সু জ ন সু পা ন্থ
বন ভ্রমণ অথবা কিছু বিষাদ বিসর্জন
......................................
[আঁধারের মাঝে তোরা আলোজ্বলা পাখি হয়ে থাক]
বনের সিঁথিপথ ঘেঁষে যে রেললাইন চলে গেছে বহুদুরে-তার ঠিকানা জানা নেই। ওই পথ ধরে ভেসে আসে শুধু হরিতের ঘ্রাণ। ওদিকে এক পাখি বিদ্যালয়ের কথা শুনেছি বনপ্রহরীদের মুখে। ইশকুল ফাঁকি দিয়ে ওই রেললাইন ধরে ডানপিটে পাখিদের এদিকেই আনাগোনা বেশি। বনের নির্জনতায় বসে তারা ছেনালি করে। বৃষ্টিভেজা ভোরবেলা ধারণ করে রাখে পাখিদের যৌনকলা।
পাখিরাও ছেনালি করে, জানা ছিল না। একথা প্রথম শুনেছি পাতাদের কাছে। আর একদম বনের ভেতরে, যেখানে আমাদের ঘর, তার সামনে ফুটে আছে অসংখ্য মাধবীলতা। নিঃশব্দে, গোপনে গোপনে পুষ্পভাষায় তারাও বলেছে পাখিদের যতসব যৌনকথা। পুরোটা দিনে পাখিদের এইসব কামকলা দেখে, বিরহ বেদনায় মসলিন সুরে ঝিঁঝিরা বিষাদ বাজিয়ে তোলে নিজস্ব ম্যান্ডোলিনে।
আর আমরা এইসব বিষাদের সুর শুনে রাতজাগা চোখে হেঁটে চলি আঁকাবাঁকা বন। ছড়া পেরিয়ে যেন বহুদুর উড়ে উড়ে চলে আমাদের প্রজাপতি মন। বনের চারিদিকে অন্ধ-অন্ধকার। আর আঁধার সুরঙ্গ পেয়ে নুয়ে পড়া লতারা গড়েছে তাদের গোপন সংসার। এইসব গোপন সংসার দেখে, আঁধারের মাঝে তাঁর ছবি মনে পড়ে। জেগে ওঠে বুকে জমা ক্ষত, এই বন জানে না, আমি শুধু জানি—ওগুলো আসলে বেদনাসম্ভুত।
এইসব বেদনার কথা কখনো বলিনি ওদের। অথচ তিলের মত গহন অন্ধকারে জোনাকির বনে প্রিয়রা তাঁকে খুঁজে দিতে চেয়েছিল আপন মনে। কিন্তু তারা তো ঘুণাক্ষরেও জানে না, আমি সেই মুখ প্রিয়দের চোখেই এঁকে নিয়েছি সংগোপনে। তাই ভুলে সব বেদনার গান-পথ ভুলে হেঁটে চলি সঘন অন্ধকারে। আর ঘোরপথ হতে ভেসে আসে বনমৌরির ঘ্রাণ।
কিছুপরে, হুইসেল বাজিয়ে পাখি বিদ্যালয়ের দিকে ছুটে চলে রাত্রির শেষ ট্রেন। হুইসেল শেষে ওদিক হতে উড়ে আসে নামহীন কিছু পাখির পালক-প্রিয়দের সাথী করে টিলা পথে চেয়ে থাকে ভ্রমণবালক। ওই দুরে জেগে আছে সুবিশাল লেবুপাতা গ্রাম। তারও পরে টিলাজুড়ে ঘুমে আছে আমাদের দুঃখী দুঃখী চা-পাতা বোন। ওইসব টিলাদের কাছেই বুনে দিয়েছি আমার বিষাদ বিসর্জন। এই সব কিছুই মনে পড়ে আজ, মনে পড়ে বনপথ, লেবুফুল ঘ্রাণ, পাখিদের ছেনালি আর আঁকাবাঁকা টিলা পথে ফেলে আসা শান্ত ভানুগাছ।
...................................
লাউয়াছড়া, শ্রীমঙ্গল
১১ সেপ্টেম্বর ২০১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





