somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু গল্পঃ- স্বপ্নের ঈদ

২৭ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লালাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল্ হামদ্। মাইকে এই যিকির শুনে ঘুম ভাঙ্গে পলাশের। ঘুম থেকে জলদি করে উঠে পড়ে। আজ তো ঈদ। ঘুম থেকে উঠেই দেখতে পেল আব্বা মাত্রই গোসল করে এসেছে। -কি রে এই ক্ষণে তর ঘুম থাইক্যা উডার টাইম অইল। আব্বা, বেশি সময় লাগবো না, এই যামু আর আমু। গোসল করতে গেল পলাশ। মনের আনন্দে গোসল শেষ করে এল। তাড়াতাড়ি মাকে বললো, আমারে আমার নতুন পাঞ্জাবি আর পায়জামা পড়ায়া দাও। কিরে আর কত দেরি নামায যে শুরু হইয়া যাইব। দাঁড়াও না পোলাডারে কাপড়গুলান পড়ায়া দেই। সেমাই দিয়া গেলাম, একটুখানি খায়া বাইর হইয়ো। মা তাড়াতাড়ি নতুন পাঞ্জাবি পায়জামা বাইর করে তৈরি করতে লাগলো পলাশকে। মা আমারেও একটুখানি সেমাই দিও। হ হ দিতাছি। তাড়াতাড়ি খায়া লও, নইলে নামায কিন্তু পাইবা না। পলাশরে চল চল বাপ তাড়াতাড়ি চল। বাবার হাত ধরে ঈদ গাহের দিকে যেতে থাকে পলাশ। বয়স কত হবে ৮ নইলে ৯। বাবা গফুর মিয়ার অবস্থা ইদানিং খুব ভালো হয়েছে। আগে থাকতে হত ফুটপাতে, রাস্তার ধারে। আর এখন থাকে একটা ভালো ভাড়া বাসায়। আগে কখনওই ঈদের সময় নতুন ভালো কাপড় কিনে দিতে পারতো না গফুর মিয়া তার ছেলেকে। কিন্তু এ বারের কথা ভিন্ন। এবার গফুর মিয়া তার ছেলে আর বউয়ের জন্য খুব ভালো দামি জামা কাপড় কিনে দিয়েছে। ঈদ গাহে পৌছে গেলো পলাশ আর তার বাবা গফুর মিয়া। আগে কখনোই ঈদের নামায পড়তে পারেনি পলাশ আর তার বাবা গফুর মিয়া। ঈদ গাহে অনেক মানুষ নামায পড়তে এসেছে। সবাই নতুন জামা পড়ে এসেছে। পলাশের আনন্দ যেন আর বাধ মানতে চাইছে না। নামাযের পর কি করবে। কোথায় কোথায় যাবে সব মনে মনে ঠিক করে নিল। নামায শেষ হতেই পলাশ তার বাবার সাথে কোলাকোলি করলো। ঈদ্গাহে আরো কয়েকজনের সাথে কোলাকোলি করলো পলাশ। ঠিক যেভাবে বাবার হাত ধরে ঈদ্গাহে গিয়েছিলো ঠিক সেভাবেই বাড়ি ফিরলো পলাশ। মা ও মা আমারে কিছু খাইতে দাও। বাজান আইয়্যা পড়ছস, একটু বয় আমি অহনই তরে খাওন দিতাছি। খাবার খেয়ে ঈদ সেলামির টাকাগুলো নিয়ে বেরিয়ে পড়ে পলাশ। বহু সাধনার পর যেনো পলাশ আজকের এই দিনটা পেয়েছে। তার কাছে সব কিছুই নতুন লাগছে। ওহ অনেক টাকা সেলামি পাইছি, এইডা দিয়া অনেক কিছু করা যাইবো। রাস্তা দিয়ে যাবার সময় হটাৎ করেই দেখা হয়ে যায় পলাশের সেই বস্তিতে থাকা সময়কার বন্ধু আবুলের সাথে। ওই আবুইল্যা কই যাস? কই আর যামু, সারাদিন ধইরা তিনশো টাকা ইনকাম হইছে, আইজকা অহনও কিছু খাই নাই। সামনে বাবর আলীর দোকান থিকা জুডা পোলাও কিন্না খামু। বাহ পলাশ তোর শাড টা তো মেলা সুন্দর। অনেক দাম না--- । হ, বাজানে নিউ মার্কেট থাইক্যা কিন্না আনছে। তোর বাপে অনেক ট্যাকা কামায় তাই না। হ। চল আবুল্যা আইজকা তোরে আমি খাওয়ামু। নারে তোর লগে কি এহন আর আমার হাডা ঠিক হইবো? তুই এক কাম কর বাড়িত যা, তোর বাপ মা আছে হেরা চিন্তা করবো। যা গিয়া তুই। আমি গেলামগা। আবুইল্যা আমার লগে এমন করলো কেন? কি যে কয় অনেক ট্যাকা, আমার লগে হাডা ঠিক হইবো না...। বুঝি না ওর কথা। পলাশ বাড়ি ফিরে আসে। কিরে বাজান তুই এতক্ষন কই আছিলি? বাজান আইজকা বহুত মজা করছি। আগে কত কষ্ট করছি। এইবারের ঈদটাই পরথম ঈদ যেইটাতে এত্ত মজা করছি। রাতে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো পলাশ। ওই পলাশ, ওই পলাশ উডস না কেন? উড, উড । তাড়াতাড়ি ল ঈদ্গার সামনে গিয়া তো দাঁড়াইতে অইবো নইলে তো আইজকা আর সারাদিন ইনকাম অইবো না। ল, ল। চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম থেকে উঠে পড়ে পলাশ। এ কি সে কোথায় ? সে তো আগের রাতে বিছানায় শুয়েুছিলো। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখে টুকরিতে। বন্ধু আবুলের হাত ধরে ঈদ্গার সামনে ভিক্ষার হাত নিয়ে দাঁড়ায়। বারবার তার ছেড়া কাপড়ের দিকে তাকায় আর নিশ্চিত হয় সব সপ্ন। ছোটো ছোটো বাচ্চারা যখন বাবার হাত ধরে ঈদ্গাহ থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে তখন পলাশের মত ছিন্নমূল শিশুরা গত রাতে দেখা স্বপ্নকে খুঁজে বেড়ায় কিন্তু তা কি কখনো পূরণ হয়?
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×