বাংলাদেশ সময় কাটায় কাটায় রাত দুইটা। জেদদা থেকে ছেড়ে আসা সাউদিয়া এয়ারলাইনসের বিশাল বিমানটি দীর্ঘ ছয় ঘন্টা পর ঢাকা এয়ারপোর্টের মাটি স্পর্শ করল বুকের ভেতরে হাজারো প্রজাপতির নাচানাচি নিয়ে !
আহা! দু'বছর পর নিজের দেশের মাটির স্পর্শ!
চোখে পানি চলে এলো। যদিও তখন পর্যন্ত সিট বেল্ট বাঁধা অবস্থায় প্লেনের সব যাত্রী ।
প্লেন ধীরে ধীরে টার্মিনালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গভীর রাত হওয়াতে জানালা দিয়ে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বাইরের গাঢ় অন্ধকার ভেদ করে এয়ার পোর্টের লাইটগুলো শুধু জ্বলে আছে।
কিছুক্ষন পর এক এক করে সবাই বের হয়ে এলাম। পা রাখলাম নিজের দেশের মাটিতে। সে এক ছন্দময় ভালোলাগা! এই অনুভব বলে বোঝানো যাবেনা। শুধুমাত্র যারা দীর্ঘ দিন পর নিজের দেশে ফেরত আসেন তাঁরাই বুঝবেন এই অনুভব। প্লেন থেকে বের হয়ে আসার সময় বিমান বালার হাসি মুখে বাংলায় বিদায় সম্ভাষণ খুব ভালো লাগলো।
যেই মাত্র প্লেন থেকে বের হয়ে এসেছি প্লেনের দরজার মুখে বেশ কিছু লোকের দেখা পেলাম। আগে কখনো এমন দেখিনি। সবার মুখে কমন কিছু প্রশ্ন হেল্প লাগবে কোন? হুইল চেয়ার সাথে ?
নিউ ইয়র্ক থেকে জেদ্দা । জেদ্দায় সাত ঘন্টার যাত্রা বিরতী। আবার জেদ্দা থেকে ঢাকা এই দীর্ঘ ভ্রমনে ক্লান্ত ছিলাম খুব।
একজন অলপ বয়স্ক একটি ছেলে "হেল্প লাগবে ম্যাডাম?" বলতে বলতে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে হাতে ধরে থাকা হ্যানড ট্রলি নিয়ে নিলো। আমিও বোকার মতন তার হাতে আমার হ্যানড ট্রলি দিয়ে দিলাম। অবশ্য তার গলায় ব্যাজ ঝুলানো ছিলো নামসহ। এখন তার নামটি মনে পড়ছে না।
প্লেন থেকে বের হয়ে টানেল ধরে হেটে অনেকটা পথ ইমিগ্রেশনের প্রায় কাছাকাছি এসে গেছি। ঠিক ইমিগ্রেশনে ঢোকার মুখে এক জন অফিসার সেই সাহায্যকারী ছেলে যার হাতে আমার হ্যানড ট্রলি তাকে থামতে বললো । তার কাছে জানতে চাইলো আমি কে ?
সেই ছেলেটি উত্তর করলো আমি নাকি তার কোন অফিসারের আত্মীয় হই।
এমন জেরায় ছেলেটাকে বেশ নার্ভাস লাগলো । আমার তখন সন্দেহ হোল ছেলের আচরনে। মনে হোল কোন ঝামেলা হতে পারে। আমি সাথে সাথে ছেলেটির হাত থেকে আমার ট্রলি নিয়ে ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। অবশ্য সেই অফিসার আমাকে কিছু জিগগেস করেননি।
নিজের দেশের জন্য এতোটা আবেগ নিয়ে প্লেন থেকে বের হয়ে এসে এমন অযাচিত ঘটনায় কিছুটা আহত হলাম বটে। মনে শুধু এক্টাই প্রশ্ন প্লেন থেকে নামার পর ইমিগ্রেশন পর্যন্ত যাওয়ার আগে এমন একটা সেনসেটিভ এলাকায় সেই লোক কেমন করে প্রবেশ করতে পারলো! তাছাড়া সে আমাকে পরিচয় দিচ্ছে আমি এয়ারপোর্টের কোন অফিসারের আত্মীয় !! এটা কেমন করে সম্ভব?
অবশ্য ইমিগ্রাশন পার হয়ে লাগেজ রিসিভ করা পর্যন্ত আর কাউকেই আমার সুটক্যাসে হাত লাগাতে দেইনি। সব লাগেজ আমি একাই বেল্টে থেকে টেনে তুলেছি ।
ট্রলি ঠেলে বাইরে এসে যখন দাড়িয়েছি তখন বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে তিনটা।
যাত্রা পথের সব ঝামেলা শেষ করে বাড়ি ফিরে মা আর আত্মীয় স্বজনের মুখ দেখাতেই সব কষ্ট ভুলে গিয়েছিলামম। আজ প্রায় ছয় মাস পর এ কথাটি খুব মনে পড়লো। তাই লিখে ফেললাম । ।
(ছবিটি আমার তোলা জেএফকে এয়ারপোর্ট থেকে)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ১০:০০