্জা লাগে যে।
- তাহলে থাক।
- না না, আমি করছি।
- কর।
- দাঁড়া একটু সাহস সঞ্চার করে নেই।
- আমি কি বাঘ, ভাল্লুক?
- না।
- তবে সাহসের কী দরকার?
- ওকে ওকে, করছি।

আমি হাঁটু গেড়ে বসলাম। তারপর তাকে বললাম, তোর হাত দু'টো দে। সে তার ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলো। আমি বললাম, প্রিয় বৃষ্টি তুই কি প্রতিরাতে শূন্য পথে আমার হেঁটে চলার সঙ্গী হবি? তুই কি এই শ্রাবণের মেঘে ঝুম বৃষ্টি হবি? তুই কি আমার বাকি জীবনের সাথী হবি?
আমার পুরো শরীর কাঁপছে। এটুকু বলে আমি বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে আমাকে উঠতে বললো। আমি উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। বললো, আমি সব হবো প্রিয়, সব হবো। তোর সাথে প্রতিরাতে শূন্য পথে হেঁটের চলার সঙ্গী হবো, তোর আকাশের সঘন মেঘে ঝুম বৃষ্টি হবো, তোর বাকি জীবনের সাথী হবো।

নাঈম ভাই আমাদেরকে দূর থেকেই অভিনন্দন জানালেন। বৃষ্টি বললো, শোন একটা কথা।
আমি বললাম, কী?
- তুমি করে কিন্তু বলতে পারবো না।
- তাহলে?
- এখন যেমন তুই করে বলি, ঠিক তেমনই থাকবো।
- তব অভিলাষে আমার আকাশে তুই "তুই" হয়েই থাকিস। ভালোবেসে খুব আবেশে মন কুঠিরে রাখিস।
- দারুণ তো!
- কী?
- তোর কথাটা।

আমরা হাঁটছি। হাঁটছি তো হাঁটছিই। যেমন উলুবনে খরগোশ হেঁটে বেড়ায়। নাহ, পুলিশে কিছু বলেনি আমাদের। আর বললেই বা কী? হঠাৎই নাঈম ভাই পেছন থেকে কাঁশি দিলেন। আমি বৃষ্টিকে বললাম, কয়টা বাজে?
বৃষ্টি তার মোবাইলে সময় দেখে বললো, দেঁড়টা।
- বাসায় ফিরতে হবে।
- আরেকটু থাকি না।
- না, আবার অন্যদিন।
- আমি কিন্তু আন্টিকে বলেই এসেছি, আজ সারারাত হাঁটবো। সো...
- বৃষ্টি।
- হুম বল।
- হাঁটতে হাঁটতে যতদূর এসেছি, বাসায় ফিরতে ফিরতে কিন্তু ততদূরই আবার হাঁটতে হবে। চল এখন।

সে আর কিছু না বলে আমার হাত ধরে বাসার দিকে হাঁটতে লাগলো। নাঈম ভাই এবার সামনে সামনে হাঁটছেন। কিন্তু একটিবারের জন্যও তিনি পেছন ফিরে তাকাচ্ছেন না। এমন সময় বৃষ্টি হুট করেই আমাকে জড়িয়ে ধরে একটা গভীর চুমু খেলো। আমি এটার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সে আমাকে ছেড়ে দিলো। তারপর আবারও চুপচাপ আমার হাত ধরে হাঁটতে থাকলো।
.
গেট খুলে বাড়ির মধ্যে ঢুকলাম। আন্টিরা তিন তালায় থাকেন। তিন তালায় এসে আন্টিদের বাসার সামনে থেকে বৃষ্টি নাঈম ভাইকে বললো, ভাইয়া শ্রাবণ একটু পরে যাক।
নাঈম ভাই একটা মুচকি হাসি দিয়ে বিনা কথায় উপরে চলে গেলেন। তিনি চলে যেতেই আমি বৃষ্টিকে বললাম, নাঈম ভাইকে উপরে যেতে বললি কেন?
- বুঝিস না কেন?
- না।
উপরে মৃদু আলোর লাইট জ্বলছে। আমি সেই লাইটের আলোয় বৃষ্টির চোখে দুষ্টুমি দেখতে পেলাম। সে আমার কাছে এসে বললো, একটু জড়িয়ে ধর না।
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। সে আবারও বললো, কী হলো? দাঁড়িয়ে আছিস কেন? নাকি আমাকেই ধরতে হবে?
আমি বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরলাম। প্রায় অনেক্ষণ সে আমাকে জড়িয়ে ধরে রইলো। আর বললো, কত তাড়াতাড়িই না আমাদের সম্পর্কটা হয়ে গেল, তাইনা?
- হুম।
- এভাবেই জড়িয়ে রাখবি তো সারাটা জীবন?
- তুই থাকতে পারলে আমি নিশ্চয়ই রাখবো।
- কথা দে।
- কথা দিলাম।
- আরেকটু থাকি?
- থাক।

বৃষ্টি ভেতরে চলে গেলে আমি উপরে চলে এলাম। রুমে ঢুকতেই নাঈম ভাই বললেন, শ্রাবণ একটা কথা বলি?
আমি বললাম, হ্যাঁ ভাই বলেন।
- তোমাদের সম্পর্কটা কত দ্রুতই না হয়ে গেল, তাইনা?
- বৃষ্টিও এটা বললো।
নাঈম ভাই কিছু একটা বলতে গিয়েও বললেন না। তিনি রুমের জানালাটা হালকা খুলে দিয়ে বললেন, কিছু সম্পর্ক হঠাৎ করেই হয়ে যায়। কিন্তু তার স্থায়িত্বকালটা হয় অসীম। ইনশাল্লাহ, তোমাদেরটাও তেমনই হবে।
- দোয়া করবেন ভাই।

রুমের লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। আজকের রাতটা আমার কাছে একদম স্বপ্নের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে রাতটা পেরুলেই সব এলোমেলো হয়ে যাবে। তবে আজ আমার মনটা বেশ ভালো। শুক্লপক্ষের পঞ্চদশ তিথির রাত যেন আজ। কী অপরূপ গো এই রাত! নাকি প্রেয়সীর প্রেমের মোহে পড়ে এই রাতটাকে আমার কাছে এতটা অপরূপ মনে হচ্ছে। আমার অদ্যাবধি এই জীবনে কখনো এতটা সুখ অনুভব করিনি, যতটা সুখ ছিলো বৃষ্টিকে জড়িয়ে রাখতে, যতটা সুখ ছিলো তার ওষ্ঠে। প্রেম, প্রেম গো! এজন্যই বুঝি প্রেমে পড়লে মানুষ পরিবর্তন হয়ে যায়। আবার প্রেমের যাতনায় নিজে কষ্ট পায়।
.
সকাল সকাল নাঈম ভাই ডাক দিয়ে বললেন, শ্রাবণ উঠো। বেলা অনেক হলো। কলেজে যাবে না?
আমি ঘুম ঘুম চোখে চেয়ে বললাম, আরেকটু ঘুমাই!
- বৃষ্টি এসে দাঁড়িয়ে আছে।
- থাকুক। কি?
- যাও উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।
আমি এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম। বললাম, সত্যই বৃষ্টি এসেছে?
- আরে না, মজা করলাম। কিন্তু তুমি তো দেখি একদম সিরিয়াস। বৃষ্টির কথা শুনে কেমন লাফিয়ে উঠলে!
- হুর, আরেকটু ঘুমাই।
- না না, একদম না। উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও। আর আমাকে বাস কাউন্টার পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসো।
- মানে?
- আজ বাড়ি যাচ্ছি। অনেকদিন বাদে আজ নূরীর সাথে কথা হলো। তার বাড়িতে নাকি বিভিন্ন জায়গা থেকে সম্বন্ধ আসছে। সে কান্না করছিলো ভীষণ।
- আচ্ছা তাহলে আপনি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিন। আমার পাঁচ মিনিট লাগবে।

আমি বাথরুমে ঢুকে একেবারে গোসল করে বের হলাম। বের হয়ে দেখি নাঈম ভাই রেডি হয়ে বসে আছেন। দ্রুত শার্ট প্যান্ট পড়ে নাঈম ভাইয়ের কাছ থেকে তার একটা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বের হলাম।

ভাইকে বাস কাউন্টারে পৌঁছে দিলে তিনি বললেন, সাবধানে থেকো। আর নিজের ভালোবাসার মানুষটার যতন নিও। আমি শীঘ্রই ফিরবো। খাওয়া দাওয়ার কষ্ট করো না। আসার টেবিলের উপরে কিছু টাকা রাখা আছে। খরচ কইরো।
ভাইকে বিদায় জানিয়ে আমি বাসায় ফিরে এলাম। তিনি ছাড়া রুমটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। বুকের বাঁ পাশটা একদম খালি খালি লাগছে। পকেট থেকে ফোনটা বের করে ভাইকে কল করলাম। তিনি রিসিভ করে বললেন, মিস করছো তাইনা?
- হ্যাঁ ভাই।
- আমিও।
- ভাই এমনটা কেন হয়?
- তুমি না মার্কেটিংয়ে পড়ো?
- হ্যাঁ ভাই।
- বাজার অবস্থান সম্বন্ধে জানো কিছু?
- জানি তো।
- সেখানে তোমার পণ্য এবং পণ্যের গুণাগুণ সম্বন্ধে ভোক্তাদের মনে একটা স্বচ্ছ স্থান তৈরি হয়। তারা তখন তোমার পণ্যের অনুপস্থিতিতে তোমার পণ্যকে প্রচণ্ড মিস করে।
- কিন্তু পণ্যের থেকে মানুষের মনে মানুষের অবস্থানটা তো আরও বেশি প্রগাঢ়।
- হুম।
- বুঝেছি ভাই।
- সাবধানে থেকো। আর আমার আর নূরীর জন্য দোয়া কইরো। যেন ভালো কিছু হয়।
- নিশ্চয়ই ভাই। আর আপনিও সাবধানে যাবেন।

আমি কল রাখতেই ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম বৃষ্টি কল করেছে। রিসিভ করে কানে ধরতেই সে বলে উঠলো, এত ব্যস্ত কিসের হু?
- নাঈম ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলাম। তিনি বাড়ি যাচ্ছেন।
- ও। একটু বাইরে আয়।
- কোথায় তুই?
- ছাঁদে।
- কলেজে যাসনি?
- বাইরে আসতে বলছি, বাইরে আয়। এত কথা বলিস কেন হু?
- ওকে ওকে, আসতেছি।

আমি শার্টটা খুলে একটা টি-শার্ট পড়ে বাইরে গেলাম। দেখলাম বৃষ্টি দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা আজ শাড়ি পড়ে ছাঁদে এসেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:০৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×