রহস্যের দ্বীপ
জুল ভার্নের এটাই ছিল আমার প্রথম বই পড়া। বইটা পড়ে এমন একটা ভালো লাগা কাজ করেছিল, যা বোঝানো কঠিন। তারপর থেকেই জুল ভার্ন আমার প্রিয় লেখকদের তালিকায় ঢুকে গেলেন।

যারা এই লেখা পড়ছেন, আর জুল ভার্নের এই বইটার সঙ্গে পরিচিত, তাদের মনে একটা প্রশ্ন আসতেই পারে—আমি কেন ‘সাগরের তলে’-এর রিভিউ আগে না দিয়ে ‘রহস্যের দ্বীপ’-এর কথা আগে বলছি?
এই প্রশ্নের উত্তর ‘রহস্যের দ্বীপ’-এর রিভিউয়ের ভেতরেই আছে—শেষ পর্যন্ত পড়লে নিজেই বুঝে যাবেন।
অনেক বছর আগে বইটা পড়েছিলাম। অনুবাদ করেছিলেন শামসুদ্দীন নওয়াব। এক কথায়—জস্স অনুবাদ! সত্যি বলতে কী, জুল ভার্নের আমি যতগুলো বই পড়েছি, প্রতিটাতেই অনুবাদ অসাধারণ ছিল। ভাগ্য ভালো, এখনকার কপি-পেস্ট অনুবাদকদের কেউ এই বইগুলোতে হাত দেয়নি। যদি দিতো, আমরা পাঠকরা জুল ভার্নের মতো লেখকের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতাম।
গল্পটা শুরু হয় বেলুন বিধ্বস্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে। একটা দ্বীপে গিয়ে পড়ে তারা। পাঁচজন মানুষ আর একটি কুকুর—এই হলো দলের সদস্য। তারপর শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই।
দ্বীপে টিকে থাকার এই গল্পটা এত সুন্দরভাবে লেখা যে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি—দ্বীপে সারভাইভাল নিয়ে যত বই আপনি পড়েছেন, তার মধ্যে এত নিখুঁত বর্ণনা আর কোথাও পাবেন না। বইয়ের শেষের দিকে একজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। এমন এক ওষুধ দরকার, যা ওদের কাছে নেই। কিন্তু এক সকালে, সেই ওষুধটা হঠাৎ তাদের ঘরে পাওয়া যায়, সঙ্গে থাকে একটা চিরকুট।
চিরকুটটার সূত্র ধরে আসে এক নতুন চরিত্র—ক্যাপ্টেন নিমো। এই রহস্যময় মানুষটাকে জানতে চাইলে আপনাকে পড়তেই হবে পরের বই—‘সাগরের তলে’।
আমার ধারণা, অনেকেই ‘রহস্যের দ্বীপ’ পড়েছেন। কিন্তু যারা এখনও পড়েননি, তারা সত্যিই একটা দারুণ অভিজ্ঞতা মিস করছেন।
সাগরের তলে
এবার আসা যাক দ্বিতীয় বইটিতে।
এখানে ক্যাপ্টেন নিমো এমন একটি ডুবোজাহাজ বানিয়েছেন, যেখানে বিদ্যুৎ আছে, অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে, পানি সঞ্চয়ের সুবিধা আছে—সব কিছু এত নিখুঁতভাবে তৈরি যে অন্য নৌ-জাহাজগুলো তাকে কোনো বিশাল সামুদ্রিক প্রাণী মনে করতো! তারা মাঝে মাঝে ভয়ে আক্রমণ করতেও যেতো, কিন্তু ক্যাপ্টেন নিমোর তৈরি জাহাজের শক্তির কাছে সবাই পরাজিত হতো। অল্প সময়েই তাদের কাবু করে ফেলতো সেই ডুবোজাহাজ—নটিলাস। সমুদ্রের বর্ণনা নিয়ে একটা কথা বলতেই হয়—এমন সুন্দর, এমন জীবন্ত সমুদ্র আমি অন্য কোনো বইয়ে পাইনি।
এ বইটিও অনুবাদ করেছেন শামসুদ্দীন নওয়াব। তাঁর অনুবাদে গল্পটা যেন চলচিত্র হয়ে চোখের সামনে ভেসে ওঠে।যদি কেউ এই দুটি বই না পড়ে থাকেন, অনুরোধ করবো—একবার পড়ে দেখুন। দেখবেন, আপনি নিজের অজান্তেই জুল ভার্নের জগতে ডুবে যাচ্ছেন।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশের বেশিরভাগ পাঠক এই দুই বই অন্তত একবার হলেও পড়েছেন। আর যারা পড়েননি—তারা সত্যিই একটা বড় আনন্দ থেকে বঞ্চিত আছেন।
এই বইগুলোর প্রকাশের তারিখগুলো নিচে দিলাম, ChatGPT-এর তথ্য অনুযায়ী।
“সাগরের তলে” (Twenty Thousand Leagues Under the Sea)
অরিজিনাল (ফরাসি) প্রকাশ: ১৮৬৯।
“রহস্যের দ্বীপ” (The Mysterious Island / L'Île mystérieuse)
অরিজিনাল (ফরাসি) প্রকাশ: ১৮৭৪ ।
"রকমারী থেকে বই দু’টির সামারি কপি করে দিলাম"
"রহস্যের দ্বীপ" বইয়ের ফ্ল্যাপের অংশ থেকে নেয়া:
১৮৬৫ সালের ২৪ মার্চ। প্রশান্ত মহাসাগরের এক নির্জন দ্বীপে বিস্ফোর্ত হলো ঝড়ের কবলে পড়া এক আমেরিকান বেলুন। কেউ নেই দ্বীপে। শুধু পাঁচজন অভিযাত্রী, সাথে একটি কুকুর। না আছে খাবার, অস্ত্র, না বাড়তি জামা-কাপড়—কিছুই না। শুরু হলো ক্যাপ্টেন সাইরাস হার্ডিং-এর নেতৃত্বে ওদের টিকে থাকার সংগ্রাম। অজ্ঞাত সব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে ওদের জীবনযাত্রা। সবাই টের পাচ্ছে, বিপদে-আপদে কে যেন অলক্ষ্যে সাহায্য করে যাচ্ছে ওদের। একের পর এক ঘটে চলেছে রহস্যজনক কাণ্ড-কারখানা। পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে, ওরা ছাড়া নিঃসন্দেহে আরও কেউ রয়েছে এই দ্বীপে। কিন্তু সামনে আসে না কিছুতেই।
“সাগরের তলে” বইয়ের ফ্ল্যাপের অংশ থেকে নেয়া
১৮৬৬ সালে একজন মানুষ এমন একটি জুবোজাহাজ বানালেন যা বিদ্যুৎ দিয়ে চলে, অক্সিজেন প্রয়োজনে জায়গার আছে, পানি জমানোর জায়গা আছে, এমন সব ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে তৈরী যা কোথাওই ভাবা যায়নি, এমন সব অস্ত্র আছে যা দিয়ে অন্য সব জাহাজ কে তছনছ করে দিতে পারে। কি ভেবেছেন সাবমেরিন এর কথা মনে পড়ছে? সেই সময়ে তো তা অসম্ভব, হ্যাঁ সেই অসম্ভব কে সম্ভব করেছেন আমাদের সবার প্রিয় জুল ভার্ন। তার কল্পকাহিনী পথ দেখিয়েছে আমাদের ভবিষ্যতের। বইটি বেশ অ্যাডভেঞ্চার ধর্মী। ৮-১৪ বছর বয়সী কিশোর কিশোরীদের জন্য মহামূল্যবান বই। বইটিতে আপনি আমাদের জলজগতের চমৎকার ম্যাপ পাবেন, আত্মীয় করে তুলবে সমুদ্র প্রাণীদের। বইটি মূলত একজন প্রখ্যাত প্রাকৃতিবিদ বানানো জুবোজাহাজ নিয়ে সাগর তলদেশ চষে বেড়ানোর গল্প। কিন্তু সেই জাহাজটি এমন দ্রুত গতি, অন্যায় জাহাজ তাকে ভুল করে খুব ভয়ঙ্কর প্রাণী ভাবতে থাকে। সেই অজ্ঞাত প্রাণীকেই ধ্বংস করার অভিযানে বের হওয়া জাহাজে যুক্ত হয় একজন জীববিজ্ঞানী। ঘটনাক্রমে সেই অজ্ঞাত প্রাণীর কাছেই বন্দি হয়ে যায় সে। সেখান থেকেই চলে অ্যাডভেঞ্চারের শুরু।
এগুলো এমন বই, যেগুলো একবার পড়লেই শেষ হয় না। বারবার পড়তে ইচ্ছে করে। কেউ যদি এখনো না পড়ে থাকেন—তাদের বলবো, দেরি না করে পড়ে ফেলুন। আফসোস হবে না, বরং মনটা ভালো হয়ে যাবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


