ডেসটিনি রিপোর্ট
ডেসটিনি গ্রুপের টাকা পরিচালকদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরবিষয়ক তথ্য সঠিক নয়। কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে যে সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে সেসব সূত্র এ ধরনের কোনো তথ্য দেয়নি বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোম্পানির পরিচালকরা যথাযথ নিয়ম মেনেই কোম্পানির কাছ থেকে সম্মানী, আনুতোষিক ও অন্যান্য ভাতা পেয়ে থাকেন। বছর শেষে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন অনুযায়ী ডিভিডেন্ড হিসেবে টাকা পেয়ে থাকেন। এছাড়া পরিচালকদের মধ্যে যারা ডিস্ট্রিবিউটর তারা নিয়মিতভাবে পণ্য বিপণনের বিপরীতে কমিশন পেয়ে থাকেন। এটা কোম্পানির কাছ থেকে পরিচালকদের অর্জিত টাকা। তাছাড়া ওই আয়ের ওপর তারা নিয়মিত আয়কর দিয়ে আসছেন। ফলে ডেসটিনি গ্রুপের টাকা পরিচালকদের হিসাবে স্থানান্তরের তথ্য সম্পূর্ণই ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক।
ডেসটিনির গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজবাহউদ্দিন স্বপন এ ব্যাপারে বলেন, কিছু সংবাদ মাধ্যম কোম্পানির টাকা পরিচালকদের হিসাবে স্থানান্তরের যে সংবাদ পরিবেশন করেছে তার প্রশ্নই ওঠে না। একটা মহল ডেসটিনির অগ্রগতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যই এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করছে, যার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই।
অন্যদিকে কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দুদকের সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে। ওইসব তথ্য দুদক থেকে সরবরাহকৃত নয় বলে দুদক জানিয়েছে। ফলে ওইসব তথ্যের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিভ্রান্তির জন্যই দুদকের সূত্র ব্যবহার করে রঙ মেখে ওইসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান গতকাল বুধবার জানান, তদন্তাধীন তথ্য গণমাধ্যমে কারা সরবরাহ করেছে তা জানা নেই।
তদন্ত চলাকালীন কোনো বিষয়ের তথ্য গণমাধ্যমে দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। তিনি আরো বলেন, যেখানে কোনো তথ্যই দেওয়া হয়নি সেখানে অবৈধ ব্যাংকিংয়ের বিষয় কীভাবে এল তা বোধগম্য নয়।
দুদকের এক মহাপরিচালক নাম প্রকাশ না করে জানান, তদন্তাধীন কোনো অভিযোগ বিষয়ের তথ্য দুদক কমিশনের অনুমোদন ছাড়া গণমাধ্যমে প্রকাশ তো দূরের কথা, কারো কাছে বলারও নিয়ম নেই। এসব বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। দুদক আইনেও একথা উল্লেখ রয়েছে।
ডেসটিনি গ্রুপের অনিয়ম বিষয়ের তদন্ত দলের সমন্বয়ক ও দুদক পরিচালক স্কোয়াড্রন লিডার তাহিদুল ইসলাম বলেন, তদন্ত চলছে। এ কারণে এ ধরনের তথ্য তার দেওয়ার কেনো প্রশ্নই ওঠে না। ডেসটিনি বিষয়ে এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। চূড়ান্ত তদন্ত শেষ করতে সময় লাগবে। তারপরই বিস্তারিত বলা হবে।
দুদকের উপপরিচালক মোজাহার আলী গতকাল জানান, কোনো একটি মহল উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এ ধরনের প্রচার করে থাকতে পারে। তিনি আরো বলেন, জোর দিয়েই বলতে পারি দুদকের কেউ ওই তথ্য দেয়নি।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, ডেসটিনি গ্রুপ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন তিনি কয়েকটি পত্রিকায় দেখে কাটিং করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুদক কমিশনের বৈঠকে পত্রিকার কাটিং এবং দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তার বক্তব্যকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার বিষয়ে চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হবে। তিনিই এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনি বলেন, দুদক আইনে তদন্তকালীন কোনো তথ্য প্রকাশের নিয়ম নেই। দুদকের সব ধরনের অনুসন্ধান, তদন্ত কার্যক্রম, মামলা, চার্জশিটসহ যাবতীয় তথ্য কমিশনের অনুমোদনের পর ব্রিফিং ও বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে একটি নীতিমালাও রয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, ডেসটিনি গ্রুপ যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দুদককে সহযোগিতা করছে। দুদক কার্যালয়ে মাসিক সংবাদ ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের তিনি এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন। তিনি বলেন, ডেসটিনি গ্রুপ অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। বিশাল হিসাবনিকাশ। হয়তো এজন্য বিস্তারিত হিসাব ও তথ্য-উপাত্ত দাখিলে কিছুটা বেশি সময় লাগছে। যথাযথ আইন, নিয়ম ও প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমেই ডেসটিনি গ্রুপের বিষয়ে তদন্ত ও অনুসন্ধান এখনো চলছে। তবে তথ্য ও হিসাব দাখিল প্রক্রিয়া একটু শ্লথ বলা যায়।