somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দাহিত

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“শেষ পর্যন্ত তুই এমন একটি মেয়েকে বিয়ে করলি?”
“সব কপাল।”
“ক্যান, তমা কি কম সুন্দরী ছিল?”
“নারে, তমার চাল চলন ভালো ছিল না। ও আমার মা’কে মেনে নিতে পারতো না। তারপর আমার চাকরিটাও দূরের।”
“তাই বলে?”
“ছায়া ভালো মেয়ে। তুই ই একদিন তারিফ করবি।”
“নারে, আমি কােন দিন পারব না।”
“ছ্যাকা খাওয়া ছেলেদের কাছে সব মেয়েরাই সমান। ওদের মনে কেবল ভয় আর সন্দেহ।”
“পৃথিবীতে অধিকাংশ ছেলেরাই ছ্যাকা খায়। কারণ, ... .. ।”
“বল না?”
“ওরা, অগ্নির মত দাহিকা, বজ্রের চেয়ে নিষ্ঠুর, বিষাদে ঢাকা মেঘ, চােখের জলের ইন্দ্রধনু, গ্রহলোকের সন্ধ্যা তারা। ওরা, আলো †দয় না আঁধারের দিকে ঠেলে নেয়। ওরা আশা জাগায়, স্বপ্ন বুনায়। অবশেষে সান্ত¦না হয়ে বেঁচে থাকে মনের গহীনে।”
“তবুওতো মানুষ স্বপ্ন বােনে ঘর বাঁধে।”
“স্বপ্ন একবার ভাঙ্গলে ঘর মজবুত হয়না।”
তমাল একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। মায়ের একমাত্র ছেলে বাবা ছিল নাকি তার মায়ের বিয়েই হয় নাই তা এলাকার কেউ জানে না। অনেক কাল আগে তার মা তাকে কােলে নিয়ে এ গ্রামে আসে। তমার বাবা সিদ্দিক শেখ তাদের আশ্রয় দেন। তমাল খুব ব্রেনিয়ার ছেলে। স্কুলে প্রত্যেক পরীক্ষায় প্রথম হয়। সবার বিশ্বাস ছিল সিদ্দিক শেখ তার মেয়েকে তমালের হাতে তুলে দেবেন। তমা সুন্দরী, রূপর্চ্চাকারী। সব সময় নিজেকে সাজিয়ে রাখতো। তমালও তমাকে পছন্দ করতো। তবে সে পছন্দ ছিল অমিতের লাবণ্যের মত কেটির মত নয়।
তমাল ছায়ার মাঝেই তার সুখ খোঁজে। পনের দিনের মিলন জীবনের অনেক কিছুর হিসাব হয়। জীবনের কিছুটা ভাগাভাগিও হয়। হয় কিছু দেনা-পাওনা, প্রতিশ্রুতি। যার ভারে আজ সকালে তমালের পা আর চাকরিতে চলতে চায় না। মন বার বার তার আলনার আড়ালের খাটখানার কথা মনে পড়ে, মনে পড়ে ছায়ার নীরব চেয়ে থাকা দুটি ড্যাব ড্যাবা চােখের কৌতূহল।

এক মাসের মধ্যেই তমাল আবার বাড়ি আসে। মা জিজ্ঞেস করে, “কিরে খােকা, তাের কি শরীর খারাপ?”
বিভিন্ন অজুহাতে মাকে বােঝাতে হয়। মাতো তার এই দিনগুলির কথা ভুলে গেছে। নাকি জীবনে এমন দিন আসে নাই তা তমাল জানে না। সেভাবে, যেখানে বস তাকে ছুটি দেয় সেখানে মা’র এতো প্রশ্ন কেন?

পরের মাসে আবার আসে। তবে, এবার একটা পর্যাপ্ত কারণ এসে দাঁড়ায়। তমার বিয়ে। তমা তমালকে বলেছিল, “মানুষ প্রয়োজনে ভালোবাসে আবার ভােলেও। সে ভােলাও প্রয়োজনে।”
“সে আমি জানি।”
“তুমি জানো???”
“জানি বলে ছায়াকে বিয়ে করেছি।”
“কেনো?”
“তোমার বাবা গণ্যমান্য ব্যক্তি আর আমার বাবাই নেই। ছিল কিনা তাও জানি না। আমার পিতৃ-পরিচয়ের যে একটি নাম তা হয়তো উদ্ভট। তােমার বাবার মান-সম্মান সব ক্ষুয়ে যেত। তাছাড়া আমার পরিবেশে তুমিও বেমানান ছিলে।”
“তোমাকে আমি ..........।”
“থাক। বিয়ের সময় মনটাকে বেদনায় ভরে তুল না। হাসি খুশি থাকো। কে কাকে কখন ভালোবেসেছিল তা ভুলে যাও। ভালোবাসা থাকে মনে তাকে মাথায় তুলে মাতামাতি কর না।”
বছর ঘুরতেই ছায়া মা হলো। তমাল মেয়ের নাম দিল ‘মায়া’ তমাও একটা নাম দিল ‘তরু।’ তরুর গায়ের রঙ কালো। ঠিক ছায়ার মত। ছায়াও একটা নাম দিল ‘তুলি।’ তরু নামটাই বেশি প্রকাশিত হলো।
তরু ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। কিন্তু ছায়ার মুখও কালো হয়ে আসে। সেদিন তমা এসে বলল, “ভাবী, তরুকে নিয়ে তােমরা চিন্তা করো না। আমি ওকে বিয়ে দিয়ে দেব।” তবু যেন তার মুখে হাসি ফুটল না।

তুলির বয়স চার। তুলি এখন বেশ হাসি খুশি এবং পরিচ্ছন্ন। আঁক কাটা শ্লেটে স্বরবর্ণ লেখে। তমাল বাড়িতে এসেছে। তমার বাচ্চা হবে। সিদ্দিক শেখ তমালকে তমার শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দিল। তমার খুব খারাপ অবস্থা। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। অপারেশান থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার আগে তমা তমালকে বলল,“তমাল ভাই, আমার কথা বলা যায় না। আমার বাবাকে দেখ। তােমারতো বাবা নেই। আমার বাবাকে আমি তােমাকে দিয়ে গেলাম। আর তােমার মায়াকে আমার তরু নামে ডেক। একবারের জন্য হলেও আমাকে মনে পড়বে।”
“চিন্তা কর না। তুমি আবার ভালো হয়ে উঠবে।”
তমা ভালো হলো না। বাচ্চা নেক আগে মারা গেছে। ডেলিবারী ভালো হয়নি।
তমা হারিয়ে গেল।
হঠাৎ একদিন তমাল যেন কেমন হয়ে গেল। ও একটু একটু পাগলামী করে। কয়েক দিন বড্ড বেশি পাগলামী করছে। ওর মস্তিস্ক দুর্বল হয়ে পড়ছে। চাকরিটা চলে যায়। বৌ-বাচ্চা নিয়ে খুব অসুবিধায় পড়ে। যখন মাথা ঠিক হয় তখন ভাবে আবার চাকরিতে ফিরে যাবে। বসের হাত-পা ধরে আবার যােগদান করবে। কিন্তু রাতের ভাবনা ভাের না হতেই স্বপ্নের মত ফুরিয়ে যায়।
সকালে বৌকে ধাওয়া মারে। তরু চিৎকার করে ওঠে। অসহায় মা নীরবে শুধু ভাবে। ভাবনা শেষ হয় না।
তমাল ধীরে ধীরে রুক্ষ হয়ে যায়। দেহ ভেঙ্গে পড়ে। বৌটা চাকরির জন্য ঢাকা যায়। গার্মেন্টস এ চাকরি নেয়। কিন্তু আর ফিরে আসে না। নতুন বিয়ে করেছে, নতুন সংসার গড়েছে, তমালের কথা মনে নেই। তমাল এখন কেবলি পাগল।
সেদিন দেখা গেল মেয়েটাকে কােলে নিয়ে তমাল কাঁদছে। মেয়েটা অনেক দিন বাবা-মা’র আদর না পাওয়ায় এতোটুকু আদরে আপ্লুত হয়ে ওঠে। খুশিতে কেঁদে ওঠে। বলে, “বাবা, মা কেনো ফিরে আসে না?”
“আমি আছি না? আমি তাের মা’র মত সহজে বদলাব না। বদলাতে পারি না।”
তমাল মেয়েকে নিয়ে খাল পাড়ে বসে আছে। বন্ধু সিহাবের কথা মনে পড়ে যায়। সিহাবের কথাই সত্য ছিল। মেয়েরা দাহিকা, বিষাদে ঢাকা মেঘ। কিন্তু তমা?

আজ রাত্রে তরু বাবার কাছে থাকবে। বুকের উপর মাথা দিয়ে নীরবে ঘুমে পড়ছে। তমাল তাকে বিছানায় রেখে জানালা ধরে দাঁড়াল। চারদিকে ঘাের অন্ধকার। সেই অন্ধকারের দিকে তাকাল। ছায়ার মুখখানা মনে পড়ল। নীরবে বলল, “তুমি কুহেলিকা বা দাহিকা যাই হওনা কেন আমি আজও তােমাকে ভালোবাসি। তুমি আসবে বলে ঘুম আসে না। তুমি আসবে বলে ঘর সাজাই, বিছানা পাতি জেগে জেগে স্বপ্ন বুনি। তবু জীবন চলে তার জানালার গ্রীল ধরে, চাঁদের সাথে কথা বলে বলে।
১৫.০৫.২০১৪ ইং
তেঁতুলিয়া, কাশিয়ানী, গােপালগঞ্জ
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:০০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×