আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লালাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল্ হামদ্। মাইকে এই যিকির শুনে ঘুম ভাঙ্গে পলাশের। ঘুম থেকে জলদি করে উঠে পড়ে। আজ তো ঈদ। ঘুম থেকে উঠেই দেখতে পেল আব্বা মাত্রই গোসল করে এসেছে। -কি রে এই ক্ষণে তর ঘুম থাইক্যা উডার টাইম অইল। আব্বা, বেশি সময় লাগবো না, এই যামু আর আমু। গোসল করতে গেল পলাশ। মনের আনন্দে গোসল শেষ করে এল। তাড়াতাড়ি মাকে বললো, আমারে আমার নতুন পাঞ্জাবি আর পায়জামা পড়ায়া দাও। কিরে আর কত দেরি নামায যে শুরু হইয়া যাইব। দাঁড়াও না পোলাডারে কাপড়গুলান পড়ায়া দেই। সেমাই দিয়া গেলাম, একটুখানি খায়া বাইর হইয়ো। মা তাড়াতাড়ি নতুন পাঞ্জাবি পায়জামা বাইর করে তৈরি করতে লাগলো পলাশকে। মা আমারেও একটুখানি সেমাই দিও। হ হ দিতাছি। তাড়াতাড়ি খায়া লও, নইলে নামায কিন্তু পাইবা না। পলাশরে চল চল বাপ তাড়াতাড়ি চল। বাবার হাত ধরে ঈদ গাহের দিকে যেতে থাকে পলাশ। বয়স কত হবে ৮ নইলে ৯। বাবা গফুর মিয়ার অবস্থা ইদানিং খুব ভালো হয়েছে। আগে থাকতে হত ফুটপাতে, রাস্তার ধারে। আর এখন থাকে একটা ভালো ভাড়া বাসায়। আগে কখনওই ঈদের সময় নতুন ভালো কাপড় কিনে দিতে পারতো না গফুর মিয়া তার ছেলেকে। কিন্তু এ বারের কথা ভিন্ন। এবার গফুর মিয়া তার ছেলে আর বউয়ের জন্য খুব ভালো দামি জামা কাপড় কিনে দিয়েছে। ঈদ গাহে পৌছে গেলো পলাশ আর তার বাবা গফুর মিয়া। আগে কখনোই ঈদের নামায পড়তে পারেনি পলাশ আর তার বাবা গফুর মিয়া। ঈদ গাহে অনেক মানুষ নামায পড়তে এসেছে। সবাই নতুন জামা পড়ে এসেছে। পলাশের আনন্দ যেন আর বাধ মানতে চাইছে না। নামাযের পর কি করবে। কোথায় কোথায় যাবে সব মনে মনে ঠিক করে নিল। নামায শেষ হতেই পলাশ তার বাবার সাথে কোলাকোলি করলো। ঈদ্গাহে আরো কয়েকজনের সাথে কোলাকোলি করলো পলাশ। ঠিক যেভাবে বাবার হাত ধরে ঈদ্গাহে গিয়েছিলো ঠিক সেভাবেই বাড়ি ফিরলো পলাশ। মা ও মা আমারে কিছু খাইতে দাও। বাজান আইয়্যা পড়ছস, একটু বয় আমি অহনই তরে খাওন দিতাছি। খাবার খেয়ে ঈদ সেলামির টাকাগুলো নিয়ে বেরিয়ে পড়ে পলাশ। বহু সাধনার পর যেনো পলাশ আজকের এই দিনটা পেয়েছে। তার কাছে সব কিছুই নতুন লাগছে। ওহ অনেক টাকা সেলামি পাইছি, এইডা দিয়া অনেক কিছু করা যাইবো। রাস্তা দিয়ে যাবার সময় হটাৎ করেই দেখা হয়ে যায় পলাশের সেই বস্তিতে থাকা সময়কার বন্ধু আবুলের সাথে। ওই আবুইল্যা কই যাস? কই আর যামু, সারাদিন ধইরা তিনশো টাকা ইনকাম হইছে, আইজকা অহনও কিছু খাই নাই। সামনে বাবর আলীর দোকান থিকা জুডা পোলাও কিন্না খামু। বাহ পলাশ তোর শাড টা তো মেলা সুন্দর। অনেক দাম না--- । হ, বাজানে নিউ মার্কেট থাইক্যা কিন্না আনছে। তোর বাপে অনেক ট্যাকা কামায় তাই না। হ। চল আবুল্যা আইজকা তোরে আমি খাওয়ামু। নারে তোর লগে কি এহন আর আমার হাডা ঠিক হইবো? তুই এক কাম কর বাড়িত যা, তোর বাপ মা আছে হেরা চিন্তা করবো। যা গিয়া তুই। আমি গেলামগা। আবুইল্যা আমার লগে এমন করলো কেন? কি যে কয় অনেক ট্যাকা, আমার লগে হাডা ঠিক হইবো না...। বুঝি না ওর কথা। পলাশ বাড়ি ফিরে আসে। কিরে বাজান তুই এতক্ষন কই আছিলি? বাজান আইজকা বহুত মজা করছি। আগে কত কষ্ট করছি। এইবারের ঈদটাই পরথম ঈদ যেইটাতে এত্ত মজা করছি। রাতে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো পলাশ। ওই পলাশ, ওই পলাশ উডস না কেন? উড, উড । তাড়াতাড়ি ল ঈদ্গার সামনে গিয়া তো দাঁড়াইতে অইবো নইলে তো আইজকা আর সারাদিন ইনকাম অইবো না। ল, ল। চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম থেকে উঠে পড়ে পলাশ। এ কি সে কোথায় ? সে তো আগের রাতে বিছানায় শুয়েুছিলো। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখে টুকরিতে। বন্ধু আবুলের হাত ধরে ঈদ্গার সামনে ভিক্ষার হাত নিয়ে দাঁড়ায়। বারবার তার ছেড়া কাপড়ের দিকে তাকায় আর নিশ্চিত হয় সব সপ্ন। ছোটো ছোটো বাচ্চারা যখন বাবার হাত ধরে ঈদ্গাহ থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে তখন পলাশের মত ছিন্নমূল শিশুরা গত রাতে দেখা স্বপ্নকে খুঁজে বেড়ায় কিন্তু তা কি কখনো পূরণ হয়?
আলোচিত ব্লগ
এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন
মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)
ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)
০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন
টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন
আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।
ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।