somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রাবণে বৃষ্টি নামে

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রাবণে বৃষ্টি নামে
পর্ব-৫ (শেষ পর্ব)
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
মেয়েটা বোধ আমার কলের অপেক্ষাতেই বসে আছে। কিন্তু তার নাম্বার ওয়েটিং দেখাচ্ছে। আমি নাঈম ভাইকে কল করলাম। তিনি রিসিভ করে বললেন, পৌঁছে গিয়েছো?
আমি বললাম, জ্বী ভাই।
- আংকেল আন্টিকে আমার সালাম জানিয়ো।
- জ্বী ভাই।

ভাইয়ের সাথে কথা শেষ করে বৃষ্টিকে কল করলাম। তখনো ওয়েটিং দেখাচ্ছে। আমার একটুও ভালো লাগছে না। সে কি টের পাচ্ছে না যে, আমি তাকে কল করছি? আমি বেশ কয়েকবার তাকে কল করার পর ফ্রেশ হতে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি ফোনটা অনবরত বেজেই চলেছে। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম বৃষ্টি কল করেছে। আমি রিসিভ করতেই সে বললো, সরিরে। একদম সরি। আমি টের পেয়েছিলাম তুই কল করেছিস। কিন্তু আমি ধরতে পারিনি। কেননা আমি তখন আম্মুর সাথে কথা বলছিলাম।
- ও। আমি বাড়ি পৌঁছে গিয়েছি।
- আংকেল আন্টি কেমন আছেন?
- আলহামদুলিল্লাহ। আর শোন, একটুও চিন্তা করবি না আমাকে নিয়ে। কেমন?
- শ্রাবণ।
- হ্যাঁ বল।
- আম্মু কল করে বললো বাড়ি যেতে। তাছাড়া এখন তুইও নেই।
- ভালো তো, ঘুরে আসতে পারিস। আর ঢাকাতে ব্যাক করবি কবে?
- আজ গেলে দশ বারো দিন পরে।
- তাহলে আজই যা। আমারও ঢাকায় ব্যাক করতে দশ বারো দিন লেগে যাবে।
- যাবো?
- হ্যাঁ যা।
- শিওর?
- একদম শিওর।
- শ্রাবণ।
- হ্যাঁ বল।
- ভালোবাসি তোকে।
- আমিও।
- আমিও কী?
- ভালোবাসি তোকে।
- আচ্ছা তাহলে আজই রওনা দেই।
- এই না না, একদম না।
- কী না?
- আজ রওনা দিস না। পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে যাবে।
- তাহলে?
- কাল সকালে রওনা দিস।
- হ্যাঁ, ভালো বলেছিস।
- বৃষ্টি।
- হু।
- বাড়ি গিয়ে আমাকে আবার ভুলে যাস না যেন।
- এ প্রাণ থাকতে নয়।
- তাই যেন হয়।

পরদিন সকালে সে বাসে উঠে আমাকে কল করে বললো, রওনা দিয়েছিরে। দোয়া করিস।
- নিশ্চয়ই। আর বাড়ি পৌঁছেই কিন্তু কল করবি।
- আচ্ছা।

সন্ধ্যের খানিক আগে সে আমাকে কল করে বললো, শ্রাবণ আমি পৌঁছে গিয়েছি। তুই টেনশন করিস না। আর শোন ঠিক বারো দিন পর তুই ঢাকায় ব্যাক করবি। আমি যেন বারো দিন পর তোকে ঢাকায় পাই। ওকে?
আমি বাধ্য ছেলের মতো 'হ্যাঁ' বললাম। যদিও বারো দিনের আগেই ব্যাক করবো। কেননা ওদিকে নাঈম ভাই রুমে একা একা কী করবেন না করবেন! তিনি যখন বাড়ি গিয়েছিলেন। তখন তো আমার সঙ্গী হিসেবে বৃষ্টি ছিল। কিন্তু এখন আমি বাড়ি এসেছি। আর তার সঙ্গী যিনি আছেন। তিনি তো চাঁদপুরে। নাহ! অতি শীঘ্রই ফিরতে হবে।
.
মেঠো পথ। পথের দুই ধারে মেহগনি গাছ। আকাশে আজ ইয়া বড় একটা জ্যোৎস্না উঠেছে। আজ কি তাহলে শুক্লপক্ষের পঞ্চদশ তিথির রাত? হবে হয়তো! তাছাড়া জ্যোৎস্নার এত আলো আসবে কী করে? ইশ! কত প্রবৃত্তি ছিল এই পূর্ণিমা রাতে বৃষ্টির হাত ধরে পিচঢালা পথে হাঁটার। মাঝে মাঝে বেখেয়ালি কুকুরের ডাকে ভয় পেয়ে সে আমাকে জড়িয়ে ধরবে। আমি অভয় দিয়ে বলবো, আরে আরে কত্ত ভয়! আমি থাকতে তোর ভয় কিসের? সে বাচ্চাদের মতো করে বলবে, এতরাতে কুকুরগুলো কী করে রাস্তায়? তুই ওদেরকে কিছু বলতে পারিস না? বলতে পারিস না যে, আমার বৃষ্টি তোমাদেরকে ভয় পায়?

হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর চলে এসেছি। হঠাৎই পেছন থেকে ছোট ভাইয়ের গলার আওয়াজ শোনা গেল। সে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে এসে একটু দম নিয়ে বললো, ভাইয়া ভাইয়া আম্মু আপনাকে ডাকে।
আমি বললাম, তুই এতরাতে এখানে? কিভাবে আসলি?
- আম্মুর হুকুম। আপনাকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। তাছাড়া আপনি বাড়ি এলেই এদিকে ঘুরতে বের হন। সে তো আমি জানি।
- হুম। চল তাহলে।

বাড়ি ফিরলে আম্মু বললো, রাত কয়টা বাজে সে হিসেব আছে তোর? রাত বিরাতে এত বাইরে কী হ্যাঁ?
আমি মোবাইলে সময় দেখে নিলাম। তারপর আম্মুকে বললাম, কেবল মাত্র দশটা বাজে।
- মাত্র দশটা বাজে? না?
- হ্যাঁ। মাত্রই তো!
- এটা তোর ঢাকার শহর না। এটা গ্রাম। সন্ধ্যা হলে বাড়ির বাইরে বের হতে পারবি না।
- বের হলে কী কোনো ক্ষতি আছে?
- আচ্ছা বের হস। কিন্তু খেয়ে তো বের হবি নাকি?
- তা মন্দ বলোনি।

আমি ভাত খাচ্ছি। হঠাৎই আম্মু আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, তোর মোবাইলে একটা মেয়ের ছবি দেখলাম। মেয়েটা কে রে?
মায়ের মুখে এমন কথা শুনে বিষম খেলাম। আম্মু পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো, এত তাড়াহুড়া করে খাওয়ার কী আছে?
আমি বললাম, কো.. কো... কোন মেয়ে?
- ঐযে তোর সাথে দাঁড়িয়ে ছবি উঠা।
- কে দেখালো তোমাকে?
- সোহাগ।
আমি ছোট ভাইয়ের দিকে তাকাতেই সে বললো, না না ভাইয়া। আমি দেখাইনি।
আমি বললাম, তোকে মোবাইল দেই গেম খেলার জন্য। গ্যালারিতে ঢুকার জন্য না।

আম্মু ছবি দেখে বললেন, মাশাল্লাহ। মেয়েটা কে?
- বান্ধবী।
- পছন্দ করিস নাকি?
আমি "হ্যাঁ" সূচক মাথা ঝাঁকালাম। আম্মু বললো, বাড়ি কোথায়?
- নাটোর।
- তোর দাদির বাড়িও তো নাটোর।
- হুম।
- নাটরের কোথায়?
- গুরুদাসপুর।
- গুরুদাসপুর? গুরুদাসপুরের কোথায়?
- হ্যাঁ। চাঁচকৈর।
- বাহ! বেশ তো। তোর আব্বাকে বলি?
- না না। সময় হলে আমি তোমাকে জানাবো।

কী সাংঘাতিক কথারে বাবা! আব্বা যদি জানতে পারে, ঢাকার শহরে গিয়ে আমি পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে পিরিতি করে বেড়াচ্ছি। তবে গায়ে হাত তুলবে না, কিন্তু টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেবে। তখন আমার সব যাবে।
.
বাড়িতে আসার পর বৃষ্টির সাথে দিনে একবার করে কথা হয়। প্রতিদিন বিকেল চারটার দিকে তার সাথে কথা বলি। কথা বলার সময়টাও বেশি নয়। এই দশ থেকে পনেরো মিনিট হবে! আজ তার সাথে কথা বলার সময় সে বললো, শ্রাবণ একটা সমস্যা হয়ে গিয়েছে।
আমি বললাম, কী সমস্যা?
সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে। তার কোন বন্ধুর ছেলে না কে যেন আছে, তার সাথে।
- এখনই বিয়ে কেন?
- ছেলেপক্ষরা বলছে এখন বিয়েটা পড়িয়ে রাখি। মেয়ের অনার্স শেষ হলে তুলে নিয়ে যাবো।
- আংকেল কী বললেন?
- আব্বু আর কী বলবে? সে তো রাজি। শত হলেও তার বন্ধুর ছেলে বলে কথা!
- তুইও রাজি?
- বাবার অমতে যাইনি কখনো। আমি কী করবো বল?
- বৃষ্টি আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো নারে।
- আমিও যে পারবো না।
- তুই দেখ বাড়িতে যেমন তেমন করে ম্যানেজ করতে পারিস কিনা। আর দেখ কাল পরশুর মধ্যে ঢাকায় ব্যাক করা যায় কিনা।
- আচ্ছা আমি এখন রাখি। আব্বু এদিকেই আসছে।

বৃষ্টি ফোন রেখে দিল। আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম। বৃষ্টিকে ছাড়া আমি কেমন করে থাকবো? তাকে ছাড়া যে আমার এক মুহুর্তও চলবে না। আমার বৃষ্টি অন্যের আকাশে মেঘ হয়ে ভাসবে। আমি তা মেনে নিতে পারবো না। প্রেম, প্রেম গো। তোমাতে এত কষ্ট কেন? তুমি সুখের ভূবনে অসুখ হইয়ো না। আমি সইতে পারবো না গো। ও প্রেম!
আব্বাকে কি বৃষ্টির ব্যাপারে কিছু বলা উচিত? বললে তিনি হয়তো একটা ব্যবস্থা করতে পারবেন। তাছাড়া আমার দাদির বাড়িও বৃষ্টিদের এলাকায়। কিন্তু আব্বাকে বলার পরে যদি হিতের বিপরীত হয়ে যায়? আমি এখন কী করবো? কিছুই মাথায় ঢুকছে না আমার। নাঈম ভাই! নাঈম ভাইকে কল করি। তিনি একটা উপায় বের করতে পারবেন। কেননা আমার দেখা সকল মানুষের মধ্যে তিনিই একজন মানুষ, যিনি সর্বসময় শান্ত থাকেন এবং অনেক জ্ঞানী একজন ব্যক্তি।

রাতে নাঈম ভাইকে কল করলাম। তিনি রিসিভ করে বললেন, কেমন আছো শ্রাবণ?
- ভাই একটু ঝামেলার মধ্যে আছি।
- সকালেই না ভালো ছিলে!
- হ্যাঁ। কিন্তু ঝামেলা হয়েছে বিকেলে।
- কী হয়েছে?
- আপনি আমাকে বলেন যে, আমি এখন কী করবো?
- আরে বাবা কী হয়েছে সেটা বলবে তো!
- বৃষ্টির বাবা বৃষ্টির বিয়ে ঠিক করেছে।
- কি?
- হ্যাঁ ভাই।
- বৃষ্টির মত কী?
- সে বললো সে তার বাবার মতের বিরুদ্ধে যায়নি কখনো।
- এদিকে তো তোমারও পড়ালেখা শেষ হয়নি।
- আমি এখন কী করবো বলেন? আমার কিছুই ভালো লাগছে না।
- তোমাকে এই বিষয়টা আমি তোমাদের সম্পর্ক শুরুর দিকেই বলতে চেয়েছিলাম যে, তোমাদের এই এক বছর আগ-পাছ বয়সের সম্পর্কের পরিণাম খুবই করুণ।
- ভাই।
- আচ্ছা আমাকে ভাবতে দাও। আমি পরে তোমাকে কল করছি।

নাঈম ভাই ফোন রাখলেন। এদিকে আমার মাথাটা প্রচণ্ড ব্যথাচ্ছে। এখন একটু রেস্ট না নিলে আমি মারা যাবো। আমাকে আজ এত দ্রুত ঘুমাতে দেখে আম্মু বললো, কিরে? কোনো সমস্যা? আজ এত দ্রুত ঘুমাতে আসলি যে?
- আম্মু মাথাটা একটু টিপে দাও তো। ব্যথা করছে খুব।
আম্মু মাথা টিপে দিতে লাগলেন।
.
পরদিন সকালে ফোনের রিংটোনে ঘুম ভাঙলে দেখলাম বৃষ্টি কল করেছে। আমি তাড়াতাড়ি রিসিভ করে কানে ধরতেই সে বললো, শ্রাবণ আমি আজই ঢাকায় ব্যাক করতেছি। তুইও চলে আয়।
- তোর বাবা?
- কেউ কিছু টের পাবে না। আগে ঢাকাতে যাই। তারপর ওখান থেকে সবকিছু ম্যানেজ করা যাবে।
- ওকে। তাহলে আমি আজই রওনা দিচ্ছি।
- হ্যাঁ।

দুপুরে নাঈম ভাই কল করে বললেন, এক কাজ করতে পারো। তুমি তোমার বাবাকে বলে বৃষ্টির বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাও। যদি তারা রাজি না হয়। তবে বৃষ্টিকে নিয়ে পালিয়ে চলে আসো। বাকিটা আমি দেখছি।
- ভাই আপাতত একটা সমাধান হয়েছে। আমি আজই ঢাকায় ফিরতেছি। ওদিকে বৃষ্টিও ফিরতেছে।
- তাহলে তো ভালোই হলো।
- হ্যাঁ ভাই।
- ওকে তোমরা আসো। তারপর যা করতে হয়। আমি করবো।
- ধন্যবাদ ভাই।

আমাকে ব্যাগপত্র গোছাতে দেখে আম্মু বললো, কিরে ব্যাগ-ট্যাগ গুছাচ্ছিস কেন?
আমি বললাম, আম্মু আজই আমাকে ঢাকায় ফিরতে হবে।
- মাত্র তো ক'দিন হলো এলি।
- তবুও ফিরতে হবে।
- কোনো জুরুরি দরকার হলে যা। আমি বাঁধা দেবো না।
- হ্যাঁ আম্মু।

সকালের গাড়িতেই ঢাকার দিকে যাত্রা শুরু করলাম। আজ জানালার পাশে সিট পড়েনি। কাউন্টারে জানালার পাশে কোনো সিট ছিল না। যা ছিল একেবারে পেছনের দিকে। আমার পাশে যে ভদ্রলোক বসে আছেন। মনে হয় না উনাকে বললে উনি আমাকে জানালার পাশে বসতে দেবেন। তবুও একটু বলে দেখা দরকার। আমি গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম, আংকেল কিছু মনে না করলে আমি কি জানালার পাশে বসতে পারি?
তিনি ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, আমাকে তোমার কোন দিক দিয়ে আংকেল মনে হয়? আর জানালার পাশে বসবে? যদি আংকেল না বলে ভাই বলতে, তবে একটু চিন্তা ভাবনা করে দেখতাম।
আমি আর কথা বাড়ালাম না। সিটটা একটু বেশি করে ভেঙে হেলান দিয়ে বসে রইলাম।

বাস তখন ফুড ভিলেজে বিশ মিনিটের যাত্রা বিরতি দিয়েছে। আমি বাস থেকে নেমে বৃষ্টিকে কল করলাম। কিন্তু নাম্বার সুইচ অফ। বেশ কয়েকবার কল করলাম। প্রতিবারই সুইচ অফ বলছে। যাত্রা বিরতি শেষ হলে বাস আবারও পূর্বের মতো চলতে শুরু করলো। এদিকে আমি বৃষ্টির ফোনে কল করেই যাচ্ছি। কিন্তু তাকে ফোনে পাচ্ছি না। বরাবরের মতোই তার নাম্বার বন্ধ দেখাচ্ছে।
.
সন্ধ্যার একটু আগে ঢাকাতে পৌঁছালাম। বাস থেকে নেমে বৃষ্টিকে কল করলাম। রিং হচ্ছে। খানিকপর সে রিসিভ করে বললো, শ্রাবণ আমি যেতে পারিনিরে। আব্বুকে ম্যানেজ করতে পারিনি। তাছাড়া আমি যখন ব্যাগ গুচ্ছিলাম। তখন আব্বু এসে জিজ্ঞেস করলো কোথাও যাচ্ছি কিনা!
- বৃষ্টি তুই ছাড়া আমার আকাশে মেঘ হবে কে বল? তুই ছাড়া আমি মরে যাবোরে।
- এসব বলিস না প্লিজ। আমি কিন্তু কান্না করে দেবো।

আমার চোখ দু'টো জলে ছলছল করছে। শ্রাবণের আকাশে আজ সঘন মেঘের আনাগোণা। এখনই নিশ্চুপ শব্দে বৃষ্টি নামতে পারে। আমি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ দু'টো মুছে বাসার দিকে রওনা দিলাম।

রুমের দরজায় নক করতেই নাঈম ভাই বললেন, দরজা খোলাই আছে। ভেতরে এসো।
আমি ভেতরে ঢুকে ভাইকে জড়িয়ে ধরলাম। তিনি বললেন, আরে আরে কাঁদছো কেন? কী হয়েছে?
- ভাই বৃষ্টি অন্যের হয়ে যাচ্ছে। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।
- তুমি কি বাচ্চা মানুষ নাকি? অনার্সে পড়ো তুমি। বাঁচতে পারবো না, এসব কী কথা? এসব কথা তো বাচ্চারা বলে।
আমি নিজের বিছানায় এসে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসলাম। নাঈম ভাই বললেন, তুমি একদম টেনশন করবে না। দেখবে এমনটা কিছুই হবে না। তোমার বৃষ্টি তোমারই থাকবে।

ইশান কোণে মেঘ জমেছে। এই মেঘে বৃষ্টি আসে না। কিন্তু আমার মনে আজ তুফান বয়ে যাচ্ছে। রাত দশটা নাগাদ বৃষ্টিকে কল করলাম। রিং হতেই সে কেটে দিলো। খানিক পরে একটা মেসেজ এলো, আব্বু-আম্মু আমার সামনে বসে আছে। এখন ফোন ধরা যাবে না।
আমি রিপ্লাই করলাম, বৃষ্টি তুই আমাকে ছাড়া থাকতে পারবি তো?
কোনো উত্তর এলো না।
.
একটা মাস কেটে গিয়েছে। বৃষ্টির সাথে আমার কথা হয় না। তাকে কল করলে তার নাম্বার বন্ধ দেখায়। দু'টো নাম্বারই বন্ধ। ফেসবুকেও এক্টিভ নেই। প্রথম কয়টা দিন তার চিন্তায় খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলাম। পরে নাঈম ভাইয়ের কড়া শাসনের কাছে আমাকে হার মানতে হয়েছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠি। রুমেই থাকি। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাই না। বাজার সদাই নাঈম ভাই-ই করেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে আর রাতে ঘুমানোর পূর্বে তিনি নিয়ম করে আমাকে বিভিন্ন সফল ব্যক্তিদের জীবন কাহিনী শোনান। আমি জানি তিনি আমাকে এগুলো কেন শোনান! পাছে যদি আমি নিজের কোনো ক্ষতি করে ফেলি?

এই একটা মাসে আমি একদিনও ছাঁদে যাইনি। মাঝে মাঝে নাঈম ভাই আমাকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে বের হন। কিন্তু ছাঁদে যাওয়ার কথা বললেই আমি না করে দেই। আজ কী মনে করে যেন ছাঁদে এসেছি। আনমনে রাস্তার গাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎই কেউ একজন আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। আমি ঘুরে তাকাতেই দেখলাম বৃষ্টি। রিক্ত হৃদয় যেন প্রেম ফিরে পেলো। শ্রাবণে যেন আজ ঝুম বৃষ্টি নামলো।
বৃষ্টি তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম তাকে। অনেক্ষণ জড়িয়ে থাকার পর সে বললো, শ্রাবণ আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমি এখন অন্যকারো।
আমি তৎক্ষণাৎ তাকে ছেড়ে দিলাম। সে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিচে চলে গেল। আমি তাকে ডাকতে গিয়েও ডাকতে পারলাম না।

রুমে ফিরে এসে টেবিলের উপর থাকা ছুঁড়িটা হাতে নিয়ে বাঁ হাতে সজোরে চালিয়ে দিলাম। শুনেছি নিজের ক্ষতি করলে যে কষ্ট পাওয়া যায়, তাতে বিরহ বেদনা কিছুটা হলেও লাঘব হয়। আমার হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে। নাঈম ভাই তখন পাশেই বসে ছিলেন। ল্যাপটপে কী যেন করছিলেন। আমার এমন অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত উঠে এসে আমার হাত চেপে ধরলেন। বললেন, এ কী করলে শ্রাবণ?
আমি হাসছি। একটু জোরেই হাসছি। প্রেম গো! তুমি বড় নিষ্ঠুর গো প্রেম। তোমাতে যেমন সুখ আছে, ঠিক তেমন দুখও আছে। এটা আমাকে আগে বলোনি কেন? প্রেম, তুমি বড় নিষ্ঠুর গো প্রেম। তুমি বড় নিষ্ঠুর।

রুমে ব্যাণ্ডেজের সকল সামগ্রী ছিল। নাঈম ভাই এসব কাটা ছেঁড়া ব্যাণ্ডেজ করার কাজটা খুব ভালোই পারতেন। তিনি তৎক্ষণাৎ আমার হাতটা ব্যাণ্ডেজ করে দিলেন। আর বললেন, তুমি কি পাগল হয়ে গিয়েছো? হঠাৎই কী এমন হলো যে, তুমি হাত কাটলে?
- ভাই আমার হাতে প্রচুর যন্ত্রণা হচ্ছে। এই যন্ত্রণায় বৃষ্টিকে আর তেমনটা মনে পড়ছে না।
- বৃষ্টি তোমারই আছে। সে অন্যকারো হয়নি।
- না ভাই। সে অন্যকারো হয়ে গিয়েছে। একটু আগে সে ছাঁদে এসেছিল। সে আমাকে বললো, তার নাকি বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
- কেঁদো না। আমি দেখছি ব্যাপারটা। তুমি রুমে থাকো। আর খবরদার নিজের কোনো ক্ষতি করবে না। একটা কথা মনে রাখবে, শরীর যার ব্যথা তার। আমি নিচে গেলাম ঔষুধ আনতে।

খানিকবাদে নাঈম ভাই ফিরে এলেন। সাথে আরও একজন এসেছে। ভাই একপাশে সরে দাঁড়াতেই বৃষ্টি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তার চক্ষুযুগল সিক্ত। সে বললো, তোকে হাত কাঁটতে বলেছে কে হ্যাঁ? আমি যদি অন্যকারো হয়ে যাই, তাহলে কি এই করে বেড়াবি?
বৃষ্টি আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। এটা আমার কাছে কেমন যেন অস্বস্তিকর লাগছে। সে তো এখন আর আমার নেই। আমি তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে সে আরও শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর ফুঁপাতে ফুঁপাতে বললো, আমাকে মাফ করে দে শ্রাবণ। আমি আসলে বুঝতে পারিনি, তুই এমনটা করে বসবি!
আমি বিস্ময়চোখে তার দিকে চেয়ে বললাম, মানে?
সে কান্না ভেজা কণ্ঠে বললো, বিয়ে আমার হয়নি। আমার বড় বোনের হয়েছে।
- তাহলে এসবের মানে কী? একটা মাস যোগাযোগ বন্ধ রেখেছিলি কেন? কোনো খোঁজ নিসনি কেন?

পাশে থেকে নাঈম ভাই বলে উঠলেন, প্রেমে যদি বিরহ না থাকে। সে প্রেম কখনো খাঁটি হয় না। আর বৃষ্টি প্রতিদিনই তোমার খোঁজ নিতো। সে প্রতিদিন আমাকে কল করে তোমার বিষয়ে জেনে নিতো।
- ওর নাম্বার তো বন্ধ ছিল!
- দেশে কী সিমের অভাব পড়েছে?
- তার মানে এগুলো আপনাদের সাজানো নাটক ছিল?
- একপ্রকার তাই বলতে পারো। কিন্তু কে জানতো যে, তুমি রোমিও মশাই প্রেম বিরহে নিজের হাতে ছুঁড়ি চালিয়ে দেবে?

আমি বৃষ্টির দিকে চেয়ে আছি। সে আবারও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তাকে ফিরে পেয়ে আমার হাতের যন্ত্রণাটা ততক্ষণে প্রস্থান করেছে। আমি নাঈম ভাইকে বললাম, ভাই আপনি একটু বাইরে যান। আমাকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তিটা তাকে বুঝিয়ে দেই।
বৃষ্টি বললো, হ্যাঁ ভাইয়া আপনি একটু বাইরে যান। রোমিওর কষ্টটাকে আমি একটু আদর দিয়ে পুষিয়ে দেই।
নাঈম ভাই বাইরে গেলেন। অতঃপর বিনা মেঘে এই শ্রাবণে বৃষ্টি নামলো।

আহ প্রেম! তোমাকে পাইলো যেজন।
নিখিল বিশ্ব ভুললো সেজন।
গভীর সিন্ধু চিনলো সেজন।
ভাসলো সেথা শরীর ও মন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:০৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×