somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবার নতুন করে

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেক দিন পর বসন্ত আবার সেই পরিচিত স্থানে এসে দাঁড়াল। মনটা একটু পরিষ্কার। সংসারে এখন তার কােন শান্তি নেই। পিয়ালী আর তাকে চােখেই দেখতে পারে না। ছেলে পুলেরাও মায়ের কথা মত চলে। শুধু মেয়েটা একটু খোঁজ খবর নেয়। পিয়ালী ছােট ছেলের ভেতরে খায়। কিন্তু কতৃত্ব দেখায় সব ছেলের সংসারে।

বসন্তের বয়স এখন ৬৮। ২৬ বছর বয়সে সে পিয়ালীকে ঘরে এনেছিল। কত সুখ শান্তি ছিল। সময়ের প্রয়োজনে সব ফুরিয়ে গেছে। কত শর্ত আড়াল হয়ে আছে মনের অগোচরে। পিয়ালী সহজেই ভুলে গেল সেসব কথা। আসলে নারীর মন ভােতা। এদের যৌবন চেতনা ক্ষণিক সময়ের। এদের স্বপ্নে কখনও শৈশব জাগে না। এদের মনে কখনও ধরা দেয় না সেই মধুসিক্ত দিনগুলি। ওরা কেবল সময়ের হাত ধরে চলে। স্বামীহারা কোনো নারী নিঝুম রাতে কখনও তার স্বামীকে কল্পনা করে না। মনে করে না তার জীবনের সবচেয়ে স্মৃতিময় রাতটি। সেই কঁম্পিত বুকের কল্পনার নতুন স্পর্শ। তাইতো অধিকাংশ পুরুষের শেষ জীবন সুখে কাটে না।

বসন্ত সামনের জায়গাটা দেখে একটু ফিক করে হেসে পড়ল। এতো ভারাক্রান্ত জীবন তবু যেন এ হাসিটুকু ধরে রাখতে পারল না।

এই সেই প্রস্তর খণ্ড। কত পুরাতন স্মৃতি মিশে আছে এর উপরে। বসন্ত এদিক ঐদিক একটু তাকাল। কােথাও কেউ নেই। সচরাচর এখানে কেউ আসে না। বসন্ত এবার বসল। ভাবল প্রাণ ত্যাগের আগে কি সব স্মৃতি তার দুই চােখে ভেসে উঠছে। বিষের শিশিটা বের করল। “তুমি না এতোদিন ঘুমেছিলে আমার মনের নিভৃত কােণে? আজ তােমাকে জাগিয়ে বিদায় নিচ্ছি। বিশ্বাস করো, আমি তােমাকে মনে তুলে আমার সংসারে সংগ্রাম করতে চাইনি। যা পেয়েছি তাই নিয়ে চলেছি জীবনের দীর্ঘপথ। আজও তােমাকে মনে করতে চাইনি। কিন্তু এ প্রস্তর খণ্ড। তােমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমি আজ কি চাই তা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।”

বসন্তের দুই চােখে জল ভরে উঠল। জীবন এতো নিষ্ঠুর কেনো? মানুষ যা চায় তা পায় না কেনো? কেনো এতো অনাকাঙ্ক্ষিত আকাঙ্ক্ষা মানুষের মনে বাসা বাঁধে? তার মনে বহু প্রশ্ন এসে ধরা দিল। একটু দাঁড়াল। খানিক পায়চারী করল।
“এখানে কিছু হারিয়েছেন?”
“কোথায় যেন হারিয়েছে মনে নেই। এখানে এসেই বুঝেছি আমি কি যেন হারিয়েছি।”
“আপনি যা হারিয়েছেন তা হারাবার পর আর আপনার ছিল না। চিনতেও পারবেন না। তা আগের চেয়ে এখন অনেক পূরনো হয়ে গেছে।”
“আপনাকে ঠিক চিনলাম না?”
“সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই বদলায় ঠিক আগের মত করে পাওয়া যায় না। তাই চেনাও যায় না। আর ঠিক চিনতে হবে তাও নয়। কেনো এসেছেন এখানে?”
“মরতে।”
“মৃত্যু সহজ বেঁচে থাকা কঠিন।”
“কখনও কখনও মৃত্যুও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।”
“জীবন তার চেয়েও কঠিন। কি নেই আপনার?”
“সব আছে। কেবল বাঁচার সাধ নেই।”
“এ সাধও বদলাবে।”
“বদলানোর সাধ ফুরিয়ে গেছে।”
“দশ দিন বাঁচেন দ্যাখেন আবার কত কিছু পেতে ইচ্ছে করবে। আসলে এর নামই জীবন। একটু না পেলেই সে ভেঙ্গে পড়ে। ভাঙ্গা জায়গায় দাঁড়িয়ে কেউ নতুন করে গড়তে চায় না। এই জন্য জীবনের মৃত্যু ঘটে।”
“কে আপনি?”
“বললে চিনবেন? চিনবেন না।”
“তুমি .....।”
“আমি মাধুরী।”
“মাধুরী!”
“জোছনায় ঢেকে যাওয়া এক তারা। আমি ভালো আছি।”

বসন্ত নীরবে তার দিকে তাকাল। কােথায় হারিয়ে গেছে তার সেদিনের সেই রূপ-যৌবন। সেই বাঁকা চােখের চাউনি। সেই নীরব চােখে চেয়ে থাকা। বসন্ত এ মেনে নিতে পারল না। সে প্রকৃতির উপর বিদ্রোহ করতে চাইল। কিন্তু তার কণ্ঠস্বর থেমে গেছে। সে এখন নিভে যাও বাতি আর কখনও জ্বলবে না শুধু ধােয়া বের হবে।
বসন্ত বলল, “তুমি এখানে কেনো?”
“আজ যে ২৭ শ্রাবণ। এ দিনটি কি ভুলতে পারি?”
“আমিতো মনেই করতে পারছি না।”
“সব মন এক রকম নয়। এক রকম নয় বলে আমি প্রতিটি শ্রাবণ এখানে এসে কাটিয়েছি। একাই কাটিয়েছি। কাউকে প্রত্যাশা করিনি। আশাও করিনি কেউ আসুক। এসে দেখুক আমি নীরব অপেক্ষায় আছি।”
“তোমার ছেলে মেয়ে?”
“এক ছেলে। শহরে থাকে। আমাকেও নিয়ে যেতে চায়। তার ছেলে নাকি খুব দুষ্টু হয়েছে। কিন্তু এই শ্রাবণের জন্যই আমি যেতে পারি নাই।”
“বৃষ্টিহীন শ্রাবণ কেনো অপেক্ষা করলে?”
“শ্রাবণতো শ্রাবণই। সে বৃষ্টি নামুক আর না নামুক।”
বসন্ত মাধুরীর দিকে তাকাল। মাধুরীর চােখ আজ কথা বলছে না। জলও নেই আছে কেবল নীরব চেয়ে থাকা।
“চলো, আজ আমার বাড়িতে এ শ্রাবণের গান শুনি।”
বসন্ত উঠতেই শিশিটা পড়ে গেল। মাথা উঁচু করে মাধুরীর দিকে তাকাল।
“মৃত্যুকে নয় জীবনকে আলিঙ্গন করো। মৃত্যু আসবেই। নিজেকে মারে কাপুরুষেরা।”
মাধুরী বসন্তের হাত ধরলো। বসন্ত কােন বারণ করল না। মাধুরীর সাথে শুরু করল পথ চলা।
মাধুরীর বাড়িটা একা। মাধুরী ছাড়া আর কেউ নেই।
“তুমি আমায় এ কােথায় নিয়ে এলে? আর যদি এমনি করবে তবে সেই ২১ বছর বয়সে করলে না কেনো?”
“সাহস হয়নি। অনেক হারাবার ভয় ছিল। আজ সে ভয় নেই। আমার হারাবার সম্পদ ফুরিয়ে গেছে। আমি শুধু তােমাকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাতে চাই। তুমি বাঁচবে ঠিক বাঁচার মত। আমি তােমাকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেবো।”
“সে বাঁচায় কি লাভ?”
“জানালায় দাঁড়িয়ে সে একুশ বছরের স্বপ্ন ভাংতে। আজ থেকে তুমি এখানেই থাকবে। এ আমার শেষ অনুরোধ। ভালোবাসতে নয় ভালোবাসাতেও নয় শুধু সুন্দর করে বাঁচতে। আমি তােমাকে বাঁচাতে চাই। ২৭ শ্রাবণকে আমি চােখের জলে ডুবাতে চাই না। আমাকে কথা দাও। কিছু ত্যাগ করতে বলিনি। কিছু গ্রহণ করতেও নয়।”
বসন্ত মাধুরীর হাতে হাত রাখল। এবার মাধুরীর চােখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুবিন্দু গড়াতে থাকলো।
“তোমাদের প্রতি ধারণাটা তুমি আমাকে বদলে দিলে। নারীও স্বপ্ন বােনে। তবে যতটা বােনে তার চেয়ে বেশি ভাঙ্গে। সে ভাঙ্গায় দাঁড়িয়ে আর স্বপ্ন বােনা যায় না।”
২১.১১.২০১৬ইং
কানাই বাগচীর বাড়ি, কাশিয়ানী, গােপালগঞ্জ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৩০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×