somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুত্রবধূ

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গাড়ি দুর্ঘটনায় রাজীব মারা গেল। রাজীবের মৃত্যু দেখে তার বাবা নির্বাক। এতো কষ্ট সে জীবনে আর কােনদিন পায়নি। স্ত্রী যাওয়ার আগে বলেছিল, তুমি আবার বিয়ে করো। যৌবনে স্ত্রী কেবল কামিনী, বৃদ্ধ কালেই সত্যিকারে সঙ্গী। তখন স্ত্রীর মতো করে আর কাউকে পাওয়া যায় না। হারিয়ে যাওয়া সকল বেদনা কেবল তার থুতথুরে মুখপানে তাকিয়ে ভুলে থাকা যায়। শরীরের আবেগ নাই তবু তার পাশে থাকলে মন বলে তুই এখনও একা হয়ে যাসনি। কিন্তু সে আর বিয়েই করল না। একমাত্র ছেলে রাজীবকে নিয়েই চলে এসেছিল বহুদিন। পাঁচ বছর হলো রাজীবকে বিয়ে দিয়ে পুত্রবধূ এনেছে। রূপেগুণে লক্ষ্মী সরস্বতি। একটা ছেলে তার হয়েছিল কিন্তু সে বেশিদিন অপেক্ষা করল না।
রিভা তার শ্বশুরকে ছেড়ে গেল না। আরো দুই বছর কাটল। তবুও না। এবার রথীন বাবু পুত্রবধূর জন্য ছেলে দেখতে লাগল। কিন্তু হিসাব মেলে না। অনেক কষ্ট করে একটা ছেলে মিলল। কিন্তু সে একটা শর্ত দিল। বিয়ের পরের দিনই রথীনবাবুর সমস্ত সম্পত্তি তাকে লিখে দিতে হবে।
বৌমার দিকে তাকিয়ে রথীন বাবু রাজী হয়ে গেলেন। রিভাকে কিছুই জানতে দিল না। বিয়ে হয়ে গেল। পরের দিন রথীন বাবু তার সমস্ত সম্পত্তি রিভাকে লিখে দিল। এতে রসময় খুশি হলো না। মনে মনে একটা দ্বন্দ্ব রেখে দিল।
বছর দুইয়েক এর মধ্যে রিভার একটা মেয়ে হলো। রথীন বাবু খুব খুশি হলো। কিন্তু সে টের পেয়ে গেল রিভার সাথে রসময়ের খুব ভালো যাচ্ছে না।
একদিন রথীন বাবু রসময় আর রিভাকে ডাকলেন। বললেন, “দ্যাখো, আমি এখন অচল। আমি ভাবিনি রিভাকে সম্পত্তি দিলে তােমার হবে না। আমার একটা ভয় ছিল যদি সম্পত্তি তােমাকে দিলে তুমি রিভাকে ফেলে যাও। যাই হােক এতে যদি তােমাদের সমস্যা হয় তবে রিভা সম্পত্তি তােমার নামে দিয়ে দেক।”
কিন্তু রিভা তাতে রাজী হলো না। দ্বন্দ্ব চলতেই থাকল। এরই মাঝে রিভা আবার মা হতে চলছে। রথীন বাবুর অবস্থাও ভালো নয়। রিভা দিন রাত বসে তার সেবা করছে। রসময় মাঝে মাঝে রেগে যায় আবার থেমে যায়।
মরি মরি করে এ যাত্রায় রথীন বাবু বেঁচে গেলেন। রসময় বার বার সম্পত্তি লিখে দেবার তাড়া করছে। কিন্তু রিভা কিছুতেই রাজী হচ্ছে না। সেদিন একটা উল্টো প্যাঁচ ধরল। রিভাকে বলল, “চলো, আমরা এখান থেকে চলে যাই।”
“না আমি তাকে ছেড়ে যেতে পারবো না। পারলে তুমি চলে যাও। তােমার যে ধন আমার কাছে রেখে গেলে তাকে আমি মাথায় তুলে রাখব। আমি জানি স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর স্বর্গ। তবু যদি †সােথে আমি চলে যাই কােন ভগবান আমাকে নরক থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। আমি তাকে ছেড়ে যেতে পারবো না।”
“আমি কিন্তু আর ফিরে আসবো না।”
“তোমার ফিরে না আসাই মঙ্গল। আমার মুছে যাওয়া কপালে আমি আর সিঁদুর পরতে চাইনি। যার জন্য কপাল রাঙ্গিয়ে ছিলাম তার জন্যই না হয় কপাল মুছে ফেলবো। বাবা তােমাকে রাজীব তৈরি করতে চাইছিল কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি রাজীব চলে গেছে সে পথ নতুন করে সৃষ্টি করা যাবে না। তােমার মেয়ে সুখেই থাকবে আমি কথা দিলাম।”
রসময় চলে গেল। রিভা কিছু সময় কাঁদল। রথীন বাবু আসাতে সে চােখের জল মুছে ফেলল। রথীন বাবু বলল, “মা, রসময় মনে হলো রাগ করে গেল।”
“না বাবা। কেবল রাগ করে নয় চিরদিনের মত।”
“তুমি সম্পত্তি ওকে লিখে দিতে।”
“বাবা, ও আমাকে বিয়ে করে নাই। শুধু তােমার সম্পত্তি চেয়েছিল।”
“দিতে। আমি সম্পত্তি দিয়ে কি করবো?”
“তুমিতো তােমার বৌমার সুখ চাও। ওকে সম্পত্তি লিখে দিলে তােমার বৌমা সুখী হতে পারবে না। তােমার ছেলে আমাকে যদি কেবল টিকে থাকার অস্থিত্বটুকু দিয়ে যেতে পারতো তবে আমি জীবনে কােন দিন এমন কাজ করতাম না। আপনি যাকে ছেলে তৈরি করতে চেয়েছিলে আসলে সে একটা অমানুষ।”
“তবু সে তােমার স্বামী।”
“এই পরিচয়টাই আমাকে অনেক ঋণী করে দিলো। বাবা, আমি ওর পরিচয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। আমি তােমার পুত্রবধূ। রাজীব আমাকে যাই দিক না কেন, আমি যা পেয়েছি তা রাজীবেরই। আমি শুধু তার হয়ে থাকতে চাই। তার হয়ে থাকতে চাই বলেই আপনার সেদিনের অনুরোধকে আমি না করতে পারিনি। আপনি আমাকে কেবল আপনার সেবা করতে দিন আর আশীর্বাদ করেন এবার যেন আপনার বংশ রক্ষার্থে কেউ একজন আমার গর্ভ থেকে আপনাকে গর্ভীত করে।”
“তুই কেনো বদলালি না? আমি তােকে বদলাতে চেয়েছিলাম। কেবল রাজীবকে মনে রেখে তুই সারা জীবন চলতে পারবি না। তাই এতো কিছু করলাম। আমার সহায় সম্পত্তি ত্যাগ করলাম।”
“কিন্তু আমি আপনাকে ত্যাগ করতে পারলাম না আর এখন আপনার ছেলেকে মনে রেখে আমি আমার সারা জীবন চলতে পারবো।”
“সমাজ তােকে ভালো চােখে দেখবে না।”
“আমি নতুন সমাজ গড়বো। দেখবেন সেখানে কত লােক এসে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। আপনি শুধু আর্শীবাদ করবেন।”
০২ আগস্ট ২০১৭ইং
কানাই বাগচীর বাড়ি,
পুইশুর, কাশিয়ানী, গােপালগঞ্জ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:১২
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×