মিঃ জ্যোতি রঞ্জন চাকমা, ৫২, নোয়াপাড়া, মধুপুর, খাগড়াছড়ি সদর, বাংলাদেশ সরকারের পাবলিক ওয়ার্ক্স ডিপার্টমেন্টের একজন সহকারী বিভাগীয় প্রকৌশলী। ১৭ এপ্রিল সেটেলার বাঙ্গালিদের নির্যাতনের শিকার আদিবাসীদের মধ্যে একজন তিনি। তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পান। তার হাত, আঙ্গুল দেওয়া হয় গুড়িয়ে।
চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন। তার মুখেই শোনা যাক বিস্তারিত।
১৭ এপ্রিল ঘটনার দিন আমি চট্টগ্রাম থেকে "শান্তি" পরিবহনে করে খাগড়াছড়ি ফিরছিলাম। চট্টগ্রাম থেকে দুপুর২ টার সময় ছেড়ে আসা বাসটি ৪ টার দিকে খাগড়াছড়ির গুইমারার জালিয়াপাড়ায় পৌছায়। বাসে আদিবাসী যাত্রী ছিলেন ৬ জন। বাস থেকে সেটেলার বাঙ্গালিরা আদিবাসী যাত্রীদের টেনে হিচড়ে নামিয়ে অতর্কিত ভাবে পেটাতে থাকে।
কিন্তু ঘটনা হল, জালিয়াপাড়া পৌছানোর ১ মাইল আগেই আমি পাহাড়ি-বাঙ্গালি সংঘর্ষের খবর পাই। খবর শুনে আমি মাটিরাঙ্গা থানার ওসিকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করি আমার আসা নিরাপদ হবে কী না। তিনি বলেন কোন সমস্যা নেই। এরপর বাসে পুলিশ আর বিজিবির এসকোর্ট নিয়ে বাসটি জালিয়াপাড়া দিকে এগুতে থাকে।
জালিয়াপাড়া পৌছানোর একটূ আগেই বাসের বাঙ্গালি যাত্রীরা পুলিশ সদস্যদের কানে ফিসফিস করতে থাকে। এরপর, পুলিশ আর বিজিবি সদস্যরা সটকে পড়ে। আমি তখনই বুঝতে পারি, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
পুলিশ আর বিজিবি সদস্যদের সরে পড়ার পর বাঙ্গালিরা আমাদের বাস থেকে নেমে পড়তে বলে, কিন্তু নামতে রাজি না হওয়ায় তারা বাসে উঠে পড়ে।
আমি সামনের সারিতেই ছিলাম; আমার সিট নম্বর ছিল ৩ । আমাকে বাস থেকে টেনে নামানো হল। আমার কাছে দুটো মোবাইল আর ১০,০০০ টাকা ছিল; আক্রমণকারীরা তাও নিয়ে যায়।
আমি তাদের অনুরোধ করি আমাকে ছেড়ে দিতে; তারা শোনেনি। লাঠি দিয়ে তারা আমার মাথায় এবং হাতে আঘাত করতে থাকে। আমি নিজের হাত দিয়ে আমার মাথা বাচানোর চেষ্টা করি। অজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত তারা আমাকে পেটাতে থাকে; এবং মৃত ভেবে ফেলে যায়।
আশেপাশে প্রায় ৩০-৪০ জন পুলিশ , বিজিবি , সেনা সদস্য ছিল; কিন্তু তারা ছিল নীরব দর্শক।
বাসে আমার সহযাত্রী একজন বাঙ্গালি পিয়ন, যে আমার পরিচিত ছিল সে আমাকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যায় এবং সেবা করে। আমার সারা শরীর তখন রক্তে ভেজা।
এরপর পুলিশ আসে এবং আমাকে থানায় নিয়ে যায়। আমাকে গুইমারা থানায় এই মূমুর্ষু অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কোন প্রকার চিকিৎসা ছাড়াই আমাকে সেখানে রাখা হয়।
আমি যখন পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়ে চিৎকার করছিলাম; কোন পুলিশ আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। যখন ঐ বাঙ্গালি পিয়ন আমাকে সাহায্য করছিল; তখন তারা( পুলিশ) সেই পিয়ন কে গালাগাল করতে থাকে। চিকিৎসা ছাড়াই পুলিশ আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। পুলিশের এই আচরণ সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক।
পরে যখন সেই পিয়ন আমার পরিবারকে এ ব্যাপারে অবহিত করে তার একটু পরেই চট্টগ্রামের আদিবাসী পুলিশ ডেপুটি কমিশনার কুসুম দেওয়ানের হস্তক্ষেপে আমাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে পৌছতে পৌছতে প্রায় রাত সাড়ে ৯ টা বেজে যায়।
যখন আমাকে জালিয়াপাড়ায় সেটেলার বাঙ্গালিরা মারধর করছিল; তখন পুলিশ আর সেনা সদস্যরা থাকলেও তারা আমাকে সাহায্য করেনি।
আমাকে মেরে ফেলার জন্যই সেই বাঙ্গালিরা আমাকে মারছিল; ভাগ্যক্রমে বেচে গেছি। কেন আমার সাথে এই আচরণ ? আমিতো কিছু করিনি। আমার একমাত্র অপরাধ আমি একজন আদিবাসী চাকমা।
একজন সরকারী কর্মকর্তা হওয়ার পরও সরকারী নিরাপত্তা বাহিনী আমাকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সাহায্য চাওয়ার পরও সেদিন পুলিশ, সেনারা আমাকে সাহায্য করেনি।
বাসের অন্য আদিবাসী যাত্রীদের কী হয়েছে আমি জানিনা। হয়ত তারা আমার মতই পরিণতি বরণ করেছে।
এছাড়াও রামগড় সহিংসতায় আদিবাসী দের বৌদ্ধ মন্দির সহ ৯৫ টী বাড়ী পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৪ জন আদিবাসী নিশ্চিত রূপে নিখোজ । আশঙ্কা করা হচ্ছে আরো ২০ জন নিখোজ আছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নাম ও ক্ষতির পরিমাণ এই লিঙ্কে । Click This Link
নৃশংস দেখে একজন পুলিশ সদস্যের তোলা একজন নির্যাতিত আদিবাসী কিশোরীর ছবি আপলোড করছি না। আগ্রহীরা এখানে তা দেখতে পারেন Click This Link
এছাড়া সেটেলার বাঙ্গালি কর্তৃক আদিবাসীদের ধ্বংস প্রাপ্ত বাড়ির ছবি দেখতে পারেন এখানে Click This Link
সমস্ত তথ্য chtnewsupdate.blogspot.com থেকে নেওয়া।
খবরের কাগজের একপেশে সংবাদ বিশ্বাস করা থেকে বিরত থাকুন। সংবাদকর্মীরা চাইলেও অনেক সময় সেনা বাধায় প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করতে পারেন না। এ অবস্থায় ব্লগই ভরসা। যারা একটু অনুসন্ধানী হয়েছেন, তারা মাত্রই জানেন রামগড় সহিংসতায় যদিও নিহত হয়েছেন বাঙালিরাই, কিন্তু তারাই মূল হামলাকারী। আদিবাসীরা হামলা প্রতিরোধ করেছেন মাত্র। অন্য এক বাস থেকে নামিয়ে নেওয়া নিখোজ আদিবাসীদেরই বা কোথায় গুম করা হল ? জমিবিরোধকে ঘিরে যে সহিংসতার সূত্রপাত, এই বাঙালিরাই কিন্তু সেখানকার মারমাদের জমির জবরদখলকারী।
বলা ভালো, এই বাঙালিরা কোনো সাধারণ বাঙালি নন–তারা সেনা সমর্থিত সেটেলার বাঙালি। এই সেনা-সেটেলাররাই পাহাড়ের হর্তা-কর্তা-অধিকর্তা। তারাই সেখানের প্রধান প্রশাসন।
পাহাড়ে কবে বন্ধ হবে বাঙ্গালির এই "পাকিপনা" ? কেন একজন সহজ সরল বাঙ্গালি সে হোক সাধারণ মানুষ কিংবা কোন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পাহাড়ে গিয়েই রূপান্তরিত হবে উগ্র জাতীয়তাবাদী সাম্প্রদায়িক পশুতে ? কেন পাহাড়কে "কলোনী" হিসেবে ট্রিট করা হবে; ঠিক যেমনটি করত ব্রিটিশরা ভারতীয়দের উপর আর পাকিস্তানীরা আমাদের উপর ?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




