somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রাবণে বৃষ্টি নামে

১১ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রাবণে বৃষ্টি নামে
পর্ব-৩
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
আমি শার্টটা খুলে একটা টি-শার্ট পড়ে বাইরে গেলাম। দেখলাম বৃষ্টি দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা আজ শাড়ি পড়ে ছাঁদে এসেছে। নীল শাড়ি। হাতে কাঁচের নীল চুরি। চোখে গাঢ় কাজল। আহ, কী অপরূপ! আমি যেন চোখ ফেরাতেই পারছিলাম না। অনিমেষ নেত্রে তার দিকে চেয়ে আছি। সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো, কী দেখিস?
আমি আমতা আমতা করে বললাম, তো.. তো.. তোকে।
- এর আগে দেখিসনি মনে হয়?
- দেখেছি। কিন্তু এমন সাজে তো দেখিনি।
- এখন তো দেখলি।
- হ্যাঁ।
- ও হ্যাঁ, শোন, তোর নীল পাঞ্জাবী আছে?
- নীল, নীল, হ্যাঁ আছে।
- আমি এখানে দাঁড়ালাম। তুই দ্রুত পড়ে আয়। আর শোন...
- কী?
- না, কিছু না। যা।

আমি দ্রুত রুমে এসে টিনের বাক্স থেকে আমার নীল পাঞ্জাবীটা বের করলাম। নতুন ঘড়িটা হাতে দিলাম। জুতা রুমের বাইরেই ছিল। আমি রুম থেকে বের হয়ে জুতা পড়ে ছাঁদে যেতেই বৃষ্টি আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, জুতাটা খুলে চামড়ার স্যাণ্ডেল পড়ে আয়।
আমি বললাম, জুতাতেই তো ভালো মানাচ্ছে।
- আমার কাছে ভালো লাগছে না।
- ওকে, দাঁড়া।

আমি আবার ফিরে এসে চামড়া স্যাণ্ডেল পড়ে গেলাম। সে বললো, হুম। এবার ঠিক আছে। এখন চল।
- কোথায় যাবো?
- ক্যাম্পাসে।
- এইভাবে ক্যাম্পাসে?
- কেন? এভাবে গেলে সমস্যা কোথায়?
- না মানে লোকে আমাদের দু'জনকে এই পোশাকে দেখলে কী ভাববে?
- কী ভাববে হু?
- ভাববে আমরা দু'জন বয়ফ্রেণ্ড গার্লফ্রেণ্ড।
- তো আমরা কী?
- আজ না গেলে হয় না?
- না, হয় না। আর তুই না আমাকে আজ কাঠগোলাপ দেখাবি?
- হ্যাঁ।
- চল তাহলে।
- বৃষ্টি শোন।
- বল।
- একটু জড়িয়ে ধরি?
- না, এখন না।
- একটু্!
- না।
- আচ্ছা। চল তাহলে।
- রাগ করলি?
- না, রাগ করবো কেন?
- এইযে জড়িয়ে ধরতে দিলাম না!
- আরে না।
- ওকে ধর।
- সত্যি?
- হুম।
আমি বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরলাম। সে বললো, হয়েছে। এখন ছাড়। তোর 'একটু' জড়িয়ে ধরা শেষ। এখন চল।

আমরা দু'জন একে অপরের পাশাপাশি রাস্তার ফুটপাত ধরে হেঁটে চলেছি। আর আশেপাশের লোকজন আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। যেন তারা এমন কিছু দেখছে, যা তারা অদ্যাবধি কখনো দেখেনি। বিষয়টা আমার কাছে বেশ ভালো লাগলেও খানিকটা লজ্জাবোধও হচ্ছে। কলেজের ভেতরে ঢুকতেই একদল মেয়ে এসে আমাদের ঘিরে ধরলো। মেয়েগুলো বৃষ্টির বন্ধু। তারা সমস্বরে বলে উঠলো, তোকে আর ভাইয়াকে কিন্তু দারুণ মানিয়েছে। বৃষ্টি আমাকে তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। তারপর তাদেরকে বললো, তোরা আমার বয়ফ্রেণ্ডকে দেখতে চেয়েছিলি। দেখিয়ে দিলাম। এখন কিন্তু আর কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতে পারবি না। ওকে?
.
দুপুর বারোটা বেজে পঁচিশ মিনিট। আমি আর বৃষ্টি তপ্ত রৌদ্র মাঝে রিকশার হুড় তুলে পাশাপাশি বসে আছি। তেমন নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য নেই। একটু মিরপুর-১ নম্বরে যাবো। তারপর সেখান থেকে কিছু কাঠগোলাপ কিনে সারাদিন ঘুরাঘুরি।

রিকশা থেকে নেমে আমি মার্কেটের ভেতরে গিয়ে কিছু কাঠগোলাপ কিনলাম। তারপর বৃষ্টিকে দেখালাম। বললাম, এটাই হলো কাঠগোলাপ। একটু এদিকে ঘুর। আমি তোর চুলে গুঁজে দেই। সে ঘুরলো। আমি কাঠগোলাপগুলো তার চুলে গুঁজে দিলাম। সে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো, একটা সেলফি হয়ে যাক?
আমি বললাম, নিশ্চয়ই।

দুপুর গড়াতেই পেটটা ডেকে উঠে জানান দিলো, বাপ আমাকে কিছু খাওয়া। সেই সকাল থেকে না খাইয়ে রেখেছিস। আমি বৃষ্টিকে বললাম, তোর খিদে লাগেনি?
সে বললো, হ্যাঁ।
- চল তাহলে খেয়ে নেই আগে। তারপর না হয় ঘুরাঘুরি করা যাবে।

দু'জনে রিকশা করে আবার মিরপুর দুই'য়ে ব্যাক করলাম। তারপর "পূর্ণিমা রেস্তোরায়" ঢুকে পেটটাকে শান্তি করালাম। এখান থেকে আমাদের বাসাটা বেশি দূরে নয়। এদিকে আমার বেশ ক্লান্ত লাগছে। আমি বৃষ্টিকে বললাম, চল বাসায় যাই। সন্ধ্যায় ছাঁদে বসে গল্প করা যাবে।
সে আমার কথায় সম্মতি জানালো। বললো, হ্যাঁ চল। শরীরটা বড্ড ক্লান্ত।

রেস্তোরা থেকে বের হয়ে দু'জনে বাসার দিকে হাঁটতে থাকলাম। এই সময়টাতে রাস্তায় মানুষজন কম থাকে। এমনিতেই গরমকাল। তাছাড়া রোদের তাপটাও বেশ দারুণ। বৃষ্টিকে তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমি উপরে চলে এলাম। পাঞ্জাবী, ঘড়ি খুলে বিছানার উপর রেখে বোতল থেকে ঢকঢক করে কয়েক ঢক পানি পান করলাম। রান্নাঘরে উঁকি দিতেই দেখলাম খালা এসে সকালের রান্নাটা করে গিয়েছেন। ভাবলাম এখন ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দিয়ে সন্ধ্যায় উঠে খাবারগুলো খাওয়া যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ফ্রেশ হয়ে এসে লম্বা একটা ঘুমের প্রস্তুতি নিলাম।

সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙলো ফোনের শব্দের। ঘুম ঘুম চোখে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম নাঈম ভাই কল করেছেন। আমি রিসিভ করতেই তিনি বললেন, সরি ভাই বাড়িতে পৌঁছেই কল করতে না পারার জন্য।
আমি বললাম, আরে আরে এতে সরি বলতে হবে কেন? আর আংকেল আন্টি কেমন আছেন?
- হ্যাঁ, আলহামদুলিল্লাহ। তোমার ওখানে সব ঠিকঠাক আছে তো?
- হ্যাঁ ভাই, সব ঠিকঠাক।
- বৃষ্টি কেমন আছে?
- আজ ঘুরতে বের হয়েছিলাম।
- তাই নাকি?
নাঈম ভাইয়ের সাথে আরও কিছুক্ষণ আলাপ করে ফোন রাখলাম।

সন্ধ্যায় আর ছাঁদে আসেনি বৃষ্টি। হয়তো ক্লান্ত থাকার কারণে চোখে ঘুমটা একটু চেপে বসেছিল। আমিও আর কল করিনি। এর মাঝে খালা এসে রান্না করে গেলেন। আর বললেন, মামা সকালের খাবার খাননি? নষ্ট হয়ে গেল তো!
.
আজ রাতেও আকাশে জ্যোৎস্না উঠেছে। আমি আর বৃষ্টি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি। কেউ কোনো কথা বলছি না। অবশ্য এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতেও মন্দ লাগছে না। নিরবতা ভেঙে বৃষ্টি বললো, শ্রাবণ তুই গিটার বাজাতে পারিস?
আমি বললাম, না। কেন?
- আমি পারি।
- সত্যি?
- হ্যাঁ।
- তাহলে একদিন গানের আড্ডা হয়ে যাক।
- একদিন মানে কী হ্যাঁ? আজই হবে। তুই একটু অপেক্ষা কর। আমি নীলাকে গিটারটা আনতে বলি। সে নীলাকে কল করার কিছুক্ষণ পর নীলা এসে একটা গিটার দিয়ে প্রস্থান করলো। সে যেতেই বৃষ্টি বললো, গান তো পারিস।
- তা পারি।
- তাহলে তুই গাইবি। আর আমি বাজাবো।

আমি গান গাইতে লাগলাম,
"মেয়ে তোমারই সাথে বৃষ্টি দিনে হলো একটু আলাপন।
তাই হঠাৎ করে আজ জাগলো মনে অদৃশ্য শিহরণ।"
গান শুনে সে বললো, আমাকে নিয়ে লেখা?
- হুম।
- তুই গান লিখিস?
- একটু আধটু।
- বাহ, দারুণ তো!
- সামনে পহেলা বৈশাখ, ঘুরতে যাবি না কোথাও?
- নিশ্চয়ই যাবো।
- কোথায় যাবি, ভেবেছিস?
- কোথায় আর! এই লাভরোড, মন্দিরের সামনের রোড, এইতো।
- দূরে কোথাও যাবি না?
- দূরে ঘুরাটা পছন্দ না আমার। তাছাড়া কবি কী বলেছে জানিস?
- কী?
- "বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করে বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মিলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু।"
- সুন্দর তো!
- কী?
- কবিতাবৃত্তি।
- তুই শুধু আবৃত্তিটাই দেখলি। কবিতার কথাগুলো দেখলি না।
- দেখেছি তো। আর তাইতো আমরা বাড়ির কাছেই ঘুরাঘুরি করবো। পিচঢালা পথে শিশির খুঁজবো।
বৃষ্টি আমার চুল টেনে হেসে বললো, এইতো বুঝেছিস তাহলে। আর প্রেমকে মন দিয়ে উপলব্ধি করলে পিচঢালা পথেও শিশির বিন্দু পাওয়া যায়।
- আমি কিন্তু গতরাতে শিশির বিন্দু পেয়েছিলাম।
- কোথায়?
- এইযে আমাদের বাসার সামনের এই মিল্ক ভিটা রোডে।
- কখন? আর কিভাবে?
- গতরাতে যখন তোর হাঁত ধরে হাঁটছিলাম।
- কই? আমি তো তখন শিশির বিন্দু দেখতে পাইনি!
- তুই কিভাবে দেখতে পাবি? নয়ন কি কখনো নয়নকে দেখতে পারে?
- মানে?
- অত বুঝে কাজ নেই।
- তুই না সব কথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলিস। সোজাসুজি বললে কী এমন হয় যে, আমিই তোর সেই শিশির বিন্দু?
- প্রেমিকার সাথে কখনো সোজাসুজি কথা বলতে নেই।
- অভিজ্ঞতা আছে নাকি?
- এই না না, একদম না।
- সে জানি। নাঈম ভাই আমাকে বলেছেন।
- কী বলেছেন?
- তোর প্রেম বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
- ও।
- নাঈম ভাইকে তুই অনেক ভালোবাসিস তাইনা?
- হয়তো!
- আচ্ছা শ্রাবণ, আবার কবে বৃষ্টি আসবে বল তো?
- আমার আকাশে রোজই মেঘ জমে, রোজই বৃষ্টি নামে। তাই আর ঐ বৃষ্টির দরকার নেই।
- আমার দরকার আছে।
- কেন?
- তোর সাথে ভিজবো। তোকে জড়িয়ে ধরে ভিজবো। দু'জন বৃষ্টির জলে লেপ্টে যাবো।
- আহা আহা, কী প্রণয়ানুভূতি গো!
- মজা করিস না।
- আচ্ছা দেখি, আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি কবে বৃষ্টি আসতে পারে!
- দেখ।
- চৈত্রের শেষে অর্থ্যাৎ বৈশাখের প্রথম দিনে।
- কি?
- হ্যাঁ।
- তাহলে আমরা ঐদিন ঘুরবো কী করে?
- কী করে আবার? বৃষ্টি ভিজে ভিজে ঘুরবো। ঘুরার কালে তুই ইচ্ছে করেই পায়ে ব্যথা পাবি। অতঃপর আমি তোকে কোলে করে ভিজবো।

দেখলাম বৃষ্টি মন খারাপ করে বসে আছে। বললাম, আরে আরে এমন কিছুই হবে না। বৈশাখের দিন কোনো বৃষ্টিই হবে না। দেখিস।
- হোক। আমি চাই বৈশাখের দিনে বৃষ্টি হোক।
- কেন? এখন আবার বৃষ্টি চাস কেন?
- তুই আমাকে কোলে করে বৃষ্টিতে ভিজবি সেজন্য।
- প্রেম, প্রেম গো তোমাকে পেয়ে আমি এই রঙিন ধরণীতে আরও হাজার বছর বাঁচতে চাই।
প্রসঙ্গ পাল্টে বৃষ্টি বললো, রাতে খেয়েছিস?
- না। খালা রান্না করে রেখে গিয়েছেন। ঘুমানোর আগে খাবো।
- রাত কত হলো?
আমি মোবাইলে সময় দেখে বললাম, বারোটা বাজতে চললো।
- আজ তাহলে যাই। তুই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। কেমন?
- আরেকটু থাক না!
- কাল আবার।
আমি আর না করলাম না। এমনিতেই অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। বাসা থেকে আন্টি বকা দিতে পারে।
.
আজ চৈত্রের শেষ দিন। আকাশটা মেঘলা। সম্প্রতি পূর্বের মতো এখন আর চৈত্র মাসে তেমন ঝড় ঝঞ্ঝা পরিলক্ষিত হয় না। তবে আজ ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এদিকে কাল রাতে নাঈম ভাই কল করে জানালেন তার আর নূরী আপুর বিয়ের কাজটা খুব ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আমাকে তার বিয়েতে ইনভাইট করতে পারেননি বলে দুঃখও প্রকাশ করলেন। বললেন, আপাতত বিয়েটা করে রাখলাম। যখন তোমার ভাবিকে তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসবো। তখন তোমাকে ইনভাইট করবো। এখন ঘরোয়াভাবেই বিয়ের কাজটা সেরে রাখলাম। আর শোনো আগামীকাল ঢাকাতে ব্যাক করছি।
ঘড়ির কাটাতে সকাল দশটা বাজে। চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। খুব বড় ধরনের ঝড় হওয়ার আশঙ্কা আছে।

আমি তখনো ঘুম থেকে উঠিনি। বৃষ্টি কল করে বলছে, শ্রাবণ আজ আকাশটা বেশ মেঘলা। আজ কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজতে হবে। তখন সকাল সাতটা কি আটটা হবে!

খানিক বাদেই চারিদিক শব্দ করে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। সাথে ঝড়ো হাওয়া। আমি ছাঁদেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। দ্রুত রুমে গিয়ে জানালাগুলো বন্ধ করে রুমেই বসে রইলাম। বাতাস না বইলে বৃষ্টিতে ভেজা যেত। কিন্তু এখন তা সম্ভব না। আমার রুমের উপরে টিন দেওয়া। তাই বৃষ্টি হলে ঝনঝন শব্দ করে চারিদিক মুখরিত হয়ে ওঠে। এর মাঝে ফোনটা অনবরত বেজেই চলেছে। অথচ আমি টেরই পাইনি। হঠাৎই বালিশের উপর চোখ পড়তে দেখলাম কেউ কল করেছে। বালিশের উপর থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম বৃষ্টির কল। আমি রিসিভ করলাম। সে বললো, বাইরে দারুণ বৃষ্টি হচ্ছে। তুই অপেক্ষা কর। আমি আসছি।
- এই না না, আসার দরকার নেই। বাইরে বৃষ্টি না, বরং ঝড় হচ্ছে।
নাহ, আমার এই কথাটা তার কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। তার আগেই সে কল কেটে দিয়েছে। আমি জানি সে সত্য সত্যই বৃষ্টিতে ভিজতে উপরে চলে আসবে। এই পঁচিশ দিনে মেয়েটাকে এবং মেয়েটার চালচলনকে খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করা হয়ে গিয়েছে। সে যখন বলেছে সে আসবে। তো সেই আসবেই। হাজার ব্রেন ওয়াশ করলেও সে কারো কথা শুনবে না।

আমি রুমের দরজা খুলে বাইরে তাকিয়ে আছি। খানিকবাদেই ছাঁদের গেট খোলার শব্দ হলো। দেখলাম বৃষ্টি ছাঁদে এলো। আমাকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে বললো, ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এদিকে আয়।
- না, আমি আজ ভিজবো না। ঝড় হচ্ছে বাইরে।
- কী? ঝড়? কোথায় ঝড়?
বাতাস ততক্ষণে কিছুটা কমে এসেছে। তবে এখনো যা আছে। তাতে কিছুক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজলেই ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করবে। আমি বললাম, ওকে তুই দাঁড়া। আমি আসতেছি।
- এভাবেই আয়।
- না না, হাফ প্যান্ট পড়ে আছি। এভাবে যাওয়া যাবে না। বরং লুঙ্গি পড়ে আসি।
- না, তুই এভাবেই আয়।

আমি তার কথায় বাধ্য। অগত্যা আমাকে এভাবেই যেতে হলো। আমি তার কাছে গিয়ে বললাম, দেখিস আজ ভিজলে কালই তোর জ্বর আসবে। তখন তো আর ইচ্ছে হলেও আমি তোকে দেখতে যেতে পারবো না। আন্টি কী ভাববে না ভাববে!
- আন্টি যা ভাবে ভাবুক। তুই আমার কলেজের ফ্রেণ্ড হয়ে যাবি।
- হুম।
- শ্রাবণ তোর সেদিনের কথা একটুর জন্য মিস্টেক হয়ে গেল।
- কোন কথা?
- ঐযে বলেছিলি বৈশাখের প্রথম দিনে বৃষ্টি হবে। কিন্তু দেখ আজ বৈশাখের আগের দিন।
- হ্যাঁ, আর এজন্যই আজ তোকে কোলে করে ভেজা হলো না।
- কে বলেছে হলো না। তোকে কে না করেছে আমাকে কোলে করে ভিজতে?
- লজ্জা লাগে যে!
- লজ্জা লাগলে থাক।
- ট্রাই করি।
- কর।

বৃষ্টির চুলগুলো বৃষ্টির পানিতে তার মুখে লেপ্টে আছে। আমি সেগুলো তার কানে গুঁজে দিয়ে তাকে কোলে করলাম। এমন মুহুর্ত যেন এ ধরায় দারুণ বিরল। সে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। ওদিকে ছাঁদের গেট এপাশ থেকে বন্ধ থাকার কারণে কেউ ছাঁদে আসতে পারছে না। সবাই গেটে টোকা দিয়ে চলে যাচ্ছে। যখন বৃষ্টিকে কোল থেকে নামিয়ে দিলাম। তখন সে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে গভীর চুম্বনে আমাকে ভরিয়ে দিলো। অনেকটা সময় কেটে গেল। দু'জনের ঠোঁট তখনো দু'জনের ঠোঁটে নিমজ্জিত। শরীরে একটু শীত শীত অনুভূত আর বৃষ্টির বেগ খানিকটা কমতেই সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে দৌঁড়ে ছাঁদ থেকে নেমে গেল।
.
রাতে আমার ভীষণ জ্বর এলো। বিছানা থেকে মাথাটা তুলতেই পারছি না। সন্ধ্যায় রান্না করতে এসে খালা আমাকে বেশ কয়েকবার ডাক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, মামা আজ কী রান্না করবো?
আমি কিছুই বলতে পারিনি। কেননা তখন থেকে মাথা ব্যথা আর সর্দি শুরু হয়েছিল। রুমে কিছু মাথা ব্যথার ঔষুধ ছিল। সেগুলো খেয়েই ঘুমিয়ে ছিলাম। যখন ঘুম ভাঙলো, তখন বুঝলাম জ্বরটা খুব পাকাপোক্ত ভাবেই আমার উপরে চেপে বসেছে। রাতের খাবারটা আর খাওয়া হয়নি। বালিশের পাশে থাকা মোবাইলটা অনেকবার বেজে বেজে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। হয়তো নাঈম ভাই, নয়তো বৃষ্টি, নয়তো বাড়ি থেকে কল এসেছিল। কেননা এই তিন জায়গা ছাড়া আমার ফোনে কখনো কল আসে না।

সকালে যখন ঘুম ভাঙলো। তখন দেখলাম আমি বৃষ্টির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি। মেয়েটা আমাকে জলপট্টি করে দিচ্ছে। আমাকে চোখ খুলতে দেখেই সে বললো, তোর জ্বর এসেছে আর আমাকে একবারও জানানোর প্রয়োজন বোধ করিসনি?
আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই সে বলে উঠলো, হয়েছে। এখন কোনো কথা বলতে হবে না। নিচ থেকে মেডিসিন আনিয়েছি। সেগুলো খেলেই একটু সুস্থ হবি।
আমি ভাঙা গলায় বললাম, তুই রুমে ঢুকলি কী করে?
সে বললো, রাতে তুই রুম লক না করেই ঘুমিয়ে পড়েছিলি।

আমার মাথাটা বালিশের উপর রেখে সে টেবিলের উপর থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে এলো। সেখানে কিছু পেয়ারা আর রুটি ছিল। সে বললো, পেয়ারাগুলো পরে খাবি। এখন রুটি খেয়ে ঔষুধগুলো খাবি। আমি চুলার উপর থেকে দুধটা নামিয়ে নিয়ে আসি।
সে রুম থেকে বের হয়ে রান্নাঘর থেকে দুধ সমেত একটা পাতিল নিয়ে এলো। তারপর আমাকে উঠে বসতে বলে সে একটা বাটিতে দুধটুকু ঢেলে তাতে কিছু চিনি মিশিয়ে দিল। আমি উঠে বসলে সে বললো, এবার রুটিটা এই দুধের মধ্যে চুবিয়ে চুবিয়ে খা।
আমি বললাম, সবই যখন করলি। তবে খাইয়ে দেওয়াটা আর বাদ রাখবি কেন? রুটিটাও তুই খাইয়ে দে।
এদিকে মাথাটাও কিছুটা হালকা হয়ে এসেছে। বৃষ্টি আমাকে রুটি খাইয়ে দিতে লাগলো। এর মাঝে কে যেন রুমের দরজায় নক করলো। আমি বৃষ্টিকে বললাম, তুই বস। আমি খুলে দিচ্ছি।
সে বললো, না। তোর উঠতে হবে না। আমিই খুলেই দিচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:০১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×