আমি একটা মন্তব্য করেছিলাম, প্রশ্ন রেখেছিলাম, জামাত-শিবির প্রকৃত ইসলামী আন্দোলন করে কি না। তাদের সমর্থক ব্লগারদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জবাব অবশ্য এখনো পাইনি। তবে তাদের অনেকেই আমাকে এ বিষয়ে যা জানি তা জানাতে বলেছেন। জামাত-শিবিরের আন্দোলন ইসলামী আন্দোলনের কতোটুকু ধারণ করে তা নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমার যেসব বিশ্লেষণ তা এখানে আজ থেকে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরছি। দীর্ঘ একটি বিষয় নিয়ে লেখার সংখ্যা অনেক বেশিই হবে বলে আমি আশঙ্কা করছি। সে কারণে সবার কাছে মাপ্রার্থী। আমি মনে করি, এই সিরিজটি শেষ হলেই আমার বিশ্লেষণ পরিস্কার হয়ে যাবে।
ইসলামী আন্দোলন কী? সহজ ভাষায়-ইসলামের জন্য আন্দোলন। একটু ভেতরে ঢুকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন। যেকোনো আন্দোলনেরই একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া থাকে। ইসলামী আন্দোলনেরও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া রয়েছে। আল কোরআনে বলা হয়েছে- 'আকিমুদ্দিন'-দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করো। সেই দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যই আসলে আন্দোলন প্রয়োজন, কোরআন-হাদিসের ভাষায় যাকে আমরা জিহাদ বলে জানি। সেই জিহাদে রক্তপাতই যে মুখ্য নয় তাও পবিত্র কোরআন-হাদিস এবং পরবর্তীতে ইজমা ও কিয়াসে উল্লেখ করা হয়। এখানে আন্দোলনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়াটাকেই প্রথমে গুরুত্ব দেয়া হয়, চূড়ান্ত পর্যায়কে নয়।
জিহাদের বিধান নিয়ে সূরা আন নিসার দিকে একটু দৃষ্টিপাত করুন। সেখানে বলা হয়েছে- জিহাদ প্রাথমিকভাবে ফরজে কেফায়া। ফরজে কেফায়া হলো ইসলামের সেই আবশ্যক বিধান যা সবাই না করলে চলবে। কেউ পাপী হবে না। তবে কেউ না করলে সবাই পাপী হবে। এই ধরণের জিহাদের সময়কাল সম্পর্কে ওখানে বলা হয়েছে- এ বিধান তখনই প্রযোজ্য হবে যখন কোন মুসলামান শত্রুর সঙ্গে প্রত্য যুদ্ধে লিপ্ত হয় নি এবং শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হয় নি। তবে যদি 'শত্রু' দ্বারা মুসলমানরা আক্রান্ত হয় তাহলে জিহাদটা ফরজে আইন হয়ে যায়। ভেবে দেখুন, যারা বর্তমান বাংলাদেশের প্রোপটে সবসময় জিহাদ বলে গলা ফাটায়, তারা কি এটাই বলছে না যে, দেশের বাদবাকি মানুষগুলো (যারা চিৎকার করছে তাদের যারা সমর্থন করেন না) দ্বীনের শত্রু? হাদিসে আছে_ তোমরা কোন অন্যায় দেখলে তা হাত দিয়ে বাধা দেবে, হাত দিয়ে না পারলে মুখে বলবে আর মুখ দিয়ে বলতে না পারলে অন্তরে সেটিকে ঘৃণা করবে এবং সেটিই সবের্াত্তম জিহাদ। এই সবোত্তম জিহাদটাই আপনি সব সময় করতে পারেন। এতে কোন আপত্তি নেই। বিষয়টি ভালো করে ব্যাখ্যা করলে যা দাঁড়ায় সেটি হলো, জিহাদ একটি বৃহত্তর প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার শুরুটা হলো নিজের আত্মার প্রবৃত্তির সঙ্গে লড়াই করা। এখন এই লড়াইটা তো আর ঢাল তলোয়ার নিয়ে করা যায় না। এই প্রক্রিয়ায় আপনাকে প্রথমে জানতে হবে, আপনার আত্মার কু-প্রবৃত্তিগুলো কোথায় এবং সেগুলো কোন পথে আপনাকে আক্রমণ করছে আর আপনি সেগুলো ঠেকাবেন কীভাবে। এই প্রক্রিয়ায় যদি আপনি অংশ নেন তাহলে আপনাকে সর্বপ্রথম নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। কট্টর দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বেরিয়ে এসে আত্মসমালোচনার জায়গা খুঁজে বের করতে হবে। এ যেনো প্রতিদিন নিজেকে ভেঙে আবার নিজেই নিজেকে গড়ার কাজ। আপনি যদি এই প্রক্রিয়ায় সফল হন তাহলে আপনার পরের ধাপে যেতে আর কোনো বাধা থাকবে না। এখন, প্রথম পর্যায়ের কাজটা সম্পন্ন করতে হলে একটা পরিবেশ দরকার। বনে-জঙ্গলে শৈশব কাটালে আপনার চরিত্র যেমন মানবসন্তানের মতো নাও হতে পারে, তেমনি আপনি যে পরিবেশে থাকছেন সেখানে যদি আত্মসমালোচনার জায়গা না থাকে তাহলে নিজেকে ভেঙে গড়ে নেয়ার মতো যথেষ্ট উদারতা দেখানো সম্ভব নয়। এখন বিষয়টি হলো একজন মানুষ তার আত্মার সঙ্গে লড়াই করে প্রস্তুত হয়েছেন, এটা বুঝবেন কীভাবে? এ নিয়ে আমার বিশ্লেষণ থাকছে পরের পোস্টে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



