তিন হাজার ২৮৫ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় সাবেক সেনাপ্রধান ডেসটিনি গ্রুপের সভাপতি লে. জেনারেল (অব.) হারুন অর রশিদ ও ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনসহ প্রতিষ্ঠানটির ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার জামিন বাতিলের আবেদন করেছে দুদক।
সোমবার দুদকের উপ-পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে পৃথকভাবে দু’টি মামলায় জামিন বাতিলের আবেদন করেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান আবেদন দুটি গ্রহণ করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নথি তলব করেছেন।
আগামি ৩০ আগস্ট মামলা দু’টির জামিন বাতিল আবেদনের ওপর শুনানি হবে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের সেরেস্তা সহকারী নুর আলম।
জামিন বাতিল চাওয়া অপর তিন আসামি হলেন, ডেসটিনি ২০০০ লি. চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের পরিচালক মো. গোফরানুল হক ও মোহাম্মদ সাঈদ উর রহমান।
গত ৬ আগস্ট মহানগর হাকিম এরফান উল্লাহ তাদের জামিন মঞ্জুর করেছিলেন।
গত ৩১ জুলাই দুদকের উপপরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দুটি দায়ের করেছিলেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয় করা হয়, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন ও ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মাধ্যমে প্রায় ৪ হাজার কোটি সংগ্রহ করে। কিন্তু বর্তমানে তাদের পৃথক দুটি অ্যাকাউন্টে ৫৬ লাখ ও ৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। বাকি টাকা তারা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে। ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড বিভিন্ন প্যাকেজের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে কমিশন হিসেবে তা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা কর্মকর্তা ও এজেন্টদের কাছ থেকে আত্মসাৎ করে।
মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়, শুধুমাত্র ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লিমিটেড (ডিটিপিএল) কর্তৃপক্ষ সাধারণ জনগণ ও বিনিয়োগকারীদের অধিক লাভে প্রলুব্ধ করে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতিতে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের মাধ্যমে অবৈধভাবে ৬ কোটি ১৮ লাখ ৬৩০টি গাছ ও পাওলোনিয়া ট্রি স্ট্যাম্প বিক্রি করে সর্বমোট ২ হাজার ৩ শ’ ৩৫ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ডিটিপিএল কর্তৃপক্ষ মোট ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৮০টি গাছ এবং ২১ হাজার পাওলোনিয়া ট্রি স্ট্যাম্প জনগণের মধ্যে সরবরাহ করে বলে দাবি করেন। তারা ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৮০টি গাছ বিক্রি করে ২শ’ ৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা এবং ২১ হাজারটি পাওলোনিয়া স্ট্যাম্প বিক্রি করে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা সংগ্রহ করে কিন্তু ডিটিপিএল কর্তৃপক্ষ এমএলএম পদ্ধতিতে গাছ বিক্রির বিধান না থাকা সত্ত্বেও ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের মাধ্যমে ২০০৬ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতারণাপূর্বক আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে গাছ বিক্রি করে জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।
এভাবে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের পরিচালকরা ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লিমিটেড থেকে ব্যবস্থাপনা কমিটির সহায়তায় নিজেদের ইচ্ছামাফিক আসামিদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ডেসটিনি গ্রুপের অলাভজনক কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে স্থানান্তর করে সমিতির মূলধনের অবক্ষয় ঘটান।
পরবর্তীতে কমিশন বেতন-ভাতা অনারিয়াম ডিভিডেন্ডের আবরণে নিজেদের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।