somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিঝুম সন্ধ্যা

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি অতুল প্রসাদ গুপ্তের মতে, “কঙ্কালকে ঘিরেও যে শরীরের সুষমা, কামের পাঁকে ও যে প্রেমের পদ্ম ফােটে কৃতজ্ঞ মনে তাই স্মরণ করতে হবে কাব্যে না হােক জীবনে।” ভাবের আবেগে বা আভাবে যা-ই হােক মানুষ একটা কিছু অনুসরণ করে চলতে থাকে। সৃষ্টির বৃষামৃতের বিস্ময় মানুষ জানেন সমস্ত বোঝেন কিনা জানি না। পৃথিবী ঘােরে। মানুষও। পৃথিবীর সাথে মানবের এ একটি বন্ধন। পৃথিবীর গােলই হয়তো মানুষের সাথে মানুষের বার বার দেখা হয়, যাওয়া আসার পথে। সময় পথকে নির্দেশ করে দেয়। যেমন প্রতি বছর শীতে উত্তর ইউরোপ থেকে হাঁসের দল পথ না ভুলেই পৌঁছে যায় বাংলার পদ্মার চরে। খেলা করে পদ্মার পানির সাথে, কেলি করে কালের মিলন পথে। শরীরের সুষমা যে কঙ্কালকে ঢেকে রাখছে তা মূলত নর নারীর প্রেমের মূল্য দিতে, কামের সৃষ্টিতে।
মানুষ সঙ্গ চায় আসঙ্গের মােহে। সংগীত নিঃসঙ্গকে সঙ্গ দেয়। সংগীতের সাথী সজল প্রাণ, প্রাণের আকুলতা। ব্যাকুল জীবনের স্মৃতি গাঁথা। সংগীত শ্রাবণের বারি ধারার মত। ফোঁটায় ফোঁটায় পড়তে থাকে। তার ধারা অবিরাম, শব্দ অভিরাম, গন্ধ মিষ্টি। মধুর মাধুরী দিয়ে গাঁথা সংগীতের মালা। নিঃসঙ্গতা সংগীতের প্রাণ। সংগীত জীবনকে ফুটিয়ে তােলে। সংগীত সন্ধ্যার শীতল অভাবকে ভাবের মাঝে হারিয়ে দেয় অনুভবে। তার আবেগ মানুষকে চলতে শিখায়। মন প্রাণের কাজে ব্যয় হয় কিন্তু নিঃশেষ হয় না। তাই মােহনার মন মানুষকে খোঁজে। মােহনার মন মানুষ খুঁজে দেখে না। শুধু তার তীরে গিয়ে দাঁড়ায় আবছায়া, অবষণ্ণতায়। বিষণ্ণতায় দেখে তাকে। মােহনাও মানুষকে ডাকে তার লীলার সঙ্গী হতে। তার নীরব বেদনায় মিলে শিমালীর জলে ভেসে যেতে। নিজেকে বিলিয়ে দিতে।

১০ মে ২০০২ইং সুরের ঢল মেনেছিল। সেই নিঝুম সংগীত এঁকেছিল অনেক প্রাণে কঠিন ছাপ। এমন কিছু কথা, কিছু সুর, কিছু স্মৃতি, কিছু ব্যথা, মানুষের চিরদিনের সঙ্গী হয়ে থাকে। যা কােন দিনই ভােলা যায় না।

সুরের মূর্ছনা জীবনের অস্পষ্ট ছবি আঁকে। যাকে আবেগ দেয়া যাবে অনুভব করা যাবে ছােয়া যাবে না। শূন্যতার অসীম সীমায় দেখা যাবে তার ঘর। জীবনের গতি চালাতে পথের বাঁকে বাঁকে ফুঁটবে তা কােমল পায়ে। ঝরবে কিছু রক্ত। ব্যথা দেবে ক্ষণিকের স্মরণে। কারণ, কে খোঁজে কাল বৈশাখীর ঝরে যাওয়া শুকনো পাতাকে। সেতো উড়তেই থাকে পথে পথে। জীবনের গতি অনুভূতির দিকেই অগ্রসর হয়। অনুভূতির ভিতরে একটু অনুভব কাজ করে। যার কিছুটা ভূতের মত। পাওয়া অনেক আনন্দদায়ক কিন্তু হারানো অনেক বেদনা-বিধুর। পাওয়ার আগে পর্যন্ত আকাঙ্ক্ষা প্রবল আকার ধারণ করে। পাওয়ার পর অনুভূতি ভূতের ন্যায় অঁকেজো হয়ে পড়ে। হারানোর পর বেদনা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।
মানব মনের চিরন্তর আকাক্সক্ষাগুলো মানুষের ভাবের মাঝেই নিবৃত। ইতিহাসের যেমন ইতি হয় না তেমনি ভাবের অভাবও ঘােচেনা। সৃষ্টির ইতিহাসে বিনাশ লেখা আছে কিন্তু স্মৃতির খাতায় ভুলে যাওয়া লেখা নেই। তা জীবন পর্যন্ত স্থায়ী হবে। কবি ওয়ার্ডসর্থ যে নিঃসঙ্গ কর্তকারিণীর গানে ব্যকুল হয়েছিল তা সেদিন বােঝা গেল। ঐ একটি কণ্ঠ -
“চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙ্গেছে উচ্ছ্বলে পড়ে আলো। ও রজনী................।”
গান কেবল গায়ককেই মাতিয়ে তােলে না। অসাড়ের প্রাণেও সাড়া জাগায়। গানের কণ্ঠে সে যেমন নিজেকে বিলিয়ে দেয় শ্রােতা তখন প্রাণের প্রেম পরের মাঝে খুঁজে পায়। সে প্রেম পরিহাসে পরিণত হয় না, বেঁচে থাকে স্মৃতির মাঝে। নদীর প্রেম অফুরন্ত। সে ছােটে মােহনার মনকে খুঁজতে। তা লীলাও বলা যায় আবার খেলাও বলা যায়। সে খেলার কােন নির্দিষ্ট বেলা নেই। মনের মাধুর্যকে মরণ সাগর পর্যন্ত উত্তরণ করবে এটাই উদ্দেশ্য। তার বুকে কত চর জাগে কত চর চিরতরে বিলিন হয়ে যায়, কত জাহাজ তলিয়ে যায়। গ্রাস করে অনেক মনের মানুষকে। তবু তার মন ভরে না। সে মােহনাকেই খুঁজবে। না পাওয়ার আশঙ্কায় সে দ্রুত ছুটবে। কিন্তু মােহনাকে কি খুঁজে পাবে? তাই কি নিয়ম? কিন্তু আমি যে সেই গানকে খুঁজে পাই বাতাসের মাঝে অসীম আকাশের নীলিমায়। অগণিত তারার মাঝে খুঁজে ফিরি একটা তারাকে। নীলিমার নিচে খুঁজি একটি গানের পাখি বুলবুলিকে। আমার সুরের আকাশে একটি মাত্র পাখি ঘুরে ফেরে একটি সুর নিয়ে। যার কথার চেয়ে কাহিনি সুদূর প্রসারী। বার বার আমার হৃদয়কে দােলা দিয়ে যায়।

দিন গত হবে। পুরাতনকে ঢেকে জন্ম হবে নতুনের। কালের খাতায় লেখা থাকবে কিছু স্মৃতি কিছু বেদনাময় মুহুর্ত। যার মাঝে আমি শুনতে পাব সেই সুর, সেই সংগীত, সে অচেনা শরীরীকে। সেই চাঁদ ভাঙ্গা হাসির উচ্ছ্বাস, ফুলের বনে ঘুরে ফেরার আপন সত্ত্বা। আপন অনুভূতি। অসহস্র ফুল, ফুলের হাসি, গন্ধ। রক্তিম আভায় ফুটে ওঠা পাপড়ি। পাখি ডাকা নিঝুম সন্ধ্যা। রজনী গন্ধার সুরভী, সাড়া জাগানো মনের মানুষ। ফুলের বাগানে ঘুরে ফেরা। ভালোলাগার সৃষ্টিগুলি, ভালোবাসার নতুন উচ্ছ্বাস, অন্য প্রাণের নিঃশ্বাসের গরম শব্দ। বিকেলের রক্তিম আলো, একাকি নদীর কিনারে পথ চলা। সেই আলতা ভেজা পথ, আঁকা বাঁকা সারি বাঁধা গাছ। জীবনের স্বপ্নময় শাসন ছবিগুলি। আঁধারের হাতছানি দেওয়া কালো হাতের ছায়া, ছায়ার প্রতিরূপ, রূপের ঝলসানো হাসি, বড় বড় দাঁত দাঁতের বিষ, বিষাক্ত জ্বালার উত্তপ্ত অঙ্গগুলি। আমি ভুলব না সেই রজনী গন্ধা, সেই সুপ্ত চেতনা, সেই কণ্ঠ সেই ময়মনসিংহের একটি মেয়ে রােজিনা। আমি তাকে কবিতায় নয় কাব্যে সাথী করে নিলাম। কলমে নামটা লিখে দিলাম বিবর্ণমান ডায়েরির সাদা পাতার উপর, আমার ভাষাহীন কাব্যে।

১২.০৫.২০০২ইং, নান্নু মিঞার বাড়ি, কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা ১৩১০।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×