“বিয়ের আগে ভাবতাম প্রেমের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেলেও একজন মনের মানুষ পাবো। যেখানে কোনো ঝড় আসার সম্ভব হবে না। বিয়ের পর বুঝেছি স্ত্রী কখনও মনের পূর্ণতা দিতে পারে না। যা সহজে দিতে পারে তা হলো কেবল অপবাদ আর লাঞ্ছনা। সে চোখে যা ভাসে সে হলো সন্দেহ আর অবিশ্বাস। মনে রাখতে হবে, যে বিশ্বাস করে না সে কখনও ভালোবাসতে পারে না। বিশ্বাসই হলো ভালোবাসার মূল স্তম্ভ। বিশ্বাসের উপর ভর করেই মানুষ বাঁচতে শেখে। বিশ্বাসহীন ভালোবাসা সে কেবল স্বার্থ আদায়ের জন্য ক্ষণিক মন ভোলানো।”
রাকেশ খানিক থামে, আবার শুরু করে। “মেয়েদের বিয়ের আগে মৃত্যু হলে সহজেই স্বর্গে যায় আর পরে মরলে কোথায় যায় তা বলতে পারবো না। তবে এটা বলতে পারবো স্বর্গে যায় না। স্বর্গে যাওয়ার যে সঞ্চয় তা তারা বিয়ের আগে কিছু সঞ্চয় করলেও বিয়ের পরে সে সঞ্চয় ভেঙ্গে আরো ঋণী হয়। স্বামীর সুন্দর মনে তিক্ততা ধরাতে ধরাতে এমন অভিশাপ কুড়ায় তাতে আর নরকের নিচে ছাড়া উপরে উঠা সম্ভব নয়।”
রথীন রাকেশের দিকে তাকায়। রাকেশ বলেই চলে। ওর মনে আজ অনেক ক্ষােভ জেগেছে।
“বিয়ের আগে এক বিয়েনের সাথে নারী পুরুষ বিতর্কে বানিয়ে একটা গল্প বলেছিলাম। এক দস্যু সারা জীবন ধরে একটাও ভালো কাজ করেনি। কেবল খুণ-খারাপি করে বেরিয়েছে। তার দিন ক্ষণ তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে এবং সে মৃত্যুও বরণ করল। বোঝেনতো তার ঠাঁই কােথায় হবে। মরার পর সােজা নরকে গেল। নরকে গিয়ে দেখল সব কেবল নারীরা। একটা পুরুষও নেই। সে ভয়ে পিছন ফিরে দৌঁড় শুরু করল। সে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে এসে দেখল তার দেহ চিতায় সাজিয়ে আগুন দেওয়ার সম্মূখে। সে অমনি নড়ে-চড়ে উঠল। সবাইতো অবাক। সে সবার সম্মূখে হাত জােড় করে প্রতিজ্ঞা করল, সে আর কােন পাপ কাজ করবে না। ভালো ভালো কাজ করে স্বর্গে যাবে।
এখন মনে হচ্ছে গল্পটা সত্যি হওয়ার গ্রহণযোগ্যতা ছিল। একজনকে ভালোবেসে জেনেছিলাম মেয়েরা কখনও সত্যবাদিনী হয় না আরেক জনকে বিয়ে করে জানালাম মেয়েরা মানুষই নয় মূর্খ। ইদানিং মনে হচ্ছে আমার জীবনে কি যেন আজও পাওয়া হয়নি। আমার জীবনের কােন একটা অপূর্ণ অংশ গােপন রয়েছে। যা পেয়েছি তা দিয়ে সে অপূর্ণতা পূরণযোগ্য নয়।”
সোনাতন এসে বসে। এবার রথীন বলে,“পুরুষ যদি বিয়ের আগে একটা প্রেমও করে থাকে তবে সে একাই ষড়রিপু। তাকে থামানোর জন্য স্ত্রীকে সব সময় পাশে থাকতে হবে। কিন্তু সে ব্যবস্থা তার উল্টো। সেই তাকে মনে করতে সাহায্য করে। স্ত্রী জাতির এমন কষাঘাত যে মন নীরবে একটু তার (প্রেমিকার) প্রতি সমবেদনা জানায়। তাই কােন পুরুষ নেই বলতে পারে বিয়ের পর তার প্রেমিকাকে একবারও স্মরণ করেনি।”
সোনাতন বলে, “ভাই,ভেবেছিলাম বাঙ্গালী নারীরা সবচেয়ে বেশি পতি ভক্তি করে। কিন্তু বিয়ের পর সে কথার একমত হতে পারলাম না। এটাই যদি শ্রেষ্ঠ পতি ভক্তি হয় তবে অন্য নারীরা কত ভয়াংকর তা ভাবতেই শিহরণ জাগে। এখন আরেকটা কথা আবিষ্কার করতে পারলাম কেনো নারী তার বাবার বংশের অংশিদার হয় না। কােনো সে স্বামীর বংশের দাবিদার। কারণ, মেয়ে তার বংশের নাম রাখতে পারবে না বংশকে কলুষিত করবে।”
কথা বেড়ে ওঠে। প্রদীপ বলে, “নারী শব্দটাই এখন আমার কাছে সবচেয়ে ঘৃণ্য এবং অন্তরে বিষ ঢেলে দিয়েছে। এদের দেখলে আমার দুচোখে কেমন যেন একটা জ্বালা খেলে যায়। অথচ্ এই নারীকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখতাম, মনের কােণে ছােট্ট একটা ঘর বাঁধতাম।”
যে আসে সেই যেন একটু বলার সুযোগ পায়। সবার মনেই যেন জমে আছে এ বিষয়ে অনেক কথা। আমার বলার সুযোগ হলো না। আমি বুঝলাম বিয়ের পর কেউ সুখী নয়। যে সুখী সে ব্যতিক্রম।
৯/৮/২০১৫ইং
অনিল চেয়ারম্যানের বাড়ি,
পুইশুর, কাশিয়ানী, গােপালগঞ্জ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫১